বলধা গার্ডেন- Bulldha Garden
ঢাকার একটি ঐতিহাসিক স্থান বলধা গার্ডেন। এদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক-বাহক হিসেবে কালের সাক্ষি হয়ে আছে এই উদ্ভিদ উদ্যান। বাংলাদেশে কোনো বিদেশি পর্যটক এলে তাদের পছন্দের তালিকায় ঢাকার ওয়ারীতে অবস্থিত বলধা গার্ডেনের নামটিও থাকে। এছাড়া দেশের ভ্রমণ ও সৌন্দর্য পিপাসু মানুষও সপরিবারে বলধা গার্ডেনে বেড়াতে যায়।
জমিদার নারায়ণ চন্দ্র চৌধুরী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে নানারকম ফুলগাছ ও অনান্য উদ্ভিদ এনে রোপন করেছেন নিজের তৈরী এ গার্ডেনটিতে। বলধা গার্ডেন প্রকৃতপক্ষে ফুল ও উদ্ভিদের একটি মিউজিয়াম। তবে সত্যিকারের একটি মিউজিয়ামও ছিল বলধা গার্ডেনে। তাতে কয়েকটি ধাতব মূর্তি ছিল। বলধা গার্ডেনে যেমন দেশ বিদেশের বিভিন্ন উদ্ভিদ রয়েছে, ঠিক তেমনি দেশ বিদেশের খ্যাতিমান লোকেরা বলধা গার্ডেন দেখতে আসতেন। এখনো বলধা গার্ডেন নিয়ে ঢাকাবাসীর আগ্রহের কমতি নেই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও বলধা গার্ডেন পরিদর্শন করেছিলেন। তখন তিনি এ গার্ডেনের বহু বিদেশী ফুলের বাংলা নামকরণ করেছিলেন।
নামকরণ
বিখ্যাত এই গার্ডেনের মালিক ছিলেন জমিদার নারায়ণ চন্দ্র চৌধুরী। উনিশ শতকের শেষের দিকে এটি ছিল বলধার সেই জমিদারের বাগানবাড়ি। যা তখন ঢাকার উচ্চবিত্তদের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। নিয়মিত সেখানে বসতো গান বাজনার আসর। ধারণা করা হয় বলধা নাম থেকেই বলধা গার্ডেনের নামকরণ হয়েছে।
বলধা গার্ডেন দু'টি অংশে বিভক্ত একটি অংশের নাম সাইকী এবং অন্যটি সিবলী। সাইকী অর্থ আত্মা ও সিবলী অর্থ প্রকৃতির দেবী। দুটি শব্দই গ্রিক পৌরাণিক শব্দ।
সাইকী
এর সাইকী অংশের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে নীল, লাল, সাদা, হলুদ, জাতের শাপলায় ভরা অনেক গুলো শাপলা হাউজ, বিরল প্রজাতির দেশী বিদেশী ক্যাকটাস, অর্কিড, এনথুরিয়াম, ভূজ্জ পত্র গাছ, বিচিত্র বকুল, আমাজান লিলি ও সুরংগ সহ একটি ছায়াতর ঘর।
সিবলী
এর সিবলী অংশের মূল আকর্ষণ হচ্ছে শংখ নদ, পুকুর, ক্যামেলিয়া, আশোক, আফ্রিকান টিউলিপস। এখানে আরো আছে সূর্যঘড়ি, জয় হাউজ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ এই জয় হাউসে বসে এখানকার ক্যামেলিয়া ফুলের সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হয়ে তার বিখ্যাত "ক্যামেলিয়া" কবিতাটি লিখেছিলেন।
সময়সূচি
প্রতিদিনই সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত বলধা গার্ডেন পরিদর্শনের জন্য খোলা থাকে। প্রতিদিন দুপুর ১২ টা থেকে ২ টা পর্যন্ত মধ্যাহ্ন বিরতির জন্য বলধা গার্ডেন বন্ধ থাকে।
প্রবেশ মূল্য
বলধা গার্ডেনে প্রবেশ করতে ১০ টাকা প্রদান করতে হয়। অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে মেয়েরা ৪ টাকায় এখানে প্রবেশ করতে পারে। শিক্ষার্থী ও গবেষণাকারীদের জন্য এখানে প্রবেশ করতে ৫ টাকা প্রদান করতে হয়।
কি ভাবে যাবেন
ঢাকার যেকোন জায়গা থেকে যাত্রাবাড়ী গামী বাসে চড়ে রাজধানী সুপার মার্কেটের সামনে নেমে হাটখোলা রোড দিয়ে মিনিট পাঁচেক হাঁটলে বলধা গার্ডেনের দেখা মিলবে। এছাড়া বাসে করে গুলিস্থান এসে সেখান থেকে ৩০ থেকে ৪০ টাকা রিকশা ভাড়ায় সরাসরি বলধা গার্ডেন যেতে পারবেন।