মাধবীলতার ভেষজ গুণাগুণ
মাধবী বা মাধবীলতা Malpighiaceae পরিবারের একটি আরোহী গুল্ম। এটি ছোট আকারের চিরহরিৎ ঝোপালো উদ্ভিদ। ডাল ছোট ছোট এবং ঝোপঝাড় হয়ে যায়। এভাবে বহুবর্ষী হলে ধীরে ধীরে মূল লতাটি বেশ মোটা হয়ে যায়। ডাল দু' তিন বছর পরপর কেটে দিতে হয়, তারপর লতা যতই বাড়তে থাকে ততই নতুন নতুন ডালপালা গজায় ফুল বেশি ফোটে। এর মোটা মোটা ডালের ছাল মেটে রঙের, ভেতরের কাঠ লালচে ও শক্ত।
পাতা: পাতা বিপরীতমুখী, আয়তকার, বোঁটার দিক থেকে আগা ক্রমশ সরু, সাধারণত ৪ থেকে ৬ ইঞ্চি লম্বা হয়। অনেকটা চাঁপা ফুলের পাতার মতো। বাগানের শোভার জন্য যত্ন করে মাধবী লাগানো হয়। তবে এই লতা গাছটি এখন প্রায় দুষ্প্রাপ্য।
ফুল: মাধবীলতা বসন্ত দিনের ফুল হলেও, গ্রীষ্মের শুরুতেও গাছে ফুল ফুটতে দেখা যায়। কখনো বর্ষাকাল পর্যন্ত ফুল থাকে। পাতার কক্ষে এবং শাখার অগ্রভাগে মঞ্জরিতে প্রায় ১০-৩০টি ফুল ফোটে। ফুল উভলিঙ্গ, গুচ্ছবদ্ধ ও বিন্যাস সুসংবদ্ধ। মুকুলগুলো সূক্ষ্ম রোমে ভরা। ফুল সাদা থেকে হালকা গোলাপি রঙের। ফুলে মোট ৫ টি পাঁপড়ি থাকে। পাঁপড়ি গুলি ১.৫-২ সেমি লম্বা ও ১.২-১.৫ সেমি চওড়া। চারটি পাপড়ি এক রকম সমান হলেও পঞ্চম পাপড়িটি একটু ছোট আকৃতির এবং তার গোড়ার দিকে হলুদ রঙা টিপ। ফুল দেখতে তিল ফুলের মতো এবং খুব সুগন্ধি। পাপড়ির কিনারা চিরুনির মতো কাঁটা এবং পুংকেশরগুলোর মধ্যে একটি থাকে দীর্ঘ। পুংকেশর ১০টি, অসমান, সরু, ০.৮-১.৫ সেমি লম্বা। পুংকেশরগুলির একটি সবচেয়ে লম্বা ও বাঁকা।
ফল: ফল রোমশ, ৩টি পক্ষযুক্ত। মাধবীলতার তিন পাখনাওয়ালা ফলের জন্য তার এমন নামকরন। ফলের অমন গড়নের জন্য কেউ কেউ একে হেলিকপ্টার ফুল ও মদনমাস্তা নামেও ডেকে থাকেন। প্রতিটি ফলে ২-৩টি গোলাকার বীজ থাকে। বীজ থেকে সহজেই গাছ জন্মায়। এ ছাড়া শাখা কলম বা দাবা কলমের দ্বারাও এর বংশবিস্তার করা যায়।
অন্যান্য নাম : মাধবীলতা, মাধবী, মাধবিকা, মণ্ডপ, কামী, পুষ্পেন্দ্র, অভীষ্টগন্ধক, অতিমুক্ত, বিমুক্ত, কামুক, ভ্রমরোৎসব, বসন্তদ্যুতি
ইংরেজি নাম : Clustered hiptage, Helicopter Flower, Hiptage
বৈজ্ঞানিক নাম: Hiptage benghalensis
ভেষজ গুণাগুণ
১. পুরানো বাত রোগ হলে মাধবীলতার পাতার টাটকা রস ২০ মি. লি. আধ কাপ ঠাণ্ডা পানির সাথে মিশিয়ে রোজ সকালে একবার করে খেলে রোগী আরাম পায়।
২. হাঁপানী বা শ্বাসকষ্টে মাধবীলতা গাছের কচি পাতা ও ডাল সামন্য পানি দিয়ে বেটে দশ থেকে পনের মি. লি. পরিমাণ খেলে হাঁপানি অথবা শ্বাসকষ্ট কমে।
৩. পাঁচড়া ও চুলকানি হলে উভয় রোগের ক্ষেত্রে গোসল করার পর পানি ভালভাবে মুছে মাধবীলতার পাতা ও কচি ডাল মিহি করে বেটে ভালভাবে লাগিয়ে দিতে হবে। এ ভাবে চার থেকে পাঁচ দিন লাগালে উপকার হবে।
৪. বিষাক্ত ঘা বা পুরানো ঘায়ে মাধবীলতা গাছের শুকনা ছাল খুব ভালভাবে গুঁড়া করে ঘায়ের ওপর ছড়িয়ে দিয়ে পরিষ্কার পাতলা কি কাপড়ের ফালি দিয়ে বেঁধে রাখা দরকার। রোজ সকালে ঘা পরিষ্কার করে আবার একইভাবে ছালের গুড়া ছড়িয়ে বেঁধে রাখতে হবে। চার পাঁচ দিনের মধ্যে ঘা ভাল হয়ে যাবে।
৫. এই গাছের পাতার রস যেকোন চর্মরোগ ভালো করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
৬.মাধবীলতা পাতার রস খোস-পাঁচড়া ও কুষ্ঠ রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।