-632c01aadbad2.webp)
চাকুন্দার উপকারিতা ও ঔষধি গুণাগুণ
চাকুন্দা,বন চাকুন্দা হচ্ছে Fabaceae পরিবারের একটি উদ্ভিদ প্রজাতি। বাংলাদেশে আমাদের আশে পাশে এটি অযত্নে অবহেলায় বেড়ে উঠে। হেমন্তকালে এটি সাধারণত ফুল দেয়। অঞ্চল বিশেষে এটি চেকান্দা নামে পরিচিত। এর পাতা আম আঁটির ভেঁপু বানাতে কাজে লাগানো যায়। গাছটি ন্যূনাধিক দু-তিন ফুট উঁচু হয়। গাছটি পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গের অনেক গ্রাম্য এলাকায় "বেলাডুবা" বা "বেলাডোবা" নামেও পরিচিত । এর কারণ সূর্যালোকের অনুপস্থিতিতে এর পাতাগুলি বন্ধ হয়ে যায় অর্থাৎ বেলাশেষে এর পাতাজোড়া গুটিয়ে যায় ।
বৈজ্ঞানিক নাম: Senna tora
ইংরেজি নাম: Sickle Senna, Sickle Wild sensitive-plant
বিস্তার
চাকুন্দা সাধারণত দক্ষিণ এশিয়ার উদ্ভিদ। বাংলাদেশ , ভারত নেপালসহ অন্য দেশসমূহ এই গাছ পাওয়া যায় ।
চাকুন্দার উপকারিতা
এর মূল বীজ ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
১.তড়কা নিরাময়ে
তাড়কা শিশুর রোগ। এই রোগ হলে চাকুন্দা ফলের বীজ গুড়ো করে দুধের সাথে শিশুকে খাওয়ালে তাড়কা রোগ ভালো হয়ে যাবে।
২.বিষাক্ত পোকার কামড়
এক্ষেত্রে এই চাকুন্দে বীজের গুঁড়ো আধ গ্রাম থেকে এক গ্রাম পর্যন্ত মাত্রায় বা ৪ রতি থেকে ৮ রতি পর্যন্ত সকালে ও বিকালে দুবার জলসহ খেতে হবে। এটাতে দুই একদিনের মধ্যে বিষটা কেটে যাবে। কোনো দাগ যদি নজরে পড়ে, তা হলে ওখানে ঐ বীজ বেঁটে লাগিয়ে দিতে হবে।
৩.হাপানি প্রতিরোধে
প্রবল হাঁপানিতে: যাঁদের একজিমার সঙ্গে হাঁপানি অথবা অর্শের রক্ত বন্ধ হওয়ায় হাঁপানি প্রবলাকার ধারণ করেছে কিংবা অন্য কোনো কারণে রক্তদৃষ্টি হয়ে এক সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে চাকুন্দে বীজ ১ গ্রাম একটু থেঁতো করে, এক কাপ জলে সিদ্ধ করে আধা কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে খেতে হবে প্রয়োজন বোধে সকালে ও বিকালে ২ বার দুই একদিন খাওয়ার পর কয়েকদিন একবার করে খেতে হয়।
৪.স্নায়ুগত বাত
এক্ষেত্রে ঔষধ হলো চাকুন্দের বীজের গুঁড়ো এক গ্রাম, আধা কাপ গরম জলে ফেলে, আধা ঘণ্টা বাদ তাকে ছেঁকে নিয়ে, থিতিয়ে গেলে সকালে একবার করে খেতে হবে; এটা একদিন অন্তর খাবেন, তবে অন্তত মাসখানেক খেতে হয়, তারপর সপ্তাহ ১ দিন করেও কিছুদিন খেতে হবে।
৫.কৃমি প্রতিরোধে
কৃমি হলে চাকুন্দার বীজ চূর্ণ্ করে মধুর সাথে মিশিয়ে সেবন করলে কৃমি বেরিয়ে আসে।
৬.কুষ্ঠরোগে
চাকুন্দা পাতা ও মূল ভালো করে সেদ্ধ করে সেই প্রতিদিন সেবন করলে ও এর শিকড় বেটে ঘিয়ের সাথে কুষ্ঠ ক্ষতে লাগালে কুষ্ঠ রোগ ভালো হয়।
৭.ছুলিতে
এ রোগ দীর্ঘদিন শরীরে বসে থাকলে কারও কারও এ থেকে শ্বেতি পর্যন্ত হতে দেখা যায়। মনে রাখা উচিত যে, এই রোগ যাঁদের হয়, তাঁদের সাবান বা ক্ষারজাতীয় কোনো জিনিস গায়ে মাখা উচিত নয়। এই ছুলির ক্ষেত্রে চাকুন্দের কাঁচা ফল গোমূত্র দিয়ে বেঁটে লাগাতে হয়, তারপর এক ঘণ্টা বাদে ধুয়ে ফেলতে হয়; কাঁচা না পেলে ৪ থেকে ৫ গ্রাম বীজ নিয়ে, সেই বীজ গোমূত্রে বেটে লাগালেও হবে। এটি ব্যবহারে কয়েক দিনের মধ্যেই এগুলি সেরে যাবে।
৮.কাশি হলে
খুব কফ হলে চাকুন্দা পাতা সেদ্ধ করে পানি হালকা গরম অবস্থায় খেলে উপকার পাওয়া যায়।
৯.ফোঁড়া সারাতে
ফোঁড়া হলে চাকুন্দা পাতা বেটে ফোঁড়ার ওপর প্রলেপ দিলে ফোঁড়া ভালো হয়।
১০. রক্তগুল্ম
অরুচি থেকে আরম্ভ করে গর্ভের লক্ষণ সবই হবে এবং গর্ভের স্পন্দন দুটাতেই হবে, তবে গর্ভসঞ্চারে শূলের মতো কোনো ব্যথা হবে না। রক্তগুল্মে এই ব্যথাটা থাকবে। তবে বর্তমানে অনেক সহজ পদ্ধতিতে এটা গর্ভ কিনা তা নির্ণয় করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে চাকুন্দের বীজ এক গ্রাম ও মূলের ছাল ২ গ্রাম দুই কাপ জলে ফুটিয়ে নিয়ে আধা কাপ থাকতে নামিয়ে, ছেঁকে, প্রতিদিন সকালে ও বিকালে দুবার খেতে হবে; এর দ্বারা স্রাবও হয়ে যাবে, আর গুল্মের যন্ত্রণাও চলে যাবে।