আকনাদির উপকারিতা-Benefits of snake vine
snake vine

আকনাদি বা দই পাতা বা মাকান্দি বা আকন্দি

আকনাদি লতা হচ্ছে Menispermaceae পরিবারের Stephania গণের একটি সপুষ্পক লতা।

বাংলা নাম: আকনাদি, আকন্দি লতা, দই পাতা, নিমুকা, মাকান্দি, বেম্মকপাট ।

ইংরেজি: Aknadi or Snake vine

বৈজ্ঞানিক নাম: Stephania japonica

বর্ণনাঃ

আকনাদি লতানো বা পেঁচানো বহুবর্ষজীবী গাছ। এটি কোনো বেড়া বা গাছকে অবলম্বন করে বেড়ে উঠে। পাতা গোলাকার এবং এর পাতা ২ থেকে ৬ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয় এবং বেশ চকচকে প্রায় ত্রিনাকৃতি । এর বোঁটা পাতার প্রায় মাঝ খান থেকে বেরিয়ে আসে। এর বীজ কিছুটা ঘোড়ার খুরের ন্যায় গোলাকার। পুরুষ ফুল সবুজ থেকে হলুদ বর্ণের। স্ত্রী ফুল সাদাটে। ফল রসালো, লাল বর্ণের। ফুল ও ফল :ফাল্কগ্দুন-শ্রাবণ। বর্ষাকালে ফুল ও শরতের শেষে ফল ধরে। 

বিস্তৃতি

দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ- ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল, থাইল্যান্ড,অস্ট্রেলিয়া, মালয়, আফ্রিকার উষ্ণ ও নাতিশীতোষ্ণ সব অঞ্চলেই পাওয়া যায়।  এছাড়াও যেমন মিয়ানমার, সিন্ধু, প্রদেশে এই উদ্ভিদ পাওয়া যায়।

ঔষধি গুনাগুন

আকনাদির মূল, পাতাসহ সমগ্র লতা হাঁপানি, কাশি, গলাব্যথা, একশিরা, পেটের কামড়, ডায়রিয়া, আমাশয় এবং খোসপাচড়ায় ব্যবহূত হয়। গর্ভাশয়ে বাহ্য ও আভ্যন্তর দুই ক্ষেত্রে এটির উপযোগিতা রয়েছে।

কলেরায়

এই রোগটির সঙ্গে জোটে দাহ, জলের মত মলনিঃসরণ প্রচন্ড বমনভাব, তার সঙ্গে পিপাসা। আয়ুর্বেদের চিন্তাধারায় এটি সান্নিপাতিক অতিসার। এক্ষেত্রে তৎক্ষনাৎ আকন্দির মূল বেটে দই-এর সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।খাওয়ানো মাত্রই সমস্ত উপসর্গগুলি দুই এক ঘন্টার মধ্যে উপশমিত হবে, তবে এক্ষেত্রে গরুর দই বিশেষ উপযোগী। তবে এর মাত্রা ৫ গ্রামের বেশী ব্যবহার করা সমীচীন হবে না, কারণ তখন অগ্নিবল খুবই ক্ষীন।

অতিসারে

আহারের দোষে ও ঋতু পরিবর্তনের সময় অনেকের পাতলা দাস্ত হয়ে থাকে, তার সঙ্গে শরীরে থাকে দাহ, প্রস্রাবও কমে যায়। এক্ষেত্রে আকন্দির পাতা ৩/৪টি বেটে ঘোলের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে। (এটা মহিষ দুধের দৈ-এর ঘোল হলে ভাল হয়), এর দ্বারা ঐ অতিসারটা বন্ধ হবে।

পিত্তজ্বরে

এই জ্বরে থাকে দাহ, চোখ লাল, বার বার পিত্ত বমি, অসাড়ে পায়খানা, এখানে আকন্দির পাতা বেটে রস করে ২ চা চামচ নিয়ে বাসি ভাতের আমানির সঙ্গে মিশিয়ে প্রতি তিন ঘন্টা অন্তর ৩ বার খেতে দিলে এর সমস্ত উপসর্গ ২ দিনের মধ্যে চলে যাবে এবং জ্বরও ছাড়বে।

পাতলা দাস্তের সঙ্গে পেটে ব্যাথায়

আকন্দির মূল আর পাতা ৫ গ্রাম একসঙ্গে বেটে বাসি ভাতের আমানি অথবা ঘোলের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে দিলে ওটা প্রশমিত হবে। আর পেটে যন্ত্রনার জন্য পাতা ও মূল বেটে পেটে প্রলেপ দিতে হবে।

গলায় কফের আধিক্যে

অনবরত ঘড়ঘড় শব্দ হচ্ছে, অথচ গলা টানলেও কিছু বেরোচ্ছে না। এক্ষেত্রে এর কাঁচা পাতা ও মূল সমান পরিমাণে নিয়ে অল্প জল দিয়ে বেটে, ছেঁকে রস করে নিতে হবে। এই মূল ও পাতা নিতে হবে ৭/৮গ্রাম এইটা দিনে দু’বার খেতে হবে। এর দ্বারা গলার ঘড় ঘড়ানিটা কমে যাবে।

অর্শ ও আমাশায়

দাস্তের পর মলদ্বারে দপদপানি, আবার মলের সঙ্গে অল্প রক্তও পড়ছে কিন্তু বোঝা যাচ্ছে না- এটা অর্শ না রক্তামাশা। সেক্ষেত্রে আকন্দির পাতা ও মূল সমপরিমাণে মোট ১০ গ্রাম নিয়ে জল দিয়ে বেটে সেটা ছেকে ঐ জলটা অল্প গরম করে ঐজল অন্ততঃ সিকি কাপ রাখতে হবে, তার পর ৪ ঘন্টা অন্তর ৩ বারে ঐ জলটা খেতে হবে, এর দ্বারা আমাশাটা কমে যাবে।

অজীর্ণজনিত অরুচিতে

দীর্ঘদিন অজীর্ণে ভুগতে ভুগতে রসধাতুও ক্ষয় প্রাপ্ত হয়, তখন তাদের শরীরের ক্লান্তি চলে যায়। সব জিনিষেই আসে অরুচি। এক্ষেত্রে তাদের ঔষধ হলো ৩/৪টি আকন্দির পাতা বেটে, সেটাকে এক/দেড় চা-চামচ ঘিয়ে ভেজে ভাত খাওয়ার সময় প্রথমেই ভাতের সঙ্গে খেতে হবে, এর দ্বারা ঐ অরুচি ও অজীর্ণ দুই-ই প্রশমিত হবে।

অগ্নিমান্দ্যে

ক্ষিধে হতে চায় না, পেট যেন সর্বদা ভর্তি হয়ে আছে অথচ তার কোন অভিব্যক্তি নেই-এই যেমন ঢেকুর, অম্ল, অজীর্ণ, এসব কিছুই হয় না, এক্ষেত্রে আকন্দির পাতা বেটে সিকি কাপ জলে গুলেছেকে একটু গরম করে নিতে হবে, তারপর ভাত বা রুটি খাওয়ার পূর্বে খেতে হবে। এটাতে ঐ অসুবিধাটা চলে যাবে। আর এক প্রকার অগ্মিমান্দা-যেটা বায়ুজন্য হয়, এদের বিশেষ লক্ষণ হলো পেট গুড় গুড় করে, কোঁ কোঁ শব্দ হয়, কিন্তু ভাত ফোটার মত ভুট্ ভাট, করে না। এক্ষেত্রে আকন্দির পাতা চূর্ণ প্রতিবার আধগ্রাম মাত্রায় নিয়ে সকালে ও বৈকালে ঈষদুষ্ণ জল সহ খেতে হবে। এবদ্বারা বায়জন্য অগ্নিমান্দটা চলে যাবে।

গর্ভ নিয়ন্ত্রনে

আকন্দির পাতার ব্যবহারে গর্ভসঞ্চার নিয়ন্ত্রিত হয়। মাসিক ঋতুর প্রথমদিন থেকে আরম্ভ করে ৫ দিন প্রত্যহ সকালে খালিপেটে এই পাতা বাটার সরবত খেতে হবে। পাতা চাই ৭/৮টি আর ছোট হলে দুই-একটা বেশী। এইগুলি মাখনের মত করে বেটে জলে গুলে একটু চিনি বা মিছরি মিশিয়ে সরবতের মত খেতে হবে। এর ফলে ঐ মাসে আর গর্ভসঞ্চার হবে না। তবে প্রতি মাসেই এটা খেতে হবে।

গ্রহনী রোগে

এই রোগের বিশিষ্ট লক্ষণ হলো- দাস্ত যা হওয়ার তা দিনেই হবে, রাত্রিতে হয় না। এক্ষেত্রে মূল সমেত সমগ্র গাছ ১০/১২ গ্রাম নিয়ে একটু থেতো করে ৪ কাপ জলে সিদ্ধ করতে হবে, সেটার জল আন্দাজ এক কাপ থাকতে নামিয়ে ছেকে, সকালে ও বৈকালে দুবারে ঐ জলটা খেতে হবে। আর কাঁচা সংগ্রহ করতে পারলে মূল সমেত সমগ্র গাছ ১৫/২০ গ্রাম একটু থেতো করে জলে বেটে ওটাকে ছেকে নিয়ে ঐ জলটা একটু গরম করে সকালেও বৈকালে দুবারে খেতে হবে।

স্তন্য শোধনে

যেখানে শিশুর একমাত্র আহার বুকের দুধ, সেখানে স্তন্য দুষিত হলে শিশু দুধ তোলে, বমি করে, দমকা দাস্ত হয়, পেট ফাঁপে ও যন্ত্রনা হয়। এক্ষেত্রে মায়েরই চিকিৎসা করা দরকার। সেজন্য সমূল আকন্দি গাছ ও পাতা রস করে সেইটা দু চা- চামচ করে দুবেলা খেতে দিতে হবে। যদি কাঁচা সংগ্রহ করা সম্ভব না হয়, তাহলে গাছ-পাতা মূলে ১২ গ্রাম (শুষ্ক) নিয়ে ৪ কাপ জলে সিদ্ধ করে এক কাপ থাকতে নামিয়ে, ছেঁকে সকালে ও বৈকালে দুবারে খেতে হবে।

অন্তর্বিদ্রধিতে

এ ফোঁড়া পেটের মধ্যে হয়, এগুলি তাড়াতাড়ি পাকেও না আবার ফাটেও না, এক্ষেত্রে আকন্দির মূল ৫ গ্রাম জল দিয়ে বেটে, তাকে ছেঁকে রস করে ২ চা- চামচ সকালে ও বৈকালে ২ বার খেতে হবে। এর দ্বারা ঐ ফোঁড়া ফেটে পুঁজ রক্ত ঐ দাস্তের সঙ্গে বেরিয়ে যাবে।

প্রস্রাবে তলানি

এটা নানা কারনে আসতে পারে। তার লক্ষণ হলো- প্রস্রাব ধরে রাখলে পাত্রের তলায় খড়ি গোলার মত বসে যায়। এক্ষেত্রে ৫/৬টি পাতা বেটে এক কাপ জলে গুলে, ছেকে সেই জলটাতে একটু চিনি বা মিছরি দিয়ে শরবতের মত সকালের দিকে খালিপেটে খেতে হবে। এর দ্বারা ঐ অসুবিধা ৫/৭ দিনের মধ্যে চলে যাবে।

শ্বেত প্রদরে

এই রোগ সাধারনতঃ প্রথম রজোদর্শনের পর থেকেই দেখা যায়। এক্ষেত্রে আকন্দির পাতা ৫/৬টি চিনি বা মিছরির সঙ্গে মিশিয়ে শরবতের মত সকালে খালিপেটে খাওয়া। এটি ব্যবহার করলে এক সপ্তাহের মধ্যেই উপশম হবে।

মচকানো ব্যাথায়

উঁচু-নীচু জায়গায় পা পড়েই হোক আর যে কোন কারনেই হোক, মচকে গিয়ে ব্যথা হয়েছে, এমন-কি সেখানটার হাড়টায় চিড় খেয়েছে- এই ক্ষেত্রে, আকনাদির মূল সমেত সমগ্র গাছ বেটে অল্প গরম করে ঐ মচকানো জায়গায় প্রলেপ দিয়ে তার উপর একটা পাতা বা যে কোন জিনিষ ঢাকা দিয়ে বেঁধে রাখতে হবে। যতক্ষণ ব্যথা বা ফুলো না কমে, ঐ বাঁধাটা খুলে ফেলা সমীচীন হবে না। তবে তিন দিন বাদে খুলে আবার লাগানো যেতে পারে। এর দ্বারা ওটা-সেরে যাবে।

দাঁতে তীব্র ব্যথা

দাঁতের গোড়া ফুলেছে, যন্ত্রনা হচ্ছে এক্ষেত্রে আকনাদির লতাকে দুই হাতে তাগার মত করে ধারণ করলে যন্ত্রনার উপশম হয়।

টগর ফুলের উপকারিতা
অপরাজিতা গাছের গুনাগুন
দাদমর্দন এর ভেষজ উপকারিতা
মাখনা ফলের উপকারিতা-Benefits of Foxnut fruit
আতা ফলের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা
শিয়ালমতি বা আসাম লতা-Climbing Hempweed
বথুয়া শাকের ঔষধি গুনাগুন
বেলের ১৫টি গুনাগুণ ও উপকারিতা
ছাতিম গাছ এর ঔষধি গুণাগুণ - Medicinal properties of Blackboard Tree
কদম এর উপকারিতা ও ঔষধি গুনাগুন - Benefits and medicinal properties of burflower tree