বকুল ফুলের ঔষধি গুনাগুন  - Medicinal properties of bullet wood flowers
bullet wood

বকুল এর উপকারিতা ও ঔষধি গুনাগুন

বকুল হচ্ছে মিনাসপ্স্‌ (Minasops) প্রজাতির একটি ফুল। বকুল একটি মধ্যমাকৃতির চিরহরিৎ বৃক্ষ। এর সুষম আকৃতি ও সুগন্ধি ফুলের জন্য এটি সকলের কাছে আকর্ষনীয়। গাছ কখনো কখনো ১৫-১৬ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। কাণ্ড সরল, বাকল ধূসর ও অমসৃণ। পাতা কালচে সবুজ ও ঘন; ১০-১২ সে.মি. লম্বা ও ৫ সে.মি. চওড়া হয়। এপ্রিল-জুন মাসে ছোট ছোট সাদা ফুল ফোটে। শিউলি ফুলের ন্যায় বকুল ফুল তাজা অবস্থায় ঝরে পড়ে। তবে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা যায়, পচে না। কাঁচা ফল সবুজ কুলের মতো, পাকলে হলুদ হয়।

বাংলা ভাষায় - বকুল, বহুল, বুকাল, বাকুল, বাকাল। তবে বকুল নামেই বেশি পরিচিত।

বৈজ্ঞানিক নাম: Mimusops elengi

ইংরেজি নাম: Spanish cherry, medlar,and bullet wood

বকুল গাছ

বকুল গাছ খুব বেশি বড় বা ছোট হয়না কখনোই, এটি মাঝারি আকারের ১৬ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। বকুল ফুলের গাছকে চিরহরিৎ বৃক্ষ বলা হয় কারণ এই গাছ কখনোই পাতাশূন্য হয় না। এর পাতা গাঢ় সবুজ উপবৃত্তাকার, মসৃণ, গাড় সবুজ ও ঢেউ খেলানো, আকারে ৫ থেকে ১৪ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ২.৫ থেকে ৬ সেন্টিমিটার পর্যন্ত চওড়া হয়।

বকুল ফুল

বকুল ফুল কিন্তু আকারে খুব ছোট ছোট হয়, বড় জোড় ১ সেঃ মিঃ। এই ফুলের রঙটি ঠিক সাদা নয়, ঘিয়ে রঙা মানে হলুদাভ সাদা বা ক্রীম রঙের হয়। । আর সবচেয়ে বিশেষ যেই ব্যাপারটি রয়েছে এই ফুলের মধ্যে তা হলো, বকুল ফুল দেখতে অনেকটা তারার মতো, মনে হয় যেনো গাছের মধ্যে তারা ফুটে আছে। এই ফুলটিকে গ্রীষ্মকালীন ফুল বলা হলেও আসলে বকুল ফুল বসন্তের শুরু থেকে ফোটা শুরু করে আর থাকে অনেকদিন পর্যন্ত একেবারে পুরো শীতকাল জুড়ে। এই ফুলের এক থোকায় এক থেকে ছয়টি ফুল ফোটে। বকুল ফুল প্রতিদিন গাছ ঝেঁকে ফোটে, একসাথে এতো বেশি ফোটে যে ফুলের জন্য পাতা দেখা যায় না। কিন্তু হলে কি হবে, ফুল থাকলে তো! বকুল ফুল আবার খুব সহজেই ঝরে যায়। ছোট তারার মত এই ফুলটি ফোটে রাতে আর এবং সারাদিন ধরে টুপটাপ ঝরে পরতে থাকে। এই ঝরা বকুল ফুল নিয়ে ময়মনসিংহ গীতিকায় চমৎকার একটি গান লেখা রয়েছে- “গাঁথ গাঁথ সুন্দরী কন্যা লো মালতীর মালা ঝইরা পড়ছে সোনার বকুল গো ঐ না গাছের তলা।“

বকুল ফল

অনেক তো ফুল নিয়ে কথা হলো এবার এর ফলের সৌন্দর্য নিয়েও বলা যাক! বকুল গাছে যখন ফল হয় তখন তা ছোট ছোট কুল বা বড়ইয়ের মত ডিম্বাকৃতির ফল হয় । ফলগুলো কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকে আর পাঁকলে তা লাল বর্ণ ধারণ করে। রং পরিবর্তনের পর অদ্ভুত সুন্দর লাগে একে দেখতে। পাখিরাও তাই আকৃষ্ট হয়ে বকুল ফল খেতে আসে। শুধু পাখিরাই না, বাচ্চাদের ও বকুল ফল খেতে দেখা যায়। মালয়'রা বকুল ফল সংরক্ষণ করে রাখে এবং আচার তৈরি করে। এই ফলের স্বাদ একটু কষযুক্ত হালকা মিষ্টি। গাছে এই ফল আসবে বর্ষাকালে মানে ঠিক আর কয়দিন পরই। চাইলে আপনিও খেয়ে দেখতে পারেন, স্বাদটা নিছক মন্দ নয়।

বিস্তার

ভারত, বাংলাদেশে ও মিয়ানমার বকুলের আদি বাসভূমি। এই গণে প্রজাতির সংখ্যা ৫৭।

ভেষজ গুনাগুন

বকুলের আগা থেকে গোড়া, ফুল থেকে ফল পর্যন্ত কোনো অংশই ফেলনা নয়। সবকিছুরই বিশেষ ব্যবহার ও গুণ রয়েছে।

১.দাঁতের যন্ত্রণা হলে এমন অবস্থায় ১০ গ্রাম বকুল ছাল নিয়ে ছেঁচে ৪ কাপ পানিতে সেদ্ধ করে ১ কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে নিয়ে প্রতিদিন রাতে ২ বার ৭/৮ চা চামচ করে মুখে নিয়ে ১০/১৫ মিনিট রাখতে হবে। এবং কুলকুচা করে ফেলে দিতে হবে। এভাবে ১৫/২০ দিন নিয়মিত ব্যবহারে দাঁতের ব্যাথায় আর কষ্ট দিতে পারবে না।

২.শুকনো বকুল ফুলের গুড়া নাক দিয়ে নিঃশ্বাসের সাথে টেনে নিলে মাথা ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে।

৩.অকালে দাঁত নড়লে এ অবস্থায় ২০/২৫ গ্রাম বকুল ছাল ৪ কাপ পানিতে সেদ্ধ করে ২ কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে নিতে হবে।, এটি ক্বাথ তৈরি হল। প্রথমে ২/৩ টিপ পরিমাণ পিপুল গুঁড়ার সাথ ১০/১৫ ফোঁটা মধু মিশিয়ে আক্রান্ত দাঁতের গোড়ায় লাগাতে হবে। এবং ৫/৭ মিনিট পরে ঐ ক্বাথ মুখে নিয়ে ৭/৮ মিনিট করে রাখতে হবে। এভাবে ১০/১২ দিন ব্যবহার করলে নড়া দাঁত বসে যাবে। এছাড়াও কাঁচা বকুল ফল কিছুদিন চিবিয়ে দেখবেন দাঁতের গোড়া শক্ত হয়ে গেছে। তা না হলে কাঁচা ফল শুকিয়ে সেই গুকনো ফলের শাঁসের গুঁড়া দিয়ে দাঁত মাজলে অকালে দাঁত নড়বে না বা পড়বে না।

৪. বকুল ফুলের রস হৃদযন্ত্রের অসুখ নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়।

৫.গাছের ছাল দিয়ে কাটা ছেঁড়ার ক্ষত পরিষ্কার করা যায়। এছাড়াও বকুল গাছের ছাল ও তেঁতুল গাছের ছাল সিদ্ধ করে পাচনের মাধ্যমে তৈরি তরল ঔষধ ত্বকের নানারকম রোগ সারাতে ব্যবহৃত হয়। 

৬.অপুষ্টিজনিত শুক্রতারল্যে ৫০০ গ্রাম পাকা বকুল ফল বীজ ও খোসা বাদে চটকে ২৫০ গ্রাম মধু মিশিয়ে ৩ দিন ঢেকে রেখে দিলে পরে পাতলা ন্যাকড়ায় পুঁটলি বেঁধে ঝুলিয়ে দিলে ফোঁটা ফোঁটা রস (বকুলের সিরাপ) পড়বে। এ সিরাপ ১ চা চামচ করে প্রতিদিন খাওয়ার পর ১ বার করে খেলে ১৫/২০ দিনের মধ্যে শুক্রতারল্য কেটে যাবে।

৭.শ্বেতী কঠিন রোগের জন্য ১০০ গ্রাম বকুল ছাল ছেঁচে এক লিটার পানিতে সেদ্ধ করে, আধালিটার থাকতে নামিয়ে ছেঁকে আবার এটি জ্বাল দিয়ে ৩০ মি.লি. থাকতে নামিয়ে ঘন ক্বাথ তৈরি করতে হবে। এই ঘন ক্বাথে বকুল বীজ চন্দনের মতো বেটে ঐ দাগে লাগাতে হবে। এতে ঐ দাগগুলো ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাবে।

৮.বকুলের পাতা সিদ্ধ করে মাথায় দিলে মাথা ব্যাথা কমে যায়। পাতার রস চোখের জন্যেও উপকারী।

৯.ছোট শিশুর পায়খানা হচ্ছে না কয়েকদিন, কান্নকাটি করছে। এ অবস্থায় বকুল বীজের শাঁস খোলে শুধু বীজের খোসা মিহি গুঁড়া করে, পুরোনো ঘিয়ের সাথে মিশিয়ে পানের বোঁটায় লাগিয়ে শিশুর মলদ্বারে দিলি ১০/১৫ মিনিটের মধ্যে পায়খানা হয়ে যাবে।

১০.গাছের কাণ্ড থেকে পাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এক ধরনের ঔষধ তৈরি করা যা জ্বর ও ডায়রিয়া থেকে আরোগ্য লাভের জন্যে ব্যবহার করা হয়।

১১.প্রাতিদিন কয়েকটি করে পাকা বকুল ফলেরর শাঁস খেলে পুরোনো আমাশায় রোগের উপশম হয়।

ডুমুর গাছের উপকারিতা ও গুনাগুন-Benefits and properties of fig tree
কিশমিশ খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ - Benefits and nutritional value of eating raisins
দেশি গাবের ঔষধি গুণাগুণ - Medicinal properties of Gaub
কাক পটল-Trichosanthes cochinchinensis
সাতকরার উপকারিতা - Benefits of wild orange
নাগলিঙ্গম গাছের উপকারিতা - Benefits of Cannonball tree
সুগন্ধি জয়তী-Peregrina
শেয়াল কাঁটা-Mexican prickly poppy
আমের উপকারিতা
ঢোলকলমি গাছ-pink morning glory