তিসি বীজ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ব্যবহার-Flaxseed benefits and harms and uses
তিসি তেল ও আঁশ উৎপাদনকারী গুল্ম। মিশরে লিনেন জাতীয় বস্ত্র তৈরীতে এর ব্যবহার শুরু হয়। বর্তমানে তেল বীজ ও আঁশ হিসাবে ব্যবহার হয়।
এটি ৩০ থেকে ৮০ সেঃ মিঃ উঁচু হয়। ফুলনীল, সাদা বা হালকা গোলাপী হয়। প্রতিটা ফুলে পাঁচটি করে পাপড়ি থাকে। ভোর বেলা ফুল ফোটে এবং বিকালে ঝড়ে যায়। কাণ্ডের বাকল বা ছাল থেকে আঁশ তৈরি হয়। আশ সংগ্রহের জন্য উদ্ভিদের কাণ্ড জলের নিচে ৭-২১ দিন রেখে আঁশ সংগ্রহ করা হয়। জাগ দেওয়া ও আঁশ সংগ্রহ পাট হতে আঁশ সংগ্রহের মতো।
তিসি বীজ দু ধরনের হয়, বাদামী অথবা হলুদ রঙের। হলুদ রঙের বীজগুলিকে golden linseeds ও বলে। তিসি ফাল্গুন-চৈত্র মাসে পাকে। পাকলে গাছ এবং ফল সোনালী বা কিছুটা তামাটে রং ধারণ করে। ফল ভালভাবে পাকার পরই ফসল কেটে বা উপড়িয়ে নেয়ার পর গাছগুলো ছোট ছোট আঁটি বেঁধে বাড়ির আঙ্গিনায় স্তুপ করে রাখা যায়। জীবনকাল ১০০-১১৫ দিন।
ইংরেজি নাম: Flaxseed
বৈজ্ঞানিক নাম: Linum usitatissimum
তিসি বা ফ্ল্যাক্স সিডস কি?
তিসি এক ধরনের ওষুধ, একে শণের বীজ ও বলা হয়। বিভিন্ন স্থানের কারণে এর আকৃতি, রং ও রূপ ভিন্ন হয়। তিসির আঁশ থেকে দড়ি, মোটা কাপড় এবং চটের কাপড় তৈরি করা যায়। এই বীজ লাল,সাদা, হালকা কালো এবং হলুদ বর্ণের হয়। এর বীজ থেকে তেল বের করা হয়।
তিসির বীজের পুষ্টিগুণ
একাধিক গবেষণা অনুসারে জানা যায় মাত্র এক চামচ তিসি বীজ (Flax Seed) খেলেই শরীরে প্রবেশ করে প্রায় ১.৩ গ্রাম প্রোটিন, ২ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১৯ গ্রাম ফাইবার, ১.৫৯৭ এমজি ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, দৈনিক চাহিদার ৮ শতাংশ ভিটামিন বি১, ২ শতাংশ ভিটামিন বি৬, ২ শতাংশ ফলেট, ২ শতাংশ আয়রন, ৭ শতাংশ ম্যাগনেসিয়াম, ২ শতাংশ ক্যালসিয়াম, ৪ শতাংশ ফসফরাস এবং ২ শতাংশ পটাশিয়াম। এই উপাদানগুলি শরীরে প্রবেশ করা মাত্র এমন খেল দেখায় যে ছোট-বড় একাধিক রোগ-ব্যাধি ধারে কাছে ঘেঁষার সাহসই পায় না।
তিসি বীজের উপকারিতা
তিসির বীজের মধ্যে লুকিয়ে আছে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা। যেমন-
কোলেস্টেরল ব্যালেন্স করবে
কোলেস্টেরল আমাদের শরীরে প্রয়োজন, কিন্তু তা থাকতে হবে পরিমাণমতো বা ব্যালেন্স থাকতে হবে কমবেশি কিছু না। তিসির গুণ হলো আমাদের শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল- এলডিএল কমাবে, আর ভালো কোলেস্টেরল- এইচডিএল বাড়াবে। তিসি শরীরের মোট কোলেস্টেরল এবং কম ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন (এলডিএল বা ‘খারাপ’) কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এটি উচ্চ কোলেস্টেরলযুক্ত ব্যক্তিদের এবং অতিরিক্ত ওজনযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো কাজ করে বলে গবেষণায় এসেছে।
ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
তিসি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অন্ত্রের গতি বাড়ায়। যার কারণে ডায়াবেটিস রোগীদের অন্ত্র সচলতায় গতি আসে, যার কারণে হজমে গণ্ডগোল থাকে না, বিপাকীয় উন্নতি হয়ে রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণের কিছুটা উন্নতি করে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
অধিক ফাইবার যুক্ত খাবার-দাবার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তিসির বীজে সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে যে, নিয়মিত ৩০ গ্রাম ফাইবার খেলে শরীর থেকে অতিরিক্ত মেদ ঝরানো যায়।
ওজন কম করার সমস্ত কার্যকরী উপায়ের মধ্যে অন্যতম হল তিসির বীজের ব্যবহার। এটি শরীর থেকে অতিরিক্ত মেদ গলাতে সাহায্য করতে পারে। দ্রুত ওজন কম করতে চাইলে নিয়মিত তিসির বীজ খেতে হবে। এর সাহায্যে ১০ দিনে ৫ কেজি ওজন কম করতে পারবেন।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
তিসি ডায়েটারি ফাইবারের একটি ভালো উৎস। যার কারণে আমাদের পেট, ইন্টেস্টাইন, কোলনের ওয়ালে লেগে থাকা দূষিত উপাদান বের করতে অনন্য ভূমিকা পালন করে। অন্ত্রের ভেতরে থাকা জ্বলীয় পানি, যা বের হওয়ার কথা কিন্তু বের হয়নি, সেটি শোষণ করার ক্ষমতা রয়েছে তিসির ফাইবারে।
হৃৎপিণ্ড ভালো রাখে
তিসির বীজ অ্যামিনো অ্যাসিড, আর্জিনাইন এবং গ্লুটামাইন দ্বারা সমৃদ্ধ। এসব উপাদান হৃৎপিণ্ড ভালো রাখে। তিসি বীজ রক্তচাপ কমায়, খারাপ কোলেস্টেরল কমায়, ধমনীতে কোনও বস্তু জমা হওয়া রোধ করে। এ কারণে এই বীজ পরোক্ষভাবে স্ট্রোক বা হৃদরোগও প্রতিরোধ করে।
ক্যানসারের ঝুঁকি কম করে
তিসির বীজে লিগন্যান থাকায় এটি কোলন, প্রসটেট, স্তনের ক্যানসার রোধ করে। এর অ্যান্টি অ্যাঞ্জিওজেনিক উপাদান শরীরে টিউমার হতে বাধা দেয়।
ত্বক এবং চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়
নিয়মিত কয়েক চামচ করে তিসি বীজ খাওয়া শুরু করলে শরীরের ভিতরে এমন কিছু উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যার প্রভাবে ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি তো ঘটেই, সেই সঙ্গে বলিরেখা কমতেও সময় লাগে না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই স্কিনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় চোখে পড়ার মতো। তবে তিসির উপকারিতা এখানেই শেষ নয়, ডার্মাটোলজিস্টদের মতে রোজের ডায়েটে এই প্রাকৃতিক উপাদানটিকে অন্তর্ভুক্ত করলে স্ক্যাল্পে রক্তের প্রবাহ যায় বেড়ে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মাত্রাতিরিক্ত হারে হেয়ার ফল হওয়ার আশঙ্কা যায় কমে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
উচ্চ রক্তচাপ – যেই রোগের প্রভাব আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি। তাই আমাদের খাদ্য তালিকাকে এমনভাবে সাজানো উচিত যা আমাদেরকে এহেন সমস্যা থেকে পরিত্রাণ দিবে।
তিসির বীজের অনন্য সব গুনের মধ্যে একটি হল এটি উচ্চ রক্তচাপ কমায়। কয়েকটি গবেষনায়ও প্রমানিত হয়েছে এই তথ্য। তাই যারা এই রোগে ভুগছেন তাদের প্রতিকার হিসেবে এবং যারা সুস্থ আছেন তাদের প্রতিরোগ হিসেবে নিয়মিত ৩০গ্রাম তিসির বীজ খাওয়া উচিত।
উচ্চ রক্তচাপ কমায়
উচ্চ রক্তচাপের মাত্রা বা উচ্চ রক্তচাপ শরীরের সুস্থ কার্যকলাপের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তিসি বীজ রক্তচাপ মাত্রা কমাতে কার্যকর। জার্নাল মিট সায়েন্স দ্বারা পরিচালিত একটি গবেষণায় প্রকাশ করা হয়েছে যে, নিয়মিত তিসি বীজ খেলে রক্তচাপ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেতে পারে।
মেয়েদের নানা সমস্যায়
স্তনে ব্যথা (মাস্টালজিয়া) ও মাসিক চক্রে সমস্যা থাকলে তিসি খেলে স্তনের ব্যথা কমিয়ে দেয়, যা মাসিক চক্রের শুরুতে ঘটে। সেই সঙ্গে মাসিক চক্রে সমস্যা থাকলে তা দূর করতে সাহায্য করে।
তিসি খাওয়ার সঠিক উপায়
বাজারে দু’ধরণের তিসি পাওয়া যায়- হলুদ এবং বাদামি। দু’টোই সমান পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। আপনি তিসির বীজ বিভিন্ন খাবারে মিশিয়েও খেতে পারেন। তবে সবচেয়ে ভালো হয় গুঁড়ো করে সালাদ বা পানিতে মিশিয়ে খাওয়া।
তিসি বীজ এর অপকারিতা
* আপনি যদি বেশি ফ্ল্যাক্সসিড বা তিসির বীজ খান এবং কম পানি পান করেন তবে এটি অন্ত্রে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
* সঠিক পরিমাণে তিসি বীজ খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় হয়, যেখানে অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে ডায়রিয়া হতে পারে।
* আপনি যদি গর্ভবতী হতে চান তবে আপনাকে তিসির বীজ বা ফ্ল্যাক্সসিড খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে।
* খুব বেশি তিসির বীজ খাওয়ার ফলে অ্যালার্জি হতে পারে। নিম্ন রক্তচাপ, শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যারও সম্মুখীন হতে পারেন।
* আপনি তিসির বীজ বা ফ্ল্যাক্সসিড ব্যবহার করে আপনার ডায়েটে আরও অনেক পুষ্টি যোগ করতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে, প্রায় এক চা চামচ তিসির বীজ শরীরে 37 ক্যালোরি সরবরাহ করে, যার মধ্যে ফাইবার, প্রোটিন, কপার এবং জিঙ্কের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি রয়েছে।