ভেষজ উদ্ভিদ দারুহরিদ্রার উপকারিতা
দারুহরিদ্রা হচ্ছে Berberidaceae পরিবারের Berberis গণের একটি উদ্ভিদ। দারু-হরিদ্রা বলতে বোঝায় কাঠের-হরিদ্রা । এই গাছ সাধারণত ৩-৮ ফুট পর্য্ন্ত উচু হলেও শাখাগুলি নিম্নমূখী , পাতাগুলির কিনারা দাতে যুক্ত, শাখাগ্রে সরু সরু কাঁটা থাকে । দরুহরিদ্রা গাছের গায়ে কাঁটায় ভরা, দেখতে মধ্যমাকৃতির, অনেকটা লেবু গাছের মত, পাতার আকার ছোট ও পুরু এবং এর কিনারা খাঁজকাটা । দারুহরিদ্রার ফল খেতে টক ও এটা দেখতে কিসমিসের মত । দারুহরিদ্রার ফুল সাধারণত বসন্তকালে ফোটে এবং গ্রীষ্মকালে এর ফল দেখতে পাওয়া যায় । এই গাছ বাংলাদেশ , ভারত নেপাল ও এ উপমহাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে এই গাছ জন্মাতে দেখা যায় ।
বৈজ্ঞানিক নাম: Berberis asiatica
ইংরেজি নাম: Barberry
দারুহরিদ্রার উপকারিতা
এই গাছের নানা ধরনের উপকারি ভেষজ গুণাগুণ রয়েছে। যেমন-
মুখের ক্ষত দূর করতে :
প্রথমে এই কাঠ ঘসে নিতে হবে । এরপর এর ক্বাথ টি মুখে লাগালে ক্ষত ভালো হয়ে যায় ।
ব্রণ বা মেচেতায়:
এই কাঠ ঘষে চন্দনের মতো করে লাগালে বিশেষ উপকারী পাওয়া যায়।
রক্তপ্রদরে:
(মেনোরিজিয়া, Menorrhagia) এই গাছের ছালের ক্বাথ ব্যবহার করতে হয়।
শ্বেতপ্রদরে:
(লিউকোরিয়ায়, Leucorrhoea) এর ক্বাথ ব্যবহার, এমনকি কাঠ ঘষে চন্দনের মতো করে (১ চামচ) দুধ সহ খেলে উপকার হয়।
কোষ বৃদ্ধিতে :
সেদস্বী দেহ , শরীরে কফের প্রাধান্য যেখানে , সেক্ষেত্রে দারুহরিদ্রার কাষ্ঠ এক থেকে দুই গ্রাম নিয়ে থেতো করে পানি দিয়ে বেটে ছেকে খেতে হবে ।
রক্তার্শে (Bleeding piles):
এই বনৌষধিটি ব্যবহারের কথা চরকে কয়েক বার বলা হয়েছে, তাছাড়া ওয়াট সাহেবের গ্রন্থেও দেখা যায় যে, ডাক্তার পানি (Dr. Panny) ৫-১০ গ্রেণ মাত্রায়, ঐ কাঠ থেকে তৈরী রসোত মাখনের সঙ্গে ব্যবহার ক’রতে (খাওয়ার জন্য) দিতেন এবং ঐ রসোতের জল তৈরী করে অর্শের বলি ধুতে বলতেন। তবে বর্তমান সময়ে ভাল রসোত যখন পাওয়া যাচ্ছে না, তখন ঐ কাঠ যথা নিয়মে সিদ্ধ করে সেই জল ব্যবহারে ক্ষতি কি?
পিষ্টক মেহে:
যাদের প্রস্রাব চটচটে রকমের হয়, তাঁরা এই দারুহরিদ্রা আর হলুদ সমপরিমাণ নিয়ে (৬ গ্রাম পরিমাণে) ক্বাথ করে প্রত্যহ সকালে কাঁচা দুধ মিশিয়ে খাবেন। (এটা সুশ্রুতের যোগ।)
নেত্ররোগে:
গরম জলে দারুহরিদ্রা (৩ গ্রাম) থেতো করে ভিজিয়ে রাখতে হবে। ৪। ৫ ঘণ্টা অন্তর খেতে দিলে চোখ লাল, ব্যথা, ফুলা, জলঝরা, পিচুটি পড়া ইত্যাদি নিবৃত্তি পায়। (এটাও বাগভটের।)