পান পাতার উপকারিতা ও ভেষজ গুনাগুণ
পান Piperaceae পরিবারের গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের একপ্রকার লতাজাতীয় গাছের পাতা। পান গাছের কান্ডকে ছোট ছোট টুকরায় কেটে চারা তৈরি করতে হয়। প্রতিটি চারা লম্বায় ২৫-৩০ সেমি এবং তাতে ৩-৫টি গাঁইট (পর্ব) থাকা আবশ্যক। সাধারণত দুটি গাইট মাটির নিচে এবং একটি বা অধিক গাঁইট মাটির উপরে রাখা হয়। চারা প্রস্তুতের জন্য কমপক্ষে দুই বছর বয়সের পুরাতন এবং সুস্থ ও নীরোগ গাছ নির্বাচন করা হয়।
ইংরেজি নাম: Betel leaf / Betel Vine
বৈজ্ঞানিক নাম: Piper betel
বিস্তৃতি
প্রধানত দক্ষিণ এশিয়া, উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশসমূহ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মানুষ পান খায়।
পান পাতার উপকারিতা
১.মুখের দুর্গন্ধ দূর করে
খাবার গ্রহণের পর তার কণা মুখের ভেতরে, দাঁতের ফাঁকে লেগে থাকে। এগুলো ব্যাকটেরিয়া পচিয়ে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। পান খেলে তার রস জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে এসব ব্যাকটেরিয়াকে জন্মাতে দেয় না। ফলে মুখের স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও মুখে দুর্গন্ধ হয় না।
২.নাক থেকে রক্ত পড়া থামায়
অনেক সময় সান স্ট্রোক হওয়ার ফলে নাক দিয়ে রক্ত পড়ে | এটা বন্ধ করতে একটা পান পাতা পাকিয়ে তা নাকের মধ্যে গুঁজে দিন | মাথা পিছনের দিকে হেলিয়ে রাখেতে হবে | কিছুক্ষণের মধ্যেই রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যাবে | আসলে পান পাতা খুব তাড়াতাড়ি রক্ত জমাট বাঁধিয়ে দিতে পারে |
৩.কানের ব্যথায়
পান পাতার আরো একটা বড় বেনিফিট হল এটা কানের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে | কয়েক ফোঁটা পানের রস আর কয়েক ফোঁটা নারকেল তেল একসঙ্গে মিশিয়ে কানের মধ্যে দিলে ব্যথা কমে যাবে | তবে এই ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াই ভালো |
৪.যৌন শক্তি বাড়ায়
এটি একটি পুরনো প্রথা, তবু কার্যকর। নববিবাহিত দম্পতিদের অনেকেই যৌন মিলনে যাওয়ার আগে পান খান। এতে তাদের যৌন ক্ষমতা ও মিলনের স্থায়িত্বকাল বৃদ্ধি পায়।
৫.ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়
পান পাতায় আছে চমৎকার এন্টিঅক্সিডেন্ট যা ক্যানসারের ঝুঁকি কমায় ও দেহে ক্যান্সার সৃষ্টি প্রতিরোধ করে। এজন্য রোজ ১০-১২টি পান পাতা পানিতে ৫ মিনিট জ্বাল দিতে হবে। এরপর তা নামিয়ে ছাঁকতে হবে। একটু ঠান্ডা হলে তাতে কয়েক ফোঁটা মধু মিশিয়ে কুসুম গরম থাকতেই পান করতে হবে। রোজ এটা খেতে পারলে ক্যানসারের ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
৬.গ্যাস্ট্রিক আলসার নিরাময় করে
পান খেলে পেটে বায়ু কম হয় ও গ্যাস হয় না। এর ফলে গ্যাস্ট্রিক ও তা থেকে আলসার সৃষ্টির সুযোগ কমে যায়। পানের রস হজমে সাহায্য করায় তা পেটে বদ গ্যাস তৈরি রোধ করে। ফলে পেট ফাঁপে না ও গ্যাস্ট্রিক হয় না।
৭.ত্বকের জন্য
খুব কম লোকেই জানে পানে যে অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল প্রপার্টি আছে তা পিম্পল‚ অ্যাকনে সহজেই সারিয়ে তোলে | এছাড়াও বিভিন্ন স্কিন অ্যালার্জি‚ ফুসকুড়ি‚ কালো ছোপ‚ সান বার্ন সারিয়ে দেয় | এর জন্য কয়েকটা তাজা পান পাতা আর কাঁচা হলুদ একসঙ্গে বেটে লাগাতে হবে |
৮.ক্ষুধা বৃদ্ধি করে
পাকস্থলী গড়বড় হলে সবই উল্টে যায়। খিদেও লাগে না। পাকস্থলীতে অম্লমান বা পিএইচের মাত্রা স্বাভাবিক না থাকলেই এরূপ হয়। পান তা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। ফলে শুধু পান পাতা চিবিয়ে খেলেও ক্ষুধা বাড়ে।
৯.মাথা ব্যথায়
গরমের কারণে মাথা ব্যথা করলে কপালে কয়েকটা পান পাতা রাখুন | এছাড়াও পান পাতার রস লাগালে তাড়াতাড়ি মাথা ব্যথা কমে যায় |
১০.স্বর ভাঙ্গায়
পানের শিকড় তীক্ষ্ণ, স্বল্পশোধক, কফনাশ করে। যদি কোনো কারণে গলা বসে যায় তো পানের শিকড় (বাজারেও পানের দোকানে পাওয়া যায়) খেলে গলায় স্বর খুলবে।[২]
১১.সর্দি ও কাশিতে
একটি বা দুটি পান পাতা চিবিয়ে নিলে সর্দিতে উপকার পাওয়া যায়। আবার পানের শিম্বির (পান গাছে যে সিমের মতো ফল হয়) চূর্ণ মধুতে মিশিয়ে চাটলে সর্দির জন্যে যে কাশি হয় তা সেরে যায়। পান পাতায় রেড়ির তেল লাগিয়ে একটু গরম করে ছোট শিশু বুকের ওপর রেখে কাপড় গরম করে হালকাভাবে সেঁকে দিলে শিশুর বুক ভরা কফ দূর হয়।
১২.চোখের ব্যথায়
পানের রস চোখে দিলে রাতকানা রোগে উপকার হয় এবং চোখে ব্যথারও উপশম হয়।
১৩.ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
পান রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে বলে গবেষণায় জানা গেছে। পানের ডায়াবেটিস প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য আছে।
১৪.শিশুদের পেট ব্যথা কমায়
পেটে ব্যথা হলে ছোট্ট শিশুরা কাঁদতে থাকে। বড় শিশুরা হয়তো বলতে থােক, পেট চেপে ধরে কাতরাতে থাকে। এ অবস্থায় পান পাতার চকচকে পিঠে নারিকেল তেল মাখিয়ে তা গরম করে সেই পাতা পেটের ওপর চেপে ধরে সেঁক দিতে হবে। ৩-৪ মিনিট পর পর এভাবে কয়েকবার সেঁক দিলে পেটে ব্যথা কমে যাবে। খেয়াল রাখতে হবে সেঁকের সময় তাপটা যেন বেশি না হয়।
১৫.হজমশক্তি বাড়ায়
সাধারণত খাওয়ার পর পান খাওয়া হয় | এটা করা হয় কারণ পান হজম করতে সাহায্য করে | গ্যাস‚ অম্বলও কমায় | এছাড়াও যাদের কনস্টিপেশনের সমস্যা আছে তাদের জন্যেও উপকারী | পেট খারাপ হলে পেটে যে ব্যথা করে অনেকসময় তাও কমাতে সাহায্য করে |