কক্সবাজার ভ্রমণের সঠিক সময় - Right time to travel to Cox's Bazar
travel to Cox's Bazar

কক্সবাজার ভ্রমণের সঠিক সময় কখন? - When is the right time to travel to Cox's Bazar?

বাংলাদেশের কয়েকটি দর্শনীয় স্থানের মধ্যে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত দেশ ও বিদেশী পর্যটকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয় স্থান। পৃথিবীর এই দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত যার টানে বাংলাদেশ সহ বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে সারা বছরই পর্যটকরা ছুটে আসে।

সমুদ্র দেখতে ইচ্ছে হলেই কোনোদিক চিন্তা না করে সবাই ছুটেন কক্সবাজারে। দেশের প্রধান পর্যটন গন্তব্য হলো কক্সবাজার। প্রতিবছর লাখ লাখ পর্যটক ভিড় করে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে। পাহাড়, সমুদ্র, ঝরনাসহ প্রাকৃতিক মনোরোম সৌন্দর্য উপভোগ করতেই পর্যটকরা ছুটেন কক্সবাজার পানে।

কক্সবাজার

কক্সবাজার বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি শহর, মৎস্য বন্দর এবং পর্যটন কেন্দ্র। এটি চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলার সদর দপ্তর। কক্সবাজার তার নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের জন্য বিখ্যাত। এখানে রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন প্রাকৃতিক বালুময় সমুদ্র সৈকত, যা ১২০ কি.মি. পর্যন্ত বিস্তৃত। এখানে রয়েছে বাংলাদেশের বৃহত্তম সামুদ্রিক মৎস্য বন্দর এবং সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন। একসময় কক্সবাজার প্যানোয়া নামেও পরিচিত ছিল যার আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে হলুদ ফুল। এর আরও একটি প্রাচীন নাম হচ্ছে পালঙ্কি।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের কক্সবাজারে অবস্থিত একটি সৈকত। ১৫০ কিলোমিটার (৯৩ মাইল) দীর্ঘ এই সৈকত পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত। তবে ব্রাজিলের ২১২ কিলোমিটার (১৩২ মাইল) দীর্ঘ কাসিনো সমুদ্র সৈকত বিশ্বের প্রথম এবং অস্ট্রেলিয়ার ১৫১ কিলোমিটার (৯৪ মাইল) দীর্ঘ নব্বই মাইল সমুদ্র সৈকত বর্তমানে পৃথিবীর দ্বিতীয় দীর্ঘতম সৈকত, যদিও অস্ট্রেলিয়ার সৈকতটির কিছু অংশ মনুষ্যসৃষ্ট। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ। প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক এই সৈকতে আসেন।

সৈকতের অংশগুলো

লাবনী পয়েন্ট

বাংলাদেশের সমুদ্র সৈকত বললে প্রথমেই চোখে ভেসে ওঠে পুরাতন সি-বিচ যা লাবণী পয়েন্ট বা পুরাতন সি-বিচ হিসেবেও পরিচিত। সমুদ্র দেখতে বাঙালি মাত্রই ছুটে যান কক্সবাজারের এই সি-বিচে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কক্সবাজারগামী বাসে করে কলাতলী সি-বিচ রোডে নেমে রিকশা অথবা পায়ে হাঁটা পথে যেতে পারবেন এই বিচে। কক্সবাজার শহর থেকে নৈকট্যের কারণে লাবণী বিচকে কক্সবাজারের প্রধান সমুদ্র সৈকত বলে বিবেচনা করা হয়। নানারকম জিনিসের পসরা সাজিয়ে সৈকত সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে ছোট বড় অনেক দোকান যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে। এছাড়া এখানে পর্যটকদের জন্য গড়ে উঠেছে ঝিনুক মার্কেট। সীমান্তপথে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, চীন প্রভৃতি দেশ থেকে আসা বাহারি জিনিসপত্র নিয়ে গড়ে উঠেছে এই মার্কেট গুলো।

কলাতলী পয়েন্ট

কলাতলী বিচ কক্সবাজারের আরেকটি পর্যটন আকর্ষণ কেন্দ্র। এটা কক্সবাজারের মধ্যে অবস্থিত। বিভিন্ন বয়সের বিভিন্ন মানুষ এখানে ভ্রমণ করতে আসেন, সমুদ্রে গোসল করতে আসেন, আসেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে। কলাতলী বিচে নানা ধরনের খাবারের রেস্টুরেন্টসহ আরো অনেক পর্যটন সুবিধা রয়েছে। বিশেষ করে চাঁদনি রাতে বিচে হাঁটা সত্যিই রোমঞ্চকর সকল বয়সী মানুষের জন্যই। কক্সবাজারগামী সকল যানবাহন শহরের কলাতলী পয়েন্ট দিয়ে শহরে প্রবেশ করে।

সুগন্ধা পয়েন্ট

কলাতলী পয়েন্ট থেকে দূরে উত্তর দিকে সুগন্ধা পয়েন্ট অবস্থিত। এখানে অবস্থিত জনপ্রিয় বার্মিজ মার্কেট। অতীতে এখানে অনেক সামুদ্রিক-মাছের তৈরি খাবারের রেস্টুরেন্ট ছিলো কিন্তু সরকার পরে সেগুলো উচ্ছেদ করে। সুগন্ধা পয়েন্টে রয়েছে আরেক আকর্ষণ ঝুলন্ত রেস্টুরেন্ট।

দরিয়ানগর সৈকত

হিমছড়ি জাতীয় পার্কের কাছে দরিয়ানগর সৈকত অবস্থিত। দরিয়ানগর সৈকতের মধ্য দিয়ে জলপথ প্রবাহিত হয়ে থাকে। প্যারাসেলিংয়ের জন্য দরিয়ানগর সৈকত জনপ্রিয়।[১২]

হিমছড়ি

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত হিমছড়ি পর্যটন কেন্দ্র। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে এ সমুদ্র সৈকতের নাম হিমছড়ি। এখানকার সমুদ্র সৈকতটি কক্সবাজারের চেয়ে অপেক্ষাকৃত নির্জন ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। এর সৌন্দর্যও কোনো অংশে কম নয়। সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো হিমছড়ি যত না সুন্দর তার চাইতে সুন্দর ও রোমাঞ্চকর হল কক্সবাজার থেকে এ সৈকতে যাওয়ার পথটি। একপাশে বিস্তৃর্ণ সমুদ্রের বালুকা বেলা আর এক পাশে সবুজ পাহাড়ের সাড়ি। মাঝে পিচ ঢালা মেরিন ড্র্রাইভ। এমন দৃশ্য সম্ভবত দেশের আর কোথাও পাওয়া যাবে না। কেউ কক্সবাজার এলো অথচ এই পথ ধরে ছুটলো না তার পুরো ভ্রমনই মাটি। পাহাড়ে উঠলে চোখের সামনে ভাসবে নীল দিগন্তে হারিয়ে যাওয়া বিশাল সমুদ্র। হিমছড়ির প্রধান আকর্ষণ এখানকার ক্রিসমাস ট্রি। সম্প্রতি হিমছড়িতে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু পর্যটন কেন্দ্র ও পিকনিক স্পট।

ইনানী সৈকত

ইনানী সমুদ্র সৈকত বঙ্গোপসাগরের একটি উপকূলভূমি যা বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে একটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়। কক্সবাজার জেলার পর্যটন সেক্টরে ইমারজিং টাইগার হচ্ছে ইনানী। বাংলাদেশের কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার দক্ষিণে ও হিমছড়ি থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ইনানী প্রবালগঠিত সমুদ্রসৈকত। পশ্চিমে সমুদ্র আর পূর্বে পাহাড়ের এক অপূর্ব জায়গাটি বাংলাদেশের অন্যতম একটি পর্যটন আকর্ষণ। মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে কক্সবাজার থেকে ইনানী যেতে হয়।

কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত দীর্ঘ একশো বিশ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকতের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ইনানী সৈকত।

সেন্টমার্টিন

চারপাশে সাগর আর আকাশের নীলের যেন আজন্ম মিতালী পেতেছে সেন্টমার্টিন দ্বীপে।আকাশ আর সাগর মিলেমিশে একাকার হওয়া এই স্থান হলো বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের ভূখণ্ড সেন্টমার্টিন। একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। কক্সবাজার থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরের ১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপ বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ।

কক্সবাজার ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই লীলাভূমিতে যেমন সাগর-পাহাড়ের মিতালী ঘটেছে, তেমনি সামাজিক-সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সহাবস্থানও দেখা যায় কক্সবাজারে। আমার মতে সমুদ্র দেখার নিদিষ্ট কোন সময় নেই, সবসময়ই সমুদ্র সৌন্দর্যের ঢালি মেলে ধরে। তারপরও যদি নিদিষ্ট সময় জানতে চাইলে শীতে কক্সবাজার বেড়ানোর সঠিক সময় এবং এপ্রিল মে ঝড় বৃষ্টির সময় এড়ানো যেতে পারে।

সাধারণত কক্সবাজার ভ্রমণের জন্যে সবাই শীতকালকেই বেছে নেয়। এ সময়টায় বৃষ্টি কম হওয়ায় এবং গরম কম থাকায় পর্যটকদের ভীড় বেশি থাকে। এই সময়টাকে পিক সিজন বলে থাকে। এছাড়া বর্ষাকালে ঢেউ অনেক বড় হয়। সিন্ট মার্টেনের জাহাজ সাধারণত অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চলে। সেন্ট মার্টিন জাহাজে যেতে চাইলে ওই সময় যাওয়া যায়। তাই এ সময়ে ভ্রমণের প্ল্যান করলে অবশ্যই আগে থেকে আপনার কাঙ্ক্ষিত হোটেলে বুকিং দিয়ে যাবেন।

কিভাবে কক্সবাজার যাবেন?

ঢাকা থেকে কক্সবাজার সড়ক-রেলপথ আকাশ পথে এছাড়াও এসি-নন এসি অসংখ্য বাস প্রতিদিন ঢাকা থেকে কক্সবাজার পথে চলাচল করে। কক্সবাজারগামি বাস সার্ভিস গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সৌদিয়া, এস আলম,হানিফএন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, গ্রীন লাইন, সোহাগ পরিবহন, আরো অসংখ্য লোকাল বাস সার্ভিস রয়েছে। ঢাকা থেকে কক্সবাজার এসি নন এসি বাস গুলোর ভাড়া ( নন এসি ৮০০ টাকা জনপ্রতি এবং এসি ২০০০ টাকা জনপ্রতি) 

রেল পথে ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার কোনো উপায় নাই। এক্ষেত্রে প্রথমে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ট্রেনে যেতে হবে পরে সেখান থেকে কক্সবাজার যাওয়ার জন্য অসংখ্য বাস রয়েছে। বিমানবন্দর অথবা কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার জন্য যে ট্রেনগুলো চলাচল করে সেগুলো হলো সুবর্ণা এক্সপ্রেস, তৃণা নিশিতা,সোনার বাংলা, মহানগর প্রভাতী ট্রেন উল্লেখযোগ্য।

বিমানে করে কক্সবাজার যেতে চান তাহলে নভোএয়ার, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস ঢাকা থেকে কক্সবাজার ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। বিমান ভাড়া সাধারনত (জনপ্রতি 5 হাজার থেকে 12 হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে) সময় অনুযায়ী কমবেশি হতে পারে। আমরা শুধু ধারণা দিলাম যাওয়ার আগে ভালো করে জেনে নিন।

কক্সবাজারের কোথায় থাকবেন?

বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজার। বিশ্বের সর্ববৃহৎ ও দর্শনীয় বিচ কক্সবাজারে রয়েছে আন্তর্জাতিকমানের বেশ কয়েকটি হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট। এছাড়া সরকারি ও ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপনায় গড়ে উঠেছে ছোট বড় বিভিন্ন মানের অনেক রিসোর্ট, হোটেল ও বোর্ডিং হাউস। এবার জেনে নিন কয়েকটি হোটেল-মোটেলের নাম ।

আরো পড়ুন: কক্সবাজারের সেরা ১০টি হোটেল

সর্বনিম্ন ২০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০,০০০ টাকায় কক্সবাজারে যাতযাপন করা যায়। হোটেল সিগালের ভাড়া ২,২০০-৭,০০০ টাকা। হোটেল শৈবালের ভাড়া ১,০০০-৩,০০০ টাকা। হোটেল লাবণীর ভাড়া ৬০০-৩,০০০ টাকা। উপলের ভাড়া ১০০০-১৫০০ টাকা। সি ক্রাউনের ভাড়া ২০০-৩,০০০ টাকা। জিয়া গেস্ট হল ৩০০-২,০০০ টাকা।

ভাড়া অন্যান্য হোটেল রেস্টহাউসের ভাড়া প্রায়ই নির্ধারিত। তবে কক্সবাজার ভ্রমণের পূর্বে ফোনে যোগাযোগ করে বুকিংমানিং পাঠিয়ে আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা ভালো। সরাসরি গিয়েও কথা বলে রুম ভাড়া নেওয়া যায়।

বাংলাদেশের সেরা ১০ দর্শনীয় স্থান
বাংলাদেশের সেরা পর্যটনকেন্দ্র-The best tourist destination in Bangladesh
পারকি সমুদ্র সৈকত-Parky Beach
ছুটি রিসোর্ট-CHUTI Resort