পুঠিয়া রাজবাড়ী-Puthia Rajbari
Puthia Rajbari

পুঠিয়া রাজবাড়ী, রাজশাহী-Puthia Rajbari,Rajshahi

পুঠিয়া রাজশাহী জেলার একটি উপজেলা। পুঠিয়া জমিদারি সতেরো শতকের প্রথমদিকে মুগলদের সৃষ্ট বাংলার প্রাচীনতম জমিদারিগুলির অন্যতম। এরূপ জনশ্রুতি আছে যে, মুগল সম্রাট জাহাঙ্গীর এর (১৬০৫-১৬২৭) নিকট থেকে নীলাম্বর ‘রাজা’ উপাধি লাভ করেন। ১৭৪৪ সালে জমিদারি স্বত্ব ভাগাভাগি হলে জ্যেষ্ঠ শরিক সাড়ে পাঁচ আনা এবং অপরাপর ৩ শরিকের প্রত্যেকে সাড়ে তিন আনা অংশের মালিক হন। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের পূর্ব পাকিস্তান এস্টেট অ্যাকুইজিশন অ্যাক্টের অধীনে জমিদারি বিলুপ্তির পূর্ব পর্যন্ত পুঠিয়ার জমিদারি অক্ষুণ্ণ ছিল।

পুঠিয়া রাজবাড়ি, রাজশাহী

রাজশাহী শহর হতে ত্রিশ কিলোমিটার পূর্বে এবং রাজশাহী-নাটোর মহসড়ক হতে মাত্র এক কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত পুঠিয়া রাজবাড়ি (Puthia Rajbari)। পুঠিয়া রাজবাড়ি বাংলাদেশে বিদ্যমান অন্যান্য রাজবাড়িগুলোর চেয়ে মোটামুটি সুরক্ষিত এবং নজরকাড়া স্থাপত্যে সজ্জিত।

পুঠিয়া বাজারে দক্ষিণ পার্শ্বে দ্বিতল বিশিষ্ট আয়তাকার পরিকল্পনায় নির্মিত পুঠিয়া রাজবাড়িটি একটি আকর্ষণীয় ইমারত। বহুকক্ষ বিশিষ্ট রাজবাড়ীর প্রধান প্রবেশপথ সিংহ দরজা উত্তরদিকে অবস্থিত। জমিদার বা রাজারা এখান থেকে তাদের রাজ কর্ম পরিচালনা করতেন। এ রাজবাড়ীতে দোষী ব্যক্তিদের শাসিত দানের ব্যবস্থাসহ বন্দীশালার ব্যবস্থা ছিল। চুন সুড়কীর মসলনা ও ছোট আকৃতির ইট দ্বারা নির্মিত বাজবাড়ীর সম্মুখভাগে আকর্ষণীয় ইন্দো-ইউরোপীয় স্থাপত্য রীতির প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। রাজবাড়ির নিরাপত্তার জন্য চারপার্শ্বে জলাশয়ের ব্যবস্থা ছিল। স্থানীয় জমিদার পরিবারের সদস্যদের দ্বারা উনবিংশ শতাব্দীতে এটি নির্মিত হয়েছিল। রাজবাড়ির প্রত্নতত্তণ অধিদপ্তরের নিয়মত্রণাধীন পুরাকীর্তির হলেও বর্তমানে এটি লস্করপুর ডিগ্রী কলেজ (Loshkorpur Degree College) হিসেবে ব্যবহ্নত হচ্ছে।

পুঠিয়া রাজবাড়ির চারিদিক পরিখা দ্বারা পরিবেষ্টিত। বর্তমানে পরিখাগুলো বিভিন্ন নামে পরিচিত যথা- শিব সরোবর বা শিবসাগর, গোপালচৌকি, বেকিচৌকি, গোবিন্দ সরোবর ও মরাচৌকি। এছাড়া রাজবাড়ি এলাকার মধ্যস্থলে রয়েছে শ্যামসাগর নামে একটি বিশাল পুকুর। পরিখা বেষ্টিত এই রাজবাড়ির মোট স্থলভাগের পরিমাণ ২৫.৯৩ একর (কেন্দ্রস্থলের ৬.০০ একর বিশিষ্ট শ্যামসাগর ব্যতীত)। পুঠিয়া রাজবাড়ি ও তার আশেপাশে এখানকার জমিদারদের নির্মিত বেশ ক‘টি নয়নাভিরাম মন্দির এখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। শরীক বিভক্তির পর পাঁচ আনি ও চার আনি রাজপ্রাসাদ আলাদাভাবে নির্মিত হয়। এই দুটি প্রাসাদ ছাড়া অন্যান্য শরীকের ঘরবাড়ির কোন চিহ্ন বর্তমানে আর খুঁজে পাওয়া যায় না।

পুঠিয়া রাজবাড়ি ও তার পার্শ্ববর্তী মৌজায় মোট চৌদ্দটি মন্দির এখনো পূর্ণঅবয়বে বিদ্যমান। মন্দিরগুলোর মধ্যে দুটি পঞ্চরত্ন, একটি দোচালা, একটি মিশ্ররীতির ত্রি-মনিদর, একটি অষ্টকোণা একরত্ন, দুটি সমতলছাদ বিশিষ্ট এবং বাকীগুলো পিরামিড আদলের চৌচালা ছাদ সংবলিত। মন্দিরগুলো নির্মাণে ইট ও চুন-সুরকি ব্যবহৃত হয়েছে। অলঙ্করণ হিসেবে অধিকাংশ মন্দিরেই হিন্দু ধর্মীয় ও তদানীন্তন সামাজিক বিষয়বস্তু অবলম্বনে উৎকীর্ণ পোড়ামাটির ফলক শিল্পের ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়।

বড় আহ্নিক মন্দির

পুঠিয়া রাজবাড়ী লেকের প্রায় ১০০ মিটার পশ্চিমে জমিদার বাড়ীর বৃহৎ দিঘীর পশ্চিম পার্শ্বে পাশাপাশি তিনটি মন্দির আছে। এগুলোর মধ্যে দক্ষিণ দিকে অবস্থিত মন্দিরটি চারআনী বড় আহ্নিক নামে পরিচিত। উত্তর দক্ষিণে লম্বা আয়তকার পরিকল্পনায় নির্মিত তিন কক্ষ বিশিষ্ট মন্দিরের প্রবেশ পথ পূর্বদিকে অবস্থিত। এই মন্দিরের মাঝের কক্ষটির ছাদ দোচালা পদ্ধতিতে নির্মিত। দু’পাশের কক্ষ দু’টি বর্গাকার এবং চার চালা ছাদ দ্বারা আচ্ছাদিত। মন্দিরের পূর্বপার্শ্বে সম্মুখ দেওয়াল বিভিন্ন ধরণের পোড়ামাটির ফলক চিত্র দ্বারা সজ্জিত। স্থাপিত বিন্যাস অনুযায়ী মন্দিরটি খ্রিষ্টীয় ১৭/১৮ শতকে নির্মিত বলে অনুমিত হয়।

পুঠিয়া বড় শিব মন্দির

পুঠিয়া বাজারে প্রবেশ করতেই হাতের বাম পার্শ্বে দিঘীর দক্ষিণ পাড়ে বড় শিব মন্দির অবস্থিত। ৪ মিটার উঁচু মঞ্চের উপর নির্মিত মন্দিরের প্রধান প্রবেশ পথ দক্ষিণ দিকে অবস্থিত। মন্দিরে উঠার জন্য দক্ষিণ দিকে সিড়ি আছে। মন্দিরের উপর চার কোণে চারটি কেন্দ্রস্থলে একটি চুড়া বা রত্ন আছে। কেন্দ্রীয় চূড়াটি প্রায় বিশ মিটার উঁচু। চতুষ্কোণাকৃতির কাঠামোর উপরে পিরামিড আকৃতির চূড়াগুলো নির্মিত হয়েছে। এগুলোর চার পার্শ্বে সন্নিবেশিত রয়েছে বিভিন্ন সতরে মোচার আকারে নির্মিত অসংখ্য ছোট ছোট চূড়া মন্দিরের দেয়ালের বর্হিমূখে হিন্দু দেব-দেবীর ষ্ট্যাকূ অলংকরণ ছিল। যা বর্তমানে প্রায় ধংসপ্রাপ্ত মন্দিরের কেন্দ্রীয় অংশে ৩.০০ মিটার বর্গাকার কক্ষ এবং এক-চার কোণে চারটি কক্ষ। কোণের চারটি কক্ষের মধ্যবর্তী স্থানে বারান্দা সন্নিবেশিত রয়েছে। মন্দিরের কেন্দ্রীয় কক্ষে বৃহৎ আকারের শিবলিঙ্গ ও গৌরী পট্র রয়েছে। যাতে পূজারীরা এখনও পূজা অর্চণা করে থাকে। পুঠিয়ায় অবস্থিত মন্দিরগুলোর মধ্যে এটি একটি উল্লেখযোগ্য কীর্তি। ১৮২৩ খ্রিঃ পাঁচআনী জমিদার বাড়ীর রাণীভূবনময়ী দেবী এ মন্দির নির্মাণ করেন। এ মন্দির ভূবনেশ্বর মন্দির বলা হয়ে থাকে।

পুঠিয়া দোল মন্দির

পুঠিয়া রাজবাড়ীর সম্মুখস্থল মাঠের উভয় পার্শ্বে বর্গাকার পরিকল্পনায় নির্মিত চারতলা বিশিষ্ট মন্দিরে প্রত্যেক বাহুর পরিমাপ ২১.৫৪ মিটার। ইষ্ট চুন ও সুড়কীর তৈরী দোল মঞ্চ মন্দিরটি ক্রমশঃ ছোট থাকে থাকে উপরে উঠে গেছে। চতুর্থ তলের উপরে আছে মন্দিরের গমবুজ আকৃতির চূড়া। চূড়ার শীর্ষদেশে ফিনিয়েল দ্বারা শোভিত। প্রত্যেক তলের চারদিকে প্রশসত টানা বারান্দা আছে। নীচতলায় প্রত্যেক বাহুতে সাতটি করে দ্বিতলের পাঁচটি, ত্রিতলের তিনটি এবং চতুর্থ তলের প্রত্যেক বাহুতে একটি করে প্রবেশ পথ আছে। পার্শ্ববর্তী সমতল ভূমি থেকে এ মন্দিরের উচ্চতা ২০ মিটার। মন্দিরটি উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দশকে পুঠিয়ার পাঁচআনী জমিদার বাড়ীর হেমন্ত কুমারী দেবী কর্তৃক নির্মিত।

পুঠিয়া গোবিন্দ মন্দির

পুঠিয়া পাঁচআনী জমিদার বাড়ীর অঙ্গনে অবস্থিত গোবিন্দ মন্দির। গোবিন্দ মন্দির একটি গুরুত্বপূর্ণ পুরাকীর্তি। উঁচু বেদীর উপর প্রতিষ্ঠিত মন্দিরটি বর্গাকার পরিকল্পনায় নির্মিত। মন্দির গাত্রে অসংখ্য পোড়ামাটির ফলক চিত্র আছে। রামায়ন, মহাভারত ও পৌরাণিক কাহিনীর রুপায়ন ছাড়াও ফলক চিত্রের মাধ্যমে প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের ছবিও তুলে ধরা হয়েছে। এই মন্দিরটি ১৮ শতকে নির্মিত বলে ধারণা করা হয় ।

সময়সূচী: পুঠিয়া রাজবাড়ি প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

কিভাবে যাবেন পুঠিয়া রাজবাড়ী

ঢাকা থেকে রাজশাহী

রাজধানী ঢাকা শহর থেকে সড়ক, রেল এবং আকাশ পথে রাজশাহী যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। ঢাকার মহাকালী, আব্দুল্লাহপুর, গাবতলী ও কল্যাণপুর থেকে গ্রীন লাইন, একতা এবং দেশ ট্রাভেলসের এসি বাস ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা ভাড়ায় রাজশাহীর উদ্দেশ্যে যাতায়াত করে। আর শ্যমলি, হানিফ, ন্যাশনাল ট্রাভেলস, বাবলু এন্টারপ্রাইজ প্রভৃতি নন-এসি বাস ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকা ভাড়ায় চলাচল করে।

ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশান থেকে রবিবার ব্যতীত সপ্তাহের ৬ দিন দুপুর ২ টা ৪৫ মিনিটে সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেন রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এছাড়া পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেন মঙ্গলবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ১১ টায়, ধুমকেতু এক্সপ্রেস বৃহস্পতিবার ব্যতীত সকাল ৬ টায় ও বনলতা এক্সপ্রেস শুক্রবার ব্যতীত দুপুর ১ টা ৩০ মিনিট এ রাজশাহীর জন্য ঢাকা ত্যাগ করে। এসব ট্রেনে শ্রেনীভেদে ভাড়া শোভন চেয়ার ৩৪০-৩৭৫, স্নিগ্ধা ৬৫৬-৭২৫, এসি সিট ৭৮২-৮৬৫ এবং এসি বার্থ ১২২৩ টাকা।

আকাশ পথে রাজশাহীতে যেতে চাইলে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স ও নভোএয়ার এর বিমানে ৩৫০০ থেকে ৪০৯৯ টাকায় ভ্রমণ করতে পারবেন।

রাজশাহী থেকে পুঠিয়া রাজবাড়ী

রাজশাহী এবং নাটোর থেকে সড়ক পথে পুঠিয়া রাজবাড়ীর দূরত্ব যথাক্রমে ৩৪ ও ১৮ কিলোমিটার। রাজশাহীগামী যেকোনো বাসে চড়ে রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কে পুঠিয়া বাসস্ট্যান্ড নেমে ৫ থেকে ১০ মিনিট পায়ে হেটে রাজবাড়ি যাওয়া যায়। রাজশাহী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে নাটোরগামী বাসে করে এবং সরাসরি পুঠিয়া যাবার লোকাল বাসে করেও পুঠিয়া যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

কোথায় থাকবেন

পুঠিয়াতে রাত্রি যাপনের জন্য জেলা পরিষদের ২ টি ডাকবাংলো রয়েছে। জেলা পরিষদের অনুমতি এবং নির্ধারিত ভাড়া পরিশোধ করে বাংলোগুলিতে রাতে থাকা যায়। জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার ফোন নাম্বার: 0721-776348।

এছাড়া পুঠিয়া বাসস্ট্যান্ডের কাছে আবাসিক হোটেলে রাত্রি যাপনের সুযোগ আছে।কিংবা রাজশাহীতে ফিরে এসে রাজশাহীর বিভিন্ন মানের হোটেল থেকে আপনার জন্য উপযোগী হোটেলে রাত্রি যাপন করতে পারেন। রাজশাহী শহরে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মোটেলে ১৯০০ থেকে ৪৬০০ টাকায় বিভিন্ন মানের রুম পাবেন।

অন্যান্য আবাসিক হোটেলের মধ্যে হোটেল হক্স ইন (0721-810420), নাইস ইন্টারন্যাশনাল (0721-776188), মুক্তা ইন্টারন্যাশনাল (0721-771100), ডালাস ইন্টারন্যাশনাল (0721-811470), শুকরান (0721-771817) ইত্যাদি হোটেলে ৫০০ থেকে ৩০০০ টাকায় রুম পাবেন।

রাজশাহী জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ-Sightseeing places of Rajshahi district
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়-University of Chittagong
কম খরচে কক্সবাজার ভ্রমণ-Cox's Bazar travel at low cost
বাঁশখালী ইকোপার্ক-Banshkhali Ecopark
সাফিনা পার্ক-Safina Park
সিআরবি হিল-CRB Hill
বাড়ৈয়াঢালা জাতীয় উদ্যান-Baraiadhala National Park
বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থানসমূহ-Places of interest in Bangladesh
মারায়ং তং ভ্রমণ গাইড ও ক্যাম্পিং - Marayang Tong Travel Guide & Camping
সীতাকুণ্ড জাহাজ ভাঙ্গা এলাকা-Sitakunda shipwreck area