বিছুটি পাতার উপকারিতা,ব্যবহার এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
বিছুটি গাছ

বিছুটি পাতা নামটি আমাদের কারো কাছেই অজানা নয়। তবে এই পাতার যথাযথ ব্যবহার কিংবা উপকারিতার তুলনায় পার্শপ্রতিক্রিয়ার বিষয়েই আমরা অধিক অবগত। তাই আজ জেনে নিন বিছুটি পাতার নানান উপকারিতা গুলি। বিচুটি হল এমন এক ধরনের উদ্ভিদ যার বহু ভেষজ গুনাগুন রয়েছে। এছাড়াও এটি বহু ক্ষেত্রে চিকিৎসাবিদ্যাতেও ব্যবহার হয়ে থাকে। প্রাচীন যুগ থেকেই চিকিৎসাবিদ্যায় এলার্জি, বিভিন্ন প্রদাহ, আর্থারাইটিস এ ধরনের বিভিন্ন সমস্যার ক্ষেত্রে বিছুটি পাতার ব্যবহার হয়ে আসছে। এছাড়াও বিছুটি পাতায় তৈরি চা শরীরের অনেক অসুস্থতা মোকাবিলায় সহায়তা করে। আসুন তাহলে আজকের নিবন্ধ থেকে জেনে নিন বিছুটি পাতার বেশ কয়েকটি ব্যবহার এবং এর উপকারিতা ।

বিছুটি পাতার উপকারিতা

বিছুটি পাতার সমবংশীয় বিভিন্ন আগাছা গুলি আমাদের বহু ঔষধ তৈরীর ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়ে থাকে এবং আমাদের স্বাস্থ্যের বিভিন্ন সমস্যা তো এগুলো ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আসুন জেনে নিন কিভাবে এগুলি আমাদের স্বাস্থ্যের রক্ষায় সহায়তা করে।

১. হৃদযন্ত্র এবং লিভারের স্বাস্থ্য রক্ষায়

আমাদের শরীরের অন্যতম দুটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো হৃদযন্ত্র এবং লিভার। এগুলিকে সুস্থ রাখার জন্য বয়স বাড়ার সাথে সাথে এর যথাযথ পরিচর্যা, খাদ্য ব্যবস্থার পরিবর্তন এবং শরীর চর্চা আমরা করে থাকি। তবে আপনি হয়তো জানতেন না কিন্তু হার্ট এবং লিভারের সমস্যার ক্ষেত্রে বিছুটি পাতার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে ২০১৮ সালে ইঁদুরের ওপর এক মাসের জন্য ১৫০ মিলিগ্রাম করে প্রতিদিন বিচুটি পাতার রস প্রদান করে দেখা গিয়েছে, এটি শরীরের রক্তের লিপিড প্রোফাইল কে উন্নত করতে সহায়তা করে। এছাড়াও এই পাতার মধ্যে থাকা অন্যান্য উপাদান গুলি বাজারচলতি বহু ওষুধের তুলনায় শরীরে ভালোভাবে কাজ করে থাকে। বিছুটি পাতা শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রদান করে থাকে, যার ফলে শরীরের ভারসাম্য ঠিক হয় এবং লিভার জনিত যেকোনো রোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়। এছাড়াও সমীক্ষার ফলে দেখা গিয়েছে, হাইপারটেনশন প্রতিরোধে এটি সহায়তা করে। যা আমাদের কার্ডিও ব্যবস্থাকেও সুস্থ রাখতে সহায়তা করে ।

২. প্রোস্টেটের সমস্যায়

প্রোস্টেট গ্রন্থির অত্যাধিক বৃদ্ধির ফলে এটি মূত্রনালীতে চাপ বাড়ায়, যার ফলে মূত্রতন্ত্র কে এটি অক্ষম করে তোলে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই সমস্যা দেখা দিতে থাকে। ইঁদুরের ওপর করা গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বিছুটি পাতা প্রোস্টেট সংক্রান্ত সমস্যার উন্নতিতে সহায়তা করে। এই গাছগুলোর বিভিন্ন অংশ আমাদের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। এই গাছের শিকড়ে থাকা এক ধরনের উপাদান অ্যারোমাটেজকে বাধা দেয়, যা আমাদের শরীরে একটি এনজাইম টেস্টোস্টেরন কে ইস্ট্রোজেনের রূপান্তর করে। ইস্ট্রোজেন প্রোস্টেট এর সমস্যার জন্য দায়ী। এছাড়াও বিছুটি গাছের অংশগুলি আমাদের শরীরে মানব ক্যান্সার কোষগুলিকে ত্বরান্বিত করে, যার ফলে ক্যান্সারের কোষগুলি শরীরে বৃদ্ধি পায় না ।

৩. জ্বর, শ্বাসকষ্ট এবং অ্যালার্জির চিকিৎসায়

অ্যালার্জি মূলত পরিবেশ দূষণ, ধূলিকণা, হঠাৎ কোনো কিছুর গন্ধ অথবা খাবারে অসুবিধার কারণে হয়ে থাকে। যার ফলে অ্যালার্জি এমন আকার ধারণ করতে পারে যার থেকে জ্বর এবং শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা দেখা দেয়। অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় এমন কিছু খাবার আছে যা মানুষের শরীরে সহ্য হয় না। যার পরিপ্রেক্ষিতে অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দেয় কিংবা এমন অনেক ওষুধ আছে যেগুলো খেলে শরীরে অ্যালার্জি সৃষ্টি হয়। অ্যালার্জির সূচনা হিসেবে আমরা হাঁচি, চুলকানি, মাথাব্যাথা, শুকনো কাশি, ঘুম ঘুম ভাব এই সমস্ত উপসর্গ গুলো দেখতে পারি। হঠাৎ কোনও গন্ধ নাকে গেলে কিংবা ধুলাবালির কারণে অ্যালার্জি সৃষ্টি হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে বিছুটি পাতার মধ্যে থাকা অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টি অ্যালার্জিক বৈশিষ্ট্য গুলি আমাদের শ্বাসকষ্ট কিংবা অ্যালার্জির চিকিৎসায় সহায়তা করে থাকে। এর মধ্যে থাকা নিকোটিনামাইড, সিনফাইন এবং অস্ট্রোল অ্যালার্জি দমনে সহায়তা করে। তবে অনেক ক্ষেত্রে এটি আবার বিরোধী কার্যকলাপও প্রদর্শন করে থাকে। তবে যে কোনো প্রদাহ কমাতে এগুলি সহায়তা করে থাকে। তীব্র হাঁপানি, শ্বাসনালীর অ্যালার্জি রোগ গুলির ক্ষেত্রেও বিছুটি পাতা দিয়ে তৈরি ওষুধ ব্যবহার করে উপকারিতা পাওয়া গিয়েছে। এক্ষেত্রে এটি সরাসরি শরীরে কুপ্রভাব ফেললেও এটি পরোক্ষভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে ।

৪. মাসিক প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে মাসিক প্রক্রিয়াকে যথাযথ ভাবে স্বাভাবিক পদ্ধতিতে করানোর জন্য এবং পিসিওএস অর্থাৎ পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিস্টের সমস্যা দূর করতে এবং জন্ম প্রক্রিয়াকে যথাযথ ভাবে সহজ করে তুলতে বিচুটি গাছের বিভিন্ন উপাদানগুলি থেকে ওষুধ তৈরি করা হয়। মূলত এগুলি শরীরে রক্তের পরিমাণকে যথাযথ এবং শরীরে প্রজনন ক্ষমতা কে বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করে। এছাড়াও ডিম্বাশয় এর ভেতরে রক্তপাত কে নিয়ন্ত্রণ করে, যার ফলে ডিম্বাশয়ে সিস্ট এর পরিমাণ কমে এবং প্রজনন ক্ষমতা স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। ওভারিয়ান সিস্টের সমস্যা থাকার কারণেই যথাযথভাবে মাসিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হলেই সে ক্ষেত্রে ওভারি থেকে যেকোন সমস্যার উৎপত্তি হয়। যার ফলস্বরূপ পরবর্তী সময়ে প্রজনন ক্ষমতায় সমস্যা দেখা যায়। অধিকাংশ মহিলাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা দেখা যায়, যার ফলস্বরূপ সঠিক সময়ে সন্তান ধারণে অসুবিধা দেখা যায়। তবে পিসিওএস এর সমস্যার ক্ষেত্রে বিছুটি, গোল মরিচ, পেঁয়াজ এ ধরনের আনাজ উপকার করে থাকে। যা শরীরের ভেতরে রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় না, যার ফলে শরীরে রক্ত যথাযথভাবে প্রবাহিত হলে সেক্ষেত্রে জমাটবদ্ধতার সমস্যা দূর হলে জরায়ুর পেশীগুলি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়ে ওঠে। কেন না রক্তপাত যথাযথ হলেই শরীরের ভেতরে থাকা প্রয়োজনীয় উপাদান গুলি মাসিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে পারবে। এক্ষেত্রে তাই বিছুটি গাছের বিভিন্ন অংশগুলি দিয়ে তৈরি করা উপাদানগুলো শরীরের মাসিক চক্র কে যথাযথ ভাবে তৈরি করতে এবং পিসিওএস এর সমস্যা দূরীকরণে সহায়তা করে ।

৫. ক্ষত নিরাময়ে এবং প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে

ক্ষত নিরাময়ের জন্য প্রয়োজনীয় অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান গুলি বিছুটি পাতার মধ্যে রয়েছে। মূলত শরীরের কোষগুলোকে পুনর্গঠন করে শরীরের রক্ত সরবরাহ ব্যবস্থাকে পুনর্গঠন করতে বিছুটি পাতা গাছের থেকে তৈরী ওষুধ সহায়তা করে। তবে প্রাচীন যুগ থেকেই ক্ষত নিরাময়ের ক্ষেত্রে বিছুটি গাছের ওষুধ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বিছুটি উপ গোত্রীয় গাছের ফুল এবং ফল বরাবরই তাদের সংবেদনশীলতা এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যের জন্য প্রশংসা পেয়ে এসেছে। এই গাছের পাতায় অ্যান্টি হিমুরার্জিক প্রভাব রয়েছে। কেননা এটিতে প্রচুর পরিমাণে খনিজ, ভিটামিন এবং ফ্যাটি এসিড রয়েছে। যার ফলে যে কোনো ক্ষত নিরাময়ের ক্ষেত্রে এই গাছের উপাদান ব্যবহার করা হয়। যা রক্তপাত কে হ্রাস করার পাশাপাশি রক্ত জমাট করে শরীরে রক্ত তঞ্চনে সহায়তা করে। এই গাছের পাতা এবং অন্যান্য অংশগুলি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি অ্যান্টি অ্যালার্জিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হওয়ায় এগুলো ক্ষত নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে ।

৬. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বিছুটি সমগোত্রীয় বিভিন্ন গাছের পাতাগুলো শরীরে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ে বেশ কিছু আশাজনক প্রভাব দেখিয়েছে। তাই এগুলির মধ্যে উপস্থিত অ্যান্টি হাইপার গ্লাইসেমিক বৈশিষ্ট্যের কারণে ডায়াবেটিস মেলিটাস এর চিকিৎসার ক্ষেত্রে ও বিছুটি পাতা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মূলত রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে রক্তকে শুদ্ধ করতে এটি সহায়তা করে থাকে ।

৭. আলসার বা পেটের ক্ষত নিরাময়ে

দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার ফলে কিংবা অধিক তেল-মসলাযুক্ত খাবার দীর্ঘদিন খাওয়ার ফলে পেটের ভিতর এক ধরনের ক্ষতের সৃষ্টি হয়। অনেক সময় ছোট ছোট ফুসকুঁড়ির মতন দেখা যায়। যা পেটে ব্যথার সৃষ্টি করে এবং শরীরকে রীতিমতো খারাপ করে তোলে। পেটের ভেতরে এ ধরনের ক্ষত নিরাময়ে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয় বিছুটি পাতা। ইতিমধ্যেই আমরা জেনেছি যে কোন ধরনের ক্ষত নিরাময়ের ক্ষেত্রে কিংবা প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে এটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে শরীরের ভেতরের কোষগুলিকে পুনরুদ্ধার করে, ক্ষত নিরাময় করে ।সেখানে রক্ত সরবরাহকে পুনরুদ্ধার করতে সহায়তা করে। এই গাছের বিভিন্ন অংশে থাকা উপাদানগুলি শরীরের শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, হেপাটো প্রটেক্টিভ, অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য প্রদান করে থাকে। যা ক্ষত কে দ্রুত নিরাময়ে সহায়তা

৮. অস্টিওআর্থারাইটিস নিয়ন্ত্রেণে

অস্টিওআর্থারাইটিস এর মতন সমস্যাগুলিকে কম করে হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে বিছুটি পাতা। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বিছুটি গাছের পাতা অস্টিও আর্থারাইটিস এর ব্যথাকে কম করে শরীরের ভেতর প্রদাহজনক হরমোনের মাত্রা হ্রাস করে। মানব শরীরে গবেষণার ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, এটি শরীরে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি যুক্ত হওয়ায় যেকোনো ধরনের ব্যথা কে কম করতে সহায়তা করে।

৯. মূত্রনালীর সংক্রমণ নিরাময়ে

মূত্রনালীর সংক্রমণ এর প্রভাব শরীরের অন্যান্য অংশে সমানভাবে লক্ষ্য করা যায়। যার ফলস্বরূপ, পেটে ব্যথা, পায়ে খিঁচুনি এই সমস্ত সমস্যা গুলি দেখা যায়। প্রোস্টেট গ্রন্থি হঠাৎ করে বৃদ্ধি পেলে সে ক্ষেত্রে মূত্রনালীতে সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া বার্ধক্যজনিত কারণে মূত্রতন্ত্র অনেক সময় তার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। যার ফলস্বরূপ মূত্রনালীর সংক্রমণ দেখা যায়। এক্ষেত্রেও বিছুটি পাতার ব্যবহার এই রোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। মূলত এই গাছের মূলে থাকা উপাদানগুলি শরীরের ভেতরের কোষগুলোকে যথাযথভাবে সুস্থ করে তোলে সহায়তা করে।

(১০. ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায়

আমরা সকলেই জানি এই বিছুটি পাতা সরাসরি যদি ত্বকে লাগে সে ক্ষেত্রে এটি বিক্রিয়া করে ফেলে, যার ফলস্বরূপ ত্বকে অ্যালার্জি চুলকানির মতো সমস্যা দেখা দেয়। তবে পরোক্ষভাবে এটি ত্বকের বহু চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মূলত বিভিন্ন চর্ম রোগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ঔষধি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। প্রাচীনকাল থেকেই চিকিৎসাশাস্ত্রের ব্যবহার আমরা দেখে আসছি। তবে বর্তমানে বিভিন্ন ঔষধি তৈরীতে এই গাছের বিভিন্ন অংশের নির্যাস ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষার ক্ষেত্রে যে কোন ধরনের দাদ, হাজা, চুলকানি কিংবা ফুসকুড়ির সমস্যায় যে ঔষধ ব্যবহার করা হয় সেক্ষেত্রে অনেকগুলোতেই এটির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

১১. চুলের বৃদ্ধিতে এবং মজবুত

করতে প্রাচীনকাল থেকেই চুলের বৃদ্ধিকে বাড়িয়ে তুলতে ইউরর্টিকার প্রজাতির গাছের ব্যবহার হয়ে আসছে। এই উদ্ভিদ গুলির মধ্যে থাকা ভেষজ উপাদান গুলি চুলকে ভেতর থেকে সুস্থ ও সুন্দর করে তুলতে সহায়তা করে। এছাড়াও মানুষের চর্ম রোগ নিয়ন্ত্রনে সহায়তা করে। মাথার মধ্যে থাকা কোষগুলিকে উজ্জীবিত করে তোলে, যার ফলে এই গাছের পাতার রস যদি মাথায় লাগানো যায় সেক্ষেত্রে নতুন চুল গজানোর পাশাপাশি চুলের গোড়া শক্ত করে তুলতে সহায়তা করে।

বিছুটি পাতার খাদ্যগুণ

ইতিমধ্যেই আমরা বিছুটি পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে গিয়েছি। এবার জেনে নিন এই পাতার পুষ্টিমূল্য।

বিছুটি পাতার গাছে প্রচুর পরিমাণে ফাইটোকেমিক্যাল থাকে। এছাড়া এই গাছের পাতায় ক্যারোটিন, জ্যান্থোফিলস, জেক্সানথিন, লুটোক্সানথিনের মতন উপাদানগুলি রয়েছে। এর পাশাপাশি এমন কিছু অ্যাসিড রয়েছে যার গুনাগুন মারাত্মক। এর পাশাপাশি বিছুটি গাছের পাতায় প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফোলেট, ভিটামিন এ, ভিটামিন কে, সাধারণ কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান রয়েছে।

বিছুটি পাতার পুষ্টির মান -

এক কাপ অর্থাৎ ৮৯ গ্রাম বিছুটি পাতার রসের মধ্যে রয়েছে -

জল ৭৮.০৩ গ্রাম

শক্তি ৩৭ কেসিএল

প্রোটিন ২.৪১ গ্রাম

ফ্যাট ০.১০ গ্রাম

সুগার ০.২২ গ্রাম

ক্যালসিয়াম ৪২৮ মিলিগ্রাম

আয়রন ১.৪৬ মিলিগ্রাম

ম্যাগনেশিয়াম ৫১ মিলিগ্রাম

ফসফরাস ৬৩ মিলিগ্রাম

পটাশিয়াম ২৯৭ মিলিগ্রাম

ভিটামিন বি ৬ – ০.০৯২ মিলিগ্রাম

ভিটামিন এ ৯০ মিলিগ্রাম

ভিটামিন ই ১৭৯০ আই ইউ

বিছুটি পাতা কিভাবে ব্যবহার করা যায়?

বিচুটি পাতার বহুমুখী ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। তবে এটি ভেষজ চা হিসেবে তৈরি করে পান করা যেতে পারে। পরোক্ষভাবে ঔষধ হিসেবে এবং মলম হিসেবেও এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে বিছুটি গাছের পাতাকে শুকনো করে রেখেও খাওয়া যেতে পারে। দোকানে ওষুধ হিসেবেও কেনা যেতে পারে। মূলত অস্টিওআর্থারাইটিসে আক্রান্ত রোগীরা মলম ব্যবহার করতে পারেন। তবে মাথায় রাখবেন এটি ব্যবহারে কিছু শর্ত আছে। এলার্জির ক্ষেত্রে, দৈনিক ৬০০ মিলি গ্রাম বিছুটি গাছের শুকনো পাতা গ্রহণ করা যেতে পারে। এবং যাদের বর্ধিত প্রোস্টেট গ্রন্থির সমস্যা রয়েছে তারা দৈনিক ৩৬০ মিলিগ্রাম বিছুটি গাছের শিকড়ের অংশ গ্রহণ করতে পারেন। এগুলি অনেক দোকানে কিনতে পাওয়া যায়। এছাড়াও বিছুটি গাছের শুকনো পাতা এবং ফুলগুলো ভেষজ চা তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়াও এই গাছের পাতা, ডাল পালা দিয়ে সুপ হিসেবেও বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও এই গাছের পাতাগুলো যদি সহ্য হয় সে ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে চা করে খাওয়াটাই যথাযথ ।

কিভাবে বিছুটি গাছের পাতা দিয়ে চা তৈরি করবেন?

শুকনো বা টাটকা বিছুটি গাছের পাতা – ১ কাপ প্রায় ২৫০ মিলি

গরম জল – ১ থেকে ২ কাপ

কিভাবে তৈরি করবেন?

১) একটি হাড়িতে ভালো করে জলটা ফুটিয়ে নিন।

২) এবার ফুটন্ত জলের মধ্যে বিচুটি পাতা যোগ করুন।

৩) আঁচ বন্ধ করে দিয়ে ৫ থেকে ১০ মিনিট ঢেকে রাখুন।

৪) এরপর ১০ মিনিট বাদে ছেঁকে নিয়ে তাতে মধু যোগ করে খেয়ে নিন।

এক্ষেত্রে চিনি ব্যবহার না করা হলেই ভাল এবং গরম গরম পরিবেশন করুন ।

মূলত এর স্বাদ একটু তেতো ধরনের হওয়ায় এতে মধু যোগ করতে পারেন। এছাড়াও এই গাছের পাতা শাক হিসেবে ব্যবহার করেও খেতে পারেন। তবে এটি ব্যবহারের আগে অবশ্যই ভালো করে ধুয়ে নেবেন। কেননা এগুলো বুনো উদ্ভিদ হওয়ায় এর কিন্তু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে।

বিছুটি পাতার কি কি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে?

১) যদি বিছুটি পাতার সাথে অন্য কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া করে যেমন অ্যাসিটাইল, কোলিন হিস্টামিন, সেরোটোনি ন ফরমিক অ্যাসিড এই ধরনের যৌগ গুলোর সংস্পর্শে এলে জ্বালা সৃষ্টি হয় দেখা গিয়েছে।

২) বিছুটি পাতার শিকরের সংস্পর্শে এলে অনেকেরই শরীরে জিআই ট্রাকের ব্যাঘাত ঘটে যার ফলস্বরূপ প্রচুর ঘাম এবং অ্যালার্জি হতে পারে।

৩) এছাড়াও গাছ থেকে বিছুটি পাতা তোলার সময় অনেকের হাতে চুলকানি ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে।

৪) এছাড়াও গর্ভবতী মহিলা যদি চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই এগুলি গ্রহণ করে থাকেন তবে সে ক্ষেত্রে বিপদ ঘটে যেতে পারে।

৫) যে কারণে রান্না করা বা শুকিয়ে নিয়ে বিছুটি পাতা সেবন করাই যথাযথ।

৬) কেননা এটি তাজা খেলে এর মধ্যে বেশ কিছু উপাদান থাকে। যা ত্বকে বিক্রিয়ার সৃষ্টি করে এবং যার ফলে ত্বকে জ্বালা এবং চুলকানির মত সমস্যাগুলি দেখা যায়।

বিছুটি পাতার কি কি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে?

বিছুটি পাতা কিভাবে আমাদের শরীরে উপকার করে, বিভিন্ন প্রদাহ কমাতে রক্তে শর্করার পরিমাণ কম করতে, রক্তচাপ পরিচালনায়, চুলের বৃদ্ধিতে, হৃদযন্ত্র এবং লিভারের স্বাস্থ্য রক্ষায় কিভাবে সহায়তা করে ইতিমধ্যে আজকের নিবন্ধ থেকে আমরা তা জেনে নিয়েছি। বিছুটি পাতার কি কি উপকারিতা এবং কি কি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে তার সবকটি সম্পর্কে একটা সম্যক ধারণা পেয়েছি। সুতরাং এবার তাহলে বিচুটি পাতা আপনি আপনার প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করতেই পারেন।

কিডনি সুস্থ রাখে যেসব খাবার - Foods that keep the kidneys healthy
কানপাকা রোগের লক্ষণ,কারণ ও চিকিৎসা - Symptoms and treatment of ear infections
পড়া মনে রাখার কিছু কৌশল - Some strategies to remember reading
কলার ১২ টি জাদুকরী গুণ
সজিনার উপকারিতা
বিশল্যকরণী গাছের উপকারিতা
মুখে ব্রণ হলে কি করনীয়
কুমড়োর বিচির উপকারিতা
লবঙ্গ এর ২০টি গুনাগুণ ও উপকারিতা
পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ১০টি ঘরোয়া উপায়