ছাতিম গাছ- Blackboard Tree
ছাতিম গাছ “অ্যাপোসাইনেসি” বর্গের অন্তর্ভুক্ত একটি উদ্ভিদ। ছাতিম গাছ ৪০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। বহুশাখা বিশিষ্ট গাছটির ছাল গন্ধহীন, অসমতল ও ধূসর। ছাতিম পাতার উপরের দিক চকচকে আর তলার দিক ধূসর থাকে। এর শাখা পত্রমূলাবর্ত বিশিষ্ট। ১০ থেকে ১৫ সে. মি. লম্বা পাতা একই মূলাবর্তে ৪ থেকে ৭ টা পর্যন্ত থাকে। শাখার শীর্ষে সবুজ মেশানো সাদা রংয়ে থোকায় থোকায় ক্ষুদ্রাকৃতি ফুল ফোঁটে। ৩০ থেকে ৬০ সে.মি. লম্বা সরু ফল এক বৃন্তে সাধারণতঃ দুটো ক’রে ঝুলে থাকে। ছাতিমের বীজ লম্বাটে ডিম্বাকার, কিনারায় আঁশ থাকে আর শেষ প্রান্তে এক গোছা চুল থাকে। ছাতিম গাছের অভ্যন্তরে দুধের মতন সাদা এবং অত্যন্ত তেতো কষ প্রচুর পরিমাণে থাকে।
ইংরেজি নাম: Blackboard Tree অথবা devil's tree
বৈজ্ঞানিক নাম: Alstonia scholaris
বিস্তার
বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান,দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া: কম্বোডিয়া, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাপুয়া নিউ গিনি, ফিলিপাইন,অস্ট্রেলিয়া: কুইন্সল্যান্ড।এছাড়া অন্যান্য অনেক ক্রান্তীয় এবং উপক্রান্তীয় অঞ্চলেও গাছটি পরবর্তীতে বিস্তার লাভ করেছে।
অন্যান্য ব্যবহার
ছাতিম গাছের কাঠ পেন্সিল তৈরির পক্ষে উপযুক্ত। ছাতিমের কাঠ দিয়ে খুব সাধারণ মানের আসবাবপত্র, প্যাকিং কেস, চায়ের পেটি, পেনসিল এবং দেশলাইযের কাঠি তৈরী হয়। পুরাকালে ছাতিমের কাঠ দিয়ে শিশুদের লেখার জন্য তক্তা বানান হত। মনে করা হয় সেই কারণেই বৈজ্ঞানিক নামে “এলস্টোনিআ”-এর পর “স্কলারিস” কথাটি যোগ করা হয়েছে। ছাতিমের হালকা কাঠ দিয়ে শ্রীলঙ্কায় কফিন বানানো হয়। ছাতিম গাছের মূলের কাছাকাছি অঞ্চলের কাঠ অনেক হালকা ও সাদা, এটি বোর্নিওতে জালের ভাসানী-খন্ডরূপে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া এটি দিয়ে চামচ, কর্ক ইত্যাদি বানানো হয়।
ছাতিম এর ঔষধি গুণাগুণ
১। কফের আধিক্যসহ হিক্কা শ্বাসে ছাতিম ছালের আধা চা চামচ রস চার ভাগের এক কাপ দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে উপশম হয়।
২। সর্দিবিহীন হাঁপানিতে এক থেকে দেড় গ্রাম ছাতিম ছালের গুঁড়া ও ২৫০ মি.গ্রা. পিুলল গুঁড়া দইয়ের মাতের সাথে মিশিয়ে খেতে হয়।
৩। ঠাণ্ডা লেগে বুকে সর্দি বা ল্লেষ্মা বসে গেলে পানি মিশানো দুধে ১ গ্রাম ছাতিম ছাল গুঁড়া দিয়ে অল্পক্ষণ ফুটিয়ে সেটা খেতে হবে। এতে সর্দিটা তরল হয়ে উঠে আসবে।
৪। মায়ের বুকের দুধ কমে গেলে ৫/৬ গ্রাম ছাতিম ছাল ছেঁচে/থেঁতো করে ২ কাপ পানিতে মিশিয়ে সিদ্ধ করে আধা কাপ হলে নামিয়ে ছেকে তার সাথে আধা কাপ দুধ মিশিয়ে খেতে হবে। এতে দুধ বেড়ে যাবে।
৫। ছাতিমের আঠা ৮/১০ ফোঁটা গরম পানিতে মিশিয়ে সেই পানি দিয়ে গারগল করলে বা সম্ভব হলে ২/৪ মিনিট মুখে পুরে রেখে ফেলে দিতে হবে। এভাবে একদিন পরপর করলে পায়োরিয়া ভালো হয়।
৬। কোনো ব্রণের ক্ষত কোনোভাবেই না সারলে ছাতিমের আঠা শুকিয়ে গুঁড়া করে ক্ষতের উপর ছিটিয়ে দিলে সেবে যাবে।
৭। দাঁতের যন্ত্রণায় আক্রান্ত দাঁতে ছাতিমের আঠা দিতে হয়। এতে দাঁত ব্যাথা কমে যায়।
৮। মাঝে মাঝে জ্বর হয়, মুখে অরুচি, দাঁত পরিষ্কার হয় না, আস্তে আস্তে চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে, এরূপ ক্ষেত্রে ১০/১২ গ্রাম ছাতিম ছাল চাল ভাগের তিন কাপ পানিতে সিদ্ধ করে (শুকনা ছাল ৫/৬গ্রাম) ছেঁকে নিয়ে ঐ পানি সমান ভাগে সকালে ও বিকেলে খেলে ২/১ দিনের মধ্যেই জ্বর সেরে যায়।
৯। বাকলের নির্যাস উচ্চ রক্তচাপ ও ক্যান্সারের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়।