Indian Wild Dog, Dhole
রামকুত্তা, এশীয় বুনো কুকুর, ভারতীয় বুনো কুকুর বা ঢোল কেনিডি (Canidae) পরিবারের অন্তর্গত এক প্রজাতির বন্য কুকুর। এদের আবাস দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। প্রজাতিটি Cuon (কুয়ন) গণভূক্ত একমাত্র জীবিত প্রজাতি।
ইংরেজি নাম: Indian Wild Dog, Dhole
বৈজ্ঞানিক নাম: Cuon alpinus
বর্ণনাঃ
রামকুত্তা(কুকুর) আকারে নেকড়ে ও শিয়ালের মাঝামাঝি। লম্বায় ৪৫-৬০ সেন্টিমিটার, লেজ ২০-২৭ সেন্টিমিটার। ওজন ১০-২০ কেজি, পা খাটো, লেজ ঝোপালো ও নাকের ওপরের অংশ খানিকটা উঁচু। মাথা ও দেহের ওপরের অংশের লোম বাদামি-লাল। ঋতুভেদে রং হালকা থেকে গাঢ় হতে পারে। কানের ভেতর, মুখের নিচ, গলা ও দেহের নিচের অংশের রং সাদা। ঝোপালো লেজের ডগা কালো।
স্বভাবঃ
রামকুত্তা সামাজিক প্রাণী। অনেকগুলো সদস্য মিলে প্রায় গোত্রের মত বড় বড় দলে এরা বসবাস করে। শিকার ধরার সময় এসব দল আবার ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে যায়। বহু সময় ধরে এরা শিকারকে তাড়া করে আর শিকার একসময় ক্লান্ত হয়ে গেলে দলবদ্ধভাবে ঘিরে ফেলে এবং শিকারের পেট চিরে মৃত্যু নিশ্চিত করে। শিকার করা প্রাণী এদের ছানাদের আগে খেতে দেয়, পরে নিজেরা খায়, যেটা অন্যসব সামাজিক কেনিডদের চেয়ে ব্যতিক্রম। মানুষকে ভয় পেলেও রামকুত্তা বন্য শুকর, বুনো মহিষ বা বাঘের মত বড় বড় প্রাণী আক্রমণ করতে ভয় পায় না। এরা কুকুরের মতো ঘেউ ঘেউ করে না, বরং হুইসেল বা শিস দেওয়ার মতো করে শব্দ করে।
প্রজননঃ
এদের প্রজননকাল সেপ্টেম্বর-ফেব্রুয়ারি । রামকুত্তা(কুকুর) মাটিতে গর্ত খুঁড়ে বা পাহাড়ের গুহায় বাস করে। স্ত্রী বনকুকুর ৬০-৬৫ দিন গর্ভধারণের পর গর্তে বা গুহায় চার থেকে ছয়টি বাচ্চা দেয়। বাচ্চা পালনে দলের অন্য সদস্যরাও সাহায্য করে। বাচ্চারা এক বছরে পূর্ণবয়স্ক হয়। এরা ১০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে।
খাদ্য তালিকাঃ
মধ্যম আকারের তৃণভোজী প্রাণী এদের প্রধান খাদ্য। খাদ্যস্বল্পতার সময় ফল ও সরীসৃপ খেয়েও বাঁচতে পারে।
বিস্তৃতিঃ
উত্তর কোরিয়া এবং পাকিস্তানে দেখা যায। এটি একসময় কাশ্মীর থেকে লাদাখ অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত আলপাইন স্টেপসে বাস করত। মধ্য এশিয়ায়, ঢোল প্রধানত পার্বত্য অঞ্চলে বাস করে; এর পরিসরের পশ্চিম অংশে, এটি বেশিরভাগই আল্পাইন তৃণভূমি এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চ-মন্টেন স্টেপসে বাস করে, যখন পূর্বে, এটি প্রধানত মন্টেন তাইগাসে বিস্তৃত হয় এবং কখনও কখনও উপকূলরেখা বরাবর দেখা যায়। ভারত, মায়ানমার, ইন্দোচীন, ইন্দোনেশিয়া এবং চীনে, এটি আল্পাইন অঞ্চলে বনাঞ্চল এবং মাঝে মাঝে সমতল অঞ্চলেও দেখা যায়।
অবস্থাঃ
আবাসস্থল ধ্বংস, শিকার কমে যাওয়া, অন্যান্য শিকারী প্রাণীর সাথে প্রতিযোগিতা, নির্মূল প্রক্রিয়া, গৃহপালিত কুকুরবাহিত বিভিন্ন রোগের প্রকোপ প্রভৃতি কারণে এদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে আসছে। সেজন্য আইইউসিএন রামকুত্তাকে বিপন্ন বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।