-63209a07a3aa6.webp)
শিয়ালমুত্রা বা ডানকোনীর ঔষধি গুণাগুণ
কুকসিমা শিয়ালমুত্রা বা ডানকোনী হচ্ছে Asteraceae পরিবারের Cyanthillium গণের একটি সপুষ্পক ভেষজ বিরুৎ। এটি লম্বায় প্রায় ২ ফুট মতো হয়। পাতার কিনারার দুইদিক থেকেই কাটা। এর বেশ কয়েকটি জাত হয়। একে চেনার সহজ উপায় হলো, পাতার আকৃতি। এ গাছের ফুলের রং পীত বর্ণের হয়। ফুল কোমল ও লোমযুক্ত। পাপড়ি সাদা বর্ণের। কুকসিমা গাছে শীতের শেষ দিকে ফুলে ফোটে এবং ফাল্গুন ও চৈত্র মাসে গাছে ফল হয়।
বৈজ্ঞানিক নাম: Cyanthillium cinereum
ইংরেজি নাম: little ironweed, poovamkurunnila
বিস্তৃতি
এই প্রজাতিটি আফ্রিকা,এশিয়ার দেশ যেমন ভারত, ইন্দোচিন, ইন্দোনেশিয়া, ইত্যাদি থেকে অস্ট্রেলিয়ায়, মেসোআমেরিকা, গ্রীষ্মমন্ডলীয় দক্ষিণ আমেরিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার মধ্যে প্রাকৃতিক হয়ে উঠেছে।
ঔষধি গুণাগুণ
কুকসিমার পাতার মূলে আছে ঔষধি গুণ। বিভিন্ন রোগে এই গাছ ব্যবহার করে থাকতেন কবিরাজগণ। এখনও নিয়ম মেনে এই গাছের অংশ বিশেষ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। নিম্নে কুকসিমা শিয়ালমুত্রা বা ডানকোনীর ঔষধি গুণাগুণ তুলে ধরা হলো-
১.অর্শরোগে
অর্শজনিত অধিক রক্তস্রাব হতে থাকলে কুকসিমা শিয়ালমুত্রা বা ডানকোনী গাছের মূল ১২ থেকে ১৩ গ্রাম, ৫টি গোল মরিচ ও ৫টি বড় এলাচ একসঙ্গে জল দিয়ে শিলে পিষে নিয়ে পাতলা কাপড়ে ছে’কে ঐ জলীয়াংশ একটু গরম করে সকালে একবার খেতে হবে। এইভাবে ২ থেকে ১ দিন খেলে রোগের উপশম হয়।
২.জ্বরে
ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, বসন্ত ইত্যাদি রোগের জন্যে শরীরে যদি উত্তাপ বেড়ে যায় তবে সেটা আলাদা ব্যাপার। অন্য কোনো কারণে জ্বর হলে কুকসিমা। গাছের পাতার রস ৩০ মি.লি. প্রয়োগ করলে জ্বরে বিশেষ উপকার হয়।
৩.ফিতা ক্রিমি
ছোট ও বড়দের পেটে ফিতা ক্রিমির উৎপাত বাড়লে কুকসিমা পাতার টাটকা রস সকালে খালিপেটে একবার খেলে ক্রিমি জীবন্ত অথবা মৃত অবস্থায় মলের সাথে চলে আসে। ছোটদের ক্ষেত্রে রস ১০ মিলিলিটার এবং বয়স্কদের ক্ষেত্রে ১০ মিলিলিটার মাত্রায় একদিন খাওয়া প্রয়োজন হয়।
৪.রক্ত আমাশয়ে
কুকসিমা গাছের শিকড় ৫ গ্রাম এবং টক দই ৫ চামচ শিলে ভালোভাবে বেটে রোজ সকাল এবং বিকালে খেলে উপকার হয়।
৫.পেট ব্যথায়:
আমাশয়ের জন্য নয়, কিন্তু এ ক্ষেত্রে ২ চামচ রস গরম জলে মিশিয়ে খেলে উপশম হয়।
৬.অনিয়মিত মাসিকে
৩ থেকে ৪ মাস অন্তর হচ্ছে, তলপেট ও নিতম্ব ভেরে যাচ্ছে, তাঁরা এই গাছের রস ২ চামচ একটু গরম করে প্রত্যহ কিছুদিন একবার করে খেলে ঐ দোষটা চলে যাবে।
৭.প্রস্রাবের সমস্যা হলে
গরমের সময় শরীরে পানির পরিমাণ কম হলে প্রস্রাব কমে যায় এবং অনেক সময় মোটেই হয় না। এছাড়াও মূত্রযন্ত্রের কাজে কোথাও বিঘ্ন ঘটলে প্রস্রাব আটকে যায়। এ রকম অবস্থায় কুকসিমা পাতার রস ১৫ থেকে ২০ মি.লি. রোগীকে খাওয়ালে প্রস্রাব স্বাভাবিক হবে।
৮.মুখের শোথে
কুকসিমা গাছের কাঁচা মূল কেটে ৫ গ্রাম পরিমাণ ছোট টুকরা মুখে রাখলে মুখের শোথ সেরে যায়। মাঝে মাঝে কষের দাঁত দিয়ে মূলকে সামান্য চাপ দিতে হবে। মুখে বেশি লালা এবং থুতুতে ভরে গেলে সেটা অবশ্যই ফেলে দেয়া দরকার। অতএব রাতে শুতে যাবার সময় অর্থাৎ ঘুমন্ত অবস্থায় কুকসিমার মূল কানমতেই মুখে রাখা উচিত নয়। তাছাড়া বেশি রস পেটে গেলে শরীরের ক্ষতি হতে পারে।