
হিজড়াদের নিয়ে ইসলাম ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা- Islam and scientific explanation about transgenders?
হিজড়া আল্লাহর সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাতের এক অনন্য মানব সম্প্রদায়। এ মানব সম্প্রদায় সম্পর্কে আমাদের মন-মগজে এক ভিন্ন নেতিবাচক বদ্ধ ধারণা বিদ্যমান রয়েছে। ফলে সমাজে অতি কাছে থেকেও হিজড়াদের সম্পর্কে আমাদের দায়িত্ববোধের অনাগ্রহ পরিলক্ষিত হয়।
প্রতিবন্ধী মানুষের যেমন শারীরিক ত্রুটি থাকে এটি তেমনই একটি ত্রুটি। তবে এই ত্রুটির জন্য তাদেরকে মানব সমাজ থেকে বের করে দেয়া ঠিক না। বরং অন্যান্য প্রতিবন্ধীদের মত তারা আরো বেশি স্নেহ মমতা ও ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার রাখে।
হিজড়াদের প্রতি ঘৃণা নয়, ভালোবাসা -স্নেহ এবং গুরুত্ববোধ দরকার। গুরুত্বহীনতায় সমাজের যেকোন মানুষ ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্নবাদীতে পরিণত হয়ে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে।
হিজড়াদের মধ্যে না পুরুষের পূর্ণ বৈশিষ্ট্য দেখা যায়, না নারীদের। এ মিশ্র বৈশিষ্ট্যের কারণে সমাজে তারা স্বাভাবিক জীবন-যাপনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। তবে হিজড়া সন্তানের জন্মানোর পেছনে বিশেষ বৈজ্ঞানিক ও ইসলামি ব্যাখ্যা রয়েছে। যেকোনো পুরুষ বা নারী হিজড়া হতে পারেন।
যৌন বৈচিত্রের ভিত্তিতে পৃথিবীতে মোট চার ধরনের হিজড়ার অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
ক. পুরুষ (তবে নারীর বেশে চলে) তাদের আকুয়া বলে। এরা মেয়েদের বিয়ে করতে পারে।
খ. নারী (বেশেও তাই, তবে দাড়ি মোঁচ আছে) তাদের জেনানা বলে। তারা পুরুষের কাছে বিয়ে বসতে পারে।
গ. লিঙ্গহীন (বেশে যাই হোক) তাদের খুনসায়ে মুশকিলা বলে। এরা কারা সে বিষয়ে বিজ্ঞ চিকিৎসক সিদ্ধান্ত দিতে পারেন।
ঘ. কৃত্রিমভাবে যৌন ক্ষমতা নষ্ট করে বানানো হিজড়া। তাদের খোঁজা বলে। যৌন অক্ষমতার দরুন তারা বিয়ে করতে পারে না। হিজড়া মানব বিশেষ লৈঙ্গিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিকশিত হয়। তাদের লিঙ্গ অনুপযোগী ,কোন কোন ক্ষেত্রে বিকলাঙ্গ।
ইসলামী শরীয়া অনুযায়ী হিজড়া বলা হয়, যার পুরুষ লিঙ্গ ও স্ত্রী লিঙ্গ উভয়টি রয়েছে অথবা কোনটিই নেই। মূত্রত্যাগের জন্য একটি ছিদ্রপথ রয়েছে।একই দেহে স্ত্রী ও পুরুষ চিহ্নযুক্ত অথবা উভয় চিহ্নবিযুক্ত আল্লাহর সৃষ্টি মানুষটি হলো হিজড়া।
সৃষ্টিগতভাবে সব মানুষই নিখুঁত নয়।কারো হাত নেই ,কারো পা নেই, কেউ চোখে কম দেখে, কেউ কানে কম শোনে, কেউ কথা বলতে পারেনা ,কারো বুদ্ধি কম, তবু এরা সবাই এক আল্লাহর সৃষ্টি।
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায়
একটি হিজড়া শিশুকে পরিণত বয়সে যাওয়ার আগে যদি যথযথ মেডিকেল ট্রিটমেন্ট করা হয় তাহলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাকে সুস্থ করা সম্ভব। কিন্তু যখন বোঝা যায় সে সাধারণ আর দশজনের থেকে আলাদা তখন আসলে অনেক দেরি হয়ে যায়। একইভাবে কোন পুরুষ বা নারীও হিজড়া হতে পারেন।
হিজড়া সন্তান জন্মের কারণ :
বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ভ্রূণ বিকাশের সময় অস্বাভাবিক হরমোনের নিঃসরণের কারণে হিজড়া সন্তানের জন্ম হয়ে থাকে। পেনিস, টেস্টিস এবং ক্লিটোরিসে জিনগত ত্রুটির কারণে ফিটাসে অস্বাভাবিক সেক্স হরমোনের নিঃসরণ হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এই অস্বাভাবিক ঘটনাটিকে ‘কনজেনিটাল অ্যাড্রেনাল হাইপারপ্লাসিয়া’ বলা হয়, যার ফলশ্রুতিতে অস্বাভাবিক ক্রোমোজোমের বিভাজন হয়।
▪️হরমোনগত ব্যাখ্যা :
সাধারণত জন্মের সময় ভ্রুণের একই টিস্যু থেকে পুরুষ এবং স্ত্রী জননাঙ্গের সৃষ্টি হয়। ভ্রূণ বিকাশকালে যদি টেস্টোস্টেরন হরমোন নিঃসরণের মাত্রা অধিক হয়, তাহলে পুং জননাঙ্গ তথা পেনিস, স্ক্রোটাম ও পিনাইল ইউরেথ্রা তৈরি হয় যা পুরুষের পরিচয় বহন করে। আর যদি টেস্টোস্টেরন হরমোন কম নিঃসৃত হয় বা একেবারেই নিঃসৃত না হয়, তাহলে স্ত্রী জননাঙ্গ তথা ক্লিটোরিস, লেবিয়া মেজোরা এবং ভ্যাজাইনা তৈরি হয়, যা একজন নারীর পরিচয় বহন করে।
ব্যতিক্রম ঘটে তখন, যখন টেস্টোস্টেরন হরমোন নিঃসরণের পরিমাণ খুব বেশিও হয় না, আবার কমও হয় না, একটি মাঝামাঝি পর্যায়ে থাকে। এর ফলে জীনগতভাবে পুরুষের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত ছোট পেনিস ও টেস্টিস তৈরি হয় এবং পেনিস ছোট হওয়ার কারণে তা স্ক্রোটাম এর সাথে সংলগ্ন না থেকে বেশ খানিকটা উপরে থাকে। নারীদের ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে প্রশস্ত ক্লিটোরিস থাকে যা লেবিয়ার সাথে সংযুক্ত অবস্থায় থাকে। আবার কিছু মানুষের অপরিণত পুং এবং স্ত্রী জননাঙ্গ উভয়ই থাকে।
▪️ক্রোমোজোমগত ব্যাখ্যা :
ক্রোমোজোম হলো বংশগতির ধারক ও বাহক। এর কাজ হচ্ছে মাতা-পিতার জিনগত বৈশিষ্ট্য সন্তানের মাঝে বহন করে নিয়ে যাওয়া।মানুষের প্রতিটি দেহকোষে ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম রয়েছে। এর মধ্যে সেক্স ক্রোমোজোম অন্যতম যা সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণ করে। প্রতিটি মানুষের শরীরে ২৩ জোড়া ক্রোমোজোমের মধ্যে একজোড়া সেক্স ক্রোমোজোম থাকে। সেক্স ক্রোমোজোম দুটিকে X এবং Y দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। ভাবছেন বাকি ক্রোমোজোমগুলোর কাজ কী? বাকি ক্রোমোজোমগুলো জীবের অন্যান্য বৈশিষ্ট্য বহন করে থাকে।
মায়ের শরীরে এক জোড়া XX সেক্স ক্রোমোজোম এবং বাবার শরীরে XY সেক্স ক্রোমোজোম থাকে। মা ও বাবা উভয়ের X ক্রোমোজোম মিলিত হলে কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। আর মায়ের X ক্রোমোজোম ও বাবার Y ক্রোমোজোম মিলিত হলে পুত্র সন্তানের জন্ম হয়।
বিপত্তিটা ঘটে তখন, যখন ক্রোমোজোম স্বাভাবিক নিয়মে বিন্যস্ত হয় না। যার ফলে ভূমিষ্ট সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণ নিয়ে তৈরি হয় এক ধরনের জটিলতা। সন্তানটিকে মেয়ে বা ছেলে হিসেবে চিহ্নিত করা যায় না। ক্রোমোজোমের অস্বাভাবিক বিন্যাসের উপর ভিত্তি করে লিঙ্গ জটিলতা সম্পন্ন মানুষ অর্থাৎ হিজড়াদের ৫টি গোত্রে ভাগ করা যায়।
১. XXY পুরুষ –
এরা পুরুষদের মতো দেখতে হলেও শারীরিক গঠনে পুরুষদের সাথে রয়েছে ভিন্নতা। স্বাভাবিকের তুলনায় লম্বা হয় এবং পুরুষের ন্যায় জননাঙ্গ থাকলেও তা পরিপূর্ণ নয়। একজোড়া সেক্স ক্রোমোজোমের জায়গায় এদের শরীরে আরও একটি সেক্স ক্রোমোজোম বেশি থাকে অর্থাৎ দুটি X ক্রোমোজোম ও একটি Y ক্রোমোজোম থাকে।
২. XX পুরুষ –
এদের ঈষৎ স্ফীত বক্ষ থাকে, তবে তা কখনোই সুডৌল হয় না। এরা বেঁটে আকৃতির হয় এবং অনেকটা স্বাভাবিকের ন্যায় পুরুষাঙ্গ থাকলেও শুক্রাশয়ে শুক্রাণু উৎপন্ন হয় না। XX ক্রোমোজোম থাকলেও অস্বাভাবিক ক্রোমোজোম বিন্যাসের কারণে এরা কখনো পুরোপুরি নারী হয়ে উঠতে পারে না। পুরুষালি গুণ বেশি প্রকাশিত হয়।
৩. ক্লাইনেফেলটার সিনড্রোম –
এদের স্ফীত বক্ষ থাকে এবং অপেক্ষাকৃত ছোট পুরুষাঙ্গ থাকে। এদের দাঁড়ি-গোঁফ খুবই কম গজায় এবং জননাঙ্গের আশেপাশেও চুলের পরিমাণ অনেক কম থাকে। এরা স্বভাবত লম্বা হয়ে থাকে। এদের শরীরে দুটি X ক্রোমোজোম ও একটি Y ক্রোমোজোম থাকে এবং X ক্রোমোজোমের প্রকটতার কারণে নারীর গুণ অধিক প্রকাশ পায়।
৪. টার্নার সিনড্রোম –
এদের প্রথম দেখায় নারী বলে মনে হলেও স্ত্রী যৌনাঙ্গের সাথে তাদের যৌনাঙ্গের অনেক অমিল রয়েছে। এদের বুকের ছাতি পুরুষদের মতো প্রশস্ত হলেও তাতে স্ফীত বক্ষ পরিলক্ষিত হয়। এরা খাটো প্রকৃতির হয়ে থাকে। এদের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র একটি X ক্রোমোজোম অর্থাৎ একটি সেক্স ক্রোমোজোম থাকে। প্রয়োজনীয় আরও একটি সেক্স ক্রোমোজোমের অভাবে পুরুষ এবং নারী উভয়েরই বৈশিষ্ট্য দেখা যায়।
৫. মিশ্র যৌনগ্রন্থির বিকৃতি –
এদের দেখতে পুরুষের মতোই মনে হয় এবং অনেকটা স্বাভাবিক পুরুষাঙ্গই থাকে। কিন্তু এর সাথে স্ত্রী জননাঙ্গও বিদ্যমান থাকে। অ্যাড্রেনাল গ্ল্যান্ডের অস্বাভাবিক নিঃসরণ এবং অস্বাভাবিক ক্রোমোজোম বিকাশের কারণেই এমন যৌনাঙ্গ জটিলতা তৈরি হয়।
আর এসব কারণেই হিজড়া সন্তান জন্মলাভ করে।
ধর্মীয় ব্যাখ্যায়
কোনো এক ব্যক্তি হিজড়া সন্তান জন্মের কোনো কারণ নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন হযরত ইবনে আব্বাসকে (রা.)। জবাবে তিনি বলেছিলেন ‘আল্লাহ্ ও রাসুল (সা.) নিষেধ করেছেন যে, মানুষ যেন তার স্ত্রীর মাসিক স্রাব চলাকালে যৌন সঙ্গম না করে।' তাই কোনো নারীর সঙ্গে তার ঋতুস্রাব চলাকালে মিলন ঘটলে এটা হতে পারে।
হিজড়াদের জন্ম কীভাবে হয়
ইসলামের রেফারেন্সে হিজড়াদের জন্ম কীভাবে হয়, সেই সম্পর্কে বলা হয়েছে, স্ত্রীলোকের মাসিকের সময় সঙ্গম করলে শয়তান দ্বারা মহিলাটি গর্ভবতী হয়ে যায়, অর্থাৎ হিজড়ারা আসলে শয়তানের সঙ্গমে জন্ম নেয়!
শয়তান মানুষের সন্তানে শরীক হয় কিভাবে
হয়রত মুজাহিদ (রহঃ) বলেছেন- কোনও মানুষ যদি আপন স্ত্রীর সঙ্গে যৌনমিলন শুরু করার মসয় বিসমিল্লাহ না বললে জ্বিন তার প্রস্রাবের ছিদ্রপথে জড়িয়ে যায় এবং সেই পুরুষের সাথে সেও যৌনসঙ্গমে শরীক হয়।
হিজড়া জন্মায় কেমন করে
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেনঃ হিজড়ারা জীনদের সন্তান। কোন এক বাক্তি আব্বাস (রাঃ) কে প্রশ্ন করেছিলেন এটা কেমন করে হতে পারে।
জবাবে তিনি বলেছিলেন “আল্লাহ্ ও রাসুল (সাঃ) নিষেধ করেছেন যে মানুষ যেন তার স্ত্রীর মাসিক স্রাব চলাকালে যৌন সংগম না করে”, সুতরাং কোন মহিলার সঙ্গে তার ঋতুস্রাব হলে শয়তান তার আগে থাকে এবং সেই শয়তান দারা ঐ মহিলা গর্ববতী হয় ও হিজড়া সন্তান প্রসব করে।
জ্বিন ও মানুষের যৌথ মিলনজাত সন্তানের নাম কী
আল্লামা সাআলাবী (রহঃ) বলেছেন-মানুষ ও জীন এর যৌথ মিলনজাত সন্তানকে ইসলাম এ বলা হয় “খুন্নাস”।
সহিহ হাদিসে হিজড়াদের নির্বাসন
সহীহ বুখারী হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, হিজড়াদেরকে নির্বাসিত করতে হবে। নবী নিজেই তাদের ঘর থেকে বের করে দিতেন। কেন? শুধুমাত্র তারা হিজড়া হয়ে জন্ম নিয়েছে, এই কারণে
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
অধ্যায়ঃ ৭৫/ কাফের ও ধর্মত্যাগী বিদ্রোহীদের বিবরণ
পরিচ্ছেদঃ ২৮৫২. গুনাহগার ও হিজড়াদের নির্বাসিত করা
৬৩৭৩. মুসলিম ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা’নত করেছেন নারীরূপী পুরুষ ও পুরুষরূপী নারীদের উপর এবং বলেছেনঃ তাদেরকে বের করে দাও তোমাদের ঘর হতে এবং তিনি অমুক অমুককে বের করে দিয়েছেন।
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
অধ্যায়ঃ ২৭/ পোশাক-পরিচ্ছদ
পরিচ্ছেদঃ ৩৫. মহান আল্লাহর বাণীঃ ‘‘যৌন কামনা রহিত পুরুষ’’
৪১০৯. আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত। এতে আরো রয়েছেঃ ‘‘তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে আল-বায়দা নামক স্থানে পাঠিয়ে দিলেন। এরপর সে (হিজড়া) প্রতি শুক্রবার খাদ্যের জন্য শহরে আসতো।
হাদীস সম্ভার
২৪/ বিবাহ ও দাম্পত্য
পরিচ্ছেদঃ পর্দার বিধান
২৬৬৫. ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খোজা পুরুষ এবং পুরুষসুলভ আচরণ-কারিণী নারীর উপর অভিসম্পাত করেছেন এবং বলেছেন, তোমাদের গৃহ হতে ওদেরকে বের করে দাও। তিনি স্বয়ং এক খোজাকে বহিষ্কার করেছেন এবং উমার (রাঃ) এক হিজড়ে নারীকে গৃহ হতে বহিষ্কার করেছেন।
(আহমাদ ২০০৬, ২১২৩, বুখারী ৫৮৮৬)
নামাজি হিজড়াদের হত্যা করা যাবে না
সহিহ হাদিসে এটিও পরিষ্কারভাবে বর্ণিত রয়েছে, নবী মুহাম্মদ হিজড়াদের আসলে হত্যাই করতেন, শুধুমাত্র মুসলিম নামাজি হিজড়ারা নামাজ পড়ার কারণে তাদেরকে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। অর্থাৎ তারা আসলে হত্যারই যোগ্য, শুধুমাত্র নামাজ আদায়কারীদের আল্লাহ হত্যা করতে নিষেধ করেছেন বলে নবী তাদের হত্যা করেন নি।
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
অধ্যায়ঃ ৩৬/ শিষ্টাচার
পরিচ্ছেদঃ ৬১. হিজড়া সম্পর্কে বিধান
৪৯২৮. আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। কোনো একদিন এক হিজড়াকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আনা হলো। তার হাত-পা মেহেদী দ্বারা রাঙ্গানো ছিলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এর এ অবস্থা কেন? বলা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! সে নারীর বেশ ধরেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আন-নকী নামক স্থানে নির্বাসন দেয়ার নির্দেশ দিলেন। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি তাকে হত্যা করবো না? তিনি বললেনঃ সালাত আদায়কারীকে হত্যা করতে আমাকে নিষেধ করা হয়েছে। আবূ উসামাহ (রহঃ) বলেন, আন-নাফী‘ হলো মদীনার প্রান্তবর্তী একটি জনপদ, এটা বাকী নয়।
এই হাদিসটি আরো বেশ কয়েকজায়গাতেই পাওয়া যায়-
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
অধ্যায়ঃ পর্ব-২২ঃ পোশাক-পরিচ্ছদ
পরিচ্ছেদঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ – চুল আঁচড়ানো
৪৪৮১-(৬৩) আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এক হিজড়াকে আনা হলো, সে তার হাতে এবং পায়ে মেহেদী লাগিয়ে রেখেছিল। তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, এটার এ অবস্থা কেন? সাহাবীগণ বললেনঃ সে নারীদের বেশ ধারণ করেছে। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে শহর হতে বের করে দেয়ার নির্দেশ দিলেন। সুতরাং তাকে শহরের বাইরে নাক্বী‘ নামক স্থানে নির্বাসিত করা হলো। অতঃপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল! আমরা কি তাকে কতল করে দেব? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ সলাত আদায়কারী ব্যক্তিদেরকে কতল করতে আমাকে নিষেধ করা হয়েছে। (আবূ দাঊদ)
সহীহ : আবূ দাঊদ ৪৯২৮, সহীহুল জামি‘ ২৫০৬, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ২৩৭৯, শু‘আবুল ঈমান ৪৬০৬, দারাকুত্বনী ৯, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ৫০৫৮, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৭৪৪২, আস্ সুনানুস্ সুগরা ৫৯৭।
হিজড়াদের স্বভাবগত বিষয়াদি
হিজড়া মানুষরা স্বভাবগতভাবেই নারীর পোষাক পড়তে এবং সাজসজ্জা করতে পছন্দ করে। এটি অনেক হিজড়ার মধ্যেই খুবই স্বাভাবিক ইচ্ছা। একজন মানুষের স্বাধীনতা থাকা উচিৎ, উনি যেভাবে ইচ্ছা যেভাবে পোষাক পড়বেন এবং সাজসজ্জা করবেন। কিন্তু ইসলাম খুব কঠিনভাবে এই কাজে নিষেধাজ্ঞা দেন। নবী মুহাম্মদ পুরুষ হিজড়াদের এবং নারীর বেশ ধারী পুরুষদের লানত করেছেন। অর্থাৎ অভিশাপ দিয়েছেন।
সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৭৭/ পোশাক
পরিচ্ছেদঃ ৭৭/৬১. পুরুষের নারীর বেশ ধারণ এবং নারীর পুরুষের বেশ ধারণ প্রসঙ্গে।
৫৮৮৫. ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ সব পুরুষকে লা’নত করেছেন যারা নারীর বেশ ধরে এবং ঐসব নারীকে যারা পুরুষের বেশ ধরে। (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৪৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৩৫৩)
সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৭৭/ পোশাক
পরিচ্ছেদঃ ৭৭/৬২. নারীর বেশধারী পুরুষদের ঘর থেকে বের করে দেয়া প্রসঙ্গে।
৫৮৮৬. ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরুষ হিজড়াদের উপর এবং পুরুষের বেশধারী মহিলাদের উপর লা’নত করেছেন। তিনি বলেছেনঃ ওদেরকে ঘর থেকে বের করে দাও। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেছেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অমুককে বের করেছেন এবং ‘উমার (রাঃ) অমুককে বের করে দিয়েছেন। (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৪৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৩৫৪)
উপসংহার
একটি নবজাতক শিশু ছেলে হোক, মেয়ে হোক, বৈচিত্র্যময় লিঙ্গের অধিকারী হোক, যেই হোক, সে পবিত্র এবং সুন্দর। একজন মা যেন কোন অবস্থাতেই একজন শিশুকে তার বুকের কাছ থেকে সরিয়ে না দেন। তাকে যেন হিজড়া, মানে গোত্র থেকে পরিত্যাগ না করেন। একটি শিশুর অধিকার হচ্ছে, একটি পরিবারের মধ্যে হাসি আনন্দ, ভালবাসা এবং স্নেহের মধ্যে বেড়ে ওঠার। তার লিঙ্গের ওপর ভিত্তি করে যেন তাকে কোন অবস্থাতেই অসম্মানের জীবনের দিকে ঠেলে দেয়া না হয়। তাকে একজন স্বাধীন, আত্মনির্ভরশীল, আত্মমর্যাদাশীল মানুষ হিসেবে বেড়ে ওঠার সুযোগ দেয়া হয়। আর ইসলামের এইসব নোংরা বিধিবিধান যেন সমাজ থেকে দূরীভূত হয়।
আপনার মতামত লিখুন