মৈনট ঘাট
মৈনট ঘাট ঢাকার দোহারে পদ্মা নদীর পাড়ে অবস্থিত একটি পর্যটন আকর্ষণ। এটি “মিনি কক্সবাজার” নামেও পরিচিত। বর্ষাকালে পদ্মায় ভেসে বেড়াচ্ছে সারি সারি তরী, সাথে পদ্মার চোখধাঁধানো জলরাশি, কূলে রয়েছে সারি সারি বাহারি রঙের ছাতার নিচে হেলানো চেয়ার। এছাড়াও পদ্মার পাড়ে অপূর্ব সূর্যাস্ত দেখে সত্যিই মুগ্ধ হবেন। বলছি রাজধানী ঢাকার দোহার উপজেলার পশ্চিমে বয়ে যাওয়া পদ্মা নদীর কোলে অবস্থিত মৈনট ঘাটের কথা। সপ্তাহের ছয় দিন কর্মব্যস্ততায় কাটিয়ে একদিনের ছুটিতে অনেকেই পাড়ি জমান এই ঘাটে।
অবস্থান
মৈনট ঘাট ঢাকা জেলার দোহার উপজেলার একটি জায়গা। এপাড়ে দোহার আর ওপাড়ে ফরিদপুর। মৈনট ঘাট থেকে ফরিদপুরের গোপালপুরের স্পিড বোটে পারাপার হন মানুষ। ঘাটের আশপাশে বিশেষ করে পূর্ব পাশে চর আর সামনে পদ্মা। নদীর ওপারে ফরিদপুরের চর ভদ্রাসন। দোহার থেকে দূরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটার।
যাবেন কীভাবে
মৈনট ঘাট যাওয়ার জন্য একাধিক পথ রয়েছে। যেকোনো একটি অবলম্বন করেই যাওয়া যাবে সেখানে।
১.রাজধানী ঢাকার গুলিস্তানের গোলাপ শাহর মাজার আসতে হবে। সেখান থেকে যমুনা পরিবহনের বাস মৈনট ঘাটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ৯০-১০০ টাকা, সময় লাগবে দেড় থেকে দুই ঘন্টা। আসলে সময় নির্ভর করে রাস্তার যানজটের উপর। মনে রাখবেন, এই পরিবহনের সর্বশেষ বাসটি মৈনট ঘাট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে সন্ধ্যা ছয়টায়।
২.ঢাকার গুলিস্তানের সেই একই জায়গা অর্থাৎ গোলাপ শাহর মাজার থেকে এন মল্লিক পরিবহনেও আসা যাবে। তবে এই বাসে চড়ে সরাসরি মৈনট ঘাট যেতে পারবেন না। এজন্য আপনাকে নবাবগঞ্জের মাঝিরকান্দা নামক স্থানে নামতে হবে। ভাড়া পড়বে ৭০-৮০ টাকার মতো। মাঝিরকান্দা থেকে ব্যাটারি চালিত অটোতে ১৫-২০ টাকার বিনিময়ে নামতে হবে দোহারের বাঁশতলা। তারপর সেখান থেকে আবার আরেকটি অটোতে ১৫-২০ টাকার বিনিময়ে কার্তিকপুর বাজার নামতে হবে। বাজার থেকে ১০ টাকার বিনিময়ে অটো কিংবা ২০ টাকার বিনিময়ে রিক্সায় পৌঁছে যাবেন মৈনট ঘাটে।
৩.ঢাকার গুলিস্তানের ফুলবাড়ীয়া থেকে ৯০-১০০ টাকার বিনিময়ে নগর পরিবহনেও যেতে পারবেন মৈনট ঘাটে। তবে এই বাসটি অন্য রুট ব্যবহার করে, অর্থাৎ নবাবগঞ্জ হয়ে না এসে, আসে মুন্সিগঞ্জ হয়ে। এজন্য আপনাকে নামতে হবে কার্তিকপুর বাজারে। তারপর বাজার থেকে অটো কিংবা রিক্সায় চড়ে যেতে পারবেন মৈনট ঘাট। ভাড়া গুনতে হবে অটোতে ১০ টাকা এবং রিক্সায় ২০ টাকা।
কোথায় খাবেন
মৈনট ঘাটে কিছু খাবারের হোটেল আছে। ইলিশ ৬০ থেকে ৯০ টাকা। বড় সাইজের ইলিশ খেতে চাইলে আগেই অর্ডার দিতে হবে। এ ছাড়াও বোয়াল ৮০ থেকে ১০০ টাকা, চিংড়ি ৬০ থেকে ৮০ টাকা। ভাত ২০ টাকা প্লেট। সেখান থেকে অবশ্যই মিষ্টি খেয়ে আসবেন। নিরঞ্জন মিষ্টান্নভান্ডার, মুসলিম সুইটস, রণজিৎ মিষ্টান্নভান্ডারসহ কিছু মিষ্টির দোকান আছে সেখানে। চমচম ও কালোজাম ১৬০ টাকা কেজি।
নিকটস্থ দর্শনীয় স্থান
মৈনট ঘাট যাওয়ার পথে বেশ কিছু ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে। এগুলো হলো মাঝিরকান্দার আগে কলাকোপা স্থানে অবস্থিত জজবাড়ি, উকিলবাড়ি, কোকিলপ্যারি দালান, খেলারাম দাতার বাড়ি যাকে স্থানীয়রা আন্ধার কোঠা বলে থাকে, এবং দোহারের রাইপাড়া ইউনিয়নের লক্ষ্মীপ্রসাদ গ্রামে অবস্থিত পোদ্দারবাড়িখ্যাত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাদুঘর। চাইলে সেগুলো পরিদর্শন করেই যেতে পারেন মৈনট ঘাট।
থাকার ব্যবস্থা
ট্যুরিস্টদের থাকার জন্য মৈনট ঘাটের আশপাশে কোনো হোটেল, রিসোর্ট, বোর্ডিং এখনো তৈরি করা হয়নি। স্থানীয় কোনো বাসিন্দার বাড়ি ম্যানেজ করতে না পারলে দিনে এসে দিনেই ফিরে যাওয়া ভালো।