সাতকরার উপকারিতা ও পুষ্টি গুণাগুণ
সাতকরা বা সাতকড়া হল Rutaceae পরিবারের সাইট্রাস গণের অন্তর্ভুক্ত লেবু জাতীয় ফলের গাছ। সাতকড়া গাছটি দেখতে ঠিক বাতাবি লেবু গাছের মতো। ফলগুলো দেখতে যেন লেবুর মতো। কমলা ফলের চেয়ে কিছুটা বড়। কোন কোনটা বেশ বড় হয়। লেবু গাছের মতো সাতকড়ার গাছে প্রচুর কাঁটা হয়। এ গাছ ২০ থেকে ২৫ ফুট লম্বা হয়। ফাল্গুন মাসে ফুল আসে। জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ়ে ফল হয়।
বৈজ্ঞানিক নাম: Citrus macroptera
ইংরেজি নাম: Melanesian papeda বা wild orange বা cabuyao অথবা satkara
বিস্তৃতি
এই ফল ভারতের আসামের পাহাড়ি এলাকার আদি ফল, যা বর্তমানে বাংলাদেশের সিলেটের জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাটের জাফলং ছাড়াও এখানকার পাহাড়-টিলায় চাষ হয়।
গুনাগুণ
সাতকরা একটি ভিটামিন সমৃদ্ধ ফল এবং এর পুষ্টিমান অনেক উন্নত। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস। এটি ওষধি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
ব্যবহার
বাংলাদেশে, এটিকে সবজি হিসাবে খাওয়া হয়। এটির মজ্জাটি টক-মিষ্টি স্বাদের কারণে সাধারণতফেলে দেওয়া হয়। ঘন বাহিরের অংশ ছোট ছোট টুকরো টুকরো করে কাটা হয় এবং (সবুজ বা পাকা) গরুর মাংস, মাটন এবং মাছের তরকারীতে দিয়ে রান্না করা হয়। রন্ধন এবং গ্রাহনের জন্য বাহিরের অংশটি প্রায়শই রোদে শুকানো হয়। ফলটি আচারেরও প্রাথমিক উপাদান হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। এটি ব্রিটিশ বাংলাদেশী ফাস্টফুডের রেস্তোঁরাগুলিতে ডোনার কাবাবেও ব্যবহৃত হয়।
সাতকরার উপকারিতা
১.লিভার ডিজিজের জন্য ব্যবহার হওয়া ‘সিলাইমেরিন’ এর সমপরিমাণ গুণাগুণ পাওয়া গেছে সাতকড়া ফলে।
২.এই ফল উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের উপকার করবে। রক্তে থাকা অতিমাত্রায় কোলেস্টেরল ধমনীর লুমেনে প্লাগ জমিয়ে স্ট্রোক এর মতো বিপদ ঘটানোর জন্য প্রধানত দায়ী লো-ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন যা এক ধরনের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল। সাতকড়া রক্তের এই ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়।
৩.যারা নিয়মিত এই ফল খান তাদের লিভার, কিডনি এবং হার্ট রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে বলে আশা করা যায়।
৪.মানবদেহের উপকার হিসেবে দেখা যায়, সাতকরায় আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন 'সি', ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস। রয়েছে বেশ কিছু রাসায়নিক গুণাগুণ। এ ফল শরীরের কোলেস্টেরল কমায় এবং মুখের রুচি বৃদ্ধি করে।
৫.মারাত্মক রোগ যেমন ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার এসব প্রতিরোধে সাতকরা সহায়ক।
৬.বাত, শিরা, উপশিরা ব্যথায় সাতকরা উপকারী।
৭.সাতকরার খোঁসার মধ্যে এন্টি অক্সিডেন্ট প্রচুর পরিমাণে (শরীরের ক্ষতিকারক উপাদান ধ্বংস করে) আছে। এছাড়া সাতকরায় খাদ্যতন্ত্রু বা আঁশ জাতীয় গুণাবলী বিদ্যমান।
৮.সাতকরা ভিটামিন সি ছাড়াও বহু রাসায়নিক গুণাগুনে সমৃদ্ধ। যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
সংরক্ষণ
রোধে শুকিয়ে রাখার পদ্ধতি
সাতকরা লম্বালম্বিভাবে একটি পুরু রেখে (একটি সাতকরা ১২/১৪ টুকরা) কেটে বেশ কদিন রোদে শুকিয়ে পলিথিনে মোড়ে একটি পাত্রে রেখে দিন। যখন খাওয়া প্রয়োজন রান্নার ১ ঘণ্টা আগে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। একদম স্বাভাবিক সাতকরার স্বাদ ও গন্ধ পাওয়া যাবে। আর তা রান্না করতে পারবেন কাঁচা সাতকরার নিয়মেই।
ভাপ দিয়ে ফ্রিজে সংরক্ষণ
সবচেয়ে সহজ আর উপযুক্ত পদ্ধতি হচ্ছে ভাপ দেওয়া পদ্ধতি। সাতকরা কেটে রসালো লেবুর অংশ ফেলে দিয়ে ১২-১৪ টুকরা করে শুধু পানিতে ৮-১০ মিনিট জাল দিয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। ঠাণ্ডা হলে যেকোনো একটি পাত্রে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিন।
এমনভাবে সাজিয়ে রাখবেন যেন প্রয়োজন হলে এক টুকরাও নিতে পারেন। একই নিয়মে কয়েক মাস রাখলেও সাতকরার স্বাদ-গন্ধ অটুট থাকে। এতে একদম কাঁচা সাতকরা রান্নার স্বাদই পাওয়া যায়।