ঝুমকো লতা- Passion Flower
প্রকৃতিতে দারুণ সৌন্দর্য ছড়ায় ঝুমকো লতা। নীল রঙের সঙ্গে সাদা আর হালকা হলদে রঙের অপূর্ব সংমিশ্রণ। দেখলে হৃদয় ভরে যায়। ঝুমকো লতা হলো ঝোপঝাড় ও বনজঙ্গলে বেড়ে ওঠা এক ধরনের লতাজাতীয় ফুলগাছ। এই ফুল দেখতে অনেকটাই কানের অলংকার ঝুমকোর মতো। তাই এই ফুল ঝুমকো লতা নামেই বেশি পরিচিত।
অন্যান্য নাম: রাধিকা নাচন, কৃষ্ণকমল, পঞ্চপাণ্ডব, রাখী ফুল প্রভৃতি।
ইংরেজি নাম: Passion Flower,Passiflora incarnata,purple passionflower, true passionflower, wild apricot, wild passion vine, Wild Passion Flower,
বৈজ্ঞানিক নাম: Passiflora
বর্ণনাঃ
ঝুমকোলতা একটি লতা জাতীয় শক্ত ও কাষ্ঠল উদ্ভিদ। ঝুমকো মূলত চিরসবুজ লতা ধরনের গাছ। আশ্রয় পেলে অতি দ্রুত অনেকদূর অবধি ছড়িয়ে পড়তে পারে। প্রায় ৩০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এই গাছে গ্রীষ্মের শেষ দিক থেকে ফুল ফোটা শুরু করে। প্রতিটি পাতার গোড়া থেকে একটি করে ফুল ফোটে। ফুলগুলো দেখতে ভারি সুন্দর।
ফুল: ঝুমকো প্রজাতিটির ফুলের রং দুই ধরনের হয়। সাদা ও বেগুনি। তবে সাদা রঙা ফুল সহজে দেখা যায় না। বেগুনি রংটিই বেশি দেখা যায়। ফুল গোলাকার, পাপড়ি সংখ্যা ৫। সাধারণত ৫ থেকে ৮ সেমি পর্যন্ত চওড়া হতে পারে। মাঝখানের বিভিন্ন রঙের পরাগমুকুটগুলো সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয়। পরাগমুকুট ঘিরে অনেকগুলো সরু সরু ডাঁটা থাকে। বাইরের ডাঁটার নিচের রং বেগুনি, মাঝের রং সাদা এবং আগা নীলচে ধরনের। সব মিলিয়ে বর্ণাঢ্য এক রঙের খেলা। ফুল ফোটার সময় মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত।
পাতা: পাতা দেখতে অনেকটা করতলের মতো, কিনারা গভীরভাবে খাঁজকাটা। খাঁজকাটা অংশটুকু ৩ বা ৫ লতিবিভক্ত এবং ৮ থেকে ১২ সেমি লম্বা। সারা গা অসংখ্য পাতায় ভরা থাকে।
ফল: ফল বহুবীজী। ফল পাকলে কমলা লাল বর্ণ ধারণ করে। পাকা ফল খাওয়া যায়। স্বাদে মিষ্টি ও রসাল। কিন্তু কাঁচা ফল বিষাক্ত। তাই ভক্ষণযোগ্য নয়।
ঝুমকো লতা নামের এই ফুলের আরেক প্রজাতির বৈজ্ঞানিক নাম Passiflora foetida এবং ইংরেজি নাম Wild Passion Flower।
এটি বনবাদাড়ে বেড়ে ওঠা পরিচিত একটি ফুল। এই প্রজাতির ঝুমকো লতার ফুল সুগন্ধি নয়, তবে দেখতে আকর্ষণীয়। পাতা একান্তর, দুটি খাঁজ রয়েছে। ফুল বেগুনি ও সাদা রঙের। বৃতি পাঁচটি, দল পাঁচটি এবং বৃতি নল থেকে কিছুটা খাটো। ফল পাকলে কমলা লাল বর্ণের হয়।
ঝুমকো লতার ভেষজ গুণাগুণঃ
এই গাছের রস ব্যথা দূর করে। পিঠের ব্যথায় খুবই উপকারী।
এটি অ্যালকালয়েড ব্লাড প্রেশার কমিয়ে দেয় এবং রেসপিরেটরি হার বাড়িয়ে দেয়।
যাদের যৌন আকাঙ্কা বা ইচ্ছা কম তাদের ক্ষেত্রে ইচ্ছা বৃদ্ধি করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
ঝুমকোলতার রস মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে।
এটা কৃমিনাশক হিসেবে কাজ করে।
ঝুমকোলতা যেকোন জীবাণু ধ্বংশ করে।
ঋতুস্রাবের সময় যাদের ব্যথা হয় তার এ গাছের রস ব্যবহার করলে ব্যাথা কমে যায়।
ঝুমকোলতা পাকস্থলীর নানা ধরনের সমস্যা দূর করে।
মৃগীরোগ, কাশি, এ্যাজমা, এলার্জি দূর করে।
ঝুমকালতা ফুল নিদ্রা আনয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ঝুমকো লতা এর শুকনো পাতা হারবাল চা হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
১০ গ্রাম পাতা চূর্ণ এক কাপ পানিতে পাঁচ মিনিট ভিজিয়ে ছেকে সেবন করলে রাতে ভালো ঘুম হয়।
বংশবিস্তারঃ
বীজ দ্বারা বংশবৃদ্ধি ঘটে। পানি জমে থাকে না এ রকম রোদ-ছায়াময় জায়গায় এ লতা ভালো জন্মে।
অবস্থাঃ
বাংলাদেশের পাহাড়ি বন থেকে আবাসস্থল ধ্বংসের ফলে এবং অতিরিক্ত গাছ কাটার কারণে লতাটি দিন দিন কমে যাচ্ছে। এ বুনো ফুলটি অবহেলিত ও অরক্ষিতও বটে। পাহাড়ি এলাকায় বন বিনাশ, আবাসস্থল ধ্বংস, নগরায়ণ, প্রাকৃতিক জমি কৃষিতে রূপান্তর এবং জলাশয়ের সংকোচনের ফলে বুনো ফুলের এ প্রজাতিটি হারিয়ে যাচ্ছে।
বিস্তৃতিঃ
ঝুমকো লতা ফুলের আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকা। পরবর্তীকালে উষ্ণমণ্ডলীয় দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, চীন ও উত্তর অস্ট্রেলিয়ায় এই লতাগাছের বিস্তৃতি রয়েছে।