টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ গাইড -Tanguar Haor Travel Guide
Tanguar Haor

টাঙ্গুয়ার হাওর ট্যুর, যাতায়াত ব্যবস্থা, খরচ, হোটেল, গাইড ও টিপস

উপরে নীল আকাশ, চারদিকে শান্ত জলরাশি। স্বচ্ছ নদীমাতৃক বাংলাদেশের অপরূপ প্রতিচ্ছবি। নৌকা নিয়ে গোটা বিল চষে বেড়ানো, পাশেই উড়ন্ত সাদা বকের ঝাঁক, চারপাশ জুড়ে চেনা-অচেনা পাখিদের মিলন মেলা; শীতের ভ্রমণের অন্যতম এক আকর্ষণ। শীতের সময়ে বিভিন্ন দেশ থেকে উড়ে আসা পাখিদের কলতানে মুখরিত হয়ে থাকে আমাদের দেশের এসব হাওর অঞ্চল। শীতের সময়ে এসব হাওরের রূপ-বৈচিত্র্য দেখার জন্য ঘুরে আসতে পারেন টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে।

টাঙ্গুয়ার হাওর মানুষের কাছে ভ্রমণের একটি অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হয়ে উঠেছে। বর্ষা ও শীত দুই ঋতুতেই টাঙ্গুয়ার হাওরে যাওয়া যায়। দুই মৌসুমে হাওরে দেখতে পাবেন দুই রূপ। শীতে দেখতে পাবেন হাজারো অতিথি পাখির কলকাকলি আর বর্ষাকালে পানির খেলা। দুই মৌসুমই আপনার মন মাতাতে বাধ্য। ভ্রমণ পিপাসুদের তাই টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রতি আগ্রহ এখন অনেক বেশি। চলুন জেনে নিই এই কনকনে শীতে টাঙ্গুয়ার হাওরের ভ্রমণবৃত্তান্ত।

টাঙ্গুয়ার হাওর কোথায় অবস্থিত

অবস্থানগত দিক দিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওর সিলেট বিভাগের অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান। বৃহত্তর সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলায় অবস্থিত এই হাওর সারা বাংলাদেশের একমাত্র মিঠাপানির জলাধার! ২০০০ সালের আগ পর্যন্ত সময়ে এই হাওর ‘প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’ হিসেবে পরিচিত থাকলেও পরবর্তীতে দীর্ঘ ৬০ বছরের ইজারাদারির পালা শেষ হয় এবং এই স্থান বা হাওরটিকে  ‘রামসার স্থান’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়।

হাওর কী?

বাংলাদেশে, পিরিচ আকৃতির বিশাল ভূগাঠনিক অবনমনকে হাওর বলা হয়। প্রতিবছর বর্ষাকালে হাওরগুলি পাহাড়ি জলস্রোত আর বৃষ্টির জলে কানায় কানায় ভরে উঠে নিস্তরঙ্গ সমুদ্রের আকার নেয়। তারপর সাত মাস থৈ থৈ পানিতে ডুবে থাকে। কিন্তু শীত ও গ্রীষ্মে হাওরের পানি শুকিয়ে যায়, তখন সেটা আদিগন্ত ধুধু প্রান্তর। হাওরের বিলগুলোর পার জেগে ওঠে, কিছু পানি জমে থাকে বিলগুলোতে। স্থানীয়রা যাকে বলে কান্দা। এসব বিলে থাকে নানা জাতের প্রচুর মাছ। একসময় এ বিলগুলোর পানিও উড়ে যায়। বিস্তীর্ণ মাঠ তখন ছেয়ে যায় সবুজ ঘাসের গালিচায়। বর্ষার সমুদ্রসমান হাওর তখন পরিণত হয় গবাদি পশুর চারণভূমিতে। হাওরের মাঝে মাঝে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো দেখাত যেসব গ্রাম, সেগুলি তখন মাথা তোলে। কৃষকেরা বন্যার পলি-পড়া উর্বর জমিতে ফলায় রবিশস্য আর বোরোধান।

টাঙ্গুয়ার হাওর কখন যাবেন?

সাধারণত বর্ষাকালে টাঙ্গুয়ার হাওর মেঘালয় রাজ্যের ঝর্ণাধারায় কানায় কানায় ভরে যায়, তাই জুন থেকে অক্টোবর মাস টাঙ্গুয়ার হাওর পরিদর্শনের সেরা সময়। এছাড়াও, শীতকালে, টাঙ্গুয়ার হাওর চারপাশে অতিথি পাখির উপস্থিতির কারণে তার পরিচিত চেহারা ধরে রাখে, তাই আপনি বছরের যে কোনও সময় যান না কেন, হাওরের রূপ আপনাকে মুগ্ধ করবেই।

টাঙ্গুয়ার হাওরের গিয়ে কী দেখবেন?

প্রকৃতির একটি দুর্দান্ত বৈচিত্র্য হল টাঙ্গুয়ার হাওর। জলাশয়ে ঘেরা এবং চারপাশের পাহাড় এটিকে অনন্য করে তুলেছে । হাওরে সব সময় পাখিদের আনাগোনা থাকে, তাই এর জনপ্রিয়তা সবার মাঝে বিরাজমান। এছাড়া হাওরের দর্শনীয় স্থান সমূহ হল- ছোট ছোট সোয়াম্প, ফরেস্ট ওয়াচ টাওয়ার, নীলাদ্রি লেক, লকমাছড়া ,বারিক্কা টিলা ,শিমুল বাগান ,বাঁশ বাগান ,যাদুকাটা নদী ,লাউয়ের গড়  ও হাওরের অপূর্ব সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত, চাঁদনী রাতে জোছনা। এছাড়াও আপনি যদি একটি নৌকা ভাড়া করে ২ থেকে ৩দিনের জন্য টাঙ্গুয়ার হাওর পরিদর্শন করতে পারেন, তবে আপনি সেখানে আপনার জীবনের সেরা সময় কাটাবেন এবং প্রকৃতির অপূর্ব দৃশ্য দেখতে পাবেন।

টাঙ্গুয়ার হাওরের দর্শনীয় স্থান সমূহ

ট্যাকের হাট

ট্যাকের হাট ভারত বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী একটি বাজার। টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে যারা আসেন তারা একবার হলে বেড়িয়ে যান ট্যাকের হাটে। ট্যাকের ঘাটে নৌকা নোঙ্গর করার পর বিকেলের সময়টা সবাই এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ায়। সন্ধ্যা বেলায় হালকা খাবার বা ভাজা পোড়া খেতে সবাই ভিড় জমায় ট্যাকের হাটে। ট্যাকের ঘাট থেকে ০৩-০৪ মিনিটের হাটার দুরুত্বে এই বাজারের অবস্থান। যারা বাজেট ট্যুরে আসেন তারা ট্যাকের হাটে কম দামে ভালো মানের খাবার পেয়ে যাবেন।

লাকমা ছড়া

টাঙ্গুয়ার হাওর ঘুরতে আসলে যে জায়গাটিতে যেতে একদম ভূলবেন না সেটি হচ্ছে লাকমা ছড়া। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে সবুজের আস্তরন। এই সবুজ আস্তরনের বুক বেয়ে নেমে এসেছে এক ঝর্ণা, যার নাম লাকমা। এই ঝর্নাটি ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে। লাকমা ঝর্ণাটি বাংলাদেশ থেকে দেখা যায়না। লাকমা ঝর্ণার পানিগুলো বাংলাদেশে বয়ে আসে। লাকমা ঝর্ণার পানি গিয়ে পড়ে টাঙ্গুয়ার হাওরে। যে পথ দিয়ে পানি গিয়ে হাওরে পড়ে তাকে বলে লাকমা ছড়া। ছড়ার শীতল জল আপনাকে প্রনবন্ত করবে। ছড়ায় বড় বড় পাথর ছড়ার সৌন্দর্যকে কয়েক গুন বৃদ্ধি করেছে। ট্যাকের ঘাটে নৌকা থেকে নেমে একটা অটো বা মোটর সাইকেল নিয়ে লাকমা ছড়ার সৌন্দর্য উপভোগ করতে চলে যেতে পারেন।

ওয়াচ টাওয়ার

হাওরকে অন্যভাবে উপভোগ করতে অবশ্যই উঠবেন ওয়াচ টাওয়ারে। ছুটির দিন গুলোতে বেশ ভিড় থাকে টাঙ্গুয়ার হাওরের ওয়াচ টাওয়ারে। বলাই নদীর পাশ ঘেঁসে হিজল বনে ওয়াচ টাওয়ারের অবস্থান। প্রায় সব নৌকা একবারের জন্য হলেও ওয়াচ টাওয়ারের পাশে যায়। ওয়াচ টাওয়ারের আশে পাশের পানি বেশ স্বচ্ছ। পানি স্বচ্ছ বলে ঘুরতে আসা বেশিরভাগ পর্যটকই এইখানে গোসল সেরে নেন। এইখানে পানিতে নেমে চা খাওয়ার আছে বিশেষ সুযোগ। ছোট ছোট নৌকায় করে হাওরের স্থানীয় লোকজন চা, বিস্কুট বিক্রয় করে। আপনি চাইলে বড় নৌকা থেকে নেমে ছোট ছোট নৌকা দিয়ে ঘুরতে পারবেন এইখানে, শুনতে পারবেন মাঝির সুমধুর কন্ঠে হাওর বাঁচানোর গান।

নীলাদ্রি লেক

নীলাদ্রি লেক এইখানে মানুষদের কাছে পাথর কুয়ারি নামে পরিচিত। এই লেকটি এবং তার আশ পাশের এলাকা বাংলার কাশ্মীর নামেও পরিচিত। নীলাদ্রি লেকের বর্তমান নাম “শহীদ সিরাজী লেক” । বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ গেরিলা যোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম বির বিক্রম এর নামানুসারে এই লেকের নামকরন করা হয়। কিন্তু ট্রাভেলার কমিউনিটিতে এটি নীলাদ্রি লেক হিসেবেই বেশী পরিচিত। এই লেকের পানি খুব স্বচ্ছ। নৌকায় করে ঘুরে বেড়াতে পারবেন এই লেকে। আরো আছে কায়াকিং এর বিশেষ ব্যাবস্থা। ক্লান্তি দূর করার জন্য স্বচ্ছ ঠান্ডা লেকের জলে স্নান করে নিতে পারবেন। লেকের এক পাশ সবুজ ঘাসের চাদরে মোড়ানো ছোট ছোট বেশ কয়েকটি টিলা। আর অন্য পাশে রয়েছে সুউচ্চ সুবিশাল পাহাড়। পাহাড়, টিলা, লেকের স্বচ্ছ পানি প্রকৃতির এই সুন্দর মিতালী আপনাকে বিমোহিত করবে। এইখানে এসে আপনি হারিয়ে যেতে বাধ্য। ট্যাঁকের ঘাটে নৌকা থেকে নেমে সোজা হেঁটে চলে আসতে পারবেন নীলাদ্রি লেকে। পড়ন্ত বিকালের সময়টুকু কাটতে পারেন লেকের পাড়ের ঘাসের চাদরে বসে। অথবা প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে করতে পারেন লেকের জলে নৌকা ভ্রমণ অথবা করতে পারেন কায়াকিং।

জাদুকাটা নদী

জাদুকাটা নদীর আদি নাম রেনুকা। কথিত আছে জাদুকাটা নদী পাড়ে বসবাস কারি কোন এক বধু তার পুত্র সন্তান জাদুকে কোলে নিয়ে নদীর অনেক বড় একটি মাছ কাটছিলেন। হঠাৎ অন্যমনস্ক হয়ে নিজের সন্তান জাদুকেই কেটে ফেলেন। এই কাহিনী থেকেই পরবর্তীকালে এই নদীর নাম হয় জাদুকাটা নদী। এ নদীর উৎপত্তিস্থল ভারতের জৈন্তিয়া পাহাড়। এ নদীর পানি অনেক ঠান্ডা, দুপুরের গেলে নঈতে ডূব দিতে একদম ভূলবেন না। তবে নদীর মাঝে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। মাঝে অনেক স্রোত থাকে। জাদুকাটার এক পাশে সুবিশাল পাহাড় উপরে নীল আকাশ আর নদীর স্বচ্ছ পানি এইগুলো মিলে অদ্ভূত এক ক্যানভাসের সৃষ্টি করে।

শিমুল বাগান

এটি বাংলাদেশের সব চাইতে বড় শিমুলা বাগান। এ বাগানে প্রায় ৩০০০ শিমুল গাছ রয়েছে। প্রায় ১০০ বিঘা জায়গা জুরে এই শিমুল বাগানের বিস্তৃতি। বসন্ত কালে শিমুল ফুলের রক্তিম আভা আপনার মনকে রাঙ্গিয়ে দিবে। শিমুল বাগানের অপর পাশে মেঘালয়ের সুবিশাল পাহাড় মাঝে সচ্ছ নীল জলের নদী জাদু কাটা আর এই পাশে রক্তিম শিমুল ফুলের আভা আপনার মন নেচে উঠবে। শিমুল বাগানে প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা। শিমুল বাগানের নিচেই নৌকা আসে। নৌকা না আসলে ট্যাকের ঘাট থেকে বাইক নিয়ে ঘুরে যেতে পারবেন শিমুল বাগান।

বারিক্কা টিলা

মেঘালয়ের পাহাড়ের পাদদেশে সীমান্তের এই পাশে সবুজে মোড়ানো এক টিলার নাম বারেকের টিলা বা বারিক্কা টিলা। উঁচু এই টিলার একপাশে ভারতের সুউচু পাহাড়, অন্য পাশে স্বচ্ছ জলের নদী জাদুকাটা। বারিক্কা টিলা থেকেই দেখতে পারবেন মেঘ পাহাড়ের মিলবন্ধন। বারিক্কা টিলার উপর থেকে জাদুকাটা নদীর দিকে তাকালে আপনি যে নৈসর্গিক দৃশ্য দেখতে পারবেন তার রেশ থেকে যাবে বহুদিন। বারিকা টিলার পাশে দুইটি মিষ্টি পানির ছড়া রয়েছে। বর্ষাকাল ছাড়া এই ছরাগুলো পানি থাকে না বললেই চলে। ছড়া গুলো দেখতে খানিকটা ট্র্যাকিং করতে হবে। এছাড়াও ভারতের পাহাড়ে রয়েছে শাহ্ আরেফিনের মাজার এবং রয়েছে একটি তীর্থ স্থান। বছরের নির্দৃষ্ট দিনে এইখানে ওরস এবং পূণ্য স্নানের আয়োজন হয়। বারিক্কা টিলার পাশেই জাদুকাটা নদী। এ নদী দিয়েই নৌকায় করে আসতে পারবেন। কিন্ত নৌকা না আসলে ট্যাকের ঘাট থেকে বাইক বা ইজি বাইক চলে আসতে পারবেন বারিক্কা টিলায়।

হিজল বন

টাঙ্গুয়ার হাওরের হিজল বনটি দেশের সবচাইতে পুরানো হিজল বন। বলাই নদীর পাশেই আছে এই হিজল বন। হাওরের মাছ ও পাখির অভয়াশ্রম এই হিজল বন। টাঙ্গুয়ার হাওরে আছে শতবর্ষীয় হিজল গাছ। বর্ষায় গলা সমান পানিতে ডুবে থাকা গাছে গাছে ঝুলে থাকা হিজল ফুলের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে।

হাসন রাজার যাদুঘর

সুনামগঞ্জ শহরের সুরমা নদীর ঠিক পাশেই রয়েছে মরমী কবি হাসন রাজার বাড়ি। হাসন রাজা একজন সম্ভ্রান্ত জমিদার ছিলেন। জমিদারির পাশাপাশি তিনি অসংখ্য গান রচনা করেছিলেন। সে সকল গান এখনো জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে। বর্তমানে সুনামগঞ্জের হাসন রাজার বাড়িটি যাদুঘর হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। এই যাদুঘরে হাসন রাজার স্মৃতি বিজড়িত অনেক জিনিসপত্র আছে। এইখানে আসলে আপনি দেখতে পাবেন মরুমী কবি হাসন রাজার রঙ্গিন আলখাল্লা, তিনি যেই চেয়ারে বসে গান রচনা করতেন সেই চেয়ার। তার ব্যবহৃত তলোয়ার। আরো আছে চায়ের টেবিল, কাঠের খড়ম, দুধ দোহনের পাত্র, বিভিন্ন বাটি, পান্দানি, পিতলের কলস, মোমদানি, করতাল, ঢোল, মন্দিরা, হাতে লেখা গানের কপি, ও হাসন রাজার বৃদ্ধ বয়সের লাঠি। টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে ফেরার পথে ঘুরে যেতে পারবেন হাসন রাজার যাদুঘর।

ডলুরা শহীদদের সমাধি সৌধ

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ডলুরা ছিল সুনামগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকার অন্যতম রণাঙ্গন। এই রণাঙ্গনে সম্মুখ যুদ্ধে যারা শহীদ হন তাদের কয়েকজনকে এইখানে সমাহিত করা হয়। ১৯৭৩ সালে শহীদদের স্মরনে এইখানে স্মৃতি সৌধ নির্মান করা হয়। এইখানে ৪৮ জন শহীদের সমাধি রয়েছে। সুউচু পাহাড়ের পাদদেশে লুকিয়ে আছে ১৯৭১ এর রক্তাত্ত সংগ্রামের স্মৃতি চিহ্ন।

পাইলগাঁও জমিদারবাড়ি

সাড়ে পাঁচ একর জমির উপর ৩০০ বছর আগে তৈরি করা হয় পাইলগাও জমিদার বাড়ি। কালের পরিক্রমায় ক্ষয়ে যাওয়া জমিদার বাড়িটি আজও সৌন্দর্য, ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের ধারক। এই জমিদার বাড়ির অবস্থান সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার ০৯নং ইউনিয়নে। এই জমিদার বাড়ির প্রতিটি ঘর যেন এক অন্যরকম নান্দনিক স্থাপত্য শিল্পের সাক্ষী হয়ে আজো বিদ্যমান রয়েছে। পাইলগাও জমিদার বাড়ি প্রাচীন পুরাকীর্তির এক অনন্য নিদর্শন।

টাঙ্গুয়ার হাওর কীভাবে যাবেন?

টাঙ্গুয়ার হাওর মূলত সুনামগঞ্জ হওয়ায় যেকোন ভাবেই যেতে পারেন। তবে বাসে যাওয়া তুলনামূলকভাবে সহজ এবং খরচ কম এবং খুব দ্রুত সময়ে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে যাওয়া সম্ভব।

আরো পড়ুন: ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট

ঢাকা হতে সুনামগঞ্জ:

ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ যাওয়ার বিভিন্ন বাস রুট আছে । যেমন মহাখালী থেকে এনা পরিবহনে আপনি খুব সহজেই সুনামগঞ্জ যেতে পারবেন, এনা পরিবহনের বাস ভাড়া ৩৫০ টাকা থেকে ৪৫০টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ছয় ঘণ্টা সময় লাগবে। আবার সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে সুনামগঞ্জ যাওয়ার জন্য, মামুন আর শ্যামলী পরিবহনের বাসের ভাড়া ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা এবং এসি বাসের জনপ্রতি ভাড়া ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা।

সিলেট হতে সুনামগঞ্জ

ভৌগোলিক অবস্থার কারণে সিলেট-সুনামগঞ্জ একে অপরের খুব কাছাকাছি অবস্থিত। সেক্ষেত্রে সিলেট থেকে সুনামগঞ্জের ভাড়া তুলনামূলক কম। সিলেট থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের ছোট-বড় বাস চলাচল করে। সিলেটের কুমারপাড়া এলাকার বাসস্ট্যান্ড থেকে সুনামগঞ্জ যাওয়ার বাস ভাড়া ১০০ টাকা এবং শাহ জালাল মাজার থেকে বিভিন্ন ধরনের হালকা যানবাহন পাওয়া যায়। সুনামগঞ্জ গেলে ভাড়া ২০০ টাকা।

সুনামগঞ্জ হতে টাঙ্গুয়ার হাওর

সুরমা নদীর উপর নির্মিত সেতুতে অনেক ছোট ছোট সিএনজি, লেগুনা গাড়ি পাওয়া যায়। গাড়িতে করে সুনামগঞ্জ থেকে আপনাকে তাহিরপুর যেতে হবে এবং তাহেরপুর থেকে আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী একটি ছোট নৌকা বা একটি নৌকা ভাড়া করে টাঙ্গুয়ার হাওরে যেতে হবে। শীতে টাঙ্গুয়ার হাওরে ভ্রমণ করলে নদীতে পানি কম থাকায় সিএনজি বা ইজিবাইকে করে সুলায়মানপুর যেতে হবে এবং সেখান থেকে টাঙ্গুয়ার হাওরে যেতে নৌকা ভাড়া করতে হবে।

নৌকা ভাড়া

নৌকা ভাড়া করতে কিছু বিষয়ের উপর লক্ষ্য রাখুন যেমন নৌকায় বাথরুম আছে কিনা, সোলার প্যানেলের মাধ্যমে মোবাইল চার্জ দেওয়া, লাইট ও ফ্যানের ব্যবস্থা ব্যবস্থা আছে কিনা। নৌকা ভাড়া করতে দরদাম করে নিন। নৌকা ভাড়া মূলত ৩টি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। নৌকায় ধারণ ক্ষমতা, নৌকার সুযোগ সুবিধা এবং সিজনের উপর। সাধারণত ছোট নৌকা ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা, মাঝারি নৌকা ২৫০০ থেকে ৩৫০০ টাকা এবং বড় নৌকা ৩৫০০ থেকে ৬০০০ টাকায় সারাদিনের জন্য ভাড়া করা যায়। ১ রাত নৌকায় কাটাতে চাইলে ছোট নৌকা ৩৫০০-৫০০০ টাকা এবং বড় নৌকা ভাড়া করতে ৭০০০ থেকে ১০,০০০ টাকার মত লাগবে। নৌকায় সোলার প্যানেল ও লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থা না থাকলে তাহিরপুর বাজার থেকে আইপিএস ও লাইফ জ্যাকেট ভাড়া নিতে পারবেন। রান্নার জন্য নৌকার মাঝিকে খরচের টাকা দিলে সে বাবুর্চি নিয়ে যাবে কিংবা নিজেই রান্নার ব্যবস্থা করে ফেলবে। কি করবেন তা অবশ্যই মাঝির সাথে আগে আলোচনা করে দরদাম ঠিক করে নিবেন।

টাঙ্গুয়ার হাওরে কোথায় থাকবেন?

মূলত, টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমন করার সময়, সবাই একটি নৌকা ভাড়া করে , সেক্ষেত্রে অনেক ঝুঁকি থে যায়। তাই অনেকে নৌকা ভাড়ার পরিবর্তে হোটেলে  থাকতে পছন্দ করেন, তবে সুনামগঞ্জে অল্প কয়েকটি হোটেল রয়েছে । হোটেল রুম ছুটির সময় পাওয়া যায় না। তাই আগে থেকে বুকিং করা ভালো । কারন বর্ষাকালে সেখানে প্রচুর ভীড় হয়।

খাবার দাবার এর ব্যাবস্থা

সকালের নাস্তা তাহিরপুর বাজারে সেরে নিতে পারেন। দুপুর এবং রাতে খেতে পারেন ট্যাকের হাটে। এখানে বেশ কয়েকটি ছোটখাট রেষ্টুরেন্ট রয়েছে। হাওরের নানান জাতের মাছ, হাঁস এবং বিভিন্ন প্রজাতির ভর্তা ভাজি পাওয়া যায় এই দোকান গুলোতে। যারা নৌকায় খেতে চান তারা তাহিরপুর বাজার থেকে প্রয়োজনীয় সদাই এবং একজন বাবুর্চি নিয়ে নৌকায় উঠতে পারেন। আমাদের প্রিমিয়াম হাউজ বোট বাতান -এ প্রিমিয়াম কোয়ালিটির খাবার দাবার এর ব্যবস্থা থাকবে। তাই বাতান -এ বুকিং থাকলে খাবারের বিষয় নিয়ে একদম নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।

সুনামগঞ্জের কয়েকটি হোটেলের ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর:

হোটেল প্যালসঃ প্যালস সুনামগঞ্জের খুবই জনপ্রিয় একটি তিন তারকা হোটেল। এটি পুরাতন বাস স্ট্যান্ড রোড, স্টেশন রোডে অবস্থিত।

বুকিং নাম্বার- ০৮৭১৫৫৩৪৬

হাওর বিলাস গেস্ট হাউসঃ এটি বন্ধুদের একটি গ্রুপের জন্য সেরা হোটেলগুলির মধ্যে একটি। তাছাড়া ফ্যামিলি নিয়ে নৌকার চেয়ে সকলে হোটেল বেশি পছন্দ করে । তাদের জন্য এটি সেরা ও ভালো মানের হোটেল। যা হাজিপাড়াতে অবস্থিত।

বুকিং নাম্বার – ০১৬১২৩৪২৬৭২

হোটেল সারপিনিয়াঃ জগন্নাথ বাড়ি রোডে অবস্থিত হোটেলটি বেশ ভালো মানের।

বুকিং নাম্বার- ০৮৭১৫৫২৭৮

টাংগুয়া ভ্রমণের সতর্কতা ও কিছু পরামর্শ

* হাওর ভ্রমণকালে অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট সঙ্গে নিন।

* হাওরে রওনা হবার আগে তাহিরপুরে থানায় আপনার নিরাপত্তার জন্যে জিডি করে নিন।

* যে কোন কিছুর জন্যে দামাদামি করে নিবেন।

* একসাথে গ্রুপ করে গেলে খরচ কম হবে। ৪-৫ জন বা ৮-১০ জনের গ্রুপ হলে ভালো।

* হাওরে বজ্রপাত হলে নৌকার ছৈয়ের নিচে অবস্থান করুন।

* খাবারের অতিরিক্ত অংশ/উচ্ছিষ্ট, প্যাকেট ইত্যাদি হাওরের পানিতে ফেলা থেকে বিরত থাকুন।

* উচ্চ শব্দ সৃষ্টিকারী মাইক বা যন্ত্র পরিহার করুন।

* রাতের বেলা অতিরিক্ত উজ্জ্বল আলো উৎপন্ন করবেন না।

* টাংগুয়ার মাছ, বন্যপ্রাণী কিংবা পাখি ধরা বা এদের জীবন হুমকির মধ্যে পড়ে এমন কাজ থেকে বিরিত থাকুন।

* টাংগুয়ার জলাবনের কোন রুপ ক্ষতিসাধন না করার ব্যপারে সতর্ক থাকুন।

রোজ গার্ডেন-Rose Garden Palace
চুনতি বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য-Chunti Wildlife Sanctuary
সুপ্তধারা ঝর্ণা-Suptadhara Jharna
সারাহ রিসোর্ট-Sarah Resort
ঢাকা থেকে বরিশাল বাস,লঞ্চ, গ্রীন লাইন ও বিমানের ভাড়া,সময়সূচি
জাফলং-Jaflong
হযরত শাহ পরাণ (রাঃ) এর মাজার
ঢাকা টু টাঙ্গাইল ট্রেনের সময়সূচী ২০২৩-Dhaka to Tangail train ২০২৪
যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচী ২০২৩-Schedule of Jamuna Express ২০২৪
মারায়ং তং ভ্রমণ গাইড ও ক্যাম্পিং - Marayang Tong Travel Guide & Camping