সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান-Satchhari National Park
Satchhari National Park

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান-Satchhari National Park

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের একটি প্রাকৃতিক উদ্যান। ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ/সংশোধন আইনের বলে ২৪৩ হেক্টর এলাকা নিয়ে ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে "সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান" প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই উদ্যানে সাতটি পাহাড়ি ছড়া আছে, সেই থেকে এর নামকরণ সাতছড়ি (অর্থ: সাতটি ছড়াবিশিষ্ট)। সাতছড়ির আগের নাম ছিলো "রঘুনন্দন হিল রিজার্ভ ফরেস্ট"।

অবস্থান

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার পাইকপাড়া ইউনিয়নের রঘুনন্দন পাহাড়ে অবস্থিত। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক পথে এর দূরত্ব ১৩০ কিলোমিটার। উদ্যানের কাছাকাছি ৯টি চা বাগান আছে। উদ্যানের পশ্চিম দিকে সাতছড়ি চা বাগান এবং পূর্ব দিকে চাকলাপুঞ্জি চা বাগান অবস্থিত। উদ্যানের অভ্যন্তরভাগে টিপরা পাড়ায় একটি পাহাড়ী উপজাতির ২৪টি পরিবার বসবাস করে। এই ক্রান্তীয় ও মিশ্র চিরহরিৎ পাহাড়ী বনভূমি ভারতীয় উপমহাদেশ এবং উন্দো-চীন অঞ্চলের সংযোগস্থলে অবস্থিত।

যা দেখবেন

পার্কের কাছে নয়টি চা বাগান রয়েছে; সাতছড়ি চা উদ্যানটি পশ্চিমে এবং চাকলাপুঞ্জি চা বাগানটি পূর্বে অবস্থিত। এখানে ১৪৫ প্রজাতির গাছ এবং ১৯৮ প্রজাতির প্রাণী রয়েছে তাদের মধ্যে ১৪৯ প্রজাতির পাখি, ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ৬ প্রজাতির উভচর রয়েছে। এই বনের ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে বানর, মাছের বাঘ, শূকর, সাপ, গাধা, দর্শনীয় গাধা, লাজুক বানর ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ১৪৯ প্রজাতির পাখির মধ্যে করমোর্যান্ট, লালচে মাথাযুক্ত ট্রগন এবং বিরল উদ্ভিদের মধ্যে বিশলতা (ভেনোমাস ভাইন), পিতরাজ, কানাইডিং, আগর ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। পার্কের অভ্যন্তরে টিপড়া পাড়ায় একটি পাহাড়ি উপজাতির 24 পরিবার বসবাস করে। পর্যটকরা তাদের জীবনযাত্রাও পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।

পর্যটকদের ভ্রমণের সুবিধার জন্য নিসর্গ কর্মসূচীর আওতায় বনের মধ্যে ৩টি ট্রেইল তৈরি করা হয়েছে।

আধা ঘন্টার ট্রেইল:

১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই ট্রেইল ধরে যাত্রা করলে বনের মধ্যে অবস্থিত একমাত্র আধিবাসী গ্রাম টিপরাপাড়াতে যেতে পারবেন।

এক ঘন্টার ট্রেইল:

সাতছড়ি উদ্যানের বৈচিত্রপূর্ণ প্রাণী ও উদ্ভিদের সাথে পরিচিত হতে চাইলে এই ট্রেইলের বিকল্প নেই।

তিন ঘন্টার ট্রেইল:

প্রায় ৬ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এই ট্রেইল পাখি প্রেমী পর্যটকদের জন্য আদর্শ। এই ট্রেইলের প্রান্তে রয়েছে আগরের বন।

এছাড়াও ভ্রমণ পাগল পর্যটকদের ভ্রমণে ভিন্নমাত্রা যোগ করতে অতি সম্প্রতি সাতছড়া জাতীয় উদ্যানে চালু করা হয়েছে ট্রি এক্টিভিটি বা ট্রি এডভেঞ্চার। এখানে ১০০ টাকায় গাছের উপরে বিভিন্ন অ্যাডভেঞ্চারাস এক্টিভিটি করার সুযোগ রয়েছে।

প্রবেশ মূল্য

সাতছরি উদ্যানে প্রবেশ করতে প্রাপ্ত বয়স্ক যেকোন পুরুষ বা নারীকে জনপ্রতি ২০ টাকা, অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেমেয়ে ও শিক্ষার্থীদের জনপ্রতি ১০ টাকা এবং বিদেশীদের প্রবেশে জনপ্রতি ৫ ডলারের সমমূল্যের অর্থ প্রদান করতে হয়। এছাড়া সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে বনভোজন করতে চাইলে জনপ্রতি ১০ টাকা হারে উদ্যানে প্রবেশের সুযোগ রয়েছে। আর উদ্যানে গাড়ি পার্কিয়ের জন্য গাড়িপ্রতি ২৫ টাকা ফি দিতে হয়।

কোথায় থাকবেন

এ ছাড়া আপনি চাইলে নিসর্গ তরফ হিল কটেজ (০১৭৩১৯৭৭৮০৭) এ থাকতে পারেন। রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়াশ্রমের প্রধান প্রবেশ পথের পাশে অবস্থিত এ কটেজের তিনটি কক্ষে আট জন থাকা যায়। বড় দুটি কক্ষের ভাড়া এক হাজার টাকা আর ছোটটির ভাড়া ৭শ’ টাকা। প্রতিবেলা খাবারের খরচ জনপ্রতি ২শ’ টাকা। আর সকালের নাস্তা ৬০ টাকা।

তাছাড়া হবিগঞ্জ শহরে হোটেল সোনারতরী, হোটেল জামিল, হোটেল আমাদ(আমির চান কমপ্লেক্স) এ থাকতে পারেন। ভাড়া পড়বে ৮০০-২৫০০ টাকা। এছাড়া থাকতে পারবেন বাহুবল উপজেলাতে অবস্থিত ৫ তারকা রিসোর্ট প্যালেস এ ( ভাড়া ৭০০০-১৫০০০ টাকা) ।

কীভাবে যাবেন 

ঢাকা থেকে যাওয়ার সবচেয়ে সহজ মাধ্যম হল সিলেটগামী যে কোনও বাসে মাধবপুর মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে নেমে সেখান থেকে বাস কিংবা ম্যাক্সিতে সাতছড়ি। এছাড়া ঢাকা থেকে রেল ও সড়কপথে হবিগঞ্জ গিয়ে সেখান থেকেও সাতছড়ি যাওয়া যায়। এছাড়া ঢাকার সায়দাবাদ থেকে অগ্রদূত পরিবহন, দিগন্ত পরিবহন ও বিছমিল্লাহ পরিবহন সরাসরি হবিগঞ্জ যায়। ভাড়া এসি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।

ট্রেনে হবিগঞ্জ যেতে হলে নামতে হবে সায়েস্তাগঞ্জ স্টেশন। এখান থেকে শহরের দূরত্ব প্রায় ১৪ কিলোমিটার। ঢাকার কমলাপুর থেকে মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস। দুপুর ২টায় প্রতিদিন ছাড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস। বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ১০টায় ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস। শ্রেণীভেদে ভাড়া ১০০ থেকে ৬৭৩ টাকা।

চট্টগ্রাম থেকে সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে যায় পাহাড়িকা এক্সপ্রেস। শনিবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ৯টায় উদয়ন এক্সপ্রেস। ভাড়া ১২৫ থেকে ৮৫৭ টাকা।

আর যারা হবিগঞ্জ সদর থেকে যেতে চান তারা হবিগঞ্জ টু মাধবপুর ভায়া চুনারুঘাট বাসে করে অথবা সিএনজি বা মাইক্রোবাস রিজার্ব করে যেতে পারেন। সাতছড়ি উদ্যানের তথ্য কেন্দ্র থেকে গাইড পাবেন। ট্রেইল অনুযায়ী গাইড ফি যথাক্রমে ২০০-৫০০ টাকা। যদিও অফিস চত্বরে ম্যাপ দেয়া আছে, তবুও গাইড নেয়া উচিত। কারণ শুরুতে ট্রেইল বিষয়ে নির্দেশনা থাকলেও বনের মধ্যে কোথাও এই বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া নেই। ফলে বনের মধ্যে পথ ভুল করার সম্ভাবনা রয়ে যায়।

উদ্যানের তত্বাবধায়ন

নিসর্গ নামের একটি এনজিও, বন বিভাগের পাশাপাশি, তাদের নিসর্গ সহায়তা প্রকল্পের অধীনে এই জাতীয় উদ্যানের দায়িত্ব পালন করে। বন সংরক্ষণ ছাড়াও বনে ইকো-ট্যুর পরিচালিত হয়। এছাড়া নিসর্গ প্রকল্পের অধীনে বিভিন্ন শৌখিন দ্রব্যাদির বিক্রয় করা হয়ে থাকে।

প্রজাপতি পার্ক বাংলাদেশ-Butterfly Park Bangladesh
চট্রগ্রামের দর্শনীয় স্থান-Places of interest in Chittagong
ঢাকা টু জামালপুর ট্রেনের সময়সূচী ২০২৩-Dhaka to Jamalpur train ২০২৪
স্বাধীনতা কমপ্লেক্স-Shadhinata Complex
কড়াপুর মিয়া বাড়ি মসজিদ-korapur mia bari mosque
গানস অব বরিশাল-Guns of Barisal
বিবির পুকুর,বরিশাল-bibir pukur barishal
ড্রিমল্যান্ড পার্ক-Dreamland Park
মারায়ং তং ভ্রমণ গাইড ও ক্যাম্পিং - Marayang Tong Travel Guide & Camping
সরকারি বিএম কলেজ-Government BM College, Barishal