শিমের পুষ্টিগুণ

বাংলাদেশের শীতকালীন একটি জনপ্রিয় সবজির নাম সীম । সীম সবার পছন্দনীয় সুস্বাদু ও পুষ্টিকর সবজি ।সীমের কচি শুটির বীজে আছে প্রুচুর পরিমানে প্রোটিন ও শ্বেতসার । এই দুটো উপাদান ছাড়াও সীমে আছে যথেষ্ট পরিমানে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং ভিটামি এ বি ও সি । সীম আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী । 

সীমের উৎপওি ভারত উপমহাদেশ বা আফ্রিকায় বলে অনেকেই মনে করেন । তবে প্রধানত দক্ষিণ –পূর্ব এশিয়া, মিসর ও সুদানে সেই প্রাচীন কাল থেকেই সীমের চাষ অব্যাহতভাবে চলে আসছে । বাংলাদেশে ও ভারতে এই সবজিটির চাষ সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে । এই দুটো দেশে এর চাহিদা ও জনপ্রিয়তাও অধিক । 

আমাদের দেশে অসংখ্য জাতের সীমের চাষ হয় । এর অধিকংশ জাতের সীমের পৃথক কোনো নাম নেই । নামধারী জাতের মধ্যে রয়েছে ঘৃত কাঞ্চন, নলডক ,আশ্বিন  , কার্তিকা, হাতিকান,বৌকানী প্রভৃতি । ভারতীয় কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট পুশাআলী প্রলিফিক নামে একটি উন্নত জাতের সীমের উদ্ভব ঘটিয়েছে । বাংলাদেশেও এর চাষ হয় । এটা আগাম  ফল দেয় এবং এর ফলনও আশাব্যঞ্জক । 

শিমের পুষ্টিগুণ:

তবে আমাদের দেশীয় সীম অধিক মাএায় প্রোটিন সমৃদ্ধ, পুষ্টিকর ও সুস্বাদু । খাবার উপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম কচি সীমে রয়েছে ৩.৯ গ্রাম প্রোটিন । 

মানব দেহের ক্ষতিপূরন ও শরীর বৃদ্ধির জন্য প্রোটিনের একান্ত প্রয়োজন । এর অভাবে শিশু , বালক- বালিকার দৈহিক ওবৃদ্ধি ব্যাহত হয় । আর পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা হ্রাস পায় । প্রোটিন জনিত অপুষ্টির জন্য মানুষ কৃশকায়, দুর্বল ও বুদ্ধিবৃওিক দিক থেকে অপুষ্ট ও ক্ষীণ হয়ে পড়ে । 

সীমে  প্রচুর প্রোটিন থাকায় আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টির সংস্হান হয়ে যায় । প্রোটিন ছাড়াও সীমে রয়েছে-

ম্বেতসার৮. ০ গ্রাম
স্নেহ০. ৭ গ্রাম
ক্যারোটিন৩১২ মাই গ্রাম
থায়ামিন০.২ মি গ্রাম
রাইবোফ্লেভিন০. ০৬ গ্রাম
নায়াসিন০.৭ গ্রাম
ভিটামিন সি৯.০ গ্রাম
ক্যালসিয়াম২১০ গ্রাম
লৌহ১.৭ গ্রাম

এছাড়া সীমের পাকা বীজেও রয়েছে প্রচুর পুষ্টিকর উপাদান । যেমন-

প্রোটিন২.৫ গ্রাম
শ্বেতসার৬.০ গ্রাম
স্নেহ০.৮ গ্রাম
ক্যারোটিন১০০ গ্রাম
রায়বোফ্লেভিন০.১ মিলিগ্রাম
থায়মিন০.৫ মিলিগ্রাম
নায়া সিন১.৮ মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়াম৬০ মিলিগ্রাম
লৌহ২.৭ মিলিগ্রাম
ভিটামিন সিসামান্য পরিমান

শিমের উপকারিতাঃ

(১) কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে ও শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে শিম সাহায্য করে।

(২) রোগ প্রতিকার ও রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা আছে।

(৩) নিয়মিত শিম খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে আসে।

(৪) খনিজ উপাদানে সমৃদ্ধ হওয়ায় শিম চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

(৫) শিমে সিলিকনজাতীয় উপাদান থাকে যা হাড় সুগঠিত করে।

(৬) নিয়মিত শিম খেলে তা ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।

(৭) শিমের ফুল রক্ত আমাশয় দূর করতে সাহায্য করে।

(৮) কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ও কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

(৯) গর্ভবতী মহিলা ও শিশুর অপুষ্টি দূর করতে শিম বেশ উপকারী।

(১০) শিমের দানায় ভিটামিন বি সিক্স ভালো পরিমাণে থাকায় তা স্নায়ুতন্ত্র সুস্থ রাখে ফলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।

(১১) শিমের পাচক আঁশ (ডায়েটরি ফাইবার) থাকায়, কোষ্ঠকাঠিন্যে আক্রান্ত রোগীদের জন্য উপকারী। এ ছাড়া কোলন ক্যানসার প্রতিরোধেও এটি কার্যকর।

সীমের দানার মধ্যে থাকে ফাইটা কেমিক্যাল ও pro-tease inhibitors – যা ক্যান্সার প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে।কচি সীমের ভাজি ও তরকারি খুবই সুস্বাদু । অপর দিকে পাকা সীমের দানা ভেজে বা ডাল রান্না করেও খাওয়া যায় । যেভাবেই খাওয়া হোকনা কেন ,সীমের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পুষ্টি ঠিকই গ্রহন করা যায় ।

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০০ টি শিশু ভিটামিন ‘এ’ র অভাবে অন্ধ হয়ে যাচ্ছে । এছাড়া এদের প্রায় অর্ধেকই প্রয়োজনীয় প্রোটিনের অভাবে মৃত্যুবরন করে । অথচ সীমের মত পুষ্টি সবজি, শস্তা দামের শাক,গাঢ় সবুজ ও হলুদ বর্ণের সবজি নিয়মিত খাওয়ালে নানা ধরনের ব্যাধি ও অপুষ্টির  হাত থেকে তাদেরকে রক্ষা করা যায়।

কেবল শিশুদের জন্যই নয়, বয়স্কদের জন্যও পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য । সীমের মত প্রোটিন সমৃদ্ধ একটি সবজি থেকে আমরা আমাদের শরীরের জন্য পুষ্টির সেই চাহিদা সহজেই পূরণ করতে পারি।

জেনে নিন অ্যালোভেরার উপকারিতা
আদা খাওয়ার উপকারিতা
কেয়া বা কেতকী
আকরকরা গাছ
নয়ন তারা গাছের উপকারিতা
কলকাসুন্দার ঔষধি গুণাগুণ
হেলেঞ্চা শাকের উপকারিতা
চিচিঙ্গার উপকারিতা
কিভাবে স্মার্ট হওয়া যায়
বাজারের সেরা ১০টি নাইট ক্রিম- Top 10 Night Creams on the Market