হাইল হাওর ভ্রমণ গাইড - Hail Haor Travel Guide
Hail Haor

হাইল হাওর ভ্রমণ গাইড - Hail Haor Travel Guide

পর্যটকরা এখানে আসেন স্নিগ্ধ শান্ত জলরাশির মধ্যে সূর্যাস্ত দেখার জন্য। শরতের পড়ন্ত বিকেলে রক্তিম সূর্যের আলোয় লালচে আকাশ। রাখালরা গরু নিয়ে বাড়ি ফিরছে। জেলেরা তীরে নৌকা ভিড়াচ্ছে। একদল জেলে নৌকার বৈঠা কাঁধে একপ্রান্তে জাল আর অন্য প্রান্তে মাছের ঝুড়ি বেঁধে গ্রামের বাজারের দিকে হেঁটে যাচ্ছে। পাখির দল এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে চলছে। দেশি-বিদেশি পাখির কিচিরমিচিরে মুখরিত চারপাশ।

আর কিছুক্ষণ পরই ডুবে যাবে লাল সূর্য। ঘনিয়ে আসবে সন্ধ্যা। বলছিলাম মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরের কথা। হাইল হাওর সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার সদর ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা এবং হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলা জুড়ে বিস্তৃত।

এতে রয়েছে ১৪টি বিল এবং পানি নিষ্কাশনের ১৩টি নালা। এই হাওরটির মোট আয়তন ১০ হাজার হেক্টর, যার ৪ হাজার হেক্টর প্লাবন ভূমি, ৪ হাজার ৫১৭ হেক্টর হাওর, ১ হাজার ৪০০ হেক্টর বিল, ৪০ হেক্টর খাল এবং ৫০ হেক্টর নদী।

শ্রীমঙ্গলের ঐতিহ্যবাহী এই হাইল হাওর প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য ও জীবন-জীবিকার বিবেচনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি। শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪টি ইউনিয়ন যথা- কালাপুর, শ্রীমঙ্গল, ভূনবীর ও মির্জাপুর নিয়ে বিস্তৃতি এ হাওরের।

পর্যটক কিংবা ভ্রমণপিপাসুদের কাছে বরাবরই প্রিয় মৌলভীবাজার। কিন্তু এখানে যে চমৎকার একটি হাওর আছে, এটা খুব কম পর্যটকই জানেন। এ হাওরটি লতাপাতার হাওর নামেই পরিচিত। কারণ এখানে প্রচুর লতা এবং গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ রয়েছে।

হাইল হাওরের আসল সৌন্দর্য হল এখানকার পাখি। বহুদিন ধরেই এখানে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির আনাগোনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বারো মাসই হাইল হাওর মুখরিত থাকে পাখিদের কলতানে। আর এই কলতান বছরের যেকোনো সময়কে ছাড়িয়ে যায় শীতকালে। এ সময় স্থানীয় পাখির পাশাপাশি অসংখ্য প্রজাতির পাখি এসে ভিড় জমায় এখানে।

হাওরের একটা অংশে বেশ কিছু ছন জাতীয় গাছ রয়েছে। এসব গাছের আড়ালে পাখিরা ডিম পাড়ে। যারা এখানে বেড়াতে যান তারা নির্দিষ্ট একটা দূরত্ব থেকে পাখি কিংবা পাখির বাসা দেখতে পারেন।

বর্ষা মৌসুমে হাইল হাওরের সুনীল জলরাশি চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। শুধু পানি আর পানি। হাইল হাওরের পানির প্রধান উৎস গোপলা নদী। উজানে বিলাসছড়া থেকে উৎপত্তি লাভ করে হাইল হাওরকে দ্বিখণ্ডিত করে গোপলা নদী ভাটিতে বিজনা নদীর মাধ্যমে মেঘনার সাথে মিলিত হয়েছে। হাইল হাওরে গেলে আপনি এর অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।

ভ্রমণপিপাসুদের জন্য নৌকা ভ্রমণের উৎকৃষ্ট স্থান হল এই হাওর। ভোরে ঘুমন্ত হাইল হাওর যেন জেগে উঠে। হাওরের চারপাশে হাজার হাজার মৎস্যজীবীর মাছ আহরণের দৃশ্য অত্যন্ত মোহনীয়। বিকেলের হাইল হাওর থাকে যেন পাখিদের দখলে। সন্ধ্যায় হাইল হাওরে ভ্রমণ করলে মনে হবে সারা রাত কাটিয়ে দেই পাখিদের এ রাজ্যে।

অবস্থান ও আয়তন

হাইল হাওর সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার সদর ও শ্রীমঙ্গল এবং হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলা জুড়ে বিস্তৃত। এতে রয়েছে ১৪ টি বিল এবং পানি নিস্কাশনের ১৩ টি নালা।[২] এই হাওরটির মোট আয়তন ১০ হাজার হেক্টর; যার ৪ হাজার হেক্টর প্লাবন ভূমি, ৪ হাজার ৫১৭ হেক্টর হাওর, ১ হাজার ৪০০ হেক্টর বিল, ৪০ হেক্টর খাল এবং ৫০ হেক্টর নদী।

যেভাবে যেতে হবে:

শ্রীমঙ্গল-মৌলভীবাজার সড়ক ধরে কালাপুর বাজার থেকে একটু সামনে এগুলেই বরুনা-হাজীপুর পাকা রাস্তার দেখা মিলবে। এ রাস্তায় প্রবেশ করে যেতে হবে হাজীপুর বাজারে। স্থানীয়দের কাছে এ বাজারটি ঘাটেরবাজার নামে পরিচিত। সেখান থেকে মোটর সাইকেলে বা পায়ে হেটে প্রায় ৩/৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হাইল হাওর। হাজীপুর বাজারে বেশ ক’জন গাইড রয়েছে। আপনি চাইলে গাইডের সাহায্যও নিতে পারেন। গাইড আপনাকে পুরো হাওর ও বাইক্কা বিল দেখতে সাহায্য করবে।

কোথায় থাকবেন:

হাওর এলাকায় বিল ইজারাদারদের দোচালা কুটিরগুলোয় দু‘চারজন পর্যটক থাকার জন্য চমৎকার। তবে অবশ্যই বিল মালিকের অনুমতি নেয়া আবশ্যক। সবচেয়ে ভালো হয় বিল এলাকায় তাঁবু ফেলে রাত্রি যাপন। জোছনা রাতে তাঁবুতে যাপন, পাখি পর্যবেক্ষণ যে কোনও অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় পর্যটককে বিমোহিত করবে।

তাছাড়া শ্রীমঙ্গল যেহেতু খুব বেশি দূরে নয়, তাই শ্রীমঙ্গল ভাল কোন হোটেলে রাত্রিযাপন করেও হাইল হাওর পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। তবে সত্যিকার অ্যাডভেঞ্চার চাইলে হাওরের পাশের কুটির কিংবা টাবুতে থাকা উত্তম।

ভ্রমণের উপযুক্ত সময়:

সাধারণত বর্ষাকাল হাওরাঞ্চল ভ্রমণের সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। তবে যদি নানা প্রজাতির হাজারো পাখির কলকাকলিতে মুখর হতে চান তাহলে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে হাইল হাওর ভ্রমণ করতে পারেন।

খাওয়া দাওয়া:

সঙ্গে আনা চাল-জলের রেশন হাওর এলাকার শ্রমজীবী মানুষকে সামান্য কিছু টাকা দিলে পছন্দ মতো টাটকা মাছের ঝোলের তরকারি দিয়ে তা পরিবেশন করবে অথবা ওদের সঙ্গেও সুস্বাদু খাবার শেয়ার করা যাবে অনায়াসে। এখানকার বাথানে গরু-মহিষের দুধও খুব সস্তায় পাওয়া যায়। সঙ্গে হালকা চা, নাশতা, বিস্কুট, পাউরুটি নিলে খুব ভালো হয়।