
Spirulina Food
স্পিরুলিনার স্বাস্থ্য উপকারিতা
পরিচয়ঃ
স্পিরুলিনা আসলে সামুদ্রিক শৈবালের নাম। স্পিরুলিনা নামটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ "spira" হতে, যার অর্থ হচ্ছে পাকানো বা সর্পিলাকার। স্পিরুলিনা' হলো অতি ক্ষুদ্র নীলাভ সবুজ শৈবাল যা সূর্যালোকের মাধ্যমে দেহের প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদন করে । এটি সাধারণত জলে জন্মায়। সামুদ্রিক শৈবাল নামেই এর বেশি পরিচিতি।
বৈজ্ঞানিক নাম: Arthrospira platensis
পুষ্টিগুণঃ
এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন, লৌহ ও একাধিক খণিজ পদার্থ। স্পিরুলিনা একটি শক্তিবর্ধক সম্পূরক খাদ্য। প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেলস সমৃদ্ধ প্রকৃতির আশ্চর্য খাবার স্পিরুলিনা। স্পিরুলিনার গুণাগুণ অনেক। বিশেষ করে প্রচুর ভিটামিন, লৌহ ও নীলাভ সবুজ রং থাকার কারণে স্পিরুলিনায় রয়েছে নানা ধরনের রোগ প্রতিরোধের উপাদান। স্বাদ ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াহীন স্পিরুলিনা নিয়মিত সেবন করলে দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে পুষ্টিহীনতা, রক্তশূন্যতা, রাতকানা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, আলসার, বাত, হেপাটাইটিস ও ক্লান্তি দূর হবে। বিসিএসআইআর-এর বিজ্ঞানীরা ৬০ জন আর্সেনিকোসিস রোগীর উপর স্পিরুলিনা নিয়ে গবেষণা চালান। গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রতিদিন ১০ গ্রাম করে স্পিরুলিনা খাওয়ালে প্রায় ৪ মাস পর রোগী সম্পূর্ণরূপে সুস্থ্য হয়ে উঠে।
ব্যবহারঃ
স্পিরুলিনা সাধারণত সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। নামটি অপরিচিত হলেও এতে প্রায় সব ধরনের নিউট্রিয়েন্ট রয়েছে।
সুপার ফুডঃ
বর্তমান বিশ্বে স্পিরুলিনা একটি পরিচিত সুপারফুড যা ট্যাবলেট এবং গুঁড়া উভয় আকারেই সেবন করা যায়। বিশ্বের অন্তত ২২ টি দেশে বানিজ্যিক ভাবে উৎপাদিত এই স্পিরুলিনা এতটাই পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাদ্য পরিপূরক যে নাসা(NASA) ১৯৮৮ সালে এটিকে নভোচারীদের খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন। ইতোমধ্যে বাংলাদেশও বাণিজ্যিকভাবে স্পিরুলিনা চাষে প্রাথমিক সফলতা অর্জন করেছে।
স্পিরুলিনাকে সুপারফুড বলার কারনঃ
স্পিরুলিনার জৈব রাসায়নিক উপাদানে প্রোটিনের পরিমাণ অন্যান্য উদ্ভিজ্জ খাদ্যদ্রব্যের তুলনায় অনেক বেশি যা সেবনের পরে উল্লেখযোগ্য পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ছাড়াই তা মানুষের ডায়েটের ভিটামিন এবং প্রোটিন সরবরাহ করতে সক্ষম।
প্রোটিনের পরিমান তুলনামূলক বেশি থাকায় তা খুব সহজেই শরীরে শক্তি ফিরিয়ে আনে।
দেহের অতিরিক্ত কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে এবং যে কোন বিষাক্ত ও ক্ষতিকারক বর্জ্য অপসারণে স্পিরুলিনা বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের কার্যক্ষমতাকে বিনষ্ট করতে স্পিরুলিনা বেশ কার্যকরী।
উপাদানঃ
স্পিরুলিনা এর জৈব রাসায়নিক উপাদান গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রোটিন যা তার শুষ্ক ওজনের শতকরা ৫৫-৭০ ভাগ। অন্যান্য উদ্ভিদজাতীয় খাদ্যের তুলনায় অধিক প্রোটিন সমৃদ্ধ স্পিরুলিনায় রয়েছে অত্যাবশকীয় ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন -এ, বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন-সি, ভিটামিন -কে, ভিটামিন -বি, ফলিক এসিড, ইনোসিটল, বায়োটিন ইত্যাদি। এমনকি স্পিরুলিনায় উপস্থিত রয়েছে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, সোডিয়াম, আয়োডিন, পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম এর ন্যায় বিভিন্ন খনিজ উপাদান।
১ টেবিল চামচ বা ৭ গ্রাম শুকনো স্পিরুলিনার উপকারিতা এর মধ্যে রয়েছেঃ
২০ ক্যালরি
৪.০২ গ্রাম প্রোটিন
১.৬৭ গ্রাম শর্করা
০.৫৪ গ্রাম চর্বি
মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম
২ মিলিগ্রাম লোহা
১৪ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম
৮ মিলিগ্রাম ফসফরাস
৯৫ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম
৭৩ মিলিগ্রাম সোডিয়াম
০.৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি আরও আছে থাইমিন, নিয়াসিন, রিবোফ্লেভিন, ফোলেট, ভিটামিন বি-৬, এ এবং কে।
স্পিরুলিনার ওষুধি গুণাগুণঃ
গর্ভবতীর রক্তাল্পতা প্রতিরোধ:
স্পিরুলিনাতে প্রচুর ক্লোরোফিল রয়েছে। যা রক্তের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিমোগ্লোবিনে রূপান্তরিত হতে পারে এবং রক্তাল্পতা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তাছাড়া স্পিরুলিনাতে ভিটামিন বি১২, ফলিক অ্যাসিড, আয়রন ও অ্যামাইনো অ্যাসিড রয়েছে। যা রক্ত তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আদর্শ খাবার:
এতে বেশি পরিমাণে প্রোটিন ও ভিটামিন বি১২ রয়েছে। যা নিরামিষভোজীদের এ দুটি পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি কমায়। কারণ তাদের খাদ্য তালিকায় প্রোটিন ও ভিটামিন বি১২ অনুপস্থিত থাকে।
রক্ত পরিষ্কার করে:
এতে প্রচুর ক্লোরোফিল ও ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। এই ক্লোরোফিল ও ম্যাগনেসিয়াম মিলিত হয়ে রক্তের দূষক পদার্থসমূহ দূর করে এবং রক্ত পরিষ্কার করতে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ৯-১০ গ্রাম করে স্পিরুলিনা খাওয়ালে ৪-৬ মাস পর রোগির আর্সেনিকজনিত চর্মরোগ সম্পূর্ণরূপে উপশম হয়।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়:
এতে উচ্চমাত্রায় গামা লিনোলেয়িক অ্যাসিড রয়েছে। যা দেহের ক্ষতিকারক এলডিএলের মাত্রা কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
ক্যান্সার থেকে রক্ষা:
স্পিরুলিনা ক্যান্সার হওয়া থেকে রক্ষা করে। স্পিরুলিনার নীল-সবুজ রং ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে সক্ষম হয়। স্পিরুলিনা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন সেলেনিয়াম, বিটা ক্যারোটিন, টোকোফেরল, ফেনলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ। যা বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।
হজমশক্তি বাড়ায়:
ই-কোলাই এবং ক্যান্ডিডার মত ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি দমন করে। স্পিরুলিনা পাচনতন্ত্রে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়া lactobacillus ও bifidobacteria এর মত ভালো ব্যাকটেরিয়া তৈরি করে। সুতরাং এটি পুষ্টি শোষণ করে শরীরের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে হজমশক্তি বাড়ায়।
কিডনিকে রক্ষা করে:
স্পিরুলিনার ক্লোরোফিল একটি উচ্চ ঘনত্ব সম্পন্ন এবং সেরা প্রাকৃতিক detoxifiers; এটি কিডনি থেকে ভারি ধাতু, ক্ষতিকারক রশ্মি এবং দূষণকারী ধাতু সরিয়ে কিডনির বিষাক্ততা কমায়।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে:
এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনতে সহায়তা করে। কারণ এতে প্রচুর ফাইবার রয়েছে। যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা সহজে বাড়তে দেয় না।
তথ্যসূত্র:জাগোনিউজ