বাংলাদেশ ডাক জাদুঘর-bangladesh Postal Museum
ঢাকা জেনারেল ডাকঘরে (জিপিও) অবস্থিত এটি। ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এ জাদুঘরে নানা সময়ে ডাক বিভাগের ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি স্থান পেয়েছে। জিপিওর ভেতরে ডাক ভবনে ডাক অধিদপ্তরের তৃতীয়তলার পশ্চিম পাশে এ জাদুঘরের অবস্থান। বায়তুল মোকাররম গহনা মার্কেটের দিক দিয়ে ডাক ভবনে ঢুকলেই পাওয়া যাবে এর দেখা।
দুটি কক্ষে ২১৬০ বর্গফুট জায়গায় সাজানো হয়েছে জাদুঘর। প্রথমে ছোট্ট একটি কক্ষ ডাকটিকিট দিয়ে সাজানো। এখানকার ডাকটিকিটগুলো ইউনিভার্সাল পোস্টাল ইউনিয়নভুক্ত ১৯১টি দেশ থেকে সংগৃহীত। পাশেই বিশাল একটি কক্ষজুড়ে আছে মূল পোস্টাল মিউজিয়াম। কক্ষে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে ডাক বিভাগের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত প্রচরিত নানা রকম অনুষঙ্গ। কাচের বাক্সে সাজানো আছে রানার বা পোস্টম্যানের একটি অবয়ব। কাঁধে ব্যাগ, হাতে লণ্ঠন আর ঘুঙুরযুক্ত বর্শা হাতে এগিয়ে যাচ্ছে সামনে। পাশেই লেখা সুকান্তের সেই কবিতা 'রানার'। পাশে সাজানো আছে একটি পোস্ট অফিসের মডেল। অফিসের কোন স্থানে কিভাবে কাজ হয় তা দেখানো হয়েছে কয়েকটি মডেলে।
ডাক বিভাগের সঙ্গে জড়িত দেশ-বিদেশের অনেক ব্যক্তির ছবি টাঙানো আছে দেয়ালে। মধ্যখানে বিশাল জায়গাজুড়ে আছে বিভিন্ন সময়ে ব্যবহৃত সিলমোহর ও প্রকাশনা। এক পাশে সাজানো আছে নানা আকৃতির ডাকবাক্স। সেসব বাক্সের গঠনও নানা রকমের। রানি ভিক্টোরিয়ার সময়কার ডাকবাক্সের মাথায় আছে রাজমুকুটের প্রতিরূপ।
১৮৯০ সালের ৯ মণ ওজনের একটি ডাকবাক্স সংরক্ষিত আছে এখানে। আরো আছে নানা দেশের নানা গড়নের ডাকবাক্স। বার্মিংহামের তৈরি সাত মণ পণ্য ওজন করা যায় এমন একটি স্কেল আছে এই জাদুঘরে। নানা আকৃতির পার্সেল ওজন দেওয়ার স্কেল আছে ১০টিরও বেশি। আছে ওজন মাপার পুরনো বাটখারা। জ্বরের ওষুধ কুইনাইন বিক্রি হতো ডাক বিভাগের মাধ্যমে। তারই একটি বিজ্ঞাপন সংরক্ষিত আছে এখানে। বিশাল গ্যালারিজুড়ে সাজানো আছে রানার বা পোস্টম্যানদের ব্যবহৃত ব্যাগ, মানিকট ব্যাগ, চামড়ার ব্যাগ, ব্যাগ কাটার ছুরি, তালা, নানা আকৃতির তালার চাবিসহ অনেক কিছুই। আরো আছে পাঞ্চিং করার পুরনো মেশিন ও পোস্টম্যানদের ব্যবহৃত ঘড়ি।
পূর্ব গ্যালারির নিচে সাজানো আছে সরকার প্রধান ও বিশেষ ব্যক্তিদের উদ্বোধন করা খামসহ ডাকটিকিট। প্রতিটি খামেই আছে প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপ্রধানের স্বাক্ষর। দেয়ালে সাজানো আছে ১৯৭০ সালের রানারদের ব্যবহৃত বর্শার ফলা লাগানো লাঠি। এই ঘুঙুর লাগানো বর্শা নিয়ে হাঁটলেই ঝুমঝুম শব্দ হতো। যে শব্দ শুনেই লোকে বুঝে ফেলতো, রানার আসছে খবরের বোঝা কাঁধে। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে রানারদের সঙ্গে নিরাপত্তার জন্য তলোয়ারও থাকতো। তেমন কয়েকটি তলোয়ারও সাজানো আছে এখানে। আরো আছে পোস্টম্যানের ব্যবহৃত বিউগল ও বন্দুক। ব্রিটিশ আমলের একটি বিচিত্র হারিকেনও দেখতে পাবেন। পোস্টম্যানের মাথার ধাতব টুপি, বাতি, চামড়ার ব্যাগসহ নানা রকম ব্যাজ_সবই আছে সযত্নে। শুরু থেকে আজ পর্যন্ত ডাক বিভাগের সব তথ্যই আছে এখানে। জাদুঘরে পাওয়া যাবে বিশ্বের বিভিন্ন সময়কার ডাক বিভাগের নানা তথ্য। চালনায় জাহাজের ভেতরেই ছিল পোস্ট অফিস। জাহাজের সেই মোবাইল পোস্ট অফিসের একটি মডেল রাখা হয়েছে পোস্টাল মিউজিয়ামে।
সময়সূচী: সপ্তাহে ৫ দিন (রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। জাদুঘরে প্রবেশ করতে কোন প্রবেশ মূল্য দিতে হবে না।
কীভাবে যাবেন : ঢাকা জিপিও-সংলগ্ন ডাক ভবনের তিন তলায় ডাক অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখার পাশেই এ জাদুঘরটি।