দাঁতরাঙা, লুটকি, বন তেজপাতা, বেগম বাহ
দাঁতরাঙা এক ধরনের গুল্মজাতীয় গাছ; এর অন্যান্য আরো কিছু নাম রয়েছে: ফুটকি, লুটকি, ফুটুল, বনতেজপাতা ইত্যাদি। এটি বাংলাদেশে আগাছা / অপ্রয়োজনীয় গাছ হিসেবেই বেশি পরিচিত; যদিও বর্তমানে এর কিছু ঔষধি গুণাগুণ প্রকাশিত হয়েছে।
বৈজ্ঞানিক নাম: Melastoma malabathricum
ইংরেজি নাম: indian-rhododendron
নামকরণঃ
দাঁতরাঙা ফুলের ফল , দাঁতরাঙা ফুলের বিচি, এই বিচি খেলেই দাঁত রাঙা বা রঙিন হয় বলে এই ফুলর নাম করণ হয়েছে দাঁতরাঙা।
ফুল ও ফলঃ
এদের কাণ্ডের রং লালচে। এসব গাছের কাণ্ড নরম, সরল পত্র এবং প্রায় সারা বছর উজ্জ্বল বেগুনি রঙের ফুলে গাছ ভরে থাকে। এই ফুলে পাপড়ি থাকে মোট পাঁচটি। মাঝখানে হলুদ পুংকেশরের গুচ্ছ থাকে। এই পুংকেশর ফুলের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুণ। ফুলটির স্থায়িত্ব মাত্র একদিন। ফুল ফোটার পর গাছে ছোট ছোট ফল হয়। ফলের রঙ সবুজ। ফল পাকলে ফেটে যায় আর ভেতরের কালো শাঁস ফাটা অংশ দিয়ে বের হয়ে থাকে। পাকলে ফলগুলো খেতে তেতো-মিষ্টি লাগে। গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এ ফল খুব মজা করে খায়। ফল খাওয়ার পরে দাঁত ও জিহবা বেগুনি রঙে রঙিন হয়ে যায়। এই কারণেই এদের নাম হয়েছে দাঁতরাঙা। আদি ফুটকির প্রাকৃতিক রং গোলাপি এবং মেজেন্টা হলেও উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা ইদানিং বিভিন্ন রঙের হাইব্রিড ফুটকি উৎপাদন করছেন। বাণিজ্যিকভাবে এর চাষও হচ্ছে।
বিস্তৃতিঃ
এটি প্রধাণত পাহাড়ি বা উচুঁ এলাকায় বেশি জন্মে থাকে; বাংলাদেশ ছাড়াও এটি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার দেখা যায়।
বর্ণনাঃ
এই গাছটির উচ্চতা ১ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকলেও কখনো কখনো ৩ মিটার উচ্চতার গাছও চোখে পড়ে। তেজপাতার ন্যায় দেখতে এর পাতার দৈর্ঘ্য ৪ হতে ১১ সেন্টিমিটার; প্রস্থে ১.৩ সেন্টিমিটার যাতে ৫ হতে ৭ টি শিরা থাকে। এদের ফুল উজ্জ্বল বেগুনি বর্ণের এবং ফল সবুজ।
ঔষধি গুণাগুণঃ
এটি কৌষ্ঠ্যকাঠিন্য রোগে ব্যবহৃত হয়।
দাঁতরাঙার পাতার নির্যাস মানবদেহের ক্যান্সার, হৃদরোগ রোধে সহায়ক। তাছাড়া এর পাতার রস আমাশয়, পেটব্যথা, বাত ও বাতজ্বর দূর করতে পারে।
আলসার, উচ্চ রক্তচাপ, দাঁত ব্যথা, চর্মরোগ ও ডায়রিয়া চিকিৎসায় দাঁতরাঙা ব্যবহৃত হতে দেখা যায়।
কাটাছেঁড়ায় ফুটকির পাতা তাৎক্ষণিক রক্ত পড়া বন্ধ করে।