ডুমুর গাছের উপকারিতা ও গুনাগুন-Benefits and properties of fig tree
fig tree

ডুমুর গাছের উপকারিতা ও গুনাগুণ

প্রাকৃতিক এক দারুণ ফল ডুমুর। 'আঞ্জির' নামেই বেশি পরিচিত এটি। ডুমুরের বেশ কয়েকটি প্রজাতির রয়েছে। বাংলাদেশে যেটি পাওয়া যায়। সেটি ‘কাকডুমুর’ নামে পরিচিত। ফল আকারে বেশ ছোট এবং খাওয়ার অযোগ্য। এগুলো মূলত পাখিরাই খেয়ে থাকে। তবে বেশ কিছু অঞ্চলে এ ফল তরকারি হিসেবে খাওয়া হয়। বাংলাদেশে যেটি পাওয়া যায় তার বৈজ্ঞানিক নাম ficus glomerata roxb

এ প্রজাতির গাছ, গুল্ম, লতা ইত্যাদি সম্মিলিতভাবে ডুমুর গাছ বা ডুমুর নামে পরিচিত।  পবিত্র কোরআন শরীফের ৯৫ নম্বর সূরার নাম “আত্ তীন”। ত্বীন আরবি শব্দ, যার অর্থ আঞ্জির বা ডুমুর।

বাংলা নাম: ডুমুর

ইংরেজি নাম: Ficus, Fig tree

বৈজ্ঞানিক নাম : Sycamore Fig, Ficus sycamore

পরিচিতি: ডুমুরগাছ ৩০ থেকে ৪০ ফুট উঁচু হয়। ছাল পুরু ও মসৃণ লালের আভাযুক্ত ধূসর বর্ণের কাঁটা কাঁটা। কাঠ ধূসর বর্ণের এবং পাতার অগ্রভাগ ক্রমেই সরু ও তিনটি শিরাবিশিষ্ট। বিভিন্ন দেশের ডুমুর ্বং অঞ্চলভেদে বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে।

প্রাপ্তি স্থান: ডুমুর বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জন্মে থাকে।

বর্ণ: কাঁচা ডুমুর সবুজ এবং পাকলে লরলচে বা হলুদাভ বর্ণ ধারণ করে।

স্বাদ: কাঁচা অবস্থায় কষযুক্ত এবং পাকা ডুমুর অত্যন্ত মিষ্টি স্বাদযুক্ত।

গন্ধ: পাকা ডুমুর সুঘ্রাণযুক্ত।

মাত্রা: ডুমুর ৪ থেকে ১২টি পযর্ন্ত সেবন করা যায় ।

ফল: ডুমুর নরম ও মিষ্টিজাতীয় ফল। ফলের আবরণ ভাগ খুবই পাতলা এবং এর অভ্যন্তরে অনেক ছোট ছোট বীজ রয়েছে। এর ফল শুকনো ও পাকা অবস্থায় ভক্ষণ করা যায়। উষ্ণ জলবায়ু অঞ্চলে এ প্রজাতির গাছ জন্মে। কখনো কখনো জ্যাম হিসেবে এর ব্যবহার হয়ে থাকে। এছাড়াও, স্ন্যাকস জাতীয় খাবারেও ডুমুরের প্রয়োগ হয়ে থাকে।

বিভিন্ন রোগে ডুমুরের ব্যবহার

১. ডুমুরের পাতায় এন্টিডায়াবেটিক উপাদান রয়েছে যা ইনসুলিন উৎপাদন ও অবমুক্ত হওয়াকে স্থির রাখতে সাহায্য করে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডুমুরের রস খুবই উপকারী।

২.ডুমুরে আছে প্রচুর দরকারি ফাইবার। এ ফাইবার হজমে সাহায্য করে। এ ছাড়া এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। ডায়রিয়া বা অন্য কোনো রকম পেটের গোলযোগ সহজে হতে দেয় না।

৩. ডুমুর ফলের কষে প্রাপ্ত রাসায়নিক উপাদান ৬.০ এসাইল, বিটা-ডি-গ্লুকোসাইল-বিটা-সাইটোস্টেরল ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর। এক গবেষণায় পাওয়া যায় দীর্ঘদিন ডুমুর ফল খেলে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা কমে। এক তথ্যে পাওয়া যায় গড়ে ৮ বছর যাবৎ ডুমুর ফল খাওয়ায় ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি ৩৪% কমেছে।

৪.ডুমুরে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এটি ফ্রি র‍্যাডিকেলস নষ্ট করে। এতে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমে। শুকনো ডুমুর রক্তের ট্রাইগ্লিসারিডসকে কমায়।

৫.মেয়েদের মাসিকের সময় বেশি রক্তস্রাব হলে কচি ডুমুরের রসের সঙ্গে সামান্য মধু মিশিয়ে খেলে উপকার হয় এবং রক্তপিত্ত সারে।

৬. ডুমুর ফলে প্রাপ্ত ফেনলিক এন্টিঅক্সিডেন্ট হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। মাঝারি একটি তাজা ডুমুর ফলে (৫০ গ্রাম) ৩৭ ক্যালরি থাকে।

৭. ডুমুর আঁশসমৃদ্ধ ফল, আঁশ ও  আঁশসমৃদ্ধ খাবার ক্ষুধা নিবারণের পাশাপাশি ওজন ঠিক রাখতে ভূমিকা রাখে। শরীরে মেদ নিয়ে যাঁরা দুশ্চিন্তা করেন, তাঁদের জন্য ডুমুর উপকারী। এর ফাইবার মেটাবলিজমকে ঠিক রাখে এবং শরীরে অকারণ মেদ জমতে দেয় না।

৮.ডুমুর গাছের ছাল পানিসহ সিদ্ধ করে সেই পানি দ্বারা ত্বক ধৌত করলে চর্মের বিবর্ণতা এবং ক্ষত রোগে উপকার হয়।

৯. সাদা ও রক্ত আমাশয় হলে ডুমুর গাছের ছালের ২ চামচ রস এবং মধু মিশিয়ে দুই বেলা খেলে উপকার হয়।

১০.নানা কারণে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দিতে পারে। নিয়মিত ও পরিমিত ডুমুর ফল খেলে আমাদের শরীরে সোডিয়াম-পটাশিয়ামের সামঞ্জস্য রক্ষা হয়। ফলে উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার আশঙ্কা কম হয় ।

১১.অতিরিক্ত হেঁচকি উঠলে ডুমুরের বাইরের অংশ কেটে পানিতে এক ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর ঐ পানি ছেঁকে এক চা চামচ করে খেলে হেঁচকি ওঠা বন্ধ হয়।

১২.ডুমুরে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। আয়রন কমে গেলে আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন কমে যায়, যা শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক। ডুমুর আমাদের শরীরে আয়রনের পরিমাণকে স্বাভাবিক রাখে।

১৩.শুধু খেতে ভালো তা-ই না, ডুমুরের ঔষধি গুণ নিয়েও অনেক প্রশংসা আছে। ডুমুর ফল ত্বকের জন্য উপকারী, ফোঁড়া ও চর্মরোগ নিরাময়ে বেশ কাজ দেয়।

১৪ ক্ষুধামন্দা রোগে ১ চা চামচ কাঁচা ডুমুরের রস খাওয়ার পর সেবন করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।.

১৫.প্রতিদিন ৩-৫ টি ডুমুর খেলে যৌন শক্তি বৃদ্ধি পায়।

১৬. জ্বরের পর ডুমুর রান্না করে খেলে এটি টনিকের কাজ করে।

১৭.ডুমুর পিত্ত ও আমাশয় রোগে উপকারী। আমাশয় হলে ৩ দিন কচি ডুমুরের পাতা আতপ চালের সাথে চিবিয়ে খেলে ভালো হয়।

১৮.দুধ ও চিনির সঙ্গে ডুমুরের রস খেলেও অধিক ঋতুস্রাব বন্ধ হয়।

১৯.রক্তপিত্ত, রক্তপড়া এবং রক্তহীনতা রোগে উপকারী।

২০.মাথা ঘোরা রোগে ডুমুর ভাজি করে খেলে উপকার পাওয়া যায়।

সতর্কতা ঃ  এতে অধিক পরিমাণে লোহা আছে । অতিরিক্ত ডুমুর খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে এবং যকৃৎ, পাকস্থলী ও দাঁতের জন্য ক্ষতিকর।

গুনাগুণঃ

ডুমুর খুবই উচ্চমানের ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ। বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় স্মরণাতীতকাল থেকে ডুমুরের পাতা, কাঁচা ও পাকা ফল, নির্যাস, বাকল, মূল প্রভৃতি কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। প্রতি ১০০ গ্রাম ডুমুরে খাদ্যশক্তি ৩৭ কিলোক্যালরি,১২৬ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিনসহ ভিটামিন এ, বি, সি ও অন্যান্য উপাদান রয়েছে।

পুষ্টি উপাদানঃ

প্রতি ১০০ গ্রামে জলীয় অংশ ৮৮ দশমিক ১ গ্রাম, খনিজ পদার্থ শূন্য দশমিক ৬, হজমযোগ্য আঁশ ২ দশমিক ২, খাদ্যশক্তি ৩৭ গ্রাম, আমিষ ১ দশমিক ৩, চর্বি শূন্য দশমিক ২, শর্করা ৭ দশমিক ৬, ক্যালসিয়াম ৮০ মিলিগ্রাম, লৌহ ১ দশমিক ১ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ১৬২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি১ শূন্য দশমিক শূন্য ৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি২ শূন দশমিক শূন্য ৫ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন সি ৫ মিলিগ্রাম।

কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা - Home Remedies for Kidney Disease
জেনে নিন শসা খাওয়ার উপকারিতা
রসুন খাওয়ার উপকারিতা
কেওড়া ফল স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী
হেলেঞ্চা শাকের উপকারিতা
গাবের উপকারিতা-velvet apple benefits
কুমড়োর বিচির উপকারিতা
মন ভালো রাখার উপায়
সন্তান পালনের নানা ধরনের টিপস
ফাউন্ডেশন ব্যবহারের নিয়ম - Rules for using foundation