পরশপিপুল এর উপকারিতা ও ভেষজ গুনাগুণ
পরশপিপুল হচ্ছে Malvaceae পরিবারের Thespesia গণের ভেষজ উদ্ভিদ। পরশপিপুল মাঝারি আকৃতির চিরসবুজ বৃক্ষ, ৭ থেকে ১০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। পাতা তাম্বুলাকৃতির, ১২ সেমি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে, বোঁটা পাঁচ সেমি দীর্ঘ। অশ্বত্থ পাতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মিল রয়েছে। ফুল একক বা সজোড়, পাঁচ থেকে সাত সেমি চওড়া, হালকা হলুদ। ভেতরে গাঢ় লাল দাগ। অনেকগুলো পরাগকেশর যুক্ত জবা ফুলের মতো, বাসি ফুল লালচে।
বৈজ্ঞানিক নাম:Thespesia populnea
ইংরেজি নাম: portia tree, Pacific rosewood,milo
প্রচলিত অন্যান্য নামের মধ্যে Indian Tulip Tree, Pacific Rosewood, Seaside Mahoe ইত্যাদি অন্যতম।
ব্যবহার্য অংশ:
পাতা: সন্ধির ফোলায় পাতা বেটে গরম করে প্রলেপ দিলে উপশম হয়। পরশপিপুল এর পাতার বোঁটা ভাঙ্গলে যে আঠা বেরোয়, তা বিষাক্ত কীট দংশনের যন্ত্রণা নিবারক।
ফুল: ফুলের পুংকেশর মিছরীসহ সেবনে প্রমেহ নিবৃত্ত হয়। ফুলের বোঁটা ভাঙ্গলে যে আঠা বেরোয়, তা পোকা-মাকড়ের কামড়ে ব্যবহার্য। পাঁচড়া ও দাদ জাতীয় চর্মরোগে হিতকর।
ফল: টাটকা ফল শিরঃশূলে মাথায় প্রলেপ, ফলের রস অর্শের বলিতে লাগানো হয়। দাদে হিতকর। কাঁচা ফল মিছরী বা গুড় সহ বড়ি তৈরী করে ব্যবহার করলে আমাশয়, সংগ্রহ গ্রহণী ও অর্শরোগে উপশম হয়। ফল পুড়িয়ে ছাই করে তেলের সঙ্গে মিশিয়ে দাদ, চুলকানিতে ব্যবহার্য।
বীজ: বিরেচক। বীজের তেল চামড়ার রোগে উপযোগী।
মূল ও ছাল: সন্ধিবাত, রক্তবিকার, চর্মরোগ, রক্তাশ, অতিসার প্রভৃতিতে ব্যবহার্য। রসায়ন, সংকোচক। ছালের ক্বাথ দিয়ে পাঁচড়া ধোওয়া হয়ে থাকে।
ভেষজ গুনাগুণ
১.পুরাতন পেটের দোষে (Chronic dyspepsia and diarrhoea) যাঁরা ভুগছেন, তাঁরা যদি কাঁচা পারীশ ফল একটি বেটে, ৫ গ্রাম গুড়ের সঙ্গে মিশিয়ে, সেটি দু’বারে অথাৎ সকালে ও বৈকালে খান, তাহলে ৪/৫ দিনের পর থেকেই উপকারটা অনুভব করতে পারবেন। ১০/১৫ দিন খাওয়ার পর সপ্তাহখানিক বন্ধ রেখে পুনরায় ১০/১৫ দিন খাবেন। এভাবে ৩/৪ বার করতে হবে। যেক্ষেত্রে আমসংযুক্ত দাস্ত হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে ভাল কাজ হয়।
২.এটি মেহ বা প্রমেহ রোগের অন্তর্গত একটি রোগ। এতে শুক্রধাতুর ক্ষয় অত্যধিক হয়ে প্রস্রাবের সঙ্গে নির্গত হতে থাকে। রোগী ক্রমশঃ দুর্বল হয়ে পড়ে, ক্ষুধামান্দ্য, অজীর্ণ প্রভৃতি এসে হাজির হয়, মানসিক অস্বাচ্ছন্দ্যবোধ এসে ঘিরে ধরে, বয়সটা কম হলে অস্বাচ্ছন্দ্যবোধের মাত্রার বৃদ্ধি ঘটে। এমতাবস্থায় পারীশ ফুল চূর্ণ ২ গ্রাম মাত্রায় সকালে একবার এবং বৈকালে একবার আধ কাপ চিনির জলের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে। মাসখানিক খেলে উপকারটা বুঝতে পারবেন।
৩. জীর্ণ প্রবাহিকায় যাঁরা দীর্ঘদিন আমাশায় ভুগছেন, তাঁরা যদি পরশপিপুল গাছের ছাল ৫ গ্রাম (শুষ্ক) ৩ কাপ জলে সিদ্ধ করে ১ কাপ থাকতে নামিয়ে, ছেঁকে, সেটিকে সকালে ও বিকালে দু’বারে মাসখানিক খান, তাহলে তাঁরা উল্লেখযোগ্য উপকার পাবেন। তবে পথ্যের দিকেও লক্ষ্য রাখা দরকার। এক্ষেত্রে তরকারির স্থুলাংশ বিশেষ না খাওয়াই ভাল। এদের আবার পুঁইশাক একেবারেই নিষেধ।
৪. পাঁচড়া, দাদ, বিচচিকা, কিটিম (Scabies, Ringworm, Eczema, Psoriasis) প্রভৃতিতে গাছের ছালের ক্বাথ উপরিউক্ত পদ্ধতিতে তৈরী করে খেতে হবে এবং ঐ ক্বাথ দিয়ে ওগুলো ভালভাবে ধুতে হবে। সেইসঙ্গে- ছালবাটা দিয়ে নারকেল তেল পাক করে সেই তেল পাঁচড়া ও কিটিমে (psoriasis) লাগাতে হবে। পাতা বেটে বাচ্চাদের একজিমাতে লাগাতে হবে। ফলের হলদে রস দাদে লাগাতে হবে। ফুলের রস পাঁচড়া ও চুলকানিতে লাগাতে হবে।
৫. গাঁটে গাঁটে যন্ত্রণা, ফোলা, প্রদাহ থাকবে, কোন কোন ক্ষেত্রে জ্বরও আসে যায়, তবে প্রথমের দিকে দুটি/একটি গাঁটে আক্রমণ হয়, ধীরে ধীরে অন্য গাটে ছড়িয়ে পড়ে। সকালের দিকে বড্ড টান টান মনে হয়। রোগ বেশিদিনের হলে গটগুলোতে বিকৃতি দেখা যায়। এক্ষেত্রে খাওয়ার ঔষধ ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে লাগানোর ঔষধও ব্যবহার করতে হবে।
দারীশের পাতা অথবা মূলের ছাল বেটে গরম করে প্রদাহ ও শোথযুক্ত সন্ধিতে প্রলেপ দিতে হবে। কয়েক দিন পর পর দেবার পর ফোলা ও যন্ত্রণা বিশেষতঃ ফোলাটা বেশ খানিকটা কমে গেলে তারপর পরশপিপুল পাতা বাটা দিয়ে সরিষার তেল পাক করে সেই তেলটা দিনে ২ বার লাগাতে হবে।
৬. বিষাক্ত পোকা-মাকড়ের কামড়ে পরশপিপুল বৃক্ষ-এর পাতার বোঁটা ভাঙ্গলে যে হলদে আঠা বেরোয়, তা লাগালে যন্ত্রণা কমে যায়।