ব্রাহ্মী লতার উপকারিতা ও ভেষজ গুণাগুণ - waterhyssop Benefits and Herbal Properties
waterhyssop

ব্রাহ্মী লতার ঔষধি গুণাগুণ

ব্রাহ্মী, ব্রাহ্মীশাক, আধাবিরানি, ধূপকামিনী,মালঞ্চ হচ্ছে প্লান্টাগিনাসি পরিবারের একটি উদ্ভিদ। এটি এক ধরনের লতা জাতীয় শাক। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভিজা, স্যাঁতস্যাঁতে মাটিতে এ লতার বৃদ্ধি ঘটে। লতার প্রত্যেকটি গাঁট থেকে শিকড় বের হয়। এদের কাণ্ড অত্যন্ত কোমল এবং রসযুক্ত। পাতা আধা ইঞ্চি বা আরও একটু বড় হতে পারে। ছোট আকৃতির ঝোপালো লতা এটি। শাক হিসেবে মানুষ খেয়ে থাকে।

ইংরেজি নাম: waterhyssop, thyme-leafed gratiola, water hyssop, herb of grace, Indian pennywort

বৈজ্ঞানিক নাম: Bacopa monnieri

ঔষধি গুণাগুণ

ব্রাহ্মী শাক হাজার বছর ধরে আয়ুর্বেদে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ব্রাহ্মী ফুল সবচেয়ে বেশি ভেষজ উপাদান হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এটি মস্তিষ্কের জন্য খুব উপকারী। তাই একে ব্রেন বুস্টারও বলা হয়। তবে ব্রাহ্মীর আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা দেহের অনেক সমস্যা নিরাময় করতে পারে। খুব সাধারণ এই শাকের রয়েছে অসাধারণ কার্যক্ষমতা। নানান জটিল রোগ প্রতিরোধে দারুণ কার্যকর এই শাক। আসুন এই বৈশিষ্ট্যগুলি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক -

১.শিশুদের কফ ও কাশিতে

বাচ্চাদের কফ ও কাশি বেশি হয়। ব্রাহ্মী শাকের রস সামান্য গরম করে তা থেকে বয়সানুপাতে এক চা-চামচ মধুর সঙ্গে মিশিয়ে দিনে ২ বার ৫ থেকে ৭ দিন খাওয়ালে কফ ও কাশি সেরে যায়।

২.স্বরভঙ্গ বা গলাভাঙ্গায়

প্রায়ই গলা ভেঙে যাওয়া বা গলা বসে যাওয়ার সমস্যা অনেকেরই রয়েছে। এমন হলে ব্রাহ্মী শাকের রস সামান্য গরম করার পর তা থেকে ২-৪ চা-চামচ মাত্রা নিয়ে তাতে এক চামচ মধু মিশিয়ে দিনে ২ বার খাওয়ানো যেতে পারে। পাশাপাশি লবণ জলে মিশিয়ে দিনে ২ থেকে ৩ বার গার্গল করতে হবে। 

৩.ক্যান্সার রোধে উপকারি

এই শাকটিতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এই উপাদানটি শরীর থেকে নানাবিধ ক্ষতিকর উপাদানদের বের করে দিয়ে একদিকে ক্যান্সার কোষের জন্ম রোধ করে এবং অন্যদিকে সার্বিকভাবে শরীরের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে।

৪.বসন্তরোগে

গায়ে গুটি বের হলেই ব্রাহ্মী লতার পাতা ও কচি ডাটা বেটে তার। রস ৬ চামচ মধুর সাথে খেলে খুব তাড়াতাড়ি সেরে যায়।

৫.টাইপ ২ ডায়াবেটিসের জন্য উপকারি

ব্রাহ্মী শাকের এন্টিডিবায়োটিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই শাক নিয়মিত গ্রহণের মাধ্যমে ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এ ছাড়া ব্রাহ্মীতে অ্যান্টি-হাইপারগ্লাইসেমিক বৈশিষ্ট্যও পাওয়া যায়, যার কারণে ব্রাহ্মীর প্রভাবে টাইপ -২ ডায়াবেটিসেও নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

৬.রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে

অতিরিক্ত টেনশনের কারণে ব্লাড প্রেশার ওঠা নামা করে। ব্রাহ্মী শাক রক্তচাপকে স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়া, রক্তচাপ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার কারণে যাতে কোনও ধরণের ক্ষতি না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখে।

৭.স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে

ব্রাহ্মী লতার পাতা ও ডালের রস ৩০ মিলিলিটার এবং দেড় চামচ চিনি মিশিয়ে রোজ সকালে খেলে স্মৃতিশক্তি যথেষ্ট বেড়ে যায়। হাঁপানির টান উঠলে ও ব্রাহ্মী লতার শুকনা পাতা ও কাণ্ডের রস ৩০ মি.লি. তিন চামচ মধুর সাথে খাওয়ালে রোগীর শ্বাসকষ্ট অনেক কমে।

৮.রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি

নিয়মিত এই শাকটি খাওয়া শুরু করলে শরীরে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি এর মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে জোরদার করে তুলতে সাহায্য করে। এর ফলে অনায়াসেই রোগের সংক্রমণ থেকে দূরে থাকা যায়।

৯.উন্মাদ রোগে

ব্রাহ্মী লতার পাতার  রস ২০ মি.লি. কুড়-চূর্ণ ২ গ্রাম এবং মধু ২ চামচ এ তিনটি একসাথে মিশিয়ে দিনে একবার সকালের দিকে খাওয়ালে উন্মাদ রোগ প্রশমিত হয়।

১০.শ্বাসকষ্টের সমস্যায় কার্যকর

যাদের হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস বা শ্বাসকষ্টের মতো শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগ রয়েছে তাদের ব্রক্ষ্মীর নির্যাস বা রস খুব উপকারী। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এবং অ্যাডাপ্টোজেনিক বৈশিষ্ট্যের কারণে ফুসফুসগুলি শক্তিশালী। এটি শ্বাস নালীর প্রদাহ এবং প্রদাহজনিত সমস্যাও সরিয়ে দেয়।

১১.বাত রোগে

এ বাতটা এমন যে, ক্রমশ শরীরে অবসাদের ঝিমুনি আসে, এই অবস্থা চলতে থাকলে ব্রাহ্মীশাকের রস একটু গরম করে তা থেকে ২ চা-চামচ নিয়ে প্রত্যহ একবার অথবা ২ বার খেতে হবে এর দ্বারা শরীরটা ঝরঝরে হবে। এছাড়াও ব্রাহ্মী পাতার রস চার চামচ এবং তার অর্ধেক (দু’চামচ) তারপিন তেল একসাথে মিশিয়ে মালিশ করলে উপকার হয় ।

১২.ছোটদের সর্দি ও বুকে শ্লেম্মা বসে গেলে

ছোট ছেলে মেয়েদের বুকে সর্দি গেলে এবং নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হলে, এক চামচ ব্রাহ্মী লতার রস খাওয়ালে সামান্য বমির সাথে সর্দি ও বুকের কষ্টকর শ্লেষ্ম সহজেই বের হয়ে যাবে।

১৩.মূত্রকৃচ্ছ্রতায়

যাঁরা এর সঙ্গে কোষ্ঠবদ্ধতায় ভুগছেন, তাঁরা সকালে এবং বিকালে দু’বার করে ২/৩ চা-চামচ’ক’রে ব্রাহ্মী শাকের রস খাবেন; তবে খাওয়ার সময় ৫/৬ চা-চামচ দুধ মিশিয়ে নেবেন, এর দ্বারা মূত্রকৃচ্ছ্রতাটাও কমে যাবে, দাস্তটাও পরিষ্কার হবে।

১৪.শূক্রতারল্যে

এটা অস্বস্তিকর ও দুঃখকর রোগ। এটি হ’য়ে পড়লে সামলানোর জন্যে প্রত্যহ সকালের দিকে ২ চা-চামচ করে ব্রাহ্মীশাকের রস এক কাপ দুধে মিশিয়ে সপ্তাহখানেক খেলে এটাতে নিশ্চয় উপকৃত হবেন।

১৫.অপস্মার বা মৃগী রোগ সারাতে

এই রোগটি নারী-পুরুষ উভয়েরই হয়, যদি জন্মসূত্রে না হয়ে থাকে, তবে যে কোন বয়সেই এ রোগ আক্রমণ করুক না সেটা উপশমিত হতে পারে যদি ব্রাহ্মীশাকের রস ২ চা-চাম একটু, গরম করে আধ কাপ দুধের সঙ্গে মিশিয়ে বেশ কিছুদিন খাওয়া যায়।

হারিয়ে যাচ্ছে বেতফল-cane fruit benefits
সর্পগন্ধা গাছের উপকারিতা
অপরাজিতা গাছের গুনাগুন
রসভরি গাছের উপকারিতা
সন্ধ্যামালতী বা কৃষ্ণকলি
কুমড়োর বিচির উপকারিতা
মনিরাজ ফল এর উপকারিতা-Assam Cycas
আগর গাছের উপকারিতা ও ভেষজ গুণাবলি - Eagle wood plant benefits and herbal properties
দুর্বা ঘাসের ওষুধি গুণাগুণ - Medicinal properties of Scutch grass
মাধবীলতার উপকারিতা - Benefits of hiptage