কাউন বা কাওন-Foxtail millet
Foxtail millet

কাউন বা কাওন

কাউন বা কাওন হচ্ছে পোয়াসি পরিবারের সেটারিয়া গণের একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। কাউনের অন্য বাংলা নামগুলো হচ্ছে কাঙ্গুই বা কাঙ্গু, কোরা, কান্তি, দানা ও শ্যামধাত।

বৈজ্ঞানিক নাম: Setaria italica

ইংরেজি নাম: Foxtail millet

চাষাবাদ

ছোট দানা বিশিষ্ট শস্যটি বাংলাদেশ প্রচুর চাষ করা হয়। প্রায় সব ধরনের মাটিতে কাউনের চাষ করা যায়। তবে পানি দাঁড়ায় না এমন বেলে দোঁআশ মাটিতে এর ফলন ভাল হয়।কাউনের স্থানীয় জাত ছাড়া বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কর্তৃক উদ্ভাবিত ‘তিতাস’ নামের একটি জাত আছে। কাউনের এ জাতটি শিবনগর নামে ১৯৮০ সালে কুমিল্লা জেলা থেকে সংগ্রহ করা হয় এবং দেশী বিদেশী জাতের সাথে তুলনামূলক মূল্যায়ণের পর ১৯৮৯ সালে তিতাস নামে অনুমোদন করা হয়। তিতাস জাত উচ্চ ফলনশীল, আগাম রোগ ও পোকা প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন। তিতাস জাতের গাছ মাঝারি লম্বা, পাতা সবুজ , কান্ড শক্ত । গাছ সহজে নুয়ে পড়ে না । শীষ বেশ লম্বা, মোটা এবং রেশমী। বীজ মাঝারি আকারের এবং ঘিয়ে রংয়ের । হাজার বীজের ওজন ২.৩-২.৫ গ্রাম । স্থানীয় জাতের চেয়ে ফলন প্রায় ৩০-৩৫% বেশী । জাতটি রবি মৌসুমে ১০৫-১১৫ দিনে এবং খরিফ মৌসুমে ৮৫-৯৫ দিনে পাকে । তিতাস জাতটি গোড়া পচা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন । রবি মৌসুমে তিতাসের ফলন হেক্টর প্রতি ২.০-২.৫ টন। খরিফ মৌসুমে এর ফলন একটু কম হয়। দেশের উত্তরাঞ্চলে অগ্রহায়ণ থেকে মাঘ মাস (মধ্য নভেম্বর থেকে মধ্য ফেব্রুয়ারী) পর্যন্ত বীজ বোনা যায়।  দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে বীজ বোনা হয়।  কাউনের বীজ ছিটিয়ে ও সারিতে বোনা যায়। ছিটিয়ে বুনলে হেক্টর প্রতি ১০ কেজি এবং সারিতে বুনলে ৮ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।  বীজ সারিতে বুনলে সারি থেকে সারির দূরত্ব ২৫-৩০ সেমি  রাখতে হবে। চারা গজানোর পর ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে সারিতে চারার দূরত্ব ৬-৮ সেমি রেখে বাকি চারা তুলে ফেলতে হবে। কাউন চাষে সচরাচর রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা হয় না । তবে অনুর্বর জমিতে হেক্টর প্রতি নিম্নরূপ সার প্রয়োগ করলে ফলন বেশী হয়। একটি খরা সহিষ্ণু ফসল । তবে রবি মৌসুমে খরা দেখা দিলে ১-২ টি হালকা সেচের ব্যবস্থা করলে ফলন বেশী হয়। জমিতে আগাছা দেখা দিলে নিড়ানী দিয়ে দমন করতে হবে।

পুষ্টিগুণ

পুষ্টিমানের দিক থেকে কাউন অত্যন্ত সমৃদ্ধ। কাউনের চাল এমন একটি শষ্য দানা যাতে আছে প্রচুর পরিমানে আমিষ ও খনিজ লবন।প্রতি ১০০ গ্রাম কাউনের চালে ৩৭৮ ক্যালোরি প্রোটিন, ৯ গ্রাম পানি, ৭৩ মিলিগ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৪ গ্রাম মিনারেল, ৭৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি, ৩০০ ক্যালোরি ডায়োটরি ফাইবার, পটাসিয়াম ৬০ মিলিগ্রাম। যা আমাদের খাওয়া সাধারণ চালের চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ বেশি। এজন্যই বিজ্ঞানীরা একে অন্যতম সুপারফুড বলে থাকেন।

উপকারিতা

১) কাউনের চাল ফাইবার বা আঁশ জাতীয় শস্য।যা আমাদের কোষ্ট্যকাঠিন্য জাতীয় সমস্যা এবং দেহে দীর্ঘসময় ধরে শক্তির প্রবাহ দিয়ে থাকে।

২) কাউনের চালের(foxtail-millet) একটা উপাদান পটাসিয়াম। এই পটাসিয়াম পদার্থ আয়ন হিসেবে আমাদের শরীরে আয়নের অভাব পূরন করে থাকে।দেহে লবনের ভারসাম্য রক্ষায় পটাসিয়াম দারুনভাবে কার্যকারি ভুমিকা পালন করে থাকে।

৩) ডায়াবেটিক রোগীর ঘনঘন খাওয়ার অভ্যাস এই রোগকে আরো বেশি ত্বরান্বিত করে থাকে। আঁশবিশিষ্ট শস্য দানা হওয়ার কারনে এটি দীর্ঘ সময় শরীরে শক্তি সরবরাহ করে থাকে।ফলে ঘনঘন খাওয়া থেকে নিজেকে বাচাতে কাউনের চাল দারুন ভুমিকা পালন করে থাকে।

৪) কাউনের চালে আয়রন থাকে যা আমাদের শরীরে আয়রনের অভাব দূর করতে অগ্রনী ভুমিকা পালন করে থাকে।বিশেষ করে গর্ভবর্তী মহিলাদে শরীরে আয়রনের অভাব দেখা যায়।

৫)রক্তে খারাপ এলডিএল-সি(LDL-C)কোলেস্টেরল পরিমান বেড়ে যাওয়ার কারনে রক্তে চলাচল বিঘ্ন হতে থাকে। এই খারাপ এলডিএল হ্রাস করে এবং আমাদের শরীরের জন্য উপকারি এইচডিএল-সি(HDL-C)কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে থাকে।

৬)বর্তমানে অনেকের ওজন অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যায় এবং Obesity and Overweight বেশি থাকে। এই গুলো এক সময় মারাত্নাক রোগের সৃষ্টি করতে পারে। এই সকল রোগ থেকে বাচতে হলে কাউনের চাল বা শর্করা নাই এই জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে।

৭)উচ্চ রক্তচাপের কারনে প্রতিবছর বিশ্বে অনেক মানুষের মৃত্যু হতে দেখা যায়।উচ্চ রক্তচাপ থেকে নিজেকে বাচাতে কাউনের চাল খুবই উপকারি একটা খাবার।

৮) দেহের সুগঠন, ক্ষয়পূরন এবং পানিতে দ্রবনীয় ভিটামিন জাতীয় পদার্থ থাকার কারনে স্বভাবিক চালের চেয়ে প্রায় ১৮ থেকে ২০ গুন শক্তি দিয়ে থাকে। ফলে দেহকে রাখে সতেজ এবং প্রানবন্ত।

৯) ওজন নিয়ন্ত্রনে কাউনের চাল(foxtail-millet) অসাধারন ভূমিকা পালন করে থাকে।

১০) মেয়েদের সৌন্দয্য ঠিক রাখতে এবং দেহের গঠন, ওজন যাতে না বাড়তে পারে এই জন্য কাউনের চালের রেসিপি প্রতিদিন খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ভাল।

১১) ত্বকের খসখসে ভাব দূর করতে স্নেহ জাতীয় পদার্থ অসাধারন ভূমিকা পালন করে থাকে। এই চালে রয়েছে চর্বি জাতীয় উপাদান। যা শরীরের জন্য উপকারি এইচডিএল-সি(HDL-C)কোলেস্টেরল বিদ্যমান থাকে। ফলে আমার ত্বক খসখসে থেকে নিজেকে বাঁচাতে সক্ষম।

কাউনের চালের রেসিপি

কাউনের চালে নান ধরনের রেসিপি তৈরি করা যায়। সাধারন চালের মত কাউনের চাল দিয়ে, পোলাও, বিরিয়ানী, সাদা ভাত, ভূনা খিচুরি, পায়েশ, বিভিন্ন ধরনের বেকারিতে কাউনের চালের রেসিপি করা যায়।

বাংলাদেশ থেকে এই উপকারি কাউনের চাল চাষ বন্ধ হয়ে গেছে। কিছু কিছু জেলায় এখনও এই চালের চাষাবাদ দেখা যায়। এই চাল এখন দুর্লভ চালে পরিনত হয়েছে। এই অসাধা্নর উপকারের কারনে এই কাউনের চাল নতুন করে চাষ এবং বাজারজাত করনের কাজ চলছে। এই চালকে বাজারে নিয়ে আসতে পারলে অগণিত মানুষ ডায়াবেটিক, উচ্চ রক্তচাপ, অভিসিটি, অভারওয়েট নামক ভয়াবহ রোগ থেকে প্রতিকার পেতে পারে। সুস্থ থাকুন এবং নিজেকে ও পরিবারকে সুস্থ রাখুন।

কেয়া বা কেতকী
তেঁতুলের উপকারিতা
শুষনি শাকের ২০ টি উপকারিতা
হরতকি ফলের গুনাগুণ-Properties of Myrobalan Fruit
মেহেদি পাতার ঔষধি গুনাগুণ
বকুল ফুলের ঔষধি গুনাগুন - Medicinal properties of bullet wood flowers
ক্ষেতপাপড়া এর ভেষজ গুনাগুণ
উলট কম্বল উদ্ভিদের উপকারীতা
তোপচিনির উপকারিতা
খইয়া বাবলা গাছের ঔষধি গুণাগুণ - Medicinal properties of Madras Thorn plant