পেটের দূষিত বায়ু দূর করার উপায় - Ways to get rid of polluted stomach air
flatulence

পাদ থেকে মুক্তির উপায়

সাধারণত নানা কারণে অন্ত্রে গ্যাস জমা হয়। যখন আমরা খাই এবং কথা বলি, গ্যাস সাধারণত মুখের মাধ্যমে শরীরে ঢোকে। বৃহদন্ত্রে (লার্জ ইন্টেস্টাইন বা ইন্টেস্টিন) থাকা জীবাণুগুলো খাবার ভেঙে ফেলে, যে ব্যাপারটাও গ্যাস সৃষ্টি করে। পেট বা উদরের বায়ু মলদ্বার অথবা মুখের মাধ্যমে বের করা স্বাভাবিক।

ব্যায়াম বা শারীরিক কসরত না করলে, পানি কম খেলে বা খাবারে আঁশের পরিমাণ কম থাকলে পেটে গ্যাস তৈরি হতে পারে। এ ছাড়া হজম না হলে পেটে গোলমাল দেখা দিতে পারে।

অনেক সময় অত্যধিক বায়ু জমেও পেট সারাক্ষণ ফুলে থাকে। খাওয়া-দাওয়া এবং জীবনযাপনে কিছু অভ্যাসের ফলে এই সমস্যা তৈরি হয়। জমে থাকা বায়ুর ফলে পেট ফুলে থাকে। এবং শরীরেও সারাক্ষণ একটা অস্বস্তি হয়। কী করে রেহাই পাবেন, জেনে নিন।

পাদ বা বাতকম্য কি?

পাদের মূল কারণ হলো আমাদের খাদ্য গ্রহণের সাথে সাথে কিছু পরিমাণ গ্যাস ভেতরে চলে যাওয়া। অথবা খাদ্য হজমের জন্য ইন্টেসটাইন অর্থাৎ অন্ত্রনালিতে যে গ্যাস উৎপন্ন হয়, তা যখন আমাদের বাটক অর্থাৎ মলদ্বার দিয়ে বেরিয়ে যায়, তখনই সেটাকে বলা হয় পাদ বা বাতকম্য।

ঘনঘন পাদ থেকে মুক্তির উপায় কী?

দিনে একজন মানুষ গড়ে ১৪ বার বায়ুত্যাগ করে থাকে । পুরুষ এবং নারী ভেদে এই পরিমান একই , যদিও কিছু কিছু নারী এটা অস্বীকার করেন । দেখা গেছে যে , একই ধরনের খাবার গ্রহণের পর কিছু ক্ষেত্রে মহিলারা পুরুষের তুলনায় একটু বেশি বায়ু ত্যাগ করেন । গানিতিক ভাবে হিসেব করে দেখা গেছে যে একজন ব্যক্তি যদি একটানা ৬ বছর ৯ মাস বায়ু ত্যাগ করেন তার ফলে যে গ্যাস তৈরী হবে তা একটি আণবিক বোমার শক্তির সমান । বায়ুত্যাগ করা স্বাস্থ্যকর অভ্যাস। কিন্তু এই ভালো অভ্যাস যদি মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যায় তাহলে তো সেটি আর ভালো থাকে না। ঘনঘন পাদ কমানোর উপায় হিসেবে নিচের পদ্ধতিগুলো ফলো করুন-

পাদ কমানোর উপায় কী?

১। খাবার ভালোকরে চিবিয়ে খান

খাবার খাওয়ার সময় তাড়াহুড়া করবেন না। তাড়াহুড়া করে গপাগপ খাবার গিললে খাবারের সাথে পেটে প্রচুর বাতাস ঢুকে পরে ফলে পাদ বেশি হয়। পাদের প্রধান উপাদান বাতাস। এই বাতাস বেশি প্রবেশ করে খাবার গ্রহণের সময়। তাই খাবার ধীরেসুস্থে চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করুন। খাবার চিবানোর সময় মুখ বন্ধ রাখুন। খাবার গ্রহণের সময় অহেতুক গল্প করা বন্ধ করুন।

২। সতর্কতার সাথে পানি পান করুন

পানি পান করার সময় গ্লাস ব্যবহার করুন,ঠোট ভালোভাবে গ্লাসে লাগিয়ে চুমুক দিয়ে পান করতে হবে। সরাসরি বোতল থেকে হা করে পানি পান করলে পেটে প্রচুর বাতাস প্রবেশ করে। পেটে অতিরিক্ত বাতাস প্রবেশের কারণে ঘনঘন পাদ হয়। নিয়ম মেনে প্রচুর পানি পান করুন এতে পেটের পেশিগুলো সচল থাকবে ভালোভাবে মল নিষ্কাশন হবে।

৩। স্ট্র বা পাইপ ব্যবহার করবেন না

জুস বা ঠাণ্ডা পানীয় পান করার সময় আমরা স্ট্র ব্যবহার করি। অনেকে ভদ্রতা দেখানোর জন্য তরল খাবার গ্রহণের সময় অহেতুক স্ট্র ব্যবহার করেন। স্ট্র দিয়ে তরল পদার্থ গ্রহণ করলে তরলের সাথে পেটে প্রচুর বাতাস প্রবেশ করে।

৪। চুইংগাম কম চিবানো উচিত

মুখের গন্ধ দূর করতে, বমিভাব কমাতে এবং মুখকে শুষ্কতার হাত থেকে রক্ষা করতে অনেকেই চুইংগাম চিবায়। চিবানোর সময় প্রচুর বাতাস পেটে চলে যায়। তাই ঘনঘন বায়ুত্যাগ করতে না চাইলে কম করে চুইংগাম চিবান।

৫। হজম হয় না এমন খাবার খাবেন না

অনেকেই দুধ বা দুধ দিয়ে বানানো খাবার হজম করতে পারেন না। তারা এসব খাবার খুব কম খাবেন অথবা খাওয়াই বাদ দিবেন। দুধ হজম করতে না পারলে পেটে প্রচুর গ্যাস উৎপন্ন করে ফলে পাদ বেশি হয়। শুধু দুধ নয় আরো কোন খাবার আপনি হজম করতে পারেন না সেগুলো খু্ঁজে বের করুন এবং খাওয়া বন্ধ করুন।

৬। উচ্চ মাত্রার সালফারযুক্ত খাবার কম খাবেন

পেয়াজ,রসুন,মূলা,গাজর,বরবটি,মটরশুটি,ব্রকলি,ফুলকপি এগুলো উচ্চ সালফার যুক্ত খাবার এগুলো কম খাবেন।

৭। গ্যাস উৎপন্ন করে এমন খাবার বেশি খাবেন না

fructose, lactose, insoluble fiber এবং starch বেশি পরিমানে খেলে এগুলো বৃহদান্ত্রে ফারমেন্ট হয়ে প্রচুর গ্যাস উৎপাদন করে ফলে বায়ুত্যাগ বেশি হয়। এমন খাবারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

Beans, green leafy vegetables, such as cabbage, Brussel sprouts, broccoli, asparagus,Fruits, oat bran, peas, beans,potatoes, pasta, corn ইত্যাদি।

৮। সঠিক খাবার রুটিন মেনে চলুন

সকালে অবশ্যই বেশি খাবেন,দুপুরে ফল ও সব্জি খাবেন,রাতে শাকসব্জি কম খাবেন। রাতে বেশি খেয়ে হজম না করে ঘুমিয়ে পরলে পেটে প্রচুর গ্যাস সৃষ্টি হয় এবং বায়ুত্যাগের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। রাতে ঘুমানোর অন্তত ৩-৪ ঘণ্টা আগে খাবার খেয়ে ফেলুন। রাতের খাবার গ্রহণের পর কমপক্ষে ১৫ মিনিট হাটুন।

৯। কোল্ড ড্রিংকস কম পান করুন

কোল্ড ড্রিংকস হলো কার্বোনেটেড বেভারেজ এতে তীব্র চাপে কার্বনডাইঅক্সাইড মেশানো থাকে। কার্বনডাইঅক্সাইড পানিতে মিশে কার্বনিকঅ্যাসিড সৃষ্টি করে। এগুলো পান করার পর পেটে গিয়ে কার্বনডাইঅক্সাইড মুক্ত হয়ে যায় এবং গ্যাসের বুদবুদ সৃষ্টি করে। এটা ঘনঘন বায়ুত্যাগের কারণ।

১০। ধুমপান ছেড়ে দিন

ধুমপান করার সময় প্রচুর বাতাস পরিপাকতন্ত্রে প্রবেশ করে। এটি ঘনঘন বায়ুত্যাগ করার একটি অন্যতম কারণ।

১২। টাইট ফিটিং কাপড় পরবেন না

টাইট ফিটিং কাপড় বিশেষ করে টাইট প্যান্ট পরিধান করলে পেটের উপর চাপ সৃষ্টি হয় প্রচুর। এই চাপে পেটে জমা গ্যাস বারবার লিক করে।

১৩। কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ন্ত্রণ করুন

কোষ্ঠকাঠিন্য হলে বৃহদান্ত্রে মল বেশিক্ষণ থাকে ফলে প্রচুর গ্যাস উৎপন্ন হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ঘনঘন পাদের সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব।

১৪। ব্যায়াম করুন

নিয়মিত ব্যায়াম করলে পরিপাকতন্ত্রের নড়াচড়া ঠিক থাকে ফলে হজম ভালো হয়। হজম ভালো হলে ঘনঘন বায়ুত্যাগের সমস্যা এমনিতেই ভালো হয়ে যাবে।

১৫। পেটফাঁপা নিয়ন্ত্রণ করুন

পেটফাঁপা থাকলে এমনিতেই প্রচুর পাদ হয়। তাই পেটফাঁপা নিয়ন্ত্রণ করুন। রাতে ঘুমানোর আগে পেটফাঁপা থাকলে একটি হট ওয়াটার ব্যাগে গরম পানি তুলে পেটের উপর ৪-৫ মিনিট হালকা চাপে ধরে রাখুন। এতে পেটফাঁপা একটু উপশম হবে।

১৬। আদা ও মৌরি খেতে হবে

খাবার গ্রহণের পর আদা ও মৌরি খেলে হজম ভালো হয়। পেটে অতিরিক্ত গ্যাস কম জমে।

১৭। পেপারমিন্ট চা পান করুন

সাধারণ চা কফি দিনে ২ কাপের বেশি খাবেন না। এর পরিবর্তে পেপারমিন্ট চা পান করুন।

ঘনঘন পাদের সমস্যা থেকে মুক্তির ঔষধ

নিচের মেডিসিন সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করে অতিরিক্ত পাদের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

প্রোবায়োটিকস

প্রোবায়োটিকস হলো স্বাস্থ্যকর উপকারি ব্যাকটেরিয়া এটি পরিপাকতন্ত্রে উপস্থিত ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি করে। ভালো ব্যাকটেরিয়া খাবার দ্রুত হজম করতে সাহায্য করে। হজম ভালো হলে পেটে অতিরিক্ত গ্যাস জমে না ফলে ঘনঘন বায়ুত্যাগের সমস্যা দূর হয়। এটি গ্রহণ করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন কারণ ভুল ব্যবহারের ফলে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা অতিরিক্ত বেড়ে গিয়ে পেটে প্রচুর গ্যাস সৃষ্টি হতে পারে।

এনজাইম সাপ্লিমেন্ট

খাবার পেটে প্রবেশের পর বিভিন্ন এনজাইমের প্রভাবে ভেঙ্গে গিয়ে সরল খাদ্য উৎপন্ন করে। ভালোভাবে খাবার ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে পেটে গ্যাস উৎপাদনের পরিমাণ কম হয়। এনজাইম কম ক্ষরণ হলে খাবার ঠিকমত ভেঙ্গে যায় না ফলে প্রচুর গ্যাস উৎপন্ন হয়। এনজাইম সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এটিও ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক গ্রহণ করা উচিত। উল্লেখযোগ্য এনজাইম সাপ্লিমেন্ট হলো- galactosidase, alpha-galactosidase,tegaserod maleate (Zelnorm)

পাদের সমস্যা দূর করার ট্যবলেট

Charcoal tablet হলো পাদের সমস্যা দূর করার ট্যাবলেট। এটি পাকস্থলী ও অন্ত্রের ভেতর উৎপন্ন হওয়া অতিরিক্ত গ্যাস শোষণ করে ফলে পাদের সমস্যা দূর হয়।

যৌনরোগ থেকে সুরক্ষিত থাকতে যা করবেন - What to do to protect yourself from sexually transmitted diseases
যৌন ইচ্ছা কমিয়ে দেয় যেসব খাবার - Foods that reduce sex drive
ইবনে সিনা হাসপাতালের ঠিকানা ও ফোন নম্বর
ধ্বজভঙ্গ রোগের চিকিৎসা
বরিশাল জেলার বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের তালিকা
হাই ব্লাড প্রেশার কমানোর ঘরোয়া উপায়
অনিয়মিত পিরিয়ড নিয়মিত করার ঘরোয়া উপায়
যৌন আগ্রহ বাড়ানোর উপায়
বমি বমি ভাব হওয়ার কারণ ও প্রতিরোধে করণীয় - Causes and prevention of nausea
হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ রোগের চিকিৎসা - Treatment of hand foot and mouth disease