ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান, গাজীপুর- Bhawal National Park Gazipur, Dhaka
ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের প্রধান বৃক্ষ গজারি, এ কারণে একে ভাওয়ালের গজারির গড়ও বলা হয়। দেশে যে কয়টি বৃহৎ প্রাকৃতিক বনভূমি রয়েছে, তার মধ্যে ভাওয়ালের গড় অন্যতম। ঐতিহ্য ও সৌন্দর্যে ভাওয়াল গড়ের তুলনা হয় না।
জীববৈচিত্র্য রক্ষার্থে ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু প্রথম ভাওয়ালের গড়কে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা দেন। উদ্যান ঘোষণার পর থেকে এর প্রতি সরকারের নজর বেড়ে যায়। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন (১৯৭৪) আইন অনুসারে বাংলাদেশ সরকার ৫,০২২ হেক্টর (১২,৪০৯ একর) জায়গা জুড়ে পৃথিবীর অন্যান্য উন্নত দেশের মতো করে ভাওয়াল শালবনে এই উদ্যান গড়ে তোলে।
কোথায় অবস্থিত
ঢাকা থেকে প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার দূরে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের অবস্থান। গাজীপুর জেলার সদর ও শ্রীপুর উপজেলায় এ উদ্যানের বিস্তৃত। জয়দেবপুর চৌরাস্তা ছাড়িয়ে ময়নসিংহের দিকে কিছু দূর যেতে হাতের ডানে উদ্যানের বেশ কয়েকটি প্রবেশপথ আছে।
পিকনিক স্পট
ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের আকর্ষণীয় একটি পর্যটন কেন্দ্র। এখানে বেশ কয়েকটি পিকনিক স্পট রয়েছে। স্পটগুলোর হলো: আনন্দ, কাঞ্চন, সোনালু, অবকাশ, অবসর, বিনোদন। এখানকার কটেজগুলো হলো: বকুল, মালঞ্চ, মাধবি, চামেলী, বেলী, জুঁই ইত্যাদি। এখানে ১৩টি কটেজ ও ৬টি রেস্টহাউজ রয়েছে। রাত্রি যাপনের জন্য এখানে অনুমতি দেওয়া হয় না। পিকনিক স্পট কিংবা রেস্ট হাউস ব্যবহার করতে হলে বন বিভাগের মহাখালী কার্যালয় থেকে আগাম বুকিং দিতে হয়।
উদ্ভিদ
ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের মূল উদ্ভিদ হল শাল। প্রায় ২২০ প্রজাতির গাছপালা আছে এই বনে। এর মধ্যে ৪৩ প্রজাতির বিভিন্ন রকম গাছ, ১৯ প্রজাতির গুল্ম, তিন প্রজাতির পাম, ২৭ প্রজাতির ঘাস, ২৪ প্রজাতির লতা, ১০৪ প্রজাতির ঔষধি গাছ। জীব বৈচিত্র্যেও কমতি নেই এই বনে। প্রায় ১৩ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, নয় প্রজাতির সরীসৃপ, পাঁচ প্রজাতির পাখি ও পাঁচ প্রজাতির উভচর প্রাণীও রয়েছে এই বনে।
প্রাণীবৈচিত্র্য
ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে একসময় বাঘ, কালোচিতা, চিতাবাঘ, মেঘলা চিতা, হাতি, ময়ূর, মায়া হরিণ ও সম্বর হরিণ দেখা যেত। ১৯৮৫ সালে এ বনে খেঁকশিয়াল, বাঘডাস, বেজী, কাঠবিড়ালী, গুই সাপ আর কয়েক প্রজাতির সাপ দেখা গেছে। একটি হিসাব অনুযায়ী, ভাওয়াল গড়ে ৬৪ প্রজাতির প্রাণী রয়েছে যার মধ্যে ৬ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৯ প্রজাতির সরীসৃপ, ১০ প্রজাতির উভচর ও ৩৯ প্রজাতির পাখি রয়েছে। বনবিভাগ এ বনে অজগর, ময়ূর, হরিণ ও মেছোবাঘ ছেড়েছে। এছাড়া ২০১২ সালে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে ১৬টি তক্ষক ছাড়া হয়।
প্রবেশ মূল্য
ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ২০ টাকা। গাড়ি নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলে নির্দিষ্ট হারে মূল্য পরিশোধ করতে হয়। গাড়ি পার্কিংয়ের সুব্যবস্থা আছে। ভেতরে ঘুরে দেখার জন্য রয়েছে ঘোরার গাড়ি ও রিকশা।
সময়সূচি
ভাওয়াল ন্যাশনাল পার্ক সকাল ০৮ টা ৩০ মিনিট থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। সপ্তাহে সাত দিন খোলা থাকে। এখানে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই এবং পুলিশ সর্বদা সাধারণ মানুষকে রক্ষা করার জন্য রয়েছে।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে ময়মনসিংহগামী যে কোনো বাসে চড়ে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের ফটকের সামনেই নামা যায়। এছাড়া ঢাকার গুলিস্তান থেকে প্রভাতী বনশ্রী পরিবহনসহ বেশ কয়েকটি বাস চলে এই পথে। ভাড়া ৬০ থেকে ৮০ টাকা।
নিজস্ব বাহনে গেলে জয়দেবপুর চৌরাস্তা ছাড়িয়ে ময়মনসিংহের দিকে কিছু দূর চলতে হাতের ডানে পড়বে এর প্রধান প্রবেশপথ।