চন্দনের উপকারিতা ও গুণাগুণ
শ্বেত চন্দন হচ্ছে সান্টালাসি পরিবারের একটি উদ্ভিদ। এই প্রজাতির উদ্ভিদের উচ্চতা সাধারণত ১৫ থেকে ১৮ মিটার পর্যন্ত হয় এবং প্রস্থ হতে পারে ২ থেকে ৪ মিটার পর্যন্ত। এরা ১০০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। বিভিন্ন প্রসাধনী ও লোকজ চিকিৎসায় এটির ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়।
ইংরেজি নাম: Indian sandalwood বা Sandalwood, বা Arishta-phalam, Bhadrasara, বা Sandal
বৈজ্ঞানিক নাম: Santalum album
আদি নিবাস
ভারত, শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম এবং অস্ট্রেলিয়ায় এ উদ্ভিদ পাওয়া যায়। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে বিচ্ছিন্নভাবে দেখা যায়।
শ্বেত চন্দনের ঔষধি গুনাগুন
পৃথিবীতে সবচাইতে দামি গাছ চিরসবুজ সুগন্ধি শ্বেত চন্দন। মানুষের স্বাস্থের জন্য উপকারী অসাধারণ একটি দুর্লভ ভেষজ উদ্ভিদ। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় চন্দনের বহুল ব্যবহার আছে। চন্দনের আছে হাজারো ওষধি গুণ। বাস্তবে দুই প্রকার এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। শ্বেত চন্দন ও রক্ত চন্দন।
১.জ্বরে:
পিপাসা, শরীরে জ্বালা অথবা শুধু পিপাসা থাকলে চন্দন ঘষা আধ চা-চামচ থেকে এক চা-চামচ (বয়স এবং অবস্থা বিবেচনায়) কচি ডাবের জলের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ালে দুই-ই প্রশমিত হয়; কোনো কোনো ক্ষেত্রে জ্বরও কমে যায়; তবে সর্দির প্রকোপ বেশি থাকলে না দেওয়াই সমীচীন।
২. নারীর ক্ষেত্রে:
যাঁদের ঋতুস্রাবে দুর্গন্ধ, পুজ বা মজ্জাবৎ স্রাব হতে থাকে। সে ক্ষেত্রে চন্দন ঘষা অথবা ঐ কাঠের গুঁড়ো গরম জলে ভিজিয়ে রেখে সেটা ছেঁকে নিয়ে দুধে মিশিয়ে খেতে হয়।৩
৩. বমিতে:
আমলকির রস অথবা শুকনো আমলকি ভিজানো জলে চন্দন ঘষা মিশিয়ে খেতে দিলে বমি বন্ধ হয়ে যায়।
৪. হিক্কায়:
চালধোয়া জলের সঙ্গে চন্দন ঘষা মিশিয়ে ঐ জল দু’ ঘণ্টা অন্তর একটু একটু করে খাওয়ালে হিক্কা বন্ধ হয়। এমন কি দুধে ঘষে (ছাগদগ্ধ হলে ভালো হয়) নস্য নিলেও হিক্কা বন্ধ হয়।
৫. বসন্তরোগে:
পিপাসা থাকলে মৌরীভিজান জলে চন্দন ঘষা মিশিয়ে খেতে দিয়ে থাকেন এ রোগের স্পেশালিষ্টরা।
৬. বিষফোড়ায়:
ঘষা চন্দনে গোল মরিচ ঘষে সেটা ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা অন্তর ৩।৪ বার লাগালে ব্যথা কেটে যায়।
৭. অস্বাভাবিক ঘমে:
ঘাম বেশি হলে এই ঘষা চন্দনের সঙ্গে বেনামূল বেটে একট, কর্পূর মিশিয়ে গায়ে মাখলে উপকার হবে।
৮. ঘামাচি:
সাদা চন্দন ঘষার সঙ্গে হলুদবাটা ও অল্প একটু কর্পূর মিশিয়ে অথবা চন্দন ও দুরহরিদ্রা একত্রে ঘষে মাখলে মরে যায়।
৯. মাথা ধরা:
যখন মাথা ধরার ঔষধ বেরোয়নি, তখন চন্দন ঘষার সঙ্গে একটু কর্পূর মিশিয়ে কপালে লাগাতে হতো।
১০. শরীরে বসন্ত দেখা দিলে:
হেলেঞ্চা (Enhydra luctuans) শাকের রসে শ্বেতচন্দন ঘষা মিশিয়ে খেতে দিলে গুটি শীঘ্র বেরিয়ে পড়ে ও তার ভয়াবহতা চলে যায়।
১১. নাভিপাকা:
শিশুদের নাভি পাকলে শ্বেত চন্দন ঘষে পুরু করে লাগিয়ে দিলে জ্বালা যন্ত্রণা কমে যায় এবং সারেও।
১২. শিশুদের মাথায় ঘা:
২ বা ৩ মাসের শিশুর মাথায় এক ধরণের চাপড়া ঘা হয় সে ক্ষেত্রে শুধ, শ্বেতচন্দন ঘষা লাগিয়ে দিলে অচিরেই সেরে যায়।