দেশী গাবের উপকারিতা
দেশি গাব এক প্রকার সপুষ্পক উদ্ভিদের ফল। দেশি গাব গাছ বহুববর্ষজীবি। এটি খুবই ধীরে ধীরে বাড়ে। ঘন পল্লবের পরিপক্ক একটি গাব গাছ ৩০-৩৫ মিটার লম্বা আর ৬৫-৭০ মিটার ব্যাসের হয়ে থাকে। দেশি গাবের ফল গোলাকার। খেতে হালকা মিষ্টি ও কষযুক্ত। সবুজ ফল পাকলে হলুদ বর্ণ ধারণ করে। পাকা ফলের ভেতরটা আঠালো ও চটচটে। এই গাছে পোকা ধরে না। থাইল্যান্ডের আং থং প্রদেশে একে প্রাদেশিক বৃক্ষের মর্যাদা দেয়া হয়েছে।
ইংরেজি নাম: Gaub, Indian persimmon, Malabar ebony, Black-and-white Ebony বা Pale Moon Ebony নামে ডাকা হয়।
বৈজ্ঞানিক নাম: Diospyros malabarica
পুষ্টিগুণ
প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্য-উপযোগী গাবে রয়েছে ৫০৪ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ৮৩ থেকে ৮৪ গ্রাম জলীয় অংশ, ২ দশমিক ৮ গ্রাম আমিষ, শূন্য দশমিক ২ গ্রাম চর্বি, ১১ দশমিক ৮৮ গ্রাম শর্করা, ১ দশমিক ৮ গ্রাম খাদ্য আঁশ, ১১ দশমিক ৪৭ গ্রাম চিনি, ৪৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৩৫ আইইউ ভিটামিন-এ, ১৮ মিলিগ্রাম ফসফরাস, শূন্য দশমিক ৬ মিলিগ্রাম লোহা, শূন্য দশমিক ২ মিলিগ্রাম থায়ামিন, ১৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি, ১১০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ৩০৩ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম। গাবের এসব পুষ্টিগুণ আমাদের শরীরকে রক্ষা করে নানা রোগ থেকে।
ঔষধি গুনাগুনা
গাব খেলে সর্দি-কাশি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, বুকে রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় না এবং অ্যাজমা দূর করে। এতে উচ্চমাত্রায় ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান থাকার কারণে রোগপ্রতিরোধ প্রক্রিয়ার উন্নতি ঘটায়। আমাশয় ও পেটের অসুখে গাব গাছের ছাল বেশ উপকারী। গাবের রয়েছে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা। জেনে নিন দেশী গাব ফলের যত উপকারিতা রয়েছে-
আগুনে পোড়া ক্ষতে:
ক্ষতটা পুরে উঠছে না, তখন কাঁচা গাব সিদ্ধ করে সেই জল ছেকে তারপর তাকে ঘন করে লেহবৎ (paste) করতে হবে। এইটা একটু গাওয়া ঘিয়ের সঙ্গে মিশিয়ে লাগাতে হবে। এটা ষোড়শ শতকের ভাবপ্রকাশের যোগ।
শারীরিক দুর্বলতা কমায়:
উচ্চমাত্রায় খাদ্যশক্তি থাকায় গাব শারীরিক দুর্বলতা কমায়। গাবে থাকা ক্যালসিয়াম হাড়কে মজবুত করে। রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও গাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়:
গাবে প্রচুর আঁশ থাকায় কোষ্ঠ-কাঠিন্য দূর করে। এতে অন্ত্রের বিভিন্ন রোগ এবং কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমে।
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি:
গাবে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ এবং ‘এ’ রয়েছে। এগুলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৃদ্ধি, ত্বকের জন্য ক্ষতিকর রেডিক্যাল কমিয়ে শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এই দুই ভিটামিন বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না, জটিল রোগ প্রতিরোধ এবং ত্বকের সুস্থতার জন্য বেশ কার্যকরী।
রক্ত চলাচলের উন্নতি ঘটায়:
গাবে থাকা আয়রন দেহে লোহিত কণিকার কোষের উন্নতি ঘটায়। দেহের গুরুত্বপূর্ণ টিস্যুগুলোতে অক্সিজেন প্রবাহ বৃদ্ধি করে। এছাড়া এটি পেশি গঠন, চুলের বৃদ্ধি এবং হজমক্রিয়ার উন্নতি ঘটায়।
হাইপারটেনশন কমায়:
উচ্চ পটাশিয়াম উপাদান থাকায় রক্ত সঞ্চালনের উন্নতি ঘটায়। এটি শরীরে রক্তপ্রবাহ ঠিক রাখে, কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের উপর চাপ কমায় এমনকি রক্তচাপও কমাতে সাহায্য করে। এতে থাকা আঁশ শরীরে কোলেস্টেরল কমায়। এছাড়াও রক্ত চাপ, হার্টঅ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
হজমে সহায়ক:
গাবে প্রচুর আঁশ থাকার কারণে এটি হজমক্রিয়া উন্নতিতেও সাহায্য করে, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং অন্যান্য গ্যাস্ট্রিক জাতীয় সমস্যা দূর করে।
ত্বকের যত্ন:
গাব খেলে বা এর তৈরি রূপচর্চার উপাদান ব্যবহার করলে ত্বকের প্রদাহ কমায়।