বক ফুলের উপকারিতা ও ভেষজ গুণাগুণ
এই ফুলের বাংলা নাম- বক বা বকফুল অন্যান্য নামের মধ্যে অগস্তি , মণিপুষ্প , গাছমুগা , Drigapalaka উল্লেখযোগ্য। এটি Fabaceae পরিবারের অন্তর্গত একটি উদ্ভিদ। অঞ্চল ভেদে এ গাছের অনেক নাম আছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য- বক, বকে, বগ, বকফুল, বগফুল, অগন্তা, অগাতি ইত্যাদি।
বৈজ্ঞানিক নাম: Sesbania grandiflora
ইংরেজি নাম: vegetable hummingbird,hummingbird tree/scarlet wisteria, August flower, Australian corkwood tree, flamingo bill, grandiflora, sesban, swamp pea, tiger tongue, West Indian pea, white dragon tree ইত্যাদি।
বর্ণনা
বকফুল ছোট আকৃতির দ্রুত বর্ধনশীল পত্রঝরা বৃক্ষ। এই গাছের কাঠ কোমল। উচ্চতায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এদের বাকল হালকা থেকে গাঢ় বাদামি বর্ণের হয়; তবে পুরাতন বৃক্ষ দেখতে বিদীর্ণ। গাছের পাতা অচূড় পক্ষল। পাতার দৈর্ঘ্য ১৩-৩০ সেমি, পত্রক ২০-৬০টি, আয়তাকার, রোমহীন, উপপত্রিকা ক্ষণস্থায়ী, ক্ষুদ্র, ১.৫-২.৮ সেমি লম্বা।
পুষ্পবিন্যাস কাক্ষিক রেসিম। একটি গুচ্ছে ২ থেকে ৪ পুষ্পক ফুটে। ফুলের আকৃতি বৃহৎ। বৃতি প্রায় ২.৫ সেমি লম্বা, রোমহীন, ২-ওষ্ঠ বিশিষ্ট। দলমন্ডল ৮-১০ সেমি লম্বা। ফুলের রঙ সাদা বা লাল দাগযুক্ত। ‘ফুল ফোটার আগে দেখতে টিয়া পাখির ঠোঁটের মতো থাকে।’ ফল পড আকৃতির; ৩০ থেকে ৫০ সেমি লম্বা। ফল দেখতে কাস্তে আকৃতির, দৃঢ়, তবে বেলনাকার নয়। সন্ধি অধিক স্থূল। বকফুল গাছে বীজ অনেক ধরে।
বকফুলের পুষ্টিমান
ফাইবার ১.৯%,ফ্যাট ১.৩%,ক্যালোরি ৯০,পানি ৭৪.৫%,প্রোটিন ৭.৫%,ক্যালসিয়াম ১২০ মিলিগ্রাম,ফসফরাস ৮০ মিলিগ্রাম,আয়রন ৩.৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন ‘সি’ ১৬৫ মিলিগ্রাম,মিনারেল ৩.৪%।
বক ফুলের বড়া
প্রায় প্রতিবাড়িতেই বক ফুলের বড়া একটি প্রচলিত খাবার। চালের গুড়ার পেস্টকে পানি মিশিয়ে পাতলা করে এতে হলুদ ও লবন মিশিয়ে বকফুল চুবিয়ে বড়া করে তৈরি করা হয়। আকৃতিতে বকফুল গাছ বড় হয়। শীতে ফুল দেয়। অতিবৃষ্টিতে এই গাছ মারে যায়।
উপাদান
বকফুল গাছের বাকল ট্যানিন ও লাল আঠা বা গাম সমৃদ্ধ। বীজে আছে স্যাপোনিন ও সেসবানিমাইড। সেসবানিমাইড ক্যানসার প্রতিরোধক হিসেবে বিবেচিত। ফুলে আছে প্রোটিন, ট্যানিন, ওলিওনোলিক এসিড, কেমফেরল, সিস্টিন, আইনোলিউসিন, অ্যাসপ্যারাজিন, ফিনাইলএলানিন, ভ্যালিন, নিকোটিনিক এসিড ও ভিটামিন সি। লাল রঙের ফুল আয়রন ও ভিটামিন বি সমৃদ্ধ। পশুখাদ্য হিসেবে বকফুলের পাতা প্রচুর প্রোটিনসমৃদ্ধ। এর পাতায় প্রায় ২৫% ক্রুড প্রোটিন আছে।
বকফুলের ব্যবহার
এক যুগ আগেও গৃহস্থের বাড়ির আঙিনায় দেখা মিলত বকফুল গাছের। ভোজনরসিক বাঙালির প্রতিটি ঘরে বিভিন্ন খাদ্য উপকরণের মাঝে খাবারে বিশেষ মাত্রা যোগ করত বকফুলের বড়া বা ভাজা বকফুল। এই ফুল খাবারের উপকরণ ছাড়া কোলাচার বা পূজায় ব্যবহারের নজির নেই। ঘর সাজাতে কিংবা নারীদের খোঁপায় ফুলের ব্যবহার দেখা গেলেও বকফুল সেখানে অনুপস্থিত। এ ফুলের কদর খাবারের উপকরণ বড়াতেই।
ঔষুধি গুণাগুণ
এর ঔষুধি গুণ আছে প্রচুর । দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় বকফুল গাছের প্রতিটি অংশই ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।
১.জ্বর, ফোলা ও ব্যাথাবেদনা সারাতে, বাতের ব্যথায় শিকড় চূর্ণ জলের সাথে গুলে ব্যাথা জায়গায় ঘষলে আরাম পাওয়া যায়।
২.শরীর, চোখ, পেট, পা ও পায়ের পাতা জ্বলা কমাতে বকফুল পাতার রস ব্যাবহার করুন ।
৩.চুলকানি-পাঁচড়া সারাতে কম্বোডিয়ায় বাকল চূর্ণ লাগানো হয়।
৪.কৃমি ও জ্বর সারাতে পাতার রস খাওয়ানো হয়।
৫.গ্যাস্ট্রিক আলসার ও বুক জ্বালা নিরাময়, রাতকানা রোগের ঔষুধ হিসাবে গাছের পাতার রস ব্যবহার করা হয়।
৬.করেকোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে, চোখের স্নায়ু জোরদার করেবার্ধক্য ও হাড় দুর্বলতা প্রতিরোধ করতে বকফুল পাতার রস উপকারী।
৭.বকফুল পাতার বাষ্প নিয়ে মাথা ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে ।
৮.বদ হজম রোধে ও হজম পক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে ।
৯.ত্বকের ক্ষত ও ত্বকের দাগ নিরাময়ে কাজ করে ।
১০.পাইলস রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে ।
সাম্প্রতিক মন্তব্য
#জয়
মৃগি রোগ সারাতে সাহায্য করে।