ধরন্তি হাওর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া - dhoronti haor, Brahmanbaria
বৈশাখ থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত হাওর থাকে পানিতে টইটম্বুর। এসময় হাওর ও বিলের সৌন্দর্য বেড়ে যায় দ্বিগুণ। তাই এখনই উপযুক্ত সময় এমন স্থান ভ্রমণের। যারা হাওর ও বিলে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন তাদের জন্য অন্যতম এক দর্শনীয় স্থান হতে পারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ধরন্তি হাওর।এই হাওরের পশ্চিমে মেঘনা আর পূর্বে তিতাস নদী। মাঝখানে বিশাল জলাভূমি নিয়ে অবস্থিত ধরন্তি হাওর। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ধরন্তি পূর্ণযৌবনা হয়ে ওঠে। বৈশাখ থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত হাওর থাকে পানিতে পূর্ণ।
এ হাওরের মাঝখান দিয়েই চলে গেছে সরাইল-নাসিরনগরের সড়ক। দুই ধারে অথৈ পানি আর মাঝখানে পিচঢালা সড়ক। ধরন্তি হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে সবাই এই সড়কেই ভিড় জমায়। বিশেষ করে পড়ন্ত বিকেলে ধরন্তির মাঝখান দিয়ে চলা সড়কপথটি যেন ব্যস্ত হয়ে ওঠে দর্শনার্থীদের আনাগোনায়।
সরাইল-নাসিরনগর সড়কটি কয়েক মাইল দীর্ঘ। এই সড়কপথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে অনেকেই হাওরের খোলা হাওয়া গায়ে লাগান। এছাড়াও মোটর সাইকেলে চড়ে হাওরের দুই ধারের সৌন্দর্য উপভোগ করাটাও বেশ রোমাঞ্চকর। ধরন্তির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে কেউ কেউ একে মিনি কক্সবাজারও বলে থাকেন। এসময় শত শত ভ্রমণপিপাসুরা দৈনিক হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ধরন্তির বুকে ঘুরে বেড়ান। বিভিন্ন উৎসব ঘিরে মানুষের ভিড় উপচে পড়ে।
ধরন্তি হাওর মূলত একটি পিকনিক স্পট। চাইলে ছুটির দিন আপনিও পরিবার বা বন্ধুদের নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন ধরন্তি হাওরে। ঢাকা থেকে মাত্র ৩ ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত ধরন্তি হাওর। চাইলে একদিনেই ঘুরে আসতে পারেন ধরন্তি হাওর থেকে। এর বুকে নৌকা নিয়েও ঘুরতে পারবেন। সড়কের পাশেই নৌকা ভাড়া পাওয়া যায়। নৌকা ভ্রমণের খরচও বেশ কম।
ধরন্তি হাওরে ঘুরতে গেলে এর আশেপাশের বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান থেকেও ঢুঁ মেরে আসতে পারেন। সেখানকার কালভৈরব মন্দিরটির অবস্থান মেড্ডা এলাকায়।
মন্দিরটির প্রধান আকর্ষণই হচ্ছে ২৮ ফুট উঁচু কালভৈরব বা শিব মূর্তি। বিশাল আকৃতির এই মূর্তিটি ১৯০৫ সালে তৈরি করা হয়। হাওর থেকে ২০ টাকা নৌকা ভাড়ায় যেতে পারবেন তিতাস নদী পাড়ের কালভৈরব মন্দিরে।
রাজা কৃষ্ণ প্রসাদ রায় চৌধুরীর রাজবাড়িটিও এর পাশেই অবস্থিত। যেখানে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের শেষ চলচ্চিত্র ‘ঘেটুপুত্র কমলা’র দৃশ্যধারণ করা হয়েছিল। স্থানীয়ভাবে এটি বড় বাড়ি নামে পরিচিত।
কীভাবে যাবেন ধরন্তি হাওরে?
ঢাকার যাত্রাবাড়ি বা সায়েদাবাদ থেকে বাসে উঠে নামবেন সরাইল বিশ্বরোড। সেখান থেকে ৪০-৬০ টাকার মধ্যেই ধরন্তিতে পৌঁছে যাবেন। চাইলে ঢাকা থেকে ট্রেনে করেও ১৫০ টাকা ভাড়ার মধ্যেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া যেতে পারবেন।
সরাইল বিশ্বরোড থেকে যদি আগে কালভৈরব মন্দির ঘুরতে চান তাহলে অটোরিকশা ভাড়া পড়বে ১০ টাকা। আর রাজা কৃষ্ণ প্রসাদ রায় চৌধুরীর রাজবাড়ি ঘুরতে বিশ্বরোড থেকে বাসে করে ৩০ টাকায় মাধবপুর যেতে হবে। তারপর ২৫-৩০ টাকা ভাড়ায় সিএনজিতে করে যেতে হবে রাজবাড়িতে।
খাবেন কোথায়
এখানে ভালো মানের খাবারের কোন হোটেল নেই। তাই এই পর্যটন স্পটটিতে ঘুরতে আসার আগে অবশ্যই হালকা খাবার সাথে করে নিয়ে আসবেন। কারন, এখানে আপনি চাইলে মনমত খাবার পাবেন না।
থাকবেন কোথায়
যেহেতু দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে এসে দিনে দিনেই ঘুরাঘুরি করা যায় সেহেতু থাকার প্রয়োজনীয়তা নেই বললেই চলে। তারপরও যদি থাকার প্রয়োজন হয় তাহলে ব্রাহ্মনবাড়িয়া শহরে চলে যেতে হবে। সেখানে দেখে শুনে ভালো কোন হোটেলে ওঠতে হবে।