নাগলিঙ্গম গাছের উপকারিতা ও ঔষুধী গুনাগুন
নাগলিঙ্গম বা হাতির জোলাপ এক প্রকার বৃক্ষ এবং এর ফুল। এই গাছটি Lecythidaceae পরিবারভুক্ত। নাগলিঙ্গম ৩৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। গুচ্ছ পাতাগুলো খুব লম্বা, সাধারণভাবে ৮-৩১ সেন্টিমিটার, কিন্তু ৫৭ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বায় পৌঁছতে পারে। পাতার রং সবুজ, প্রায় কালো, কিন্তু অত্যন্ত উজ্জ্বল। গ্রীষ্মকালে এদের পত্র মোচন হয়। উল্লেখ্য, নাগেশ্বর, নাগকেশর ও নাগলিঙ্গম তিনটি ভিন্ন প্রজাতি। এই গাছে ফুল ধরার পর বেলের মতো গোল গোল ফল ধরে। এগুলো হাতির খুবই প্রিয় খাবার। এজন্য এর অন্য নাম হাতির জোলাপ গাছ।
ফুল: মার্চ থেকে জুলাই নাগলিঙ্গম ফুল ফোটে। গাছের কাণ্ড থেকে শেকড়ের মতো বের হয়। সেই শেকড়ে ফুল ফোটে। একটি শিকড়ে অনেকগুলো ফুল থাকে। ফুলে ফুলে গাছের কাণ্ড আচ্ছাদিত হয়ে যায়। এই ফুলের রং লাল, গোলাপি আর হলুদ মিশ্রিত। আকারে বড়। পাপড়ি ছয়টি এবং তুলনামূলক ভারি। ফুলের মধ্যভাগে রয়েছে গর্ভাশয়। গর্ভাশয়টি সাপের ফণার মতো দেখতে। এর জন্যই হয়তো ফুলটির নাম ‘নাগলিঙ্গম’। ফুল শুকিয়ে গেলে তাতে গোলাকৃতির বাদামি-খয়েরি বর্ণের ফল হয়।
ফল: ফল ক্যানন বলের মত অর্থাৎ দীর্ঘ, গোলাকার, ভারি এবং ২৫ সে.মি. পর্যন্ত লম্বা হয়। নয় মাসের মধ্যে ফল পরিপক্ক হয়। ফল মাটিতে পড়লে মৃদু শব্দে ফল ফেটে যায়, এবং বাতাসে ঝাঁঝালো গন্ধের সৃষ্টি করে। ফলগুলো কখনো কখনো পরিপক্ক হতে ১৮ মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। ফলগুলো গাছের মত শক্ত। প্রতিটি ফল থেকে প্রায় ৬৫টি বীজ পাওয়া যায়।
ইংরেজি নাম: Cannonball tree
বৈজ্ঞানিক নাম: Couroupita guianensis
নাগলিঙ্গম এর ভেষজ উপকারিতা
ঔষধি বৃক্ষ হওয়াতে কিছু দেশে চাষ হলেও পৃথিবীতে এ গাছ এখন বিলুপ্তির পথে। নাগলিঙ্গম গাছের রয়েছে অনেক ঔষধি গুণ। এর ফুল, পাতা ও বাকলের নির্যাস থেকে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ তৈরি করা হয়। ওষুধ হিসেবে এ বৃক্ষের ফুল, পাতা এবং বাকলের নির্যাস এন্টিবায়োটিক, এন্টিফাঙ্গাল এবং এন্টিসেপটিক হিসেবে ব্যবহূত হয়।
১.এই গাছের পাতা বেটে রস করে খেলে পেটের পীড়া দূর হয়ে যায়।
২.পাতার রসও ত্বকের নানা সমস্যায় কাজ দেয়।
৩.ডায়রিয়ার সমস্যা হলে এই গাছের পাতার রস খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
৪.ম্যালেরিয়া রোগ নিরাময়ে নাগলিঙ্গমের পাতার রস বিশেষ উপকারী।
৫.নাগলিঙ্গম পাতা পিষে প্রলেপ দিলে বাত ব্যথা দূর হয়ে যাবে।
৬.নাগলিঙ্গম গাছের বাকল সিদ্ধ করে খেলে অর্শ্ ভালো হয়ে যায়।
৭.এই পাতার রস করে ব্রণের উপর লাগালে ব্রণ খুব দ্রুত ভালো হয়।