গুলঞ্চ বা টিনোস্পোরা লতার ঔষধি গুণাগুণ - Medicinal properties of heart leaf moonseed
heart leaf moonseed

গুলঞ্চ গাছের উপকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া-Benefits and side effects of leaf moonseed

গুলঞ্চ (গিলয়) বা টিনোস্পোরা হচ্ছে একটি মেনিসপার্মেসিয়া পরিবারের অর্ন্তভূক্ত পর্ণমোচী উদ্ভিদ যা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বহুলভাবে জন্মায়। গুল্মটি অন্য গাছের ওপরে বেয়ে ওঠা লতানো উদ্ভিদ। কাণ্ডের উপরিভাগ খসখসে ফাটল যুক্ত। বিস্কুট রং এর চামড়া।

পাতা পানপাতার মত হৃদয় আকৃতির এবং লম্বা বোটা যুক্ত। লম্বা সুতার মত অসংখ্য বায়ুবীয় মূল যা ঝুলন্ত কাণ্ড থেকে মাটি পর্যন্ত বিস্তৃত। এই গাছে গ্রীষ্মকালে ফুল ফোটে এবং শীতকালে ফল পাকে।

পূংকেশর এবং স্ত্রীকেশর ভিন্ন ফুলে থাকে। এর কাণ্ড দুর্বল এবং রসালো। কাণ্ডের রং হচ্ছে সাদা থেকে ধূসর এবং তা ১-৫ সেমি পর্যন্ত মোটা হতে পারে। গুলঞ্চের পাতা দেখতে হৃদয়ের (হার্ট) আকারের এবং তাতে মেমব্রেন (ঝিল্লি) আছে। তাতে গ্রীষ্মকালে সবজেটে-হলুদ রঙের ফুল ফোটে আর গুলঞ্চের ফল সাধারণত শীতকালে দেখা যায়।

গুলঞ্চের সবুজ রঙের আঁটিযুক্ত ফল (ড্রুপ) হয়ে থাকে যা পাকলে লাল বর্ণ ধারণ করে। গুলঞ্চের কাণ্ডেই অধিকাংশ নিরাময়যোগ্য গুণ আছে, তবে পাতা, ফল, এবং শিকড় বা মূলেও অল্পবিস্তর গুণ আছে।

সাধারণ নাম: গিলয়, গুডুস, গুড়ুচি, গুলবেল, হার্ট-লিভড মুনসিড (heart leaf moonseed), টিনোস্পোরা।

ইংরেজি নাম: heart leaf moonseed

বৈজ্ঞানিক নাম: Tinospora Cordifolia

ঔষধি গুণাগু

জ্বরের জন্য

দীর্ঘস্থায়ী জ্বরের চিকিৎসার জন্য চিরাচরিতভাবে গুলঞ্চ ব্যবহার হয়। বিভিন্ন প্রাণীর ওপর প্রয়োগ করে গুলঞ্চের অ্যান্টিপাইরেটিক কার্যকারিতার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ডেঙ্গির বিরুদ্ধে কার্যকারিতা বুঝতে শারীরিক পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে জ্বর উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে। তবে কীভাবে এই গুল্ম কাজ করার জন্য শারীরের তাপমাত্রা কমে তার তেমন কোনও নির্দিষ্ট কারণ পাওয়া যায়নি। কাজেই গুলঞ্চের অ্যান্টিপাইরেটিক কার্যকারিতা সম্পর্কে জানতে কোনও আয়ুর্বেদ চিকিৎসকের কাছে এ ব্যাপারে জেনে নেওয়া প্রয়োজন। গুলঞ্চ ইমিউনোমডিউলেটরি প্রক্রিয়া করে এবং তার অ্যান্টিবায়োটিক উপাদান আছে। ডেঙ্গি জ্বরের মতো জীবাণুর সংক্রমণের হাত থেকে এটি রক্ষা করে।

ডায়বিটিসের প্রতিরোধে

গুলঞ্চের ডায়বিটিস প্রতিরোধী ক্ষমতা প্রমাণে প্রাণীদের ওপর এবং পরীক্ষাগারে প্রচুর গবেষণা করা হয়েছে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে গুলঞ্চ বা টিনোস্পোরা যথেষ্ট কার্যকরী। 

আরও বলা হয়েছে যে এই গুল্মটি ইনসুলিনের ক্ষমতা বাড়িয়ে এবং শরীরে অক্সিডেটিভ চাপ কমিয়ে এর হাইপোগ্লাইসেমিক প্রভাব বিস্তার করে। এছাড়া, গ্লুকোজের বিপাকীয় প্রক্রিয়ার (গ্লুকোনিওজেনেসিস এবং গ্লুকোজেনোলাইসিস) জটিল পর্যায়ে হস্তক্ষেপ করে এবং তার ফলে সার্বিকভাবে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে।

শ্বাসকষ্ট রুখতে

দেখা গিয়েছে, দীর্ঘস্থায়ী কাশি, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস-এর চিকিৎসায় গুলঞ্চ কার্যকরী ভূমিকা নেয় এবং হাঁপানি বা অ্যাজমার উপসর্গ কমানোর ক্ষেত্রেও এটি কাজে লাগে।

অতৃপ্ত পিপাসায়

অতৃপ্ত পিপাসার ক্ষেত্রে পানিও পিপাসা সরাতে ব্যর্থ। এমন অবস্থা হলে গুলঞ্চ লতা টুকরো টুকরো করে কেটে ও মৌরি একত্রে পানিতে ভিজিয়ে ঔ পানি একটু একটু করে খেতে হবে।

মহিলাদের জন্য

রোগ প্রতিরোধী উপাদানগুলির জন্য রজঃনিবৃত্তি উত্তর (পোস্টমেনোপজাল) মহিলাদের জন্য গুলঞ্চ খুব কাজে লাগে। এর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান অস্টিওপোরোসিস (হাড়ের ক্ষয়)  রোধ কমাতে পারে।

পুরুরষদের জন্য 

গুলঞ্চের ব্যবহারে বীর্যধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে পুরুষদের যৌন ক্ষমতা বা ইচ্ছা বৃদ্ধি পায়।

ক্যান্সারের প্রতিরোধে

কয়েকটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, গুলঞ্চের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদানের জন্য গুলঞ্চের ব্যবহার করা যেতে পারে।

মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য

দুশ্চিন্তা, অবসাদ এবং অন্যান্য মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য গুলঞ্চের ব্যবহার হয়।

মেদ কমাতে

যাদের শরীরে মেদ জমে গেছে, ডায়েটিং করেও কমাতে পারছেন না তারা শরীরে বাড়তি মেদ-ওজন কমাতে গুলঞ্চ ব্যবহার করে দেখুন। গুলঞ্চের ৮/১০ গ্রাম ক্বাথের সাথে ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে মাসখানেক খেলে উপকার পাবেন।

গুলঞ্চ ব্যবহারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

গুলঞ্চ হচ্ছে একটি উৎকৃষ্ট হাইপোগ্লাইসেমিক এজেন্ট (রক্তে শর্করা কমায়), 

কাজেই যদি এমন হয় যে আপনি ডায়বিটিসে আক্রান্ত হয়ে ওষুধ খাচ্ছেন, 

তাহলে যে কোনও প্রকারেই গুলঞ্চ সেবন করার আগে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন।

অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীন বা সন্তানকে মাতৃদুগ্ধ পান করানোকালীন সময়ে গুলঞ্চের সম্ভাব্য উপকারিতা কী, সে সম্পর্কে কোনও প্রমাণ পাওয়া যায় না। 

কাজেই অন্তঃসত্ত্বা বা মাতৃদুগ্ধ পান করানোকালীন সময়ে কোনও মহিলা গুলঞ্চ সেবন করতে ইচ্ছুক হলে আয়ুর্বেদ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

টিনোস্পোরা একটি উৎকৃষ্ট ইমিউনোমডুলেটরি অর্থাৎ যা আপনার প্রতিরোধ ক্ষমতাকে উজ্জীবিত করে যাতে আপনি আরও সক্রিয়ভাবে কাজ করেতে পারেন। 

সুতরাং আপনি যদি কোনও অটোইমিউন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে গুলঞ্চ সেবনের আগে আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া শ্রেয়।

রামবুটান এর উপকারিতা ও গুণাগুণ
কাঁচা কলার উপকারিতা
পাতি হলিহক এর ঔষধি গুণাগুণ - Medicinal properties of common hollyhock
বকুল ফুলের ঔষধি গুনাগুন - Medicinal properties of bullet wood flowers
বেড়েলার উপকারিতা
বাসক পাতার ঔষধি গুণ
আম আদার ঔষধি গুণাগুণ - Medicinal properties of mango ginger
দারুচিনির উপকারিতা
ভুইকুমড়া গাছের উপকারিতা
জাম্বুরা খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ