ইঁদুরের উপদ্রব থেকে বাঁচার উপায়

বাংলাদেশে ইঁদুরের আক্রমণে বছরে আমন ধানের শতকরা ৫-৭ ভাগ, গম ৪-১২ ভাগ, আলু ৫-৭ ভাগ, আনারস ৬-৯ ভাগ নষ্ট করে। গড়ে মাঠ ফসলের ৫-৭ শতাংশ এবং গুদামজাত শস্য ৩-৫ শতাংশ ক্ষতি করে।ইঁদুর শতকরা ৭ থেকে ১০ ভাগ সেচ নালাও নষ্ট করে থাকে। সেটা ফসলের উৎপাদনের ওপর প্রভাব ফেলে।ইঁদুর শুধু আমাদের খাদ্যশস্য খেয়ে নষ্ট করে না বরং তা কেটে কুটে অনেক ধ্বংস করে। এদের মলমূত্র, লোম খাদ্য দ্রব্যের সাথে মিশে টাইফয়েড, জন্ডিস, চর্মরোগ ও ক্রিমিরোগসহ ৬০ ধরনের রোগ ছড়ায়।প্লেগ নামক মারাত্মক রোগের বাহক হচ্ছে ইঁদুর।ইঁদুর মাঠের ও ঘরের শস্য নষ্ট ছাড়াও বৈদ্যুতিক তার, টেলিফোন তার ও কম্পিউটার যন্ত্র কেটে নষ্ট করে। এছাড়া বড় সড়ক বাঁধ,রেললাইনে গর্ত করে তা ক্ষতিগ্রস্ত করে।বন্যার পানি ঢুকে তা নষ্ট হয়।

ইঁদুর মারার কলাকৌশল

ইঁদুর সাধারণত দুইভাবে দমন করা যায়।

১. অরাসায়নিক দমন ব্যবস্থা ও ২. রাসায়নিক দমন ব্যবস্থা।

অরাসায়নিক দমন ব্যবস্থা

১. ঘরবাড়ি ও ক্ষেতের আশপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা;

২. গুদামঘর পরিষ্কার রাখা এবং গুদামের দরজার ফাঁক দিয়ে যেন ইঁদুর ঢুকতে না পারে তেমন ব্যবস্থা করা। এছাড়া গুদামঘরের ছিদ্র বা ফাটল সিমেন্ট দিয়ে ভালোভাবে বন্ধ করে দেয়া;

৩. ধান, গম ইত্যাদির গোলা বা ডোল সরাসরি মাটিতে না রেখে মাচার ওপর ঘরে রাখা এবং মাচার প্রতিটি পিলার মসৃণ টিন দিয়ে এমনভাবে জড়িয়ে দেয়া যেন ইঁদুর তা বেয়ে উঠতে না পারে। গুদামের শস্য টিনের পাত্রে সংরক্ষণ করা;

০৪. নারিকেল গাছের গোড়ায় টিনের মসৃণ পাত এমনভাবে জড়িয়ে দেয়া যেন ইঁদুর তা বেয়ে উঠতে না পারে;

৫. ইঁদুর ভক্ষণকারী প্রাণীকে সংরক্ষণ করা;

৬. ইঁদুরের গর্ত খুঁড়ে, গর্তে পানি ঢেলে ইঁদুরকে  বের করে পিটিয়ে মারা;

৭. ইঁদুরের গর্তে মরিচ পোড়ার ধোঁয়া দিয়ে ইঁদুরকে মারার ব্যবস্থা করা;

৮.বিভিন্ন প্রকার ফাঁদ পেতে ইঁদুর মারার ব্যবস্থা নেয়া।

রাসায়নিক দমন পদ্ধতি

এ পদ্ধতিতে ইঁদুরকে দমনের জন্য দুই ধরনের ইঁদুরনাশক ব্যবহার করা হয়। যথাÑ

১. তীব্র বিষ : তীব্র বিষ খাওয়ার সাথে সাথে ইঁদুর মারা যায়। তীব্র বিষ হচ্ছে জিংক ফসফাইড। তীব্র বিষ ব্যবহারের কিছু কিছু অসুবিধা আছে তা হচ্ছে, জিংক ফসফাইড দ্বারা তৈরিকৃত বিষটোপ ইঁদুর পরিমিত মাত্রায়  খাওয়ার আগে অল্প কিছুটা মুখে দিয়ে পরখ করে ও অসুস্থ হয়ে পড়ে কিন্তু মরে না। আবার পরিমিত মাত্রায় বিষটোপ খাওয়ার পর একসাথে অনেক ইঁদুর মারা যেতে দেখে বিষটোপের প্রতি অনীহা লক্ষ করা যায়।

২. দীর্ঘস্থায়ী বিষ: দীর্ঘস্থায়ী বিষ খাওয়ার সাথে সাথে ইঁদুর মারা যায় না, ইঁদুর মারা যেতে ৫ থেকে ১৩ দিন সময় লাগে। দীর্ঘস্থায়ী বিষ দিয়ে তৈরিকৃত বিষটোপ ইঁদুর খাওয়ার পর ইঁদুরের রক্ত জমাট বাঁধার  ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে যায়, ফলে ইঁদুরের নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে ও ক্রমেই ইঁদুর দুর্বল হতে থাকে এবং ৫-১৩ দিনের মধ্যে ইঁদুর মারা যায়। দীর্ঘস্থায়ী বিষ প্রয়োগ করে অনেক ইঁদুর মারা সম্ভব। ৯০-১০০ শতাংশ ইঁদুর মারা যাবে (খুবই কার্যকর)। দমন খরচ বেশি। কারণ বেশি দিন বিষটোপ প্রয়োগ করতে হয়।

৩. ইঁদুরের গর্তে বিষবাষ্প প্রয়োগ করেও ইঁদুরকে মারা যায়। যথা- সাইনোগ্যাস, ফসটক্সসিন ট্যাবলেট।

বিষটোপ প্রয়োগ

১.ঘরে অথবা গুদামে অথবা দোকানে যদি গর্ত থাকে তবে নতুন গর্তের সম্মুখে পাত্রে বিষটোপ প্রয়োগ করতে হবে। যদি গর্ত না থাকে তবে ইঁদুরের সম্ভাব্য উপস্থিতির স্থানগেুলোতে বিষটোপ প্রয়োগ করতে হবে;

২.বিষটোপ একই পাত্রে একই স্থানে কমপেক্ষ ৩-৪ রাত্র রাখতে হবে;

৩. গুদামে অথবা ঘরে ১০ হাত পরপর নতুন গর্তের মুখে একটি বিষটোপ পাত্র রাখতে হবে;

৪. বিষটোপ পাত্র হিসেবে নারিকেলের খোলস, কলাগাছের খোলস, মাটির ছোট ছোট পাত্র, বাঁশ অথবা পাইপ ব্যবহার করা যেতে পারে;

৫. প্রতিটি পাত্রে ৫০-১০০ গ্রাম বিষটোপ প্রয়োগ করতে হবে;

৬. বহুমাত্রা বিষটোপের ক্ষেত্রে যতদিন ইঁদুর খাওয়া বন্ধ না করে ততদিন পাত্রে বিষটোপ রাখতে হবে;

৭. ঘরবাড়ি, গুদাম অথবা দোকানে কমপক্ষে ২০-৩০ দিন পরপর বিষটোপ প্রয়োগ করতে হবে।

৮. জিংক ফসফাইড বিষটোপ ঘন ঘন ব্যবহার করা উচিত না;

৯. গুদামে অথবা শিল্পকারখানায় ইঁদুরের উপদ্রব থাকলে স্থায়ী কয়েকটি বিষটোপ পাত্র রাখার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে বহুমাত্রা বিষটোপ প্রয়োগ করতে হবে;

১০.আনারস বাগানে ফল ধরার সময় ১২টি বিষটোপ পাত্র প্রতি একরে স্থাপন করতে হবে। প্রতি পাত্রে দীর্ঘমেয়াদি  ৫০ গ্রাম করে বিষটোপ প্রয়োগ করতে হবে। বিষ পাত্র ফল তোলার আগে পর্যন্ত আনারস বাগানে রাখতে হবে;

১১.নারিকেল গাছের মাথায় বিষটোপ ছোট পলিথিনে করে সুঁতা দিয়ে মুখ বেঁধে রাখতে হবে। নারিকেল বাগান হলে প্রত্যেক গাছে বিষটোপ প্রয়োগ না করে প্রতি ১০টি নারিকেল গাছের জন্য একটি গাছে বিষটোপ মাসে একবার প্রয়োগ করতে হবে।

ইঁদুর তাড়ানোর পদ্ধতি,ইঁদুর মারার কল,ইঁদুর মারার বিষ,ইঁদুর দূর করার উপায়,ইঁদুরের বৈশিষ্ট্য,ইঁদুরের উপদ্রব থেকে বাঁচার উপায়,ইঁদুর ধরার সহজ উপায়,ঘর থেকে চিকা দূর করার উপায়

ঠোঁটের চামড়া ওঠার কারণ ও প্রতিকার - Causes and remedies for lip skin
কিডনি সুস্থ রাখে যেসব খাবার - Foods that keep the kidneys healthy
হালিম তৈরির রেসিপি
মারহাটিটিগা গাছ ও ফুলের গুনাগুন
জয়ন্তী বৃক্ষের ভেষজ গুণাগুণ
অপরাজিতা গাছের গুনাগুন
ভুইকুমড়া গাছের উপকারিতা
ইঁদুরে কামড়ালে যা করবেন
সূর্যমুখী তেলের উপকারিতা
ইলিশ মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা কী - What are the advantages and disadvantages of Hilsa fish?