তিল খাওয়ার উপকারিতা - Benefits of eating sesame seeds
তিল সেসিমাম গণ অর্ন্তভূক্ত একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। তিল একবর্ষজীবি উদ্ভিদ যা প্রায় ৫০ থেকে ১০০ সেমি লম্বা, এবং এর উল্টো পাতা সাধারণত ৪ থেকে ১৪ সেমি পর্যন্ত লম্বা এবং মাঝথানে ব্যবধানসহ বিস্তৃতভাবে ভল্লাকার হয়ে থাকে ৫ সেমি পর্যন্ত। গাছ নলাকার। ফুল সাধারণ নীল রঙের হয় এবং প্রতিফুলে একটি করে ফল অর্থাৎ বীজ থাকে। প্রতিটি ফলে খাঁজকাটা বিভাগে অনেক বীজ থাকে। বীজ সাধারণত ৩ মি.মি. - ৪ মি.মি. লম্বা এবং প্রস্থ ২ মি.মি.। বীজের পুরুত্ব ১ মি.মি. এর মত হয়ে থাকে। প্রতিটি বীজের ওজন ২০ মি.গ্রা - ৪০ মি.গ্রা।
এর ফুল হলুদ, নলাকার, একটি চার খাঁজকাটা মুখের সাথে ৩ থেকে ৫ সেমি (১.২ থেকে ২.০ ইঞ্চি) লম্বা হয়ে থাকে। তিলের ফুল এছাড়াও সাদা, নীল বা বেগুনি রঙের হতে পারে।
ইংরেজি নাম: Sesame
বৈজ্ঞানিক নাম: Sesamum indicum
তিল খাওয়ার গুনাগুণ
রক্ত আমশয় ও সাধারণ আমাশয় ভাল করতে এটি উপকারী। এর আরো অনেক পুষ্টিগত গুনাগুণ রয়েছে-
রক্তচাপ হ্রাস করে
রক্তের উচ্চচাপ নিয়ন্ত্রণে প্রভূত কার্যকরী সাদা তিল কারণ এই তিলে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম যা রক্তচাপ হ্রাস করে। প্রতিদিন ভোরে এক টেবিল চামচ কালো তিল অল্প অল্প করে মুখে দিয়ে মিহি করে চিবিয়ে যখন একেবারে রসের মতো হয়ে যাবে তখন গিলে ফেলতে হবে। এই ভাবে সব তিল চিবিয়ে খাওয়া হয়ে গেলে ঠাণ্ডা জল খেতে হবে। এই তিল খাওয়ার পর তিন ঘন্টা পর্যন্ত আর কিছু খাবেন না। সাদা তিলে একাধিক প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং মিনারেলস রয়েছে। তাই প্রতিদিনের খাবারে এই উপকরণটি ব্যবহার করলে শরীরের ক্যানসার প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
তিলের বীজ ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। তিলের বীজের মধ্যে উচ্চ মাত্রায় ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে, যা রোগ প্রতিরোধেও কাজ করে । তিলের বীজ অন্তর্ভুক্ত স্তন, ফুসফুস এবং কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।
ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ
ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণেও অত্যন্ত কার্যকরী এই তিল। সাদা তিলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস যা হাড় মজবুত করে এবং অস্টিওপোরোসিসের সম্ভাবনা কমায়। তিলের তেল কিন্তু খুবই উপকারি। তিলের তের গোড়ালি ফাটা, ঠোঁট ফাটা দারুণ কাজ করে। তিল তেল একটু গরম করে রোজ মালিশ করলে এক মাসের মধ্যেই নিষ্প্রাণ ত্বকে উজ্জ্বলতা এসে যায়, সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। খিদে বাড়ায় তিলের তেল। নানা রকমের, ক্ষত, আঘাত, পুড়ে যাওয়া, মাড়িয়ে যাওয়া, ভেঙ্গে যাওয়া ইত্যাদিতে তিলের তেল অত্যন্ত উপকারি
হাড়ও মজবুত কর
সাদা তিলে এমন সমস্ত উপাদান আছে যা খেলে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে। ক্যালসিয়াম, ফসফরাস থাকায় হাড়ও মজবুত করে।
গাঁটের ব্যথা উপশমে কার্যকরী
ফাইবার-যুক্ত হওয়ার ফলে হজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য-সংক্রান্ত সমস্যাও দূর করে। সাদা তিলে রয়েছে কপার বা তামা যা গাঁটের ব্যথা, ফুলে যাওয়া, মাসল পেইন বা বাতের ব্যথার উপশমে কার্যকরী। তেজস্ক্রিয়তার হাত থেকে ডিএনএ-কে রক্ষা করার অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে সাদা তিলের। তাই যাদের কেমোথেরাপি নিতে হয় তাদের খাদ্যতালিকায় এই উপাদান রাখা খুব প্রয়োজনীয়। অনেকেই জানেন না যে ওরাল হেলথের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ এই উপকরণ। মুখের ভিতরের ব্যাকটেরিয়া নিধনের জন্য মুখের ভিতর স্প্রে করা হয় সাদা তিলের তেল। এই পদ্ধতিকে বলা হয় অয়েল পুলিং। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করে সাদা তিল ৷ সাদা তিলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার তন্তু পাওয়া যায় যা পাচন ক্রিয়াকে মজবুত করে।
ক্লান্তি দূর করে
আপনি যদি ক্লন্তি বোধ করেন, তবে আপনার শক্তির মাত্রা বাড়ানোর জন্য আপনার খাবারে তিল মিশ্রিত করে খান। তিলের বীজের মধ্যে ফাইটোস্টেরলগুলির উচ্চ ঘনত্ব থাকে, যা দেহে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করে। লো কোলেস্টেরল মানে হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি হ্রাস পায়।
রূপ লাবণ্যে
সাদা তিলে রূপ লাবণ্যের জন্যও পরিচিত ৷ মুখের অবাঞ্ছিত দাগ মিটিয়ে সুস্থ স্বাভাবিক করে তোলে ৷ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাদা তিলের কার্যকরী ভূমিকা রয়েছে। সাদা তিলে এমন সমস্ত উপাদান আছে যা খেলে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে ৷ ক্যালসিয়াম, ফসফরাস থাকায় হাড়ও মজবুত করে৷ শরীরের পুড়ে যাওয়া জায়গায় তিল পিষে নিয়ে, জলে ধোওয়া ঘি ও কর্পূর মিশিয়ে প্রলেপ দিলে সুফল পাওয়া যায়। তিলের তেল গরম করে লাগালেও আশ্চর্য সুফল পাওয়া যায়। যদি শরীরের কোনো অংশ খুব জ্বালা করতে থাকে তাহলে তিল দুধ দিয়ে পিষে প্রলেপ লাগালে দাহ বা জ্বালা দূর হয়। যদি টাটকা ক্ষত বা ঘা না সারে তাহলে তিল পিষে নিয়ে মধু আর ঘি মিশিয়ে লাগালে অনেক ওষুধ বা মলমের চেয়ে বেশি কাজ দেয়। অনেকেরই অকালে চুল পেকে যায় এবং দুর্বল হয়ে চুল পড়ে যায়। তাদের এই সমস্যা নিরসনে কালো তিলের প্রয়োজন। এই তিলের তেল প্রয়োগ করলে খুব উপকার পাওয়া যায়। এমনকি চুল গজাতেও সাহায্য করে।
ঋতুস্রাব সম্যায়
যেসব মেয়েদের ঋতুস্রাব নিয়মিত নয় কিংবা খুব ব্যথা-বেদনা হয় তাদের তিলের তেল খাওয়া উচিত। দুই চা চামচ তিল পিষে নিয়ে এক গ্লাস পানি মিলিয়ে ফুটাতে দিন। এক চতুর্থাংশ হলে নামিয়ে ঠান্ডা করে সেই পানিটুকু পান করলে মাসিক ঠিক মতো হবে।
কানের ব্যথা উপশম হয়
খাদ্য হিসেবে তিল খুবই জনপ্রিয়। নাড়ু, মোয়া ইত্যাদি মিষ্টি জাতীয় খাবার তৈরিতে ব্যবহার করা হয় তিল। এছাড়া তিলের তেল আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই উপকারী। তিলের তেল ব্যবহার করা হয় রূপচর্চার ক্ষেত্রেও। পুষ্টির সমস্যা নিরসনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দাঁত ব্যথা করলে হিং বা কালোজিরে পিষে নিয়ে তিলের তেল মিশিয়ে তেল গরম করে কুলকুচো করলে আরাম পাওয়া যায়। এই তেল তুলোয় লাগিয়ে মুখে রাখাও যেতে পারে। হিং, কালো নুন মিশিয়ে গরম করা তিলের তেল পেটে মালিশ করলে বা সেঁক দিলে পেটের ব্যথা সারে এবং গ্যাস কমে যায়।
চুল, ত্বক সুন্দর রাখে তিল
তিলের বীজে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক থাকে। এটি কোলাজেন গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, টিস্যু, চুল এবং ত্বককে শক্তিশালী করে। যদি আপনি ব্রণর সমস্যায় ভোগেন তবে তিলের বীজ খেলে উপকার পাবেন। আপনার ত্বক এবং চুল চকচকে রাখতে তিল খান।