হাড়জোড়া উদ্ভিদের উপকারিতা ও ভেষজ গুণাগুণ
হাড়জোড়া স্থানবিশেষে হাড়ভাঙা লতা বা হারেঙ্গা নামেও পরিচিত। লতানো কাণ্ডের টুকরা টুকরা অংশ দেখতে অনেকটা জোড়া দেওয়া হাড়ের মতো দেখতে বলেই এরকম বিচিত্র নামকরণ। এটি অন্যতম ঔষধি গাছ। এটি বৃহৎ শাখান্বিত বীরুৎ-সদৃশ। সরল ও সরু পত্র-পতিমুখ আঁকশিযুক্ত। কাণ্ড রসাল, চার কোনাকার এবং চার পর্বযুক্ত। পত্র সরল, তিন থেকে ছয় সেন্টিমিটার লম্বা, নরম ও রসাল। পত্রবৃন্ত দেড় সেন্টিমিটার লম্বা, উপপত্র জোড়বদ্ধ, প্রশস্ত ডিম্বাকার, সবুজ ও ক্ষণস্থায়ী। মঞ্জরিদণ্ড আড়াই সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। ফুল চার অংশক, আড়াআড়িভাবে পাঁচ মিলিমিটার ও লালচে রঙের। বৃতি পেয়ালাকার, দল খণ্ডক চারটি, প্রায় দুই মিলিমিটার লম্বা। পুংকেশর চারটি। প্রস্ফুটনকাল সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত। ফল গোলাকার, পাকলে লাল ও একবীজী।
ইংরেজি নাম: veldt grape, winged treebine or adamant creeper
বৈজ্ঞানিক নাম: Cissus quadrangularis
বিস্তার
উষ্ণমণ্ডলীয় আফ্রিকা, আরব, মাদাগাস্কার, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও জাভা এই গাছের আদি ভূমি।
ভেষজ গুণাগুণ
অনিয়মিত মাসিকে
অনিয়মিত মাসিকের ক্ষেত্রে কচি হাড়জোড়ার ডাঁটা কুচি কুচি করে কেটে শুকিয়ে সেই গুঁড়া দুই চামচ পানিসহ দিনে দু'বার কিছুদিন খেলে তা স্বাভাবিক হবে।
পুষ্টির অভাবজনিত রোগে
হাড়জোড়া গাছের কাণ্ডের রস ২০ মিলিলিটার এক কাপ ঠাণ্ডা পানির সাথে মিশিয়ে দিনের বেলায় সকালের দিকে খেলে শরীরে পুষ্টির অভাব পূরণ হয়। তবে নিয়মিত এবং একমাস খাওয়া দরকার।
শ্বাসরোগে
হাড়জোড়ার ডাঁটা কুচি কুচি করে কেটে শুকিয়ে সেই গুঁড়া সকাল-বিকেল দু'বার খেলে শ্বাস রোগেরও উপশম হয়।
হাড় ভেঙ্গে গেলে
হাড়জোড়া হাড়ভাঙায় অত্যন্ত কার্যকর। এর ডাঁটা ও পাতা সমপরিমাণ রসুন ও গুলগুলি একসঙ্গে বেটে একটু গরম করে ভাঙা স্থানে প্রলেপ দিলে ভাঙা হাড় জুড়ে যাবে। প্রলেপটি দু-একদিন পরপর পরিবর্তন করে লাগাতে হবে। হাড়জোড়ায় একটি রাসায়নিক যৌগ থাকে যা ভাঙা হাড় জোড়া লাগাতে সাহায্য করে। সে কারণে হাড়ভাঙার ফোলা ও ব্যথা সারাতে সমপরিমাণ হাড়জোড়ার ডাঁটা, গন্ধবাদালি ও নিশিন্দা পাতার সঙ্গে অর্ধেক পরিমাণ ধুতরার পাতা একসঙ্গে বেটে গরম করে প্রলেপ দিলে ব্যথা ও ফোলা দুটোই চলে যাবে।
কৃমির উপদ্রবে
কৃমির উপদ্রব হলে উপর্যুক্ত হাড়জোড়া চূর্ণ ঘিয়ে ভেজে পানিসহ দুই-তিন চামচ দিনে দু'বার খেলে এ অসুবিধা দূর হবে।
কানে পুঁজ হলে
শিশু, কিশোর এবং বড়দের কানে পুঁজ হলে হাড়জোড়া গাছের কাণ্ডের রস একটি মূল্যবান ওষুধ। বহু যুগ আগে থেকে এর প্রচলন রয়েছে। কাণ্ডকে ভালোভাবে বেটে তার রসটা পরিষ্কার পাতলা কাপড়ে ছেঁকে নিতে হবে। দিনের মধ্যে দু’বার তিন ফোঁটা করে প্রয়োগ করতে হবে। মাত্র তিন থেকে চার দিন ব্যবহার করা দরকার। তবে প্রতিদিন টাটকা কাণ্ড সংগ্রহ করে তার রস দিতে হবে।
উচ্চ রক্তচাপে
হাড়জোড়ার লতা ও পাতার অ্যালকোহলীয় নির্যাস উচ্চ রক্তচাপ রোধ ও মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে।
বাত রোগে
গা-হাত-পা ব্যথা, যন্ত্রণায় কষ্ট হচ্ছে এটা প্রায়ই হয়, এক্ষেত্রে হাড়জোড়ার ফুলুরি করে খেলে বিশেষ উপকার হবে। তৈরী করার নিয়ম হলো- আঙ্গুলের এক গাঁটের মত (পর্ব) হাড়জোড়ার ডাঁটা ওপরের খোসাটাকে ছাড়িয়ে তাকে এক-দেড় মঠো আন্দাজ ২৫-৩০ গ্রাম ডালের সঙ্গে বেটে নিয়ে তাকে টিকিয়া করে ভাজতে হবে, অর্থাৎ গোল ফুলুরি না করে চ্যাপ্টা করে ভাজতে হবে। সেইটাই ভাত খাওয়ার সময় খেতে হবে। অবশ্য অন্য সময় মুড়ির সঙ্গেও খাওয়া যায়।
পেটের সমস্যায়
কচি ডাঁটার ভস্ম বদহজম, পেট ফাঁপা ও অন্যান্য পেটের পীড়ায় ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়। কোনো কারণে নাক দিয়ে রক্ত পড়লে এ ডাঁটার রস নাকে ব্যবহার করলে রক্ত পড়া বন্ধ হবে।