বোটানিক্যাল গার্ডেন- National Botanical Garden
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মিরপুরে ঢাকা চিড়িয়াখানার পাশে বোটানিক্যাল গার্ডেন(Botanical Garden) বা জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান বাংলাদেশে উদ্ভিদ প্রজাতি সংরক্ষণ, গবেষণা ও প্রদর্শনের সবচেয়ে বড় কেন্দ্র। প্রায় ২০৮ একর জায়গার উপর ১৯৬১ সালে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ উদ্ভিদ এ উদ্যানটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিবছর প্রায় ১৫ লক্ষ দর্শনার্থী প্রকৃতির সাথে সময় কাটাতে বা বেড়াতে আসেন এ উদ্যানটিতে । ঢাকার আরেকটি উদ্যান বলধা গার্ডেন প্রশাসনিক দিক দিয়ে এই উদ্যানেরই অংশ।
বিশাল আয়তনের সুনিবিড় ছায়াঘেরা ও পাখপাখালিতে মুখড়িত এই উদ্যানটিতে রয়েছে ৭টি জলাশয় যেখানে ফুটে আছে বিচিত্র সব শাপলা তারমধ্যে একটি শাপলা পুকুর ও একটি পদ্মপুকুর যাদের কোন বিবরনের দরকার হয় না। শাপলা পুকুরে বছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে শাপলা ফোটে। একসময় শীতকালে বড় জলাশয়গুলোতে হাঁসজাতীয় পরিযায়ী পাখিরা আসত। এখন আর আসে না।
দর্শনার্থীদের বেড়ানোর জন্য রয়েছে ছোট বড় অনেক গুলো পায়ে হাঁটা পথ, কোনটা পিচ ঢালা, কোনটা ইটের, আবার কিছু একদম মেঠোপথ ও আছে। হাঁটতে হাঁটতে চারপাশে চোখে পড়বে বিভিন্ন প্রকৃতির গাছ। উঁচু টিলা আর নিচু জলাশয়ের পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে ভালই লাগবে সবার।
জাতীয় উদ্যানের ১.৫ একর জুড়ে রয়েছে মৌসুমি ফুলের বাগান। সালভিয়া, মর্নিংগ্লোরি, মেরি-গোল্ড, ডালিয়াসহ প্রায় ৫২ জাতের বিদেশি মৌসুমি ফুলের চাষ করা হয় এ বাগানে। বাগান ঘিরে রয়েছে একটি আঁকাবাঁকা কৃত্রিম লেক। ১৯৮০ সালে প্রায় ৩.৫ একর জায়গার উপর নির্মিত হয় উদ্যানের গোলাপ বাগান। দু’টি পৃথক বাগানে প্রায় ২০০ প্রজাতির গোলাপ সংগ্রহে রয়েছে। একটি গোলাপ বাগানের মাঝে রয়েছে গোলাকৃতির একটি জলাশয়। এই জলাশয়ে সংরক্ষিত রয়েছে ব্রাজিলের আমাজন লিলি।
১৯৮০-৮১ সালে নির্মাণ করা হয় উদ্যানের দেবদারু-ইউক্যালিপটাস বাগান। ইউক্যালিপটাসগুলো অস্ট্রেলিয়া থেকে সংগ্রহ করা। ১৬ প্রজাতির ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি রয়েছে এখানে। বাঁশ-বাগানে রয়েছে প্রায় ২২ প্রজাতির বাঁশ। গর্জন বাগানের উত্তর পাশে সৃষ্টি করা হয়েছে ভেষজ উদ্ভিদের বাগান। এই বাগানে রয়েছে কালমেঘ, তুলসী, আতমোরা, শতমূলী, পুনর্নভা, থানকুনি, আদা, বোতল ব্রাশ, তেলাকুচা, কুমারী লতা, বাসক, বচসহ হরেক ভেষজ উদ্ভিদের সংগ্রহ।
উদ্ভিদ উদ্যানের প্রায় ৫ একর জায়গা জুড়ে একটি নার্সারি রয়েছে। এ নার্সারিতে ফুল, ফল, লতা, গুল্ম ইত্যাদি উদ্ভিদের চারা চাষ করা হয়। সরকার নির্ধারিত মূল্যে এই নার্সারি থেকে চারা কেনা যায়।
প্রবেশ মূল্য
বোটানিক্যাল গার্ডেন বা জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে প্রবেশের করতে প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ১০ টাকা, অপ্রাপ্তদের ৫ টাকা এবং কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষ শিক্ষা সফরে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য প্রবেশ মূল্য ৩ টাকা।
কিভাবে যাবেন
ঢাকার যে কোন জায়গা থেকে বাসে করে মিরপুর দশ অথবা মিরপুর এক এ গিয়ে এর পরে সেখান থেকে রিকশা করে যাওয়া যাবে বোটানিক্যাল গার্ডেন।
গাবতলি বাসষ্ট্যান্ড থেকে ছোট লেগুনায় করে ১০-১৫ টাকা ভাড়া দিয়ে সরাসরি বোটানিক্যাল গার্ডেনে যাওয়া যায়। সদরঘাট বাসষ্ট্যান্ড থেকে মিরপুর-১ এ যে সব গাড়ী গুলো যায় তাতে উঠলে ২৫-৩৫ টাকা ভাড়া দিয়ে বোটানিক্যাল গার্ডেনে যাওয়া যায়।