গাঁদা বা গন্ধা ফুলের ভেষজ গুণাবলী - Herbal properties of marigold
Marigold

গাঁদা ফুলের উপকারিতা ও ঔষধি গুণ

গাঁদা গুল্মজাতীয় বর্ষজীবী উদ্ভিদ। এটি ১.০ সে.মি. পর্যন্ত উঁচু হয়। পাতা বহু খণ্ডে বিভক্ত, পত্রকের ধার করাতের মতো খাঁজকাটা। গাছে ও পাতায় সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম রোম ও একটি ঝাজানো গন্ধ আছে। সাধারণত অঞ্চলভেদে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত হলুদ থেকে কমলা রঙের ফুল হয়। শীতের মৌসুমি ফুলের মধ্যে গাদা বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে রয়েছে।

ইংরেজি নাম: marigold

বৈজ্ঞানিক নাম: Tagetes erecta

বিস্তৃতি

এর প্রায় ৫৬টি প্রজাতি আছে। এই গাছের আদি নিবাস উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা। বিশেষ করে মেক্সিকোতে এই গাছ অধিক জন্মে। এর কিছু প্রজাতি পৃথিবীর উষ্ণ অঞ্চলের সর্বত্রই জন্মে। বাংলাদেশে এর ৩-৪টি প্রজাতি পাওয়া যায়।

ভেষজ গুণাবলী

১. শরীরের কোথাও কেটে গেলে সেখানে গাঁদা ফুলগাছের পাতা ডলে তার রস লাগিয়ে দিলে দ্রুত রক্তপড়া বন্ধ হয়। অল্প কাটা হলে কাটা স্থান এতে দ্রুত জোড়া লেগে যায়। পাতাবাটা কাটা স্থানে পট্টির মতো লাগিয়ে ব্যান্ডেজ বা কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখলে কিছুক্ষণের মধ্যে কাটা স্থানের রক্তপড়া বন্ধ, জোড়া লাগা এমনকি ব্যাথাও কমে যায়।

২.গাঁদা ফুলে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ফ্যাভনয়েড নামক উপাদান মানবদেহের ক্যান্সার কোষ এর বৃদ্বি প্রতিহত করতে সক্ষম।

৩.অর্শরোগ হলে মলদ্বারে বুটি হয়, রক্ত পড়ে, যন্ত্রণা হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে এই যন্ত্রণা আরও বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে গাঁদা ফুলের পাঁপড়ির রস ১ চা পামচ একটু মাখনের সাথে মিশিয়ে দিনে দুবার খেলে যন্ত্রণা কমে, আরও দুবার খেলে রক্তপড়া বন্ধ হয়। সেই সাথে কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে তাও সেরে যায়।

৪.গাঁদা ফুলের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্বিতে ভূমিকা রাখে এবং শরীর কে টিউমার হতে রক্ষা করে।

৫.আমাশার সাথে রক্ত পড়লে তাকে বলা হয় রক্ত আমাশায়। এ অবস্থায় পেট কামড়ায়, মলের সাথে শ্লেষ্মার মতো আম পড়ে, সেইসাথে রক্ত। কয়েকবার এরূপ হলে শরীর দূর্বল হয়ে পড়ে। সাধারণত গুরুপাক খাবার খাওয়ার পর এরূপ অবস্থা বেশি হয়। সারাদিন উপোসের পর তেলজাতীয় খাবার বেশি খেলেও এরূপ হয়। এ ক্ষেত্রে গাঁদা ফুল গাছের পাতার রস দেড় থেকে দুই চা-চামচ একটু চিনি মিশিয়ে খেলে বিশেষ উপকার হয়। দিনে এভাবে দুই থেকে তিনবার খেতে হবে। এতে একদিনের মধ্যেই রক্ত আমাশায় সেরে যাবে।

৬.গাঁদা ফুলের চা নিয়মিত পান করলে মুখের ব্রণ দূর হয়, ত্বক মসৃন হয়, হজম শক্তি বাড়ায়, হাড়ের ক্ষয় রোধ হয়, আর্থাইটিসের সমস্যা ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হয়।

৭.যক্ষ্মারোগ একটা খারাপ অসুখ, সহজে সারতে চায় না। সবসময় ঘুমঘুসে জ্বর, পেটের দোষ আর পাতলা ছিটযুক্ত রক্তের বমি এ রোগের লক্ষণ। এ অবস্থায় গাঁদা ফুলগাছের পাতা ছায়ায় শুকিয়ে গুঁড়ো করতে হবে। এই গুঁড়ো ২৫০ মিলিগ্রাম পরিমাণ একটু দুধের সাথে মিশিয়ে সকালে ও বিকালে খেতে হবে। ছাগলের দুধ হলে বেশি ভালো হয়। কয়েকদিন এভাবে খেলে যক্ষ্মারোগের উপকার হবে।

৮. কানের ব্যাথা হলে গাঁদা ফুলগাছের পাতার রস হালকা গরম করে কয়েক ফোঁটা কানে দিলে তা কমে। দিনে দুবার করে দুদিন দিলে এ সমস্যা চলে যায়।

৯.গাঁদা ফুল বেটে নারিকেল তেলের সাথে মিশিয়ে মাথায় ১০/১৫ দিন লাগালে মাথার খুশকি দূর হয়, চুল কালো হয়।

১০.ফোড়া দরকাচা হয়ে আছে, শক্ত, ফাটছে না। এরূপ অবস্থায় গাঁদাপাতা বেটে কাইয়ের মতো করে অল্প গরম করে ফোড়ার উপরে প্রলেপ দিয়ে বেঁধে রাখলে দ্রুত তা ফেটে যায়। এতে ব্যাথাও কমে।

১১.যে কোন কারণে চোখ লাল হলে সে চোখে গাঁদা ফুলের রস এক ফোঁটা করে দিলে চোখের লাল ভাব কেটে যায়।

১২.গাঁদা ফুল শুকিয়ে পুড়ে ছাই দিয়ে নিয়মিত দাঁত মাজলে দাঁতের গোড়া শক্ত হয়, মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়,মুখের ঘা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

বাংলাদেশের সংরক্ষিত উদ্ভিদের তালিকা - List of protected plants of Bangladesh
বৈঁচি ফলের গুণাগুণ
আখের রসের উপকারিতা
বাসক পাতার ঔষধি গুণ
পেয়ারার পুষ্টিগুণ
দেশি গাবের ঔষধি গুণাগুণ - Medicinal properties of Gaub
করবী পাতার উপকারী
শেয়াল কাঁটা-Mexican prickly poppy
দাঁতরাঙা বা বন তেজপাতা-indian-rhododendron
আম আদার ঔষধি গুণাগুণ - Medicinal properties of mango ginger