আহসান মঞ্জিল-Ahsan Manzil Museum
Ahsan Manzil Museum

আহসান মঞ্জিল-Ahsan Manzil Museum

আহসান মঞ্জিল নামটির সঙ্গে সবাই পরিচিত। পুরান ঢাকার ইসলামপুরের কুমারটুলী এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত ঐতিহাসিক এই জমিদার বাড়ি। এটি পূর্বে ছিল ঢাকার নবাবদের আবাসিক প্রাসাদ ও জমিদারির সদর কাচারি। বর্তমানে এটি জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

আহসান মঞ্জিল প্রতিষ্ঠা করেন নওয়াব আবদুল গনি। তিনি তার পুত্র খাজা আহসানুল্লাহর নামানুসারে এর নামকরণ করেন। ১৮৫৯ সালে আহসান মঞ্জিলের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ও শেষ হয় ১৮৭২ সালে। এই রাজবাড়ির ২৩টি ঘরে মোট ৪০৭৭ নিদর্শন রয়েছে। এর বারান্দা ও মেঝে মার্বেল পাথরের তৈরি।

আহসান মঞ্জিলের প্রতিটি ঘর অষ্টকোণা বিশিষ্ট। রাজবাড়ির ছাদ কাঠের তৈরি। এই রাজবাড়িতে কী নেই! খাবার ঘর, লাইব্রেরি, জলসা ঘর, দরবার হল, বিলিয়ার্ড খেলার জায়গাসহ প্রাসাদের দোতলায় আছে অথিতিদের থাকার কক্ষ, বৈঠকখানা, নাচঘর, গ্রন্থাগার ও আরও কিছু বসবাসের কক্ষ।

রাজবাড়ির ঠিক সামনে আছে ফুলের বাগান ও সবুজ মাঠ। আহসান মঞ্জিলের দ্বিতীয় তলা থেকে একটি বড় সিঁড়ি সবুজ মাঠে নেমে এসেছে। জানেন কি, তখনকার সময় নবাবদের হাতে এ ভবনেই প্রথম বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলেছিল। জানা যায়, এই রাজবাড়ি এতোটাই সুন্দর ছিল যে লর্ড কার্জন ঢাকায় আসলে এ ভবনেই থাকতেন। ১৯৯২ সালে এই জাদুঘর জনসাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এখন এটি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর কর্তৃক পরিচালিত একটি জাদুঘর।

আহসান মঞ্জিল জাদুঘরের ইতিহাস

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর অযত্ন ও অপব্যবহারে আহসান মঞ্জিল ধ্বংসপ্রাপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে। এমতাবস্থায় ১৯৭৪ সালে ঢাকা নওয়াব পরিবারের উত্তরসূরিরা আহসান মঞ্জিল প্রাসাদ নিলামে বিক্রির পরিকল্পনা করেন। সরকারের ভূমি প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষে নিলাম বিক্রির প্রস্তাবটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবের কাছে পেশ করা হয়। কিন্তু শেখ মুজিব আহসান মঞ্জিলের স্থাপত্য সৌন্দর্য ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব উপলব্ধি করে ১৯৭৪ সালের ২রা নভেম্বর এটি নিলামে বিক্রির প্রস্তাব নাকচ করে দেন।

‘আহসান মঞ্জিলের সংস্কার, সৌন্দর্যবর্ধন ও জাদুঘরে রুপান্তর’ শীর্ষক প্রকল্পের বাস্তবায়ন আরম্ভ হয় ১৯৮৬ সালের মার্চ মাসে।জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস ও স্থাপত্য নিদর্শন সংরক্ষণের জন্য আহসান মঞ্জিল ভবনটি সংস্কার করে জাদুঘরে রুপান্তর ও প্রাসাদের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ভবনটির পারিপার্শ্বিক এলাকার উন্নয়ন করা প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য ছিল। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন এ প্রকল্পের নির্বাহী সংস্থা ছিল বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের ওপর যৌথ ভাবে ন্যস্ত ছিল। সংস্কার ও সংরক্ষণ কাজ গণপুর্ত অধিদপ্তর কর্তৃক সম্পাদিত হয়। নিদর্শন সংগ্রহ ও প্রদর্শনী উপস্থাপনের মাধ্যমে জাদুঘরে রুপান্তরের কাজ সম্পাদন করে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর। ১৯৮৫ সালের ৩ নভেম্বর আহসান মঞ্জিল প্রাসাদ ও তৎসংলগ্ন চত্বর সরকার অধিগ্রহণ করার মাধ্যমে সেখানে জাদুঘর তৈরীর কাজ শুরু হয়। ১৯৯২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর আহসান মঞ্জিল জাদুঘরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ও জনসাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

আহসান মঞ্জিলের ভেতরের পরিবেশ

এই প্রাসাদের ছাদের উপর সুন্দর একটি গম্বুজ আছে। এক সময় এই গম্বুজের চূড়াটি ছিল ঢাকা শহরের সর্বোচ্চ। মূল ভবনের বাইরে ত্রি-তোরণবিশিষ্ট প্রবেশদ্বারও দেখতে সুন্দর। একইভাবে উপরে ওঠার সিঁড়িগুলোও সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে দু’টি মনোরম তোরণ আছে যা সবচেয়ে সুন্দর। আহসান মঞ্জিলের অভ্যন্তরে দু’টি অংশ আছে। বৈঠকখানা ও পাঠাগার আছে পূর্ব অংশে। পশ্চিম অংশে আছে নাচঘর ও অন্যান্য আবাসিক কক্ষ। নিচতলার দরবারগৃহ ও ভোজন কক্ষ রয়েছে।

প্রাসাদের বাইরের সোন্দর্য

প্রাসাদের উত্তর ও দক্ষিণ দিকে একতলার সমান উঁচু করে গাড়ি বারান্দা। দক্ষিণ দিকের গাড়ি বারান্দার ওপর দিয়ে দোতলার বারান্দা থেকে একটি সুবৃহৎ খোলা সিঁড়ি সম্মুখের বাগান দিয়ে নদীর ধার পর্যন্ত নেমে গেছে। প্রাসাদের উভয় তলার উত্তর ও দক্ষিণ দিকে রয়েছে অর্ধবৃত্তাকার খিলানসহযোগে প্রশস্ত বারান্দা। বারান্দা ও কক্ষগুলোর মেঝে মার্বেল পাথরে শোভিত। 

গম্বুজের সোন্দর্যে আহসান মঞ্জিল আলোকিত

আহসান মঞ্জিলের গম্বুজটি নির্মাণের জন্য প্রথমে নিচতলার বর্গাকার কক্ষটির চারকোণায় ইট দিয়ে ভরাট করে গোলাকার রূপ দেওয়া হয়েছে। এর উপর দোতলায় নির্মিত অনুরূপ গোলাকার কক্ষের ঊর্ধ্বাংশে স্কুইঞ্চের মাধ্যমে ছাদের কাছে কক্ষটিকে অষ্টভূজাকৃতির করা হয়েছে। এই অষ্টকোণ কক্ষটিই ছাদের উপর গম্বুজের পিপায় পরিণত হয়েছে। 

পরিশেষে অষ্টবাহুর মাথাগুলোকে কেন্দ্রের দিকে ক্রমে হেলিয়ে চূড়াতে নিয়ে কুমদ্র কলির আকারের গম্বুজটি তৈরি করা হয়েছে। ভূমি থেকে গম্বুজ শীর্ষের উচ্চতা ২৭ দশমিক ১৩ মিটার। গম্বুজের সোন্দর্য দর্শনার্থীদের মন ছুঁয়ে যায়। আহসান মঞ্জিলের প্রতিটি কক্ষ ইতিহাসের কথা মনে করিয়ে দেয়।

রঙমহলের ৩১টি কক্ষের ২৩টিতে প্রদর্শনী উপস্থাপন করা হয়েছে। ৯টি কক্ষ লন্ডনের ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরিতে প্রাপ্ত ও মি. ফ্রিৎজকাপ কর্তৃক ১৯০৪ সালে তোলা আলোকচিত্রের সঙ্গে মিলিয়ে সাজানো হয়েছে। আহসান মঞ্জিলের তোষাখানা ও ক্রোকারীজ কক্ষে থাকা তৈজসপত্র ও নওয়াব এস্টেটের পুরনো অফিস এডওয়ার্ড হাউজ থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন নিদর্শন সংরক্ষণ করে প্রদর্শনীতে দেওয়া হয়েছে। 

যেভাবে যাবেন

ঢাকার বাইরে থেকে বাস, ট্রেন, লঞ্চসহ যেকোনও বাহনে আসা যাবে। বাসে এলে মহাখালী থেকে আজমেরী পরিবহন ও স্কাইলাইন বাস জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত আসে। সেখান থেকে রিকশায় চড়ে যাওয়া যায়। গাবতলী থেকে ৭ নম্বর ও সাভার পরিবহন বাস আসে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত। তারপর রিকশায় চড়ে যেতে হবে। সায়েদাবাদ থেকে বেছে নিতে পারেন রিকশা বা উবার। ট্রেনে এলে কমলাপুর থেকে উবার বা রিকশা করে যাওয়া যায়। লঞ্চে এলে সদরঘাট টার্মিনাল থেকে ১০ মিনিটের হাঁটা দূরত্বে আহসান মঞ্জিল।

সময়সূচি

বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক ছুটি ও অন্যান্য সরকারি ছুটির দিন জাদুঘর বন্ধ থাকে। গ্রীষ্মকালীন সময়সূচি হলো এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর শনি থেকে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা। শুক্রবার বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা। শীতকালীন সময়সূচি অক্টোবর থেকে মার্চ শনি থেকে বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা। শুক্রবার দুপুর আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা।

টিকেট মূল্য

আহসান মঞ্জিলে প্রবেশ করতে দর্শনার্থীদের নির্দিষ্ট মুল্যের টিকেট কেটে প্রবেশ করতে হয়। ভ্রমণ গাইড অনুসারে ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের প্রবেশ টিকে মূল্য ১০ টাকা, প্রাপ্ত বয়স্কদের জনপ্রতি টিকেট মূল্য ২০ টাকা। তবে বিদেশী পর্যটকদের প্রবেশ টিকেট মূল্য ১০০ টাকা। প্রতিবন্ধীদের আহসান মঞ্জিলে প্রবেশ করতে টিকেট কাটতে হয়ে না।

বরিশালের দর্শনীয় স্থানসমূহ-Places of interest in Barisal
বরিশালের আঞ্চলিক ভাষা-The regional language of Barisal
ঢাকা টু দুবাই বিমান ভাড়া ২০২৩-Air fares from Dhaka to Dubai
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার-Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman Novo Theatre
জাফলং-Jaflong
ডিবির হাওর-Dibir Haor
মুরারিচাঁদ কলেজ-Murarichand College
বলাকা ট্রেনের সময়সূচী ২০২৩-Balaka train ২০২৪
চাঁদপুর ট্রেনের সময়সূচী ও ভাড়ার তালিকা ২০২৩-Chandpur train schedule and fare ২০২৪
তাজিংডং ভ্রমণ গাইড - Tazing Dong Travel Guide