
রোজ গার্ডেন- Rose Garden Palace
রোজ গার্ডেন প্রাসাদ যা সংক্ষেপে রোজ গার্ডেন নামে সমধিক পরিচিত, বিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক প্রাচীন ভবন। এটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের টিকাটুলি এলাকায় অবস্থিত একটি অন্যতম স্থাবর ঐতিহ্য। এ প্রাচীন ভবনটি বাংলাদেশের ঐতিহাসিক পুরাকীর্তি হিসাবে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক সংরক্ষিত। বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ১৯৮৯ সালে রোজ গার্ডেনকে সংরক্ষিত ভবন ঘোষণা করে। দেশী-বিদেশী পর্যটকদের নিকট এটি ঢাকার অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান। রোজ গার্ডেন ১৯৭০ থেকে নাটক ও টেলিফিল্ম শুটিং স্পট হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে।
ঠিকানা
ঢাকা শহরস্থ সূত্রাপুর থানা এলাকাধীন ১৩ নং কে.এ. দাস লেন এই ঠিকানায় রোজ গার্ডেন অবস্থিত। বর্তমানে এটি রশিদ মঞ্জিল নামেই পরিচিত।
কিভাবে যাবো
ঢাকার গুলিস্থান বা যাত্রাবাড়ি থেকে রিক্সায় টিকাটুলির কেএম দাস লেনে রোড গার্ডেন। অনেক রিক্সা চালকেরাই রোজ গার্ডেন নামে চিনে না। তাই রিক্সাচালক কে বলতে হবে হুমায়ূন সাহেবের বাড়ি যাবো। আমাদের দেখানো গুগোল ম্যাপ অনুসরন করতে পারেন।
সময়সূচী
প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত রোজ গার্ডেন দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। রোজ গার্ডেনের কোন সাপ্তাহিক বন্ধ নেই। তবে শুটিং চলাকালীন সময়ে দর্শনার্থীদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না।
দর্শনীয় অংশ
রোজ গার্ডেনের পশ্চিম বাহু এবং উত্তর বাহুর মধ্যবর্তী অংশে দুটি মূল ফটক আছে। প্রবেশ ও বাহির হওয়ার জন্য পশ্চিম দিকের ফটক দিয়ে প্রবেশ করলে প্রথমেই আছে একটি বিস্তীর্ন খোলা প্রাঙ্গন। এখানে মঞ্চের উপর দন্ডায়মান আছে কয়েকটি সুদৃশ্য নারী মূর্তি। পূর্বাংশের মধ্যবর্তী স্থানে রয়েছে একটি আয়তাকার পুকুর। পুকুরের পূর্ব ও পশ্চিম পাশের মাঝামাঝি একটি করে বাধানো পাকা ঘাট আছে। এর পূর্বাংশে আছে পশ্চিমমূখী একটি দোতলা ইমারত। এ ইমারতটির নাম হলো “রশিদ মঞ্জিল”।
রশিদ মঞ্জিলের প্রবেশপথের অনতিদূরের সম্মুখের চত্বরে ইটও সিমেন্ট নির্মিত একটি সুন্দর ফোয়ারা দেখা যায়। একটি সাত ধাপ বিশিষ্ট সিঁড়ি দিয়ে রশিদ মঞ্জিলের প্রথম তলায় আরোহন করা যায়। এর সামনের দিকের মাঝামাঝি অংশের প্রতি কোঠার পাশাপাশি তিনটি খিলান দরজা আছে। উপরের তলায় প্রতিটি খিলানের উপর একটি করে পডিয়াম আছে। টিমপেনামগুলো লতাপাতার নকশা এবং রঙ্গিন কাঁচ দিয়ে শোভিত। এর সামনে আছে বাইরের দিকে উপবৃত্তাকার উদগত অপ্রশস্ত বেলকনি। এর দুপাশে একটি করে করিনথীয় পিলার আছে। পিলারগুলোর দুই পাশের অংশে প্রতি তলায় আছে একটি করে খিলাল দরজা। এদের প্রতিটির কাঠের পাল্লার ভনিসীর ব্লাইন্ড ও টিমপেনামে লতাপাতার নকশা দেখা যায়। এবং সামনেই অপ্রশস্ত খোলা বেলকনি আছে। এর উপরাংশের কার্ণিস বক্রাকার যা বেলস্ট্রেড নকশা শোভিত। অপরাপর অংশের কার্ণিসগুলোও একই রকম। মধ্যবর্তী অংশ ছাদের সামনের ভাগে আছে আট কোনাকার এবং খিলান সম্বলিত বড় আকারের ছত্রী। এর ছাদ একটি আধাগোলাকার গম্ভুজ ঢাকা। ইমারতটির দু-কোনে দুটি করিনথীয় পিলার দেখা যায়। এদের শীর্ষেও ছত্রী নকশা আছে। এলাকার ভূমি পরিকল্পনায় নির্মিত রশিদ মঞ্জিলের প্রতি তলায় মোট ১৩ টি ছোট ও বড় আকারের কোঠা আছে। প্রথম তলায় প্রবেশের পর পশ্চিমাংশের বাঁ দিকে আছে উপরের তলায় যাওয়রা জন্য ঘুর্ণায়মান সিঁড়ি। এ ইমারতের পূর্ব বাহুর বাম পাশে আছে দুই বাহু বিশিষ্ট আর একটি দোতালা ইমারত। ডান পাশে পরবর্তীকালে আরও কিছু ইমারত নির্মিত হয়েছে। বাইরে ও ভেতরের দিকে পুরোপুরি চুনকামসহ গতরলেপনে আবৃত এ ইমারতের খিলানের টিমপেনামের রঙ্গিন কাঁচের অলঙ্করণ বেশ আকর্ষণীয়।
বর্তমান ব্যবস্থা
ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেন বর্তমানে নাটক ও টেলিফিল্ম শ্যুটিং স্পট হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। এই ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেনের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য্য এখন নাটক ও টেলিফিল্মের অনুষ্ঠানগুলোতেই অবলোকন করা যায়। এখানে সপ্তাহের প্রায় সময়ই শ্যুটিং হয়। তবে এখানে বেড়াতে আসা সাধারণ দর্শনার্থীর সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম। পুরনো ঢাকায় ঐতিহাসিক অনেক স্থাপনা আছে।
গাড়ি পার্কিং
মূল ফটকের প্রবেশপথে ও ভেতরে ১০ টি গাড়ি পার্কিং করা যায়। পার্কিং এর জন্য আলাদা কোন চার্জ দিতে হয় না।
নিরাপত্তা ও অগ্নি নির্বাপণ
রোজ গার্ডেনের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ন ও নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত লোক ব্যবস্থা আছে। নিজস্ব কোন অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। তবে একাধিক ফায়ার এক্সিট আছে।
আপনার মতামত লিখুন