কুর্চি গাছের ঔষধি গুণাগুণ - Medicinal properties of kurchi plant
kurchi plant

কুরচি গাছের উপকারিতা ও গুণাগুণ

কুর্চি বা কুরচি ক্ষুদ্র পত্রমোচী বৃক্ষ। কুরচি কুটজ, ইন্দ্রযব, ইন্দ্রজৌ, বৎসক, কলিঙ্গ, প্রাবৃষ্য, শত্রুপাদপ, সংগ্রাহী, পান্ডুরদ্রুম, মহাগন্ধ, কোটিশ্বর নামেও পরিচিত।

কুর্চির কাণ্ড সরল, উন্নত এবং শীর্ষ অজস্র উর্দ্ধমুখী শাখায় ডিম্বাকৃতি, কখনোবা এলোমেলো। বাকল অমসৃণ, হালকা ধূসর। শীতের শেষে পাতা ঝরে গেলেও বসন্তের শেষে এই শূন্যতা কচি পাতায় ভরে উঠে। পাতা লম্ব-ডিম্বাকৃতি, মসৃণ আর বিন্যাস হয় বিপ্রতীপ। কুর্চির স্বাভাবিক উচ্চতা ১০-২০ ফুট, কিন্তু ২-৪ ফুট উঁচু গাছেও অনেক সময় মুকুল ধরে। কুর্চির আরো একটি বৈশিষ্ট্য হলো সারা বর্ষা ধরে কয়েকবার এর ফুল ফোটে।

কুর্চি-মঞ্জরীতে ফুলের সংখ্যা কম হলেও বিক্ষিপ্ত মঞ্জরী সংখ্যা অজস্র। ফুল রঙ্গন ফুলের মতো, নিচের অংশ নলাকৃতি এবং উপর মুক্ত পাপড়িতে ছড়ানো। ৫টি পাপড়ির মুক্ত অংশ ঈষৎ বাঁকানো, বর্ণ দুধসাদা এবং তীব্র সুগন্ধী কিন্তু মধুর। গোত্রীয় বৈশিষ্ট্যের রীতি অনুযায়ী পরাগচক্র দলের গভীরে অদৃশ্য। দুটি গর্ভকেশর প্রায় মুক্ত এবং এজন্য একই ফুল থেকে দুটি ফল জন্মে। এই সজোড় ফল দুটি সরু, লম্বা এবং বীজ বহু সংখ্যক, রোমশ ও ঘনবাদামী। বাতাসে বীজ ছড়ায়।

ইংরেজি নাম: kurchi plant

বৈজ্ঞানিক নাম: Holarrhena pubescens

কুরচি গাছের ঔষধি গুণাগুণ

১.আমাশয়:

সব আমাশয় বা অতিসারে ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যাবে না, যেখানে পেটে যন্ত্রণা এবং অসাড়ে দাস্ত, এইভাবে ২ থেকে ৩ দিন চলছে, তার সঙ্গে রক্তের ছিট দেখা যাচ্ছে, এটা বুঝতে হবে বায়ু এবং পিত্তজাত অতিসার। এখানে কুরচি গাছের শুকনো ছাল ৫ গ্রাম একটু কুটে নিয়ে দুই কাপ জলে সিদ্ধ করে আধ কাপ থাকতে নামিয়ে, ছেঁকে ঐ জলটা দুইবারে খেতে হবে। এটাতে একদিনের মধ্যেই উপশম হবে।

২. রক্তামাশয়ে:

এটা সেটা খেতে থাকেন, মনে করেন রক্ত বন্ধ হয়ে যাবে; এদের বিশেষ লক্ষণ রাতে বড় দাস্ত হয় না, দিনের বেলায় এর প্রকোপ বেশী, কুন্থনও থাকে; বুঝতে হবে একটা ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে, এদের পক্ষে কুরচি গাছের ছাল ১০ গ্রাম একটু কুটে নিয়ে তিন থেকে চার কাপ জলে সিদ্ধ করে এক কাপ থাকতে নামিয়ে, ছেঁকে সকালে ও বিকালে দুবারে এটাকে খেতে হবে; দুই এক দিনের মধ্যেই রক্তপড়া বন্ধ হয়ে যাবে,তবে পুরনো হলে দুই একদিন বেশী লাগতে পারে।

৩.পেটের ব্যথায়

পেট ফাঁপা, গ্যাস্ট্রিক, আলসার এবং পেটের ব্যথা নিরাময়ে কুরচি ছাল এবং বীজ চূর্ণ বেশ উপকারী। এটি নিয়ম অনুযায়ী খেলে হজমের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। রচির ছালের ক্লাথ খেলে মুখের ভেতরে ক্ষত দূর করতে সাহায্য করে।

৪. বিষম জ্বরে:

নতুন জ্বরকে চাপা দিয়ে ছাড়ানো হলো, কিন্তু অগ্মিবল রক্তে ফিরে গেল না, ঢিসঢিসে শরীর, মুখেও কিছু ভাল লাগে না, তার সঙ্গে যা তা খেয়েই চলেছে, আবার দেখা যাচ্ছে বিকালের দিকে শরীরটায় একটু উত্তাপ, কোনো দিন একটু ভালো কোনো দিন মন্দ এই ভালো মন্দটা কিন্তু অগ্মিমান্দ্যের জন্য হয়। এই করে রক্তের অগ্নিবল নষ্ট হয়ে যায় যাকে বলা যায় রক্তের মেটাবলিজিম হ্রাস পেয়ে যাওয়া, এক্ষেত্রে কুড়চি ছাল চূর্ণ ১ গ্রাম ও তার বীজ ইন্দ্রযব চূর্ণ ১ গ্রাম, এই দুটি একসঙ্গে সকালে ও বিকালে দুবার জল দিয়ে খেতে দিতে হয়। আরও আশ্চর্য ফল পাওয়া যায় যদি শিউলি পাতার (Nyctanthes arbortristis.) রস ৪ চা চামচ একটু গরম করে ওর সঙ্গে একবেলা বা দুবেলা মিশিয়ে খাওয়া যায়; যদি নিতান্ত দুবেলা না হয়, একবেলা খেলেও চলে। অনেক সময় এইসব ক্ষেত্রে মুখে অরুচিও হয়, সেক্ষেত্রে মুখ ছাড় হিসেবে একটি ফুলুরির কথা বলি শিউলির পাতা ও কাঁচা মুগের ডাল একসঙ্গে বেটে বড়া করে খেলে মুখের রুচি ফিরে আসবে।

৫. রক্তপিত্তে: 

সর্দি নেই কাসি নেই। অথচ মুখ থেকে রক্ত পড়ে, এ সময় গলা সুড়সুড় করে কাসির বেগে রক্তটা বেরিয়ে আসে, আবার কারও অর্শের যন্ত্রণা নেই। অথচ দাস্তের সময় কাঁচা রক্ত পড়ছে, আবার এও দেখা যায় প্রস্রাবের কোনো জ্বালা যন্ত্রণা নেই। অথচ প্রস্রাবের সময় রক্ত পড়ছে ; এসব ক্ষেত্রে এটা যে রক্তপিত্ত সেটা নিঃসন্দেহ হতে পারা যায়। আরও পরিষ্কার করে বলি পিত্তবিকার হলে বমি হয়, রক্ত বিকারগ্রস্ত হলে বমি হয় না, কিন্তু রক্ত ও পিত্তের সমধর্মিতা থাকায় এই রক্ত পিত্তই বমি হয়। এদের পক্ষে ভাল কুরচি গাছের ছাল চূর্ণ দেড় গ্রাম মাত্রায় বা দুই আনা দুইবেলা জলসহ খাওয়া, তবে একটু ছাগদুগ্ধ দিয়ে খেলে আরও ভালো হয়।

৬.সর্দি কাশিতে:

কফ তরল করতে এবং কাশি উপশমে কুরচি বেশ কাজে আসে। এক্ষেত্রে ৩ থেকে ৪ চামচ কুরচির ছাল শুকিয়ে গুঁড়ো করে পানি অথবা দুধের সাথে মিশিয়ে ৩ থেকে ৭ দিন নিয়মিত খেতে হবে। এছাড়াও শ্বাসকষ্ট হলে কুরচির পাতার রস হালকা গরম করে ৩-৪ চামচ পরিমাণ ৩-৭ দিন দুই বেলা খেলে উপকার পাওয়া যায়।

৭. মূত্রকৃচ্ছ:

কৃচ্ছ শব্দের অর্থ হলো কষ্টে হওয়া। এটা অনেক কারণেই আসতে পারে প্রোষ্টেট গ্ল্যান্ড বড় হলে কৃচ্ছতা ততটা থাকে না। কিন্তু প্রায় বন্ধ হয়ে যায়, সেটাকে মূত্রাঘাত বলা হয়; তবে যেখানে প্রস্রাবের কৃচ্ছতা থাকে, সেখানে কুরচির ছাল চূর্ণ ৮/১০ গ্রাম পূর্বদিন রাত্রে ১ গ্লাস গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে, তার পরদিন সকালে ছেকে নিয়ে ১/১২ ঘণ্টা অন্তর ৪/৫ বারে সেটা খেতে হবে। এটাতে ঐ কৃচ্ছতাটা চলে যাবে।

৮. কেঁচো ক্রিমিতে:

প্রায় সময় মুখ দিয়ে জল ওঠে, থু থু ফেলার অভ্যেস, পেট গুলোয়, এক্ষেত্রে কুরচি বীজ অর্থাৎ তিক্ত ইন্দ্রযব যাকে বলা যায় কুটজ বীজ চূর্ণ আধ থেকে ১ গ্রাম মাত্রায় মধু মিশিয়ে চেটে খেতে দিতে হয়। কিন্তু বালকদের এই চূর্ণ খাওয়ানো খুবই মুশকিল।

৯. ফোড়ায়:

যে ফোঁড়া পাকেও না, বসেও না, যাকে চলতি কথায় বলে দড়কচা মেরে যাওয়া; এই ফোঁড়ায় কুরচির ছাল বেটে একটু গরম করে ফোঁড়ার উপর প্রলেপ দিলে পেকে ফেটে যায়।

১০. মুখের ক্ষত:

কুরচির ছাল আন্দাজ ১০ গ্রাম নিয়ে ৩ কাপ জলে সিদ্ধ করে ১ কাপ থাকতে নামিয়ে, ছেঁকে নিয়ে সেই ক্বাথ মুখে পুরে ৫ থেকে ৭ মিনিট বসে থাকতে হবে, এইভাবে ৩ থেকে ৪ বারে ঐ ক্বাথ দিয়ে কবল ধারণ করতে হবে। এটাতে ঐ ক্ষতটা সেরে যাবে।

এ ভিন্ন যেসব ক্ষত কিছুতেই সারছে না, সেসব ক্ষেত্রে এই কুরচি ছালের ক্বাথ দিয়ে ধুলে ক্ষত সেরে যাবে।

অ্যাভোকাডো ফলের উপকারিতা
হারিয়ে যাচ্ছে বেতফল-cane fruit benefits
আলোকলতার গুনাগুন
মেধা পাতার উপকারিতা
কুকশিমা গাছ
চিরতা গাছের গুনাগুন
জামাল গোটা
জলগোলাপ এক অসাধারণ জলজ ফুল
বামনহাটি গাছের উপকারিতা
কর্পূর গাছের উপকারিতা ও অপকারিতা - Benefits and harms of camphor plant