দন্ড কলস এর উপকারিতা
পরিচিতিঃ
বাংলাদেশ ও ভারতে ধুলফি ঔষধি উদ্ভিদ ও আগাছা হিসাবে বেশি পরিচিত। তবে ভারতের ত্রিপুরা ও আসামে এর কচি গাছ শাক হিসাবে খাওয়া হয়। বাংলাদেশে ও ভারত, ফিলিপাইনে এটি একটি সাধারণ আগাছা।
সড়কের ধারে বিভিন্ন ফসলের জমিতে প্রাকৃতিক ভাবে জন্মে এই উদ্ভিদটি। এর সাদা ফুল মুখে নিলে মিষ্টি স্বাদ অনুভূত হয়, আর পাতা তেঁতো স্বাদ যুক্ত। আঞ্চলিক ভাষায় বিভিন্ন নামে ডাকা হয় এই ছোট গুল্ম জাতীয় গাছটিকে কোন এলাকায় বলা হয় মধু গাছ আবার কোথাও কানশিকা।তবে এই গাছের আসল নাম দন্ডকলস। দন্ডকলস গাছের উচ্চতা ১ থেকে দের মিটার উচ্চতা সম্পন্ন হয়।বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কয়েকটি গাছ একত্রে জন্মে ঝোপালো ভাবে। গাছের কান্ড শাখা প্রশাখা সবুজ ফুলের রঙ সাদা। সারা বছরই এ গাছ দেখতে পাওয়া যায় ফুল ফোঁটার আদর্শ সময় মার্চ ও এপ্রিলে।
দিন দিন কমে যাচ্ছে এই উদ্ভিদটি। আগে ব্যাপক হারে সড়কের ধারে পতিত জমিতে বিভিন্ন ফসলের বাগানে দেখা গেলেও এখন তেমন দেখা যায় না। সম্প্রতি রাজীবপুর ঢাকা সড়কের স্লুইসগেট এলাকায় দেখা যায় এই গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ দন্ডকলসের।
বর্ণনাঃ
এই উদ্ভিদ সারা বছরই পাওয়া যায়। তবে বৃষ্টি মৌসুমের পরবর্তী সময়ে এই উদ্ভিদ বেশি দেখা যায় এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন সমতল এলাকার গ্রামে পাওয়া যায়। সাধারণত রবি শস্য (সরিষা) ক্ষেতে এই উদ্ভিদ বেশি জন্মে। এছাড়াও বাড়ির আশেপাশে, রাস্তার ধারেও এই উদ্ভিদ দেখা যায়। সিলেট এলাকায় বাঙালি হিন্দুদের ভেতর শ্যামাপূজার সময়ে ‘আটতিতা’ নামের পর্বে এই শাক অন্য শাকের সাথে মিলিয়ে খাওয়া হয়।
উপকারিতাঃ
শাক হিসেবে শ্বেতদ্রোণ গ্রামবাংলার মানুষের কাছে অতি পরিচিত একটি উদ্ভিদ। ভেষজ চিকিৎসায় বহুকাল ধরে উদ্ভিদটি বহুল হয়ে আসছে। সাধারণত কচি কাণ্ডসহ পাতা শাক হিসেবে খাওয়া হয়। ভেষজ চিকিৎসায় পাতা এবং কাণ্ড ব্যবহৃত হয়ে থাকে। জ্বর, সর্দি, কাশি, কৃমি, পেটফাঁপা, বদহজম ও বাতের ব্যথায় শ্বেতদ্রোণের উপকারিতা ও ব্যবহার অনন্য। নানাধরনের ত্বকের রোগ ও এলার্জি কমে শ্বেতদ্রোণের ব্যবহারে। এটি বিভিন্ন পোকামাকড়, সাপ ও বিছার কামড়ের চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত। মেয়েদের মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত কমায়
১.চুলকানি হলেও এই পাতার রস কাঁচাহলুদের রসের সাথে নারকেল তেল মিশিয়ে শরীরে মাখিয়ে কিছুক্ষন রোদে শুকিয়ে গোসল করলে ভাল উপকার পাওয়া যায়। এই ভাবে এক সপ্তাহ পর্যন্ত লাগাতে হবে।
২. সর্দি ও কাশি হলে এই গাছের পাঁতা সিদ্ধ করে কালোজিরে দিয়ে খেলে উপশম হয়। কাশি হলে দন্ডকলসের পাতা ও শিকড় রস করে আদা সহ গরম পানি দিয়ে খেলে কাশি কমে যায়।
৩.বাচ্চাদর কৃমি হলে দন্ডকলসের পাতা রস করে ১ চামচ করে ৪-৫ দিন খাওয়ালে কৃমি মরে যাবে।
৪.ছোট বাচ্চাদের যদি দীর্ঘ সয়ম সর্দি থাকে তাহলে এই গাছের ফুল তুলে সেই ফুল মায়ের বুকের দুধের সাথে কচলিয়ে সেই দুধ খাওয়ালে সর্দি ভাল হয়ে যায়। পাতা বেটে রস করে মায়ের দুধের সাথে মিশিয়ে মাথার তালুতে দিয়ে রাখলেও সর্দি কমে যায়।
৫.চুলকানি রোগেও কাজ করে দন্ডকলস এর পাতার রস কাঁচাহলুদের রস ও নারকেল তেল মিশিয়ে শরীরে মেখে রোদে শুকিয়ে গোসল করলে উপকার পাওয়া যায়।
৬.শিশুদের পাতলা পায়খানা হলে এই পাতার রস করে খাটি মধু মিশিয়ে দুই তিন দিন খাওয়ালে উপকার পাওয়া য়ায়।
সতর্কতাঃ
মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে জ্বালাপোড়া করে। গর্ভবতীদের খাবার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞদের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন।