
কাকমাচির ভেষজ গুণ ও উপকারিতা - Medicinal properties and benefits of Common Nightshade
কাকমাচি বা তিতবেগুন, ফুটি বেগুন, ছোট বেগুন, টমেটো,মাকোই বা মাকো,আঙ্গুরে,হচ্ছে সোলানাম গণের একটি গুল্ম। এর ঔষধি নাম গড়কামাই। এদের সাধারণ নামসমূহ হচ্ছে (European black nightshade বা স্থানিকভাবে শুধু "black nightshade", duscle, garden nightshade, "garden huckleberry", hound's berry, petty morel, wonder berry, small-fruited black nightshade বা popolo) এটি কাঁটাযুক্ত ছোট উদ্ভিদ।
ইংরেজি নাম: Common Nightshade,black nightshade
বৈজ্ঞানিক নাম: Solanum nigrum
বর্ণনা
তিতবেগুন কাঁটাযুক্ত ছোট উদ্ভিদ। এর পাতা হালকা সবুজ। গাছ ১-২ মিটার উঁচু হয়। শহুরে জলাশয় ভরাট করা ইট-বালিময় স্থানেও এদের বেশ সহজে গজিয়ে উঠতে দেখা যায়। এর ফুল হালকা বেগুনি ও হালকা গোলাপী হয়। ফল গোলাকৃতির নরম। কাঁচা ফল সবুজ এবং পাকা ফল প্রথমে লাল এবং পরে কালচে হয়ে ওঠে।
কাকমাচি দুই প্রকারের হয়। কিছু গাছ একটু হলদে এবং এর পাতা তেমন লম্বা হয় না, এর ফল পাকলে হরিদ্রাভ লাল হয়, সেগুলি খাওয়া যায় কিন্তু যে গাছ গাঢ় সবুজ রঙের হয়, পাতাগুলি একটু লম্বাটে এবং এর ফল স্বাদেও খুব তিতো, সে ফল ও গাছ ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে।
ফুল,ফল
শরৎকাল থেকে আরম্ভ হয় ফুল ও ফল হওয়া। এই গাছের ফুল ও ফল দুই গুচ্ছবদ্ধ হয়; এর ফুল দেখতে অনেকটা মরিচের ফুলের মতো, আর ফলগুলি আকারে অনেকটা ছোট আর বীজ বেগুনের বীজের মতো হলেও আকারে অনেক ছোট হয়।
আদি নিবাস
এটির আদি নিবাস ইউরেশিয়ায়। তবে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকায়ও এর প্রচলন করা হয়েছে।
ব্যবহার্য অংশ
ঔষধ হিসাবে ব্যবহার হয় সমগ্র ক্ষুপ বা গাছ ও শুকনো ফল।
চাষ পদ্ধতি
উর্বর মাটিতে এই গাছ ভালো হয়। প্রায় সারা বছর গাছ দেখতে পাওয়া যায়। মূলত আষাঢ় মাসে বীজ থেকে গাছ হয়। শরৎকালে ফুল তারপরে ফল হয়।
কাকমাচির ব্যবহার
কাকমাচির পাতা পাঁচ মিশালি শাকের সাথে খাওয়া যায়। এদের ফলগুলিও খাওয়া যায় অনায়াসে। পাতা ও মূল নানান ঔষধি ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়।
কাকমাচির ভেষজ গুণ ও উপকারিতা
১.যকৃত পাকস্থলী ও জিহ্বার প্রদাহে ১০ থেকে ১২ চা চামচ গাছের রস জ্বাল দিয়ে সকালে ও সন্ধ্যায় খালিপেটে সেবন করতে হবে।
২.জণ্ডিস রোগে ১২ থেকে ১৪ চা চামচ অথবা আধা কাপ পাতার রস দিনে দুইবার সেবন করতে হবে।
৩.শোথ রোগে ১০ থেকে ১২ চা চামচ পাতা অথবা গোটা গাছের রস গরম করে সকাল বিকাল সেবন করতে হবে।
৪.খোসপাঁচড়ায় কাকমাচির ফল ছোট মাছের সাথে ঝোল রেঁধে বা কচি পাতা চিকন করে কেটে মুড়ির সাথে খেলে খোসপাঁচড়া ভালো হয়। এছাড়া সরিষার তেলে ফল ভেজে ঐ তেল শরীরে মালিশ করলে উপকার পাওয়া যায়।
৫.গাউট রোগে পাতার পুলটিস রিউম্যাটিক আর্থারাইটিস বা গাউট আক্রান্ত স্থানে ব্যবহার করলে ব্যথা কমে যায়।
৬.প্রমেহ রোগ হলে কাকমাচীর পাতার রস একটু গরম করে, ছেঁকে নিয়ে সেই জলটি সকালের দিকে ১ চা চামচ ও বিকালের দিকে ১ চা চামচ, খেলে উপকার হবে।
৭.পান্ডু রোগের জন্য কাকমাচী পাতার রস গরম করে,ছেঁকে, সকালে ও বিকালে এক চা চামচ করে খেলে উপকার পাবেন।
৮.ক্রিমি হলে কাকমাচী পাতার রস ১৫ ফোঁটা তা যদি বালক হয় ও ৭ থেকে ৮ চা চামচ দুধ মিশিয়ে খেতে হবে। তবে রসটা গরম করে ছেঁকে নিতে হবে।
৯.স্বাদু কাকমাচীর পাতা অল্প সিদ্ধ করে, জল ফেলে দিয়ে সেই শাক ঘি দিয়ে সাঁতলে শাকের মতো প্রথমে ভাতের সঙ্গে খেলে অরুচি সেরে যাবে।
১০.কোনো জায়গায় বিষাক্ত পোকার কামড়ে বা লোমফোড়া হয়ে কিংবা নখ লেগে বিষিয়ে গিয়ে যদি ফুলে লাল হয়ে ওঠে ও যন্ত্রণা হয়; সেক্ষেত্রে কাকমাচীর গাছ পাতা বেটে, সামান্য গরম করে ঠান্ডা হওয়ার পর অল্প ঘি মিশিয়ে আহত জায়গায় লাগালে ওটার বিষটা কেটে যাবে।
১১.ঘামাচি হলে সেক্ষেত্রে এই কাকমাচী পাতা বাটা হলুদের মতো গায়ে মাখলে ওটা সেরে যায়।
১২.কুষ্ঠ রোগের ক্ষেত্রে কাকমাচি পাতার রস একটু গরম করে, ছেঁকে, এক চা চামচ করে সকালে ও বিকালে ২ বার খেতে হবে।
১৩.ঝাপসা দেখালে তিতো কাকমাচীর পাতা গরম জলে ধুয়ে,থেঁতো করে তার রস এক বা দুই ফোঁটা একবার করে চোখে দিতে হবে। এই রকম একদিন অন্তর ৫ থেকে ৬ দিন ব্যবহার করার পর ঐ ঝাপসা দেখা চলে যাবে, তবে প্রাচীন বৈদ্যদের অভিমত হলো রসটা গরম করে ছেঁকে, ঠান্ডা হলে সেই রস চোখে ফোঁটা দেওয়াই ভালো।
১৪.এলার্জি হলে কাকমাচীর রস ১ চা চামচ গরম করে, ছেঁকে দু’বেলাই খেতে হবে। আর যদি গায়ে চাকা চাকা হয়ে ফুলে ওঠে,তাহলে ঐ গাছ বাটা অল্প গরম করে গায়ে লাগালেও ওটা কমে যাবে।
১৫. এর পাতা এবং ফল সিদ্ধ করা নির্যাস যকৃতের অসুস্থতা, জন্ডিস রোগের জন্য উপকারি।