কন্টিকারির উপকারিতা- Benefits of Yellow-fruit nightshade
Yellow Berried Nightshade

কন্টিকারি-Yellow-fruit nightshade

কন্টিকারি একটি কাঁটা ধরণের গাছ। এটি হল নাইটশেড প্রজাতির একটি উদ্ভিদ। ভারতে এটিকে ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে ব্যবহার করা হয় কিন্তু এর ফলটি বিষাক্ত। অঞ্চলভেদে কন্টিকারিকে কন্টিকারিকা বা কন্টকিনি বলা হয়।

ইংরেজি নাম: Yellow-fruit nightshade

বৈজ্ঞানিক নাম: Solanum virginianum

বিবরণ

এটি ঘন কন্টকময় ভূলুন্ঠিতা গুল্ম । মাটিতে গড়িয়ে এটি ছত্রাকারে বেড়ে চলে। শাখা-প্রশাখা এমনকি পাতাও কন্টকময় বলে এটিকে কন্টিকারিকা বলে। পাতা ১০-১২ সে.মি. লম্বা, ৫-৭ সে.মি. চওড়া ও ডিম্বাকৃতি, মাঝ মাঝে ছেঁড়া মনে হয়। পাতা এবং শাখা-প্রশাখা সবুজ বা হলদে সবুজ রঙের হয়। নদীর চর, রাস্তার ধার ও পতিত জায়গায় দেখা যায়। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে কন্টিকারিকা বেড়ে উঠে। ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে ফুল ও ফল হয়। রক্তাভ নীল ফুলের আকৃতি বেগুনের মতো। কাঁচা ফল সবুজ তবে পাকলে হলুদ বা লালচে হলুদ হয়। ফলের ব্যাস ৭-৯ সে.মি. এবং প্রতি ফলে ১২০-১৪০ টি ছোট ছোট বেগুন বীজের মতে বীজ থাকে।

আরো পড়ুন: ঘোড়ানিম এর উপকারিতা

বিস্তৃতি

এশিয়া,সৌদি আরব, ইয়েমেন, আফগানিস্তান, ইরান, চিন, বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, প্রাকৃতিকভাবে জন্মায়।

কন্টিকারির উপকারিতা

১.কোমরে ব্যথা হলে এবং প্রস্রাব মাঝে মাঝে থেমে থেমে হলে ১০ গ্রাম কন্টিকারি ডাল এবং পাতা, ৫ গ্রাম বেগুনের মূল ৪ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে এক কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে এর সঙ্গে ৫০ গ্রাম সাদা দই মিশিয়ে সকালে কিছু খাওয়ার পর খেতে হবে। তাতে উপকার পাওয়া যাবে।

২.কন্টিকারির ১০ গ্রাম ডাল ও তিনটি পাতা ৮ কাপ পানিতে সেদ্ধ করে অর্ধেক থাকতে নামিয়ে ছেঁকে ওই ক্বাথ দিয়ে মুগ ডাল রান্না করে খেলে কাশির উপশম হয়।

৩.শ্বাসরোগ জটিল হলে কন্টিকারি গাছ ফলমূলসহ ২৫০ গ্রাম থেঁতো করে ২ লিটার পানিতে সেদ্ধ করে আধা লিটার থাকতে নামিয়ে ছেঁকে নিয়ে ক্বাথ আলাদা করে আবার জ্বাল দিয়ে ঘন চিটাগুড়ের মতো করতে হবে। তারপর ঘন ক্বাথের সঙ্গে সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে দিনে কয়েকবার একটু একটু করে চেটে ৫-৬ দিন খেতে হবে। এতে হাঁপের টান এবং কাশি থাকলেও উপশম হবে।

৪.গেঁটেবাতে কন্টিকারি এবং সজনের ছাল সমপরিমাণ নিয়ে ছেঁচে একটু গরম করে ফোলা জায়গায় প্রলেপ দিলে সেরে যাবে।

৫.চোখ ওঠায় ২-৩ গ্রাম পরিমাণ কন্টিকারির মূল ছেঁচে তার সঙ্গে ২৫০ মিলিলিটার ছাগলের দুধ ও সমপরিমাণ পানি মিশিয়ে সেদ্ধ করে অর্ধেক হলে নামিয়ে ছেঁকে ওই দুধ ব্যবহার করলে দুই-একদিনের মধ্যেই চোখ ওঠা সেরে যাবে।

৬.কণ্টিকারীর মূল বসন্ত রোগের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে দু’আনা পরিমাণ কণ্টিকারীর মূল ৩টি গোলমরিচসহ পেষণপূর্বক সেবন করলে ৩৬৫ দিনের মধ্যে বসন্ত রোগক্রমণের ভয় থাকে না।

৭.সর্দিকাশি হলে কণ্টিকারীর শিকড়, ফল ও ফুল বাদ দিয়ে কেবলমাত্র লতাপাতা ও ডাঁটা ছয় আনা পরিমাণ নিয়ে তাতে ১২টি গোল মরিচ, ১২টি তেজপাতা, ২টি পিঁপুল, এক ছটাক সৈন্ধব লবণ, দারুচিনি এবং দু’তোলা মিছরিচূর্ণ একত্রে মিশ্রিত করে আধাসের পানিসহ আগুনে (মাটির হাড়িতে) বসাতে হবে। তারপর ছেঁকে নিয়ে ঈষদুষ্ণ অবস্থায় রোগীকে সেবন করাতে হবে এক সপ্তাহ পর্যন্ত এরূপ সেবন করলে সর্দিকাশি আরোগ হবে। 

৮.যখন দাঁত কন কন করতে থাকে, তখন কণ্টিকারীর শুষ্ক বীজ চূর্ণ নতুন কল্কেয় ভরে, মাতাক সেবনের মত অগ্নি সংযোগ করে, ধীরে ধীরে টানলে ধোঁয়ার সৃষ্টি হয় সে ধোঁয়া দাঁতে লাগলে দাঁতের পোকা বিনষ্ট হয় ও দাঁতের কন কনানি বন্ধ হয়ে যায়।

৯. প্রস্রাবের চাপ বোধ হয় কিন্ত পরিমাণমতো হচ্ছে না, বারে বারে যেতে হয়; কিন্ত কোনো প্রকার জ্বালা-যন্ত্রণা নেই। এমন ক্ষেত্রে ১০ গ্রাম কন্টিকারিকা ডালে পাতাসহ থেঁতো করে ৪ কাপ পানিতে সেদ্ধ করে এক কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে খেতে হবে। এতে উপকার পাবেন।

১০.মূত্রাশয়ের পাথুরি রোগে প্রস্রাব বন্ধ হওয়ার ফলে রোগী যখনি বিশেষ কষ্ট পায়, তখন কণ্টিকারীর মূলের ছাল দুআনা পরিমাণ নিয়ে ঘোলের সাথে পেষণপূর্বক রোগীকে প্রাতঃকালে নিয়মিত এক সপ্তাহ পর্যন্ত সেবন করালে বিশেষ সুফল পাওয়া যায়।

আরো পড়ুন: বনগাঁদা বা একমেলা

ব্রোকলির স্বাস্থ্য উপকারিতা
দোপাটি ফুলের উপকারিতা - Garden Balsam flower benefits
কালোকেশী গাছের উপকারিতা
ডেউয়া ফলের স্বাস্থ্য উপকারিতা
চিরতা গাছের গুনাগুন
ডুগডুগি গাছের উপকারিতা ও গুণাগুণ - Benefits and properties of Calabash Tree
বাংলাদেশের বিলুপ্তপ্রায় দেশি ফল সমূহ
দেবদারু গাছ এর ভেষজ উপকারিতা - Herbal Benefits of false ashoka Tree
শিমের পুষ্টিগুণ
ক্যাজুপুট বা কাজুপুট ভেষজ গুণাগুণ - weeping paperbark herbal properties