লালবাগ কেল্লা-lalbagh kella
পরীবিবির সমাধি

লালবাগ কেল্লা

লালবাগের কেল্লা  ঢাকার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত একটি মুঘল দুর্গ। যাতে   ব্যবহার করা হয়েছে কষ্টি পাথর, মার্বেল পাথর আর  রঙ-বেরঙের টালি।

এটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ১৬৭৮ সালে, মুঘল সুবাদার মুহাম্মদ আজম শাহ কর্তৃক, যিনি ছিলেন সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র এবং পরবর্তীতে নিজেও সম্রাট পদপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। তার উত্তরসুরী, মুঘল সুবাদার শায়েস্তা খাঁ ১৬৮০ সালে নির্মাণকাজ পুনরায় শুরু করেন, কিন্তু শেষ করেননি।

 দুর্গের নির্মাণকাজ শেষ হবার আগেই মারাঠা বিদ্রোহ দমনের জন্য পিতা সম্রাট আওরঙ্গজেব তাকে দিল্লি ডেকে পাঠান। এসময় একটি মসজিদ ও দরবার হল নির্মাণের পর দুর্গ নির্মাণের কাজ থেমে যায়।

নামকরণঃ

লালবাগে অবস্থিত বলেই তখন এটি ‘লালবাগ কেল্লা’ নামে পরিচিতি লাভ করে।।শুরুর দিকে এই কেল্লার নাম ছিল “কেল্লা আওরঙ্গবাদ”।

ইতিহাসঃ

নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৬৭৮ সালে। তৎকালীন মুঘল সম্রাট আজম শাহ এর নির্মাণ কাজ শুরু করেন। যদিও আজম শাহ খুব কম সময়ের জন্যেই মুঘল সম্রাট হিসেবে ছিলেন। তবুও তার অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি তার এই অসাধারণ কাজটি শুরু করেন। উল্লেখ্য আজম শাহ ছিলেন মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব এর পুত্র আর সম্রাট শাহ জাহানের নাতি, যিনি তাজমহল তৈরির জন্যে বিশ্ব মহলে ব্যাপক সমাদৃত।এই দুর্গ নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার প্রায় এক বছরের মাথায় তার বাবার ডাকে তাকে দিল্লিতে চলে যেতে হয় সেখানকার মারাঠা বিদ্রোহ দমন করবার জন্যে। সম্রাট আজম শাহ চলে যাওয়ার পর দুর্গ নির্মাণের কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়।

নবাব শায়েস্তা খাঁ পুনরায় লালবাগ কেল্লার নির্মাণ কাজ শুরু করে দেন কাজ থেমে যাওয়ার প্রায় এক বছর পরে। পুরো উদ্যমে আবার কাজ চলতে থাকে দুর্গ নির্মাণের।তবে শায়েস্তা খাঁ পুনরায় কাজ শুরু করার প্রায় চার বছরের মাথায় দুর্গের নির্মাণ কাজ আবার বন্ধ হয়ে যায়, এরপর দুর্গটি নির্মাণের কাজ আর শুরু করা হয়নি। নবাব শায়েস্তা খাঁ এর মেয়ে পরী বিবি মারা যাওয়ার কারণেই মূলত শায়েস্তা খাঁ লালবাগ কেল্লার নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন।

এরপর আর এগোয়নি। অসমাপ্ত অবস্থায় রাখায় দুর্গটি পরিত্যক্ত হয়।

 ১৮৪৪ সালে ঢাকা কমিটি নামে একটি আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠান দুর্গের উন্নয়ন কাজ শুরু করে। এ সময় দুর্গটি লালবাগ দুর্গ নামে পরিচিতি লাভ করে। ১৯১০ সালে লালবাগ দুর্গের প্রাচীর সংরক্ষিত স্থাপত্য হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীনে আনা হয়। অবশেষে নির্মাণের ৩০০ বছর পর গত শতকের আশির দশকে লালবাগ দুর্গের যথাসম্ভব সংস্কার করে এর আগের রূপ ফিরিয়ে আনা হয় এবং দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

পরীবিবির সমাধিঃ


পরীবিবির সমাধি

নবাব শায়েস্তা খাঁ এর মেয়ে পরী বিবি মারা যাওয়ার কারণেই মূলত শায়েস্তা খাঁ লালবাগ কেল্লার নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন। পরী বিবির মৃত্যুর পরে সবার মধ্যে দুর্গটি সম্পর্কে বিদ্রূপ ধারণা জন্ম নেয়, সবাই দুর্গটিকে অপয়া ভাবতে শুরু করে দেয়।পরী বিবির মৃত্যুর পর তাকে লালবাগ দুর্গের মাঝেই সমাহিত করা হয়, আর এরপর থেকে একে পরী বিবির সমাধি নামে আখ্যায়িত করা হয়।পরী বিবির সমাধির যে গম্বুজটি আছে তা একসময় স্বর্ণখোচিত ছিল।২০.২ মিটার বর্গাকৃতির এই সমাধিটি ১৬৮৮ খ্রিস্টাব্দের পুর্বে নির্মিত।

পরীবিবির সমাধিটি চতুষ্কোণ। মার্বেল পাথর, কষ্টি পাথর ও বিভিন্ন রঙের ফুল-পাতা সুশোভিত চাকচিক্যময় টালি দিয়ে অভ্যন্তরীণ নয়টি কক্ষ অলঙ্কৃত করা হয়েছে। মাঝের একটি ঘরে পরীবিবির সমাধিস্থল দেখা যায়। এছাড়া আছে আটটি ঘর। স্থাপনাটির ছাদ করবেল পদ্ধতিতে কষ্টি পাথরে তৈরি এবং চারকোণে চারটি অষ্টকোণ মিনার ও মাঝে একটি অষ্টকোণ গম্বুজ রয়েছে।

কেল্লার  স্থাপনা:


দরবার হল ও হাম্মাম খানা



কেল্লার চত্বরে তিনটি স্থাপনা রয়েছে-

  • কেন্দ্রস্থলের দরবার হল ও হাম্মাম খানা
  • পরীবিবির সমাধি
  • উত্তর পশ্চিমাংশের শাহী মসজিদ


সুড়ঙ্গের ইতিহাস

দুর্গে সুড়ঙ্গপথও আছে। জনশ্রুতি রয়েছে, আগে সুড়ঙ্গপথে যাওয়া যেতো। তবে এখন সেই ব্যবস্থা নেই। অবশ্য সুড়ঙ্গপথে যেতে পারার ঘটনা নিতান্তই শোনা কথা, এর কোনও সত্যতা পাওয়া যায়নি।

১৯১০ সালে সংরক্ষিত স্থাপত্য হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীনে আনা হয় দুর্গের প্রাচীর। অবশেষে নির্মাণ শুরুর ৩০০ বছর পর গত শতকের আশির দশকে এর যথাসম্ভব সংস্কারের মাধ্যমে আগের রূপ ফিরিয়ে আনা হয়।

লালবাগ কেল্লার রহস্য

 লালবাগ কেল্লার সব থেকে রহস্যময় স্থান হচ্ছে লালবাগের বন্ধ সুড়ঙ্গ। যা সবার জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই সুড়ঙ্গ নিয়ে বছরের পর নানারকম কল্পকাহিনী শোনা যায়।লালবাগ কেল্লার নিচে রয়েছে অসংখ্য সুড়ঙ্গ যা জমিদার আমলে তৈরি করা হয়েছিল। সুড়ঙ্গগুলোর মধ্যে একটি সুড়ঙ্গ আছে যার ভেতরে কেউ ঢুকলে তাকে আর ফিরে পাওয়া যায় না ।

পর্যটকরা বেড়াতে গেলে এই সুড়ঙ্গের গল্প অনেকেই শুনেন। বলা হয়, এখান দিয়ে নাকি সুরঙ্গ পথে দিল্লি পর্যন্ত যাওয়া যেত! কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। এটি যুদ্ধকালীন বা বিপদ মুহূর্তে সুবেদারদের নির্বিঘ্নে পালিয়ে যাবার পথ হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল।

একদল বিদেশি গবেষক এর রহস্য উদঘাটনের জন্য সুড়ঙ্গের মধ্যে দুটি কুকুর পাঠান। কিন্তু কুকুর দুটি আর ফিরে আসেনি। পরবর্তীতে শিকল বেঁধে আবার দুটি কুকুরকে পাঠানো হয়েছিল। তখন শিকল আসলেও কুকুরগুলো ফেরত আসেনি।

অনেকের মতে এর মধ্যে এমন এক প্রকার গ্যাস রয়েছে যার প্রভাবে যে কোনো প্রাণী দেহের হাড়, মাংস গলে যায়। 

এই সুড়ঙ্গ দিয়ে পাশেই বুড়িগঙ্গা নদীতে যাওয়া যেত। সুড়ঙ্গমুখ থেকে বেরিয়েই নৌকায় উঠে যাওয়া যেত জিঞ্জিরা প্রাসাদে।

টিকেট প্রাপ্তিস্থানঃ

লালবাগ কেল্লার দরজার ঠিক ডান পাশেই রয়েছে টিকেট কাউন্টার, জনপ্রতি টিকেট এর দাম বিশ টাকা করে, তবে পাঁচ বছরের কম কোন বাচ্চার জন্যে টিকেট এর দরকার পড়েনা।

লালবাগ কেল্লার সময় সূচি:

গ্রীষ্মকালে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কেল্লা খোলা থাকে।

আর শীতকালে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

শুক্রবারে জুম্মার নামাযের জন্যে সাড়ে বারোটা থেকে তিনটা পর্যন্ত বন্ধ থাকে।

রবিবার সাধারণ ছুটি এবং সোমবার বেলা  ২.০০ থেকে  লালবাগ কেল্লা খোলা থাকে। 

তথ্যসূত্র:dhaka.gov.bd

টপিক:লালবাগ কেল্লা সময়সূচী,লালবাগ কেল্লা ভ্রমন,লালবাগ কেল্লা রচনা,লালবাগ কেল্লা কিভাবে যাবো,লালবাগ কেল্লা টিকেট মূল্য,লালবাগ কেল্লা রহস্য,লালবাগ কেল্লা কোথায় অবস্থিত,লালবাগ কেল্লা বাংলাপিডিয়া

অক্সফোর্ড মিশন চার্চ-oxford mission church barisal
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহী ট্রেনের সময়সূচী-Chapai to Rajshahi train Schedule
চুনতি বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য-Chunti Wildlife Sanctuary
শেখ রাসেল পক্ষিশালা ও ইকোপার্ক-Sheikh Russell Aquarium and Ecopark
জাফলং-Jaflong
ঢাকা থেকে ভোলা লঞ্চ সময়সূচী-Dhaka to Bhola launch schedule
ঢাকা টু বেতুয়া লঞ্চ সময়সূচী-Dhaka to Betua launch schedule
চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচী ২০২৩-Chitra Express train ২০২৪
ফেনী ট্রেনের সময়সূচী ২০২৩-Feni train ২০২৪
বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর-Bangabandhu Military Museum