মুক্তাঝুরি এর গুরুত্ব ও ভেষজ গুণাগুণ
মুক্তঝুরি বা মুক্তবর্ষী হচ্ছে ইউফরবিয়াসি পরিবারের একালিফা গণের একটি সপুষ্পক ছোট বীরুৎ। এর পুষ্পবিন্যাস ক্যাটকিন জাতীয়। ক্যাটনিপের মতো এরও মূলের গন্ধ বেড়ালদের কাছে আকর্ষণীয় হবার কারণে এই উদ্ভিদটি বিশেষভাবে পরিচিত। এটি সাধারণত রাস্তার ধারে, অব্যবহার্য জমিতে, দেওয়ালের ফাটলে ইত্যাদি জায়গায় জন্মায়। তাছাড়াও নদীর পাড়ে, জঙ্গলের ধারে পাথুরে পাহাড়ি এলাকায় ইত্যাদি জায়গাতেও জন্মায়। এটি সাধারণত ছায়াময় ও স্যাঁতসেঁতে জায়গা পছন্দ করে। সমূদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৩৫০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত এই উদ্ভিদটি জন্মায়।
ইংরেজি নাম: Indian Acalypha, Indian Mercury, Indian Copperleaf, Indian Nettle, Three-seeded Mercury
বৈজ্ঞানিক নাম: Acalypha indica
বিস্তার
ভারত, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, ইয়েমেন, ওসিয়ানিয়া, নাইজেরিয়া, নিরক্ষীয় আফ্রিকার অংশগুলিতে, ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপগুলিতে ইত্যাদি নিরক্ষীয় অঞ্চলে এটি ব্যাপকভাবে বিস্তৃত।
বর্ননা
ছোট বীরুৎ, কদাচিৎ অর্ধগুল্ম । কান্ড স্বল্প বা ঘন রোমশ, সরল বা শাখায়িত, আরোহী কোণাকৃতি। পত্র লম্বা বৃন্ত যুক্ত, ২.৫-৫.০ সেমি লম্বা, ডিম্বাকার থেকে হীরকাকার। ডিম্বাকার, দম্ভর, পাদদেশ গোলাকার থেকে কীলকাকার, ৫-শিরাল। পুষ্প বিন্যাস স্পাইকেট, উভলিঙ্গ, অক্ষীয়, প্রায়। ১০ সেমি লম্বা, সাধারণত ৫ সেমি লম্বা। বৃত্যংশ ত্রিকোণাকৃতি ডিম্বাকার, ১ মিমি লম্বা, সিলিয়া যুক্ত। পুং পুষ্প অর্ধবৃন্তক, মুকুল গুটিকাকার।
স্ত্রী পুষ্প পুষ্প মঞ্জরীদন্ডের অক্ষে শিথিল ভাবে বিন্যস্ত, মঞ্জরীপত্র বৃহৎ, এক পুষ্প যুক্ত, প্রায় ৩ X ১৪ মিমি, দম্ভর, রোমশ বিহীন, দন্ত স্থূলা, গর্ভাশয় অর্ধ-ত্রিখন্ডিত, ০.৫ মিমি আড়াআড়ি, গুটিকাযুক্ত, রোমশ, গর্ভদন্ড ২ মিমি লম্বা, ঝালর সদৃশ, সাদা।
ফলের বোঁটা ফল অপেক্ষা ছোট ও সবুজ; ফুল ক্ষুদ্র তিন অংশে বিভক্ত, অতি সূক্ষ্মভাবে খাঁজকাটা; বীজকোষ ছোট একবীজী, বীজ গোলাকৃতি, হালকা খয়েরী, তীক্ষ্ণ ও মসৃণ।
ভেষজ গুণাগুণ
১.শিশুদের সর্দি হলে মুক্তোঝুরির গাছ ও পাতা শুকিয়ে গুঁড়ো করে ২ গ্রাম পরিমাণ গুঁড়ো সিকি কাপ পানিতে সিদ্ধ করে ৩-৪ চামচে কমিয়ে এনে ছেঁকে অল্প চিনি দিয়ে শিশুদের খেতে দিলে বুকে বসে যাওয়া সর্দি উঠে যায়।
২.শিশুর মলের সমস্যা হলে বয়স ২ থেকে ৪ বৎসর পর্যন্ত পায়খানা কষে গিয়েছে, হচ্ছে না, অবশ্য সাধারণতঃ এটা হয় শ্লেষ্মবিকার থাকলে এবং মায়ের বুকের দুধ বা পানীয় দুধটি জীর্ণ না হলে। সেক্ষেত্রে মুক্তাঝুরির মূল ২ গ্রাম ৫/৬ চা-চামচ জলে বেটে সেটাকে ন্যাকড়ায় ছেঁকে ওই জলটা খেতে দিলে দাস্ত পরিষ্কার হয়ে যায়।
৩.শিশুর ক্রিমি হলে প্রায়ই কোঁত দিতে থাকে, পেট ব্যথা করে, তার জন্য পা গুটিয়ে নেয়। এ অবস্থায় মুক্তাঝুরির পাতার রস গরম করে ছেঁকে ঠাণ্ডা হওয়ার পর তা থেকে ১৫ থেকে ৩০ ফোঁটা ২ চামচ পানির সঙ্গে মিশিয়ে শিশুকে খাওয়ালে ঐ ক্রিমির উপদ্রব চলে যাবে।
৪.শিশুর কানের ব্যথায়, বিশেষ করে পাঁচ বছর পর্যন্ত বয়সী শিশুদের কানে কট কট করলে এজন্য এর পাতার ক্বাথ ১ ফোঁটা করে সকাল-বিকাল কানে দিলে যন্ত্রণা সেরে যায়।
৫.শিশুদের জিভে ঘা হলে মুক্তাঝুরির রস নিম তেলের সঙ্গে ফেটিয়ে জিভে লাগালে ঘা সেরে যায়।
৬.শিশুর মাথায় ঘা হলে কাচা হলুদসহ সাথে মুক্তাঝুরির গাছ বেটে লাগালে ঘা পরিষ্কার হয় এবং আস্তে আস্তে তা সেরে যায়। কিন্তু শিশুর ঠাণ্ডা বা সর্দি লাগাবস্থায় এ প্রলেপ দেয়া নিষেধ।
৭.পতঙ্গে কামড়ালে তখন আক্রান্ত স্থানে পাতা বাটার প্রলেপ দিলে জ্বালা-যন্ত্রণা কমে যায়।
৮. বাতের ব্যথা কমাতে মুক্তঝুরি পাতার রস তিল তেলের সঙ্গে জ্বাল দিয়ে সে তেল মালিশ করলে বাতের ব্যথা সেরে যায়।
৯. শিশুর হাঁপানি হলে পুরনো ঘি এবং পাতার রস মিশিয়ে অল্প গরম করে আস্তে আস্তে বুকে মালিশ করলে কিছুক্ষণের মধ্যে হাপটা কমে যাবে।
১০.শিশুর ঘন ঘন তড়কা হতে থাকলে মুক্তাঝুরির সমগ্র গাছ পাতাসহ শুকনো গাছ ২ গ্রাম সিকি কাপ জলে সিদ্ধ করে, ৩/৪ চা-চামচ থাকতে নামিয়ে, ছেকে, সেই ক্বাথ একটিপ সৈন্ধব লবণ মিশিয়ে খাওয়ালে শিশুর ওই তড়কাটা থাকে না। তবে কাঁচা রসও দেওয়া যায়, তখন ওই রসটাকে গরম করে, তা থেকে ৩০ ফোঁটা রস ৩/৪ চা-চামচ জলে মিশিয়ে খাওয়াতে হয়।
১১.. ছুলি রোগ হলে মুক্তঝুরির পাতা বেটে হলুদের মতো ওই সব জায়গায় মাখলে ওটা সেরে যায়, তবে প্রত্যহ ব্যবহার করার দরকার নেই, একদিন বা দু’দিন অন্তর লাগাতে হবে।
১২. শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্যে হলে তার জন্য তাদের পেটে যন্ত্রণা হয়। সেক্ষেত্রে মক্তোঝুরির পাতা বেটে একটু ঘি মিশিয়ে পানের বোঁটার মুখে লাগিয়ে মলদ্বারে এক প্রবেশ করিয়ে দিলেই ১০/১৫ মিনিটের মধ্যেই দাস্ত হয়ে যাবে।